প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:১০
চাঁদপুর মুক্ত দিবসে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা উদ্বোধন
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে শপথ হোক সকল অপশক্তিকে রুখে দাঁড়াবার : শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি
চাঁদপুরে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব জন্মশতবার্ষিকী-২০২১ উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে চাঁদপুর মুক্ত দিবসে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল ৮ ডিসেম্বর বুধবার বেলা পৌনে ১২টার সময় চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামে এ মেলার উদ্বোধন করা হয়। আর এবার চাঁদপুরের বিজয়মেলার ৩০ বছরপূর্তি। সব মিলিয়ে এবারের বিজয়মেলার আমেজ ভিন্ন রকমের।
|আরো খবর
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে আমাদের বিচ্যুত হবার কোনো সুযোগ নেই। আমরা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ এবং বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করেছি। স্বাধীনতার এই ৫০ বছরে আমরা চাই দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে, সব অপশক্তিকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
বিজয়মেলার স্টিয়ারিং কমিটির সভাপতি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এমএ ওয়াদুদের সভাপতিত্বে এবং বিজয়মেলা উদ্যাপন কমিটির মহাসচিব হারুন আল রশীদের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। বক্তব্য রাখেন মেলার উদ্বোধক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবুল খায়ের পাটোয়ারী।
উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল, চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সুদীপ্ত রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার) মোঃ মঈনুল হোসেন, পিপিএম (বার), চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা উদ্যাপন কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডঃ বদিউজ্জামান কিরণ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সরকারী কমান্ডার ইয়াকুব মাস্টার প্রমুখ।
এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাগণ, রাজনৈতিক দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, সুধীজন, জনপ্রতিনিধি, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি জাতীয় পতাকা ও উদ্বোধক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পতাকা উত্তোলন করে বিজয়মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপর তাঁরা চাঁদপুর মুক্ত দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাঃ দীপু মনি বলেন, চাঁদপুর হানাদারমুক্ত হওয়ার ঐতিহাসিক দিন ৮ ডিসেম্বর। ঐতিহাসিক এই দিনে বঙ্গবন্ধুসহ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাকে আমি সশ্রদ্ধ সালাম জানাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা এই দেশকে স্বাধীন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমরা স্বাধীন এই দেশ পেতাম না। বাঙালি জাতির স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছিলো তাঁরই নেতৃত্বে তার দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল হিসেবে।
মন্ত্রী বলেন, ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর হানাদারমুক্ত হয়েছিলো। এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জাগ্রত করতে এ বিজয়মেলা আয়োজন হয়ে আসছে। আমি জানি না ঘটনাচক্রে কাকতালীয় আমার জন্মদিন হয়েছিল এই একই দিনে। এ দিনটি আমার অসম্ভব ভালো লাগার একটি দিন। যে দিনে চাঁদপুর শত্রুমুক্ত হয়েছিলো, তার সাতবছর আগে আমি জন্মিয়েছিলাম। হয়ত বিধাতা ঠিক করে রেখেছিলেন, যেই দিনে শত্রু মুক্ত হবে চাঁদপুর, সাতবছর আগে সেই দিনে জন্ম নেয়া মেয়েটি একদিন বড় হয়ে চাঁদপুরবাসীর সেবা করবে।
তিনি বলেন, জন্মেছি ঢাকায়, ঢাকায় বড় হয়েছি, পড়াশোনাও করেছি ঢাকায়। কিন্তু নাড়ির টানে ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর চলে আসি। কারণ আমার বাবা-মা এই মাটির সন্তান। এই মাটির সাথে আমার নাড়ির সম্পর্ক। এই মাটিতে এসেছি এবং এখানেই আমার নির্বাচনী এলাকা তৈরি করেছি। এখানকার মানুষের সুখ-দুঃখের সাথে মিশে গেছি। এখন চাঁদপুর থেকে আমাকে আলাদা করা যায় কিনা জানি না, কিন্তু আমার থেকে চাঁদপুরকে আলাদা করার সুযোগ নেই। সেজন্যেই স্বাভাবিকভাবে জন্মদিন এলেই যা হয়-এখানে আমার মাটি, শিকড়, এখানে আমার ভালোবাসা। কাজেই ৮ ডিসেম্বর অন্য কাজে যতো ব্যস্ততাই থাকুক চাঁদপুরে চলে আসি।
তিনি বলেন, এই দেশটি স্বাধীন হওয়ার পর মাত্র সাড়ে তিন বছর জাতির পিতা দেশটাকে একটি শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন। যখন তিনি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করেছিলেন, দেশটা যখন ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, সোনার বাংলা গড়ার সকল ভিত্তি রচনা করে দিয়ে গিয়েছিলেন, তখন তাঁকে নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। আর সেই হত্যাকারীরা ছিলো একাত্তরের পরাজিত শক্তি। তাদের দেশী ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের দোসরেরা, ’৭১ এবং ’৭৫-এর হত্যাকারীরা আজও বসে নেই। একুশে আগস্টে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করবার জন্যে গ্রেনেড হামলা করেছিল। তারা অগ্নিসন্ত্রাস করে নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছিল। বহু মানুষকে পুড়িয়ে পঙ্গু করে দিয়েছে। তারা নানা চেহারায় নানানভাবে আজও ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে দেশে এবং বিদেশে। তাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে। কারণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বিচ্যুত হবার কোনো সুযোগ নেই। যখন আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে থেকেছি, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করেছি, তখনই এই দেশ এগিয়ে গেছে।
চাঁদপুর মুক্ত দিবসের এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপিকে তাঁর ৫৮তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হয়। মেলার আয়োজক কমিটি, জেলা প্রশাসন, প্রেসক্লাব, পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক), চাঁদপুর থিয়েটার ফোরাম, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, চাঁদপুর পৌরসভা এবং চাঁদপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ ডাঃ দীপু মনিকে জন্মদিনের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এদিকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্ব শেষে স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তির কেক কাটা হয় বিজয়মেলা মঞ্চে।
সবশেষে প্রধান অতিথি সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে কঠিন রোগে আক্রান্ত অসহায় মানুষের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসা সহায়তা তহবিলের ৫০ হাজার টাকা করে চেক প্রদান করেন। ১৮ জনকে চিকিৎসার জন্যে এ অর্থের চেক দেয়া হয়।