প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৫, ২২:২৩
ভবিষ্যতে সুষ্ঠু রাজনীতি ও ক্রীড়াঙ্গনের মধ্য দিয়ে সমাজের উন্নয়নে কাজ করতে চাই

মতলবের কৃতী ফুটবল খেলোয়াড় ও সংগঠক মেজবাহ উদ্দিন মেজু। প্রায় ৪৫ বছর যাবৎ তিনি ক্রীড়ার সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন ও ভবিষ্যতেও থাকবেন। তিনি স্কুল, কলেজ পর্যায়ে বিভিন্ন টীমে অংশ গ্রহণ করে সেরা খেলোয়াড় ও চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। জাতীয় লীগ খেলে মতলবের জন্যে সুনাম বয়ে এনেছেন। ক্রীড়াঙ্গনে উল্লেখযোগ্য, স্মরণীয় কৃতিত্ব ও বিশেষ অবদান রাখায় দৈনিক চঁাদপুর কণ্ঠের ‘ক্রীড়াকণ্ঠে’র পক্ষ থেকে মেজবাহ উদ্দিন মেজুর একান্ত সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। এটি গ্রহণ করেন চঁাদপুর কণ্ঠের মতলব ব্যুরো ইনচার্জ রেদওয়ান আহমেদ জাকির। তিনি বলেছেন, ভবিষ্যতে সুষ্ঠু রাজনীতি ও ক্রীড়াঙ্গনের মধ্য দিয়ে সমাজের উন্নয়নে কাজ করতে চাই।
সাক্ষাৎকার গ্রহণকালে তঁাকে যে সকল প্রশ্ন করা হয়, সেসবের তিনি যে উত্তর দিয়েছেন নিচে তা হুবহু পত্রস্থ করা হলো---
ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনার খেলোয়াড়ি জীবন কবে থেকে শুরু? কতোদিন মাঠে সক্রিয় ছিলেন?
মেজবাহ উদ্দিন মেজু : আমার খেলোয়াড়ি জীবন শুরু হয় প্রাইমারি স্কুল জীবন থেকেই। আমি ছোটকাল থেকেই ফুটবল, সঁাতার, দৌড়, হাই জ্যাম্প, লং জাম্পে পারদর্শী ছিলাম। মাঝে মধ্যে বড়োদের সাথ ভলিবল খেলতাম।আমাদের স্কুল লাইফে ক্রিকেট পাইনি। কলেজ জীবনে ক্রিকেট খেলেছি। তবে ফুটবলটাকেই ভালোবেসেছি, ফুটবলও আমাকে যাদু করেছে, তার প্রেমিক বানিয়েছে। আমি মাঠে সক্রিয় ছিলাম বলতে ফুটবলের বিভিন্ন লিগে, টুর্নামেন্টে খেলেছি প্রায় ১৪ বছর। তবে সেই ছোট্ট বেলা থেকে এখনো আমি ক্রীড়াঙ্গনেই আছি একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসাবে। নতুনদেরকে উৎসাহ প্রদানে আমি এখনো মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ম্যাচে মাঠে নামি, ফুটবল খেলি। আমি চঁাদপুর জেলা লিগসহ ঢাকা লিগে খেলেছি ১৪ বছর। আর ক্রীড়াঙ্গনে সক্রিয় আছি প্রায় ৪৫ বছর।
ক্রীড়াকণ্ঠ : ক্রীড়াঙ্গনে আপনার উল্লেখযোগ্য সাফল্য কী কী?
মেজবাহ উদ্দিন মেজু : ১৯৮০ সালে মতলব জে বি পাইলট হাইস্কুল দলের হয়ে চঁাদপুর স্টেডিয়ামে স্কুলভিত্তিক জোন খেলায় ফরিদগঞ্জ স্কুলকে হারিয়ে আমরা চ্যাম্পিয়ন হই এবং ওই খেলায় আমাকে সেরা খেলোয়াড় হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়। আমি স্কুলে পড়াবস্থায় ১৯৮২ সালে চঁাদপুর স্টেডিয়ামে জেলা লিগে চঁাদপুর আবাহনী ক্রীড়া চক্রের হয়ে খেলি। তখন চঁাদপুর আবাহনী ক্রীড়া চক্রের সভাপতি ছিলেন বীর মুক্তিযুদ্ধা এম এ ওয়াদুদ। জাতীয় শেরে বাংলা কাপে চঁাদপুর জেলা দলের একজন সদস্য হিসেবে সুনামগঞ্জ জেলা স্টেডিয়ামে কুমিল্লা জেলা দলের বিরুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। একজন তরুণ ও উদীয়মান খেলোয়াড় হিসেবে ১৯৮৭ সালে ঢাকা তৃতীয় বিভাগ ফুটবল লীগে ঐতিহ্যবাহী মুসলিম ইনস্টিটিউট দলের হয়ে লিগে অংশগ্রহণ করি।
১৯৮৮-৮৯ সালে ঢাকা দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল লিগে বাংলাদেশ ওয়াপদা ও বাড্ডা জাগরণী ক্লাবের পক্ষ হয়ে লিগে অংশগ্রহণ করি।
১৯৯০ সালে জাতীয় প্রথম বিভাগ লিগে ঐতিহ্যবাহী ফকিরাপুল ইয়াংমেন্স ক্লাবের হয়ে ঢাকা লিগে অংশগ্রহণ করি। ১৯৯১-৯২ সালে ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে ঢাকা আরামবাগ ক্রীড়া চক্রের হয়ে ঢাকা লিগে অংশগ্রহণ করি।
বিশ্বকাপ ফুটবল দলের খেলোয়াড় ইরানের গোলরক্ষক নাসের হেজাজী যখন ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কোচ হিসেবে ছিলেন, তখন তিনি সারা বাংলাদেশ থেকে যাচাই-বাছাই করে ঢাকা মোহামেডানের অনূর্ধ্ব ১৯ টিম করেছিলেন ২৩ জন খেলোয়াড় নিয়ে। আমি সেই দলের একজন খেলোয়াড় হিসেবে জায়গা করে নিয়েছিলাম। এখানে উল্লেখ্য যে, কোচ নাসের হেজাজী সারা বাংলাদেশ থেকে ৬ হাজার ফুটবলারকে এনে মিরপুর স্টেডিয়ামে ৬ মাস ক্যাম্প করিয়ে সেখান থাকে মাত্র ২৩ জন বাছাই করে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অনূর্ধ্ব ১৯ টিম গঠন করেন। আমি
চঁাদপুর জেলার একজনই এই দলে জায়গা করে নেওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনার মূল্যায়নে মতলবের ক্রীড়াঙ্গনের সোনালী অধ্যায় কোন্ সমায়টা?
মেজবাহ উদ্দিন মেজু : অনেক সুন্দর একটি প্রশ্ন করার জন্যে ধন্যবাদ। তবে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমি যদি সরাসরি মুখে বলতে পারতাম (ইন্টারভিউর মতো), তাহলে স্মৃতিচারণ করে আত্মতৃপ্তি পেতাম। তারপরেও বলছি...আমার দৃষ্টিতে মতলবের ক্রীড়াঙ্গনের সোনালী সময় ছিলো ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯০ সাল, যেটি স্বপ্নের মতো। ঐ সময় এক ঝঁাক তারকা ছিলো, যারা চঁাদপুর জেলা ফুটবল লিগ, ডিসি কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট সহ ঢাকা, চিটাগাংয়ে জাতীয় লিগগুলোতে বিভিন্ন ক্লাবে খেলেছেন ও নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সারা দেশে মতলবের জন্যে সুনাম বয়ে এনেছেন। এই সময় আমরা দেখেছি, ঐতিহ্যের ধারক বাহক মতলব নিউ হোস্টেল মাঠ, এই মাঠে একটানা ২-৩ মাসব্যাপী ফুটবল উৎসব চলতো। তৎকালীন মতলব উত্তর ও দক্ষিণের ২২ টি ইউনিয়ন নিয়ে আন্তঃস্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট হতো। যেটিতে স্কুলগুলোর বাধ্যতামূলক ছিলো। এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করতেন মতলব দক্ষিণ থানা নির্বাহী অফিসার, মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মতলব জে বি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহ বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকগণ, যঁাদেরকে নিয়ে সমন্বয় করে একটি টুর্নামেন্ট পরিচালনা কমিটি করা হতো। আমি তখন পঞ্চম শ্রেণি বা ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি। তখন যা দেখতাম, প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে ২ টার মধ্যে মতলব নিউ হোস্টেল মাঠ হাজার হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ হয়ে যেতো। মাঠের চারপাশের বাড়ি ঘরের চালের উপরে, গাছের ডালে শত শত মানুষ বসে খেলা দেখতো। এক একটি ম্যাচে কম করে হলেও ৮-১০ হাজার দর্শক উপস্থিত হতো। মাঠের দুপাশে দুদলের খেলোয়াড়দের সাথে বহুরূপী ড্রেস পরে ব্যান্ড পার্টির বাদকরা চমৎকার সুর দিয়ে গান বাজিয়ে দর্শকদেরকে সারাক্ষণ মুগ্ধ করে রাখতো। আরো একটি মজার বিষয় ছিলো, টুর্নামেন্ট চলাকালে প্রতিদিন মতলব বাজারের আনাচে কানাচে রিক্সা দিয়ে হারানো দিনের হৃদয় ছেঁায়া গান বাজিয়ে মাইকিং হতো। গ্রামে নৌকা দিয়ে মাইকিংয়ে প্রচারণা হতো, যা এখনো মনের স্মৃতিতে স্বপ্নের মতো ভাসছে। এই নিউ হোস্টেল মাঠে অনেক বড়ো বড়ো ফুটবল টুর্নামেন্ট ঐ সময় হতো। এক এক দলে ঢাকা, কুমিল্লা সহ দেশের তৎকালীন সেরা সেরা খেলোয়াড়দেরকে হাজার হাজার টাকা দিয়ে নিয়ে আসা হতো। আর আসবেই না কেন? ওই সময় টিম রাখতেন থানা নির্বাহী অফিসারের পক্ষে টিএনও একাদশ, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পক্ষে থানা একাদশ, মতলব আইসিডিডিআরবি একাদশ, মতলব কলেজ একাদশ, মতলব বাজার বণিক সমতি, মতলব রিক্সা শ্রমিক একাদশ, মতলব কিশোর ব্রাদার্স ক্লাব, আল-আমিন ক্রীড়া চক্র, মতলব ইলেভেন স্টার, বাইশপুর একাদশ, নবকলস একাদশ সহ আরও কত সংগঠন-- এখন মনে পড়ছে না।
১৯৮০ থেকে ৯০ সাল পর্যন্ত সময়টা মতলব ফুটবলের সোনালী যুগ বা সময়। এটা বলছি এ কারণেই যে, ঐ সময় মতলবের অনেক তারকা ঢাকা, চিটাগং সহ বিভিন্ন লিগে বা টুর্নামেন্টে খেলেছেন এবং মাঠ কঁাপিয়েছেন; দর্শকদের মনে রাখার মতো তঁারা হচ্ছেন--পরিতোষ সাহা, মরহুম মোহাম্মদ আলী, মহসিন রেজা, জহিরুল ইসলাম আলেক, জাকির হোসেন সাগর (বড়ো সাগর), আনিসুর রহমান সুরুজ, আমি মো. মেজবাহ উদ্দিন মেজু, আবু সুফিয়ান, এ কে এম আজাদ, আক্তার হোসেন লিটন, দেবব্রত সাহা দেবু, বাদল দাস, প্রিয়তোষ সাহা, উত্তম সাহা, গৌতম সাহা, রিপন, গোলাম কাদের মুকুল, সাইদুল করিম শ্যামল, ছোট সাগর, হাফিজ খান শাহিন, মান্নান, প্রাণতোষ, সালাউদ্দিন, উজ্জ্বল, পিন্টু, স্বপন, মোস্তফা গাজী সহ আরও অনেকেই। এখানে মজার বিষয় ছিলো যে, আমি উপরোল্লিখিত যে সকল খেলোয়াড়ের নাম বলেছি, তাদের মধ্য থেকে বেস্ট ইলেভেন দিয়ে বাংলাদেশের যে কোনো টিমের সাথে লড়াই করার মতো ক্ষমতা রাখতো। ঐ সময় অনেক টুর্নামেন্টে তা মতলবের সোনালী অতীত টিম প্রমাণ রেখেছে। স্মৃতির পাতায় খুঁজলে আমার লিখাগুলো প্রমাণ দিবে। আমার মনে হয় না সেই সোনালী অতীত আর ফিরে আসবে। যা দেখে আগামীর প্রজন্ম মাঠে ফিরবে, খেলবে, হাসবে, একে অপরকে ভালবাসবে।
আমি সোনালী সময় নিয়ে বলা শেষ করার আগে, আমি যদি ওনাদেরকে নিয়ে না বলি, তাহলে আমার খেলাধুলার অতীত মিথ্যা হবে। যে ক’জন বড়োভাই আমাদের আগে মতলবের ক্রীড়াঙ্গনকে আলোকিত রেখেছেন এবং আমরা যাদের খেলা দেখে নিজকে খেলোয়াড় হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছি, তঁারা হলেন-- শ্রদ্ধেয় সাবেক ফুটবলার ও অ্যাথলেট মো. গোলাম নবী বাদল, মরহুম মোহাম্মদ আলী, গোলকিপার মো. আলাউদ্দিন, ফুটবলার মিয়া মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, জাতীয় সাবেক ভলিবল প্লেয়ার, অ্যাথলেটে মো. জাহাঙ্গীর, ভলিবল প্লেয়ার আব্দুল কাইয়ুম খান, গোলকিপার মরহুম মানিকুর রহমান মানিক, ফুটবলার পংকজ দা প্রমুখ। আমি তঁাদের সকলকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : মতলবে আগের মতো ক্রীড়া চর্চায় এগিয়ে নেই। আপনার দৃষ্টিতে কারণ কী?
মেজবাহ উদ্দিন মেজু : শুধু মতলব নয়, বিগত ১৫ টি বছর দেশের রাজনৈতিক অবস্থান, সামাজিক অবক্ষয়, অস্থিরতা, দুর্নীতি, রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতা ও নেতৃত্বের অভাবে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে সম্পূর্ণভাবে ধস নেমেছে। তার জ্বলন্ত প্রমাণ কাজী সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের অবস্থা, যা আপনাদের জাতীয় প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে বারবার প্রমাণিত হয়েছে, প্রকাশ পেয়েছে। তারপরও আমি বলবো, বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটিগুলোতে রাজনৈতিক নেতাদেরকে না বসিয়ে ক্রীড়া সংগঠক বা ক্রীড়াবিদদেরকে দায়িত্ব দিলে আমার বিশ্বাস, খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের দেশ এবং সমাজ সেই আশির দশকের মতো ক্রীড়াঙ্গন ফিরে পাবে।
মতলবের খেলাধুলা নিয়ে আমি বলবো, অন্যান্য উপজেলার চেয়ে মতলবের খেলাধুলার পরিবেশ আগের চেয়ে উন্নত এবং ক্রীড়াঙ্গন সক্রিয়। কারণ, আমাদের উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমজাদ হোসেন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সালেহ আহমেদ দুজনই ভালো ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ও ক্রীড়া সংগঠক। পাশাপাশি মতলবের কৃতী ফুটবলার গোলাম কাদের মুকুল, লিটন, মোহাম্মদ মোদাচ্ছের, যারা এখনও নিয়মিত মাঠে যাচ্ছে এবং তরুণ খেলোয়ারদেরকে প্র্যাকটিস করাচ্ছে, তাদেরকে বিভিন্নভাবে মাঠে থাকার জন্যে সকল ধরনের উৎসাহ প্রদান করছেন।
এখানে আমার একটি পরামর্শ থাকবে যে, মতলব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মতলব উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী কমিটি এবং সিনিয়র খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে উপজেলার সকল স্কুলকে বাধ্য করে আন্তঃ স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টগুলো চালু করা হলে মতলবের সেই হারানো ক্রীড়াঙ্গন ফিরিয়ে আনা সম্ভব এবং অনেক উদীয়মান খেলোয়াড় তৈরি করা সম্ভব।
ক্রীড়াকণ্ঠ : রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার কারণে আপনি ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে যতোটুকু ভূমিকা রাখার কথা, সেটা রাখতে পারেননি, না অন্য কারণ?
মেজবাহ উদ্দিন মেজু : একটি কথা আছে ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও বারা বান্দে।
কথাট কেন বললাম, দেখেন, আমি সরাসরি রাজনীতির সাথে জড়িত, তাই বলে খেলাধুলা থেকে এক পাও পিছিয়ে নেই। বিগত অবৈধ সরকারের আমলে চঁাদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা বা মতলব উপজেলা ক্রীড়া সংস্থায় বিরোধী দলের কোনো ব্যক্তি বা সংগঠক, শুধু আমি নই, আমরা কোনো ক্রীড়া সংগঠক বা ক্রীড়াবিদ মাঠে কাজ করার সুযোগ পাইনি। সকলেই রাজনৈতিক হয়রানির শিকার। তাই ইচ্ছে থাকলেও মতলবের ক্রীড়াঙ্গনে কাজ করার সুযোগ পাইনি। আপনাদের জানার জন্যে আমি বলছি, বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি আয়োজিত সারাদেশব্যাপী আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট হচ্ছে। বিভাগীয় খেলা শেষ পর্যায়ে। যে টুর্নামেন্ট কমিটির আহ্বায়ক বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য জনাব হাবিবুন নবী খান সোহেল এবং সদস্য সচিব জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সম্মানিত আহ্বায়ক জনাব আমিনুল হক। আমি উক্ত টুর্নামেন্ট কমিটির একজন সম্মানিত সদস্য। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত জিয়া আন্তঃ থানা ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০২৫ চলমান। যেটি বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ফুটবলার আমিনুল হকের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। উক্ত টুর্নামেন্ট কমিটির আমি সম্মানিত একজন সদস্য। ঐতিহ্যবাহী ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের বর্তমান কার্যকরী কমিটিতে আমি সহ- সাধারণ সম্পাদক এবং ফুটবল উপ-কমিটির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। আমি আপনাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছি যে, একজন ফুটবলার বা ক্রীড়া সংগঠক বাংলাদেশের যে কোনো রাজনৈতিক মঞ্চে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ কখনো ক্রীড়াঙ্গনে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা বা অবস্থান রাখে না, তা যুগে যুগে প্রমাণিত। খেলাধুলার সাথে জড়িত রাজনৈতিক নেতাদেরই সম্ভব ক্রীড়াঙ্গনকে ভালো কিছু দেওয়ার। তারপরও আমি বলবো, আমি ক্রীড়াঙ্গনে ছিলাম, আছি এবং থাকবো, যতোদিন বেঁচে থাকি, ইনশাল্লাহ।
ক্রীড়াকণ্ঠ : উপরোল্লিখিত প্রশ্ন সমূহের বাইরে আপনার কোনো বক্তব্য থাকলে বলতে পারেন।
মেজবাহ উদ্দিন মেজু : আমি আমার জীবনের পুরোটা সময়ই ক্রীড়াঙ্গনে সময় দিয়েছি। জীবনে সামাজিক, ক্রীড়া সংগঠনের অনেক পদ বহন করেছি। আমি অতীতে যাবো না। বর্তমানে আমি চঁাদপুর জেলা সোনালী অতীত ক্লাবের সম্মানিত সদস্য, মতলব আল-আমিন ক্রীড়া চক্রের সহ-সভাপতি, মতলব সোনালী অতীত ক্লাবের নবগঠিত কমিটির সভাপতি, সূর্য তরুণ স্পোর্টিং ক্লাবের উপদেষ্টা, মতলব উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী কমিটির সম্মানিত সদস্য, ঐতিহ্যবাহী ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কার্যকরী কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব ফুটবল উপ-কমিটির সাধারণ সম্পাদক (ফুটবল সম্পাদক)-এর দায়িত্ব পালন করছি।
আমি শুধু আমার জায়গা থেকে বলবো।... সবার আগে.....বাংলাদেশ।
রাজনৈতিক দল ছাড়া একটি দেশ চলতে পারে না। একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন ছাড়া একটি দেশ চালানো অসম্ভব, সঠিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না। আসুন, আমরা রাজনীতি করি, তবে অন্ধ রাজনীতি নয়। আসুন আমরা সকলে মিলে একটি দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ি, নেশামুক্ত সমাজ গড়ি, সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন গড়ি, মাদকমুক্ত ক্রীড়াঙ্গন গড়ি।
একজন খেলোয়াড় হিসেবে ক্রীড়াঙ্গনে বিভিন্ন সময়ে অবদান ও সফলতার স্বীকৃতি স্বরূপ মতলব ক্লাব পদক-২০০০, সাপ্তাহিক আজকের মতলব পদক-২০০৮, শেরে বাংলা পদক-২০০৮, সাপ্তাহিক ঊষা পদক-২০০৮, বাবিসাস অ্যাওয়ার্ড-২০০৮, জুড়ি সম্মাননা সৃজনশীল একাডেমি ২০০৯ সম্মাননা অর্জন করি।
আমি আমার সাক্ষাৎ কারের শুরুতেই আমার পারিবারিক অবস্থান ধরেছি তুলে। আমি ঢাকা নয়াপল্টন মসজিদ গলিতে থাকি। আমি, আমার স্ত্রী আকলিমা আক্তার জুলেট, একমাত্র সন্তান মেয়ে আয়েশা বিনতে মেজবাহ--একটি ছোট ও সুখী পরিবার। আয়েশা কোরআনে হাফেজ হচ্ছে। সকলে ওর জন্যে দোয়া করবেন। আমার স্ত্রী নয়াপল্টনে অবস্থিত ‘সুবহে সাদিক মডেল মাদরাসা’র পরিচালক পদে দায়িত্বরত।
আমি আমার হাউজিং ব্যবসার পাশাপাশি ঢাকা নয়াপল্টন মসজিদ গলিতে অবস্থিত ‘সুবহে সাদিক মডেল মাদরাসা’র প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক।
আমি পরিশেষে বলতে চাই, আমার বলাতে যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, আপনারা সকলই আমাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
আমি সাংবাদিক রেদওয়ান আহমেদ জাকিরকে ধন্যবাদ জানাই। কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমার মতো এই ক্ষুদ্র মানুষটিকে পাঠকদের কাছে উপস্থাপন করার জন্যে। আরো কৃতজ্ঞতা চঁাদপুরের সকলের প্রিয় মুখ, প্রিয় মানুষ সম্পাদক শাহাদাত ভাইকে। সকলেই আমাদের জন্যে দোয়া করবেন। আপনারা সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।
ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনার জন্ম, জন্মস্থান, পিতা-মাতা, জীবন সংগ্রাম ও পরিবার সম্পর্কে কিছু বলুন।
মো. মেজবাহ উদ্দিন মেজু : আমি সাবেক ফুটবলার, ক্রীড়া সংগঠক, রাজনীতিবিদ। পিতা-আব্দুল বাসেত আহাম্মেদ, তিনি সরকারি চাকুরিজীবী ছিলেন। মাতা-বদরুননেসা, একজন গৃহিণী। ঠিকানা- গ্রাম-উত্তর নলুয়া, পো : বোয়ালিয়া বাড়ি, পৌরসভা-মতলব, জেলা- চঁাদপুর। জন্ম- ০১-০৬-১৯৬৮। ভাই-বোন ৯ জন। আমাদের পরিবারের প্রথম সন্তান আমাদের সকলের বড়ো ভাই, তাকে আমরা কেউ দেখিনি। কারণ তিনি জন্মাবার কয়েক ঘন্টা পর মারা যান (ইন্না লিল্লাহে.... রাজিউন)। বর্তমানে আমরা ২ ভাই, ৬ বোন। আলহামদুল্লাহ, সকলে জীবিত আছি। আমরা সকলেই ক্রীড়া ও সংস্কৃতিমনা। আমার বাবা মৃত আব্দুল বাসেত আহমেদ ছাত্র জীবনে একজন ভালো ভলিবল প্লেয়ার ছিলেন। শুধু তাই নয়, বাবার মুখে শুনেছি, স্কুল জীবনে অনেক মঞ্চ নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। বাবা ভালো কেরাম বোর্ড খেলোয়াড় ছিলেন। আমরা বড়ো হয়ে বাবার সাথে অনেকবার কেরাম বোর্ড খেলেছি। নজরুল গীতি বাবার খুব প্রিয় ছিলো। আমার মরহুমা মা জীবিত অবস্থায় একজন সৎ ও সুন্দর মনের মানুষ ছিলেন। তিনি জীবিত থাকাবস্থায় একজন পরিচ্ছন্ন, গোছানো, পরোপকারী, আত্মীয়তা পরায়ণ, ধার্মিক গৃহিণী ছিলেন। বোনরা সকলেই স্কুল ও কলেজ জীবনে সংস্কৃতিমনা ছিলেন, গান গাইতেন, গান শুনতেন। এখন তারা সকলেই তাদের সুন্দর পরিবার নিয়ে গৃহিণীর দায়িত্ব পালন করছেন।
এক ভাই মো. মহসিন রেজা। সাবেক ফুটবলার, ক্রীড়া সংগঠক, বর্তমানে তিনি মতলব আল-আমিন ক্রীড়া চক্রের সহ-সভাপতি এবং মতলব উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার ফুটবল রেফারি হিসেবে ক্রীড়াঙ্গনে জড়িত আছেন।