প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২১, ০০:০০
পানির অভাবে বন্ধ রয়েছে অরুণ নন্দী সুইমিং পুল
চাঁদপুর ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসে ক্রীড়াভিত্তিক বিভিন্ন ইভেন্টের অনেক খেলোয়াড়ই খেলেছেন দেশ-বিদেশে। কিন্তু ইলিশের নগরী হিসেবে ব্যান্ডিং খ্যাত চাঁদপুর জেলা শহরে শুধুমাত্র ২ জন সাঁতারুর নামে স্টেডিয়াম ও আউটার স্টেডিয়ামের দুটি স্থাপনার নামকরণ হয়েছে। এর মধ্যে পুরাতন প্যাভিলিয়নটি ইংলিশ চ্যানেল বিজয়ী সাঁতারু আঃ মালেকের নামে এবং আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিং পুলটি করা হয়েছে অবিরাম সাঁতারে বিশ্বখ্যাত সাঁতারু অরুণ নন্দীর নামে। অরুণ নন্দীর নামে করা সেই সুইমিং পুলটি পানির অভাবে বন্ধ রয়েছে ১২ মাস ধরে। জেলা ক্রীড়া সংস্থা সুইমিংপুল ও গভীর নলকূপের বিদ্যুতের বিল বাবদ বকেয়া রেখেছে প্রায় সিকি কোটি টাকা।
|আরো খবর
চাঁদপুর জেলা শহরে যে কোনো পর্যটক কিংবা ক্রীড়াবিদ আসুক না কেন তারা স্টেডিয়ামে সাবেক এই দুই সাঁতারুর নামে দু’টি স্থাপনা দেখতে পাবে। অথচ এই দুই ক্রীড়াবিদের মৃত্যুর দিন কিংবা তাদের স্মরণীয় কিছু মুহূর্ত তুলে ধরছে না বতর্মান প্রজন্মের কাছে চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা। যেই সুইমিংপুলের জন্যে নিজের জীবনের শেষ সময়টুকুতে অক্লান্ত শ্রম দিয়েছেন অরুণ নন্দী, সেখানে শহরের মূল সড়ক থেকে বড় একটি গেটের ভেতর দিয়ে প্রশস্ত রাস্তা পার হয়ে যেতে হতো। তিনি মারা যাওয়ার সাথে সাথেই জেলা ক্রীড়া সংস্থা সেই গেটটি ভেঙ্গে জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয় বাড়ানোর জন্যে ৪র্থ তলাবিশিষ্ট মার্কেট নির্মাণ করেন। পরে সেই মার্কেটের দোকানগুলো জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্যদের মাঝে বণ্টন করে দেয়া হয়।
চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামের একপাশে এ সুইমিংপুলটি। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মরহুম দেওয়ান আরশাদ আলীর সময়ে এ সুইমিংপুলটি নির্মাণ করা হয়। ওই সময় চাঁদপুর পৌরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন শফিকুর রহমান ভূঁইয়া। জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রথা অনুযায়ী জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাঁতার উপ-কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পৌর মেয়র (সাবেক চেয়ারম্যান) পালন করবেন। সে অনুযায়ী সাঁতার উপ-কমিটির সভাপতি ছিলেন চাঁদপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান ভূঁইয়া, যার সাথে পৌরসভার কাউন্সিলর ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সেক্রেটারী দেওয়ান আরশাদ আলীর সম্পর্ক ছিলো বন্ধুত্বের। আর এই বন্ধুত্বের কারণে সুইমিংপুলের পানির জন্যে স্থাপিত গভীর নলকূপ থেকে সুইমিংপুলে পানি দেয়ার পাশাপাশি মাদ্রাসা রোড, চেয়ারম্যান ঘাট ও বঙ্গবন্ধু সড়কসহ বিভিন্ন স্থানের পৌরবাসীদের জন্যে পানি সরবরাহের সুবিধা নেয় পৌর কর্তৃপক্ষ।
চাঁদপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান শফিক ভূঁইয়ার আমলে বেশ কিছুদিন ভালোই চলছিল এ সুইমিংপুলটি। এর কিছুদিন পর ঠিকমতো পরিচালনার অভাবে সুইমিংপুলটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় জেলা ক্রীড়া সংস্থা। বেশ ক’বছর বন্ধ থাকার পর জেলা প্রশাসক প্রিয়তোষ সাহা সুইমিং পুলটির সংস্কার করলে চাঁদপুরের সাবেক সাঁতারুদের দাবির পরিপেক্ষিতে ২০১২ সালে গঠিত চাঁদপুর সাঁতার পরিষদ জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে মাসিক ভাড়ায় সুইমিংপুলটি ভাড়া নেয়। আর দেখাশোনার দায়িত্ব চাঁদপুর সাঁতার পরিষদের পক্ষে সাবেক সাঁতারু ছানাউল্লাহকে দেয়া হয়। আর তখন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাঁতার উপ-কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন চাঁদপুর পৌরসভার তৎকালীন মেয়র ও বর্তমানে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহামেদ। তাঁর আমলেও সুইমিংপুল লাগোয়া গভীর নলকূপ থেকে সুইমিংপুলের পানি সরবরাহ করা হতো এবং পৌরবাসীকে পানি দেয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে এই নলকূপটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সেটি থেকে সুইমিংপুলের জন্যে কোনো পানির ব্যবস্থা করতে পারছে না জেলা ক্রীড়া সংস্থা।
সুইমিং পুলে কর্মরত সাবেক সাঁতারু ছানাউল্লাহ খানের সাথে অরুণ নন্দী সুইমিং পুল সম্বন্ধে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০২০ সালের জুলাই মাস থেকে আমাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। আগে পৌরসভার মাধ্যমে জেলা ক্রীড়া সংস্থা সুইমিংপুলের পানির ব্যবস্থা করে দিতেন। ১২ মাস ধরে সুইমিংপুলে কোনো পানি নেই। মাঝখানে আমরা মাদ্রাসা রোডের পানির লাইন থেকে পানির ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু সেটিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সুইমিংপুলের পাশের ডিপ থেকে আমাদের পুলের পানিসহ আশ-পাশের এলাকার মানুষের জন্যে যে পানির ব্যবস্থা করা হতো সেটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর পৌরসভা আশ-পাশের মানুষের জন্যে ঘোড়ামাড়া সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকে পানির ব্যবস্থা করে দেয়ায় নষ্ট হয়ে যাওয়া এ ডিপটি আর ঠিক করেনি। আমরা পানির অভাবের কারণে আগ্রহীদের সাঁতার প্রশিক্ষণ দিতে পারছি না।
এ প্রতিবেদক রোববার দুপুরে চাঁদপুর শহরের নতুনবাজারস্থ বিদ্যুৎ বিভাগের অফিসে গিয়ে জানতে পারেন, যেই মিটার দিয়ে সুইমিংপুলের ডিপটি পরিচালিত হতো সেটি বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে অনেক টাকা দেনা রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যুৎ বিভাগের একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী জানান, সবশেষ ২০১৫ সালের ২৮ শে জুন জেলা ক্রীড়া সংস্থা এ মিটারের টাকা বাবদ জমা দিয়েছিলো ৫ লাখ ৬ হাজার ৪৭১ টাকা। এরপর আর কোনো টাকা জমা দেয়া হয়নি। বর্তমানে জেলা ক্রীড়া সংস্থা নাকি বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে দেনা রয়েছে ২৫ লাখ টাকা।
চাঁদপুর অরুণ নন্দী সুইমিং পুল কবে চালু হচ্ছে ও বকেয়া বিদ্যুৎ বিলসহ বিভিন্ন বিষয়ে রোববার বিকেলে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবুর সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ২০০৫ সাল থেকেই সুইমিংপুলের বিদ্যুতের কোনো বিল জমা দেয়া হয়নি। আর জেলা ক্রীড়া সংস্থার নামে দুটি মিটার রয়েছে। অচিরেই আমরা সুইমিংপুলের পানির ব্যবস্থা করবো। প্রয়োজন হলে জেনারেটর দিয়ে হলেও সুইমিংপুলে পানির ব্যবস্থা করবো, যাতে সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়। আর ২০০৫ সাল থেকে এই ডিপ থেকেই ওই সময়ের কাউন্সিলর তার ভোটারদের সুবিধার্থে পৌরসভার সাথে মিল করে পানির ব্যবস্থা করেছিলেন, কিন্তু পৌরসভা থেকে কোনো বিল নেয়া হয়নি বা কোনো মিটার স্থাপন করা হয়নি। পৌরসভা এই ডিপ থেকে জনগণকে পানির ব্যবস্থা করতে গিয়ে সুইমিংপুলের বিদ্যুৎ মিটার ব্যবহার করেছে। আর বতর্মান মেয়র সাহেবের সাথে আমার এ বিষয়ে এখনও পুরোপুরি আলাপ হয়নি। তিনি ক’মাস আগে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন। জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী কমিটির সভায় এ বিষয়টি তুলে ধরা হবে। তবে এটা বলতে পারি যে, সহসাই আবারো সুইমিংপুল চালু হবে। বর্তমানে করোনার জন্যে অনেক কাজই করতে পারছি না। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এবং গ্যালারীর টেন্ডার হলে সুইমিংপুলের সকল কাজ শুরু করা হবে।