রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:২৬

একান্ত সাক্ষাৎকারে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন

আমি হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তির জনগণের পাশে আছি এবং থাকবো ইনশাআল্লাহ

মোঃ মঈনুল ইসলাম কাজল
আমি  হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তির জনগণের পাশে আছি এবং থাকবো ইনশাআল্লাহ

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, শাহরাস্তি উপজেলার কৃতী সন্তান আনোয়ার হোসেন খোকন দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমাদেরকে দলের আদর্শ মেনে চলতে হবে। দলের যে কোনো সিদ্ধান্তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়া থাকতে পারে, কিন্তু দল যে সিদ্ধান্ত দিবে তা আমাদের মেনে চলতে হবে। আমরা কেউ সিনিয়র কেউ জুনিয়র হতে পারি, কিন্তু দলের প্রয়োজনে যাকে যে দায়িত্ব দেয়া হব, সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে।

সাধারণ নেতা-কর্মীদের দাবির প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, নেতা-কর্মীদের চাওয়া পাওয়া থাকতেই পারে। তারা যে কোনো দাবি করতেই পারেন, সেটি বিবেচনা করবে দল। দল যে সিদ্ধান্ত দিবে আমরা তা মেনে নিবো। জনগণের দাবি দলের কাছে উপস্থাপন করতে হবে এবং দলের সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থা রাখতে হবে।

তিনি বলেন, দলের দায়িত্বে থাকায় বিভিন্ন দেশে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। তাই এলাকায় কাজ করার সুযোগ হয়ে উঠেনি। এখন থেকে আমি সব সময়ই জনগণের সাথে থাকার চেষ্টা করবো। মনে রাখতে হবে, আমরা সবাই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শের সৈনিক।

আল্লাহর কাছে সবাই সমান, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলো মেধার। মেধার বলে কে কতোটুকু কাজ করতে পারে, কে কতোটুকু ডেলিভারি দিতে পারবে সেটাই দেখার বিষয়। আমি অনুরোধ করবো, যারা সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করছেন, যারা সাংগঠনিক দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন, যারা সাংগঠনিক দায়িত্ব দিবেন, সকলের সাথে সকলের সমন্বয় করতে হবে। তিনি বলেন, ঢেঁকি স্বর্গ গেলেও কিন্তু বারাই বানে। আমার কাজ কিন্তু সাংগঠনিক । দলের চেইন অফ কমান্ড কিন্তু আমাদেরকে বুঝতে হবে। নেতা এবং নেতৃত্বের ডেফিনিশনটা আমাদেরকে বুঝতে হবে। একজন নেতা হলো একজন ব্যক্তি। সেই ব্যক্তির চলাফেরা কাজকর্ম যদি আদর্শিক না হয়, তাহলে তার নেতৃত্বটা সঠিক হবে না। তিনি কী করছেন, তার কাজকর্ম কী হচ্ছে তার চিন্তা শক্তি কী এটাই হলো নেতৃত্ব। নেতা যদি আদর্শবান না হয়, তার কৌশল ও বুদ্ধিমত্তা যদি সঠিক না হয়, তাহলে কিন্তু তার নেতৃত্বটা সঠিক হবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দল যে সিদ্ধান্ত নিবে আমরা প্রত্যেকেই দলের সিদ্ধান্তে একমত থাকতে হবে । ব্যক্তির চেয়ে দল বড়ো, দলের চেয়ে দেশ বড়ো। অধিকার প্রত্যেকেরই আছে, অধিকারকে আমরা কেউ ভুলুণ্ঠিত করতে পারবো না, আবার কেউ দমায়ে রাখতে পারবে না। প্রত্যেক নেতা-কর্মীরই সেই অধিকারটুকু আছে। আমরা সবাই দল করি, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দল করবো। ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। আমরা দলের দায়িত্বশীল জায়গায় আছি, আমাদের সিদ্ধান্তটা যেন নিরপেক্ষ সর্বজনীন হয়, আমাদের অবস্থানটা যেন কোনোভাবেই মনিব এবং কর্মচারীর মতো না হয়। আমাদের সিদ্ধান্ত হতে হবে অত্যন্ত নিখুঁত, নিবিড় ও সুসম্পর্কের মাধ্যমে। আমরা একে অপরের ভাই, একে অপরের সহযোগী-- এটা আমাদের মনের মধ্যে আসতে হবে। তাহলেই আমরা আমাদের গন্তব্যে যেতে পারবো।

তিনি বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছিলেন, আমার ভোট আমি দিবো যাকে খুশি তাকে দিবো। সেটি আমরা এখনো বাস্তবায়ন করতে পারিনি। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের নেতা একজন, তিনি হলেন তারেক রহমান। তারেক রহমানের বিকল্প কেউ নেই। তারেক রহমান যে সিদ্ধান্ত দিবেন সেটাই হলো দলের সিদ্ধান্ত ।

আমরা প্রত্যেকেই দলের কর্মী, আমরা কেউ দলের বাহিরে নই।

তিনি জানান, নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ৬টি গুণ থাকতে হবে। প্রথম কমিউনিকেশন, নেতা-কর্মীদের সাথে কার যোগাযোগ ভালো। তারপর আমরা দেখি টিম ওয়ার্ক, কারা সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চায়। সমস্যা সমাধান, কাজ করতে গেলে সমস্যা হবে, কে বেশি নিরপেক্ষভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারে সেটা দেখার বিষয়। এরপর রয়েছে টাইম ম্যানেজমেন্ট, আমার সময় আছে কিনা। নেতা-কর্মীদের কথা শুনবো, তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াবো সেই সময়টুকু আমার আছে কিনা। এই গুণগত দিকগুলো বিচার করে আমরা নেতা নির্বাচন করে থাকি। এখানে কিন্তু কার টাকা কম কার বেশি সেটা মূল্যায়ন করা হয় না। আপনার যোগ্যতা থাকলে আপনি মানি ম্যানেজমেন্ট করতে পারবেন, আপনার যোগ্যতা না থাকলে কোনোটাই পারবেন না।

নেতা-কর্মীদের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা যারা দল করি, আমাদেরকে দলের নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে কাজ করতে হবে। আমরা কার ভাই, কার আত্মীয়, তা না দেখে আমরা দেখবো আমরা সবাই শহীদ জিয়ার সৈনিক।

তিনি বলেন, আমরা সবাই বৃহত্তর হাজীগঞ্জের বাসিন্দা।

নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সবাই দলের সিদ্ধান্তের জন্যে অপেক্ষা করবো, দল যখন যাকে যে দায়িত্ব দিবে আমরা তা পালন করবো। কিন্তু আমি হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তিবাসীর সাথে আছি এবং থাকবো ইনশাআল্লাহ। আমি আপনাদের প্রত্যেককে উদাত্তভাবে আহ্বান করবো, আপনারা দলের প্রতি লয়াল হোন, ব্যক্তির প্রতি লয়াল হবেন না, লয়াল হবেন তারেক রহমানের প্রতি, লয়াল হবেন বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি, লয়াল হবেন বিএনপির প্রতি, আমাদেরকে লয়াল হতে হবে সেখানে। আমাদের মূল জায়গা হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, সেই দল যখন যাকে যেখানে দায়িত্ব দিবে আমাদেরকে সেই দায়িত্ব প্রত্যেককেই পালন করতে হবে। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের নেতার যে স্বপ্ন ছিলো গণতন্ত্র রক্ষা করার জন্যে, আমরা সবাই সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে এক এবং অভিন্ন থাকি। আমার সবার প্রতি আহ্বান থাকবে, আমরা শাহরাস্তি ও হাজীগঞ্জের মানুষ সবাই ঐক্যবদ্ধ ভাবে একসাথে কাজ করি। এখানে আমাদের মধ্যে কোনো ফাটল নেই, আমাদের মাঝে কোনো গ্রুপিং নেই , আমরা সবাই ভাই ভাই, আমরা সবাই একই বন্ধনে আবদ্ধ। আমাদের পারস্পরিক যে সম্পর্ক ছিলো সেটা অতীতে ছিলো, আগামীতেও থাকবে ।

দল এবং নির্বাচন আলাদা জিনিস। আমরা এখন দলের কথা বলবো । দলের নিয়মের ভিতরে থেকে আমরা কাজ করবো। নির্বাচন নিয়ে দলের ক্ষতি করা যাবে না। এমপির কাজ হলো জনগণের সাথে আর নেতার কাজ হলো কর্মীদের সাথে।

তিনি বলেন,

আমরা কোনো প্রকার ঝুট ঝামেলায় না গিয়ে দলের কাঠামো কীভাবে ঠিক করতে পারি, দলের কাঠামোর মধ্যে থেকে কীভাবে কাজ করতে পারি, দলকে কীভাবে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারি, তা নিয়ে কাজ করতে হবে।

আমাদের প্রত্যেককে দলীয় কাঠামোর ভেতর থেকে কাজ করতে হবে, সেটা যেন ব্যর্থ না হয়। আমাদের নেতা তারেক রহমান দলীয় কাঠামোর ব্যাপারে খুবই স্ট্রিক্ট, এ ব্যাপারে কারো কোনো ছাড় নেই।

তিনি জানান, ১৯৮০ সালের জানুয়ারি মাসে সিলেটের বালাগঞ্জে প্রথম শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সাথে আমার দেখা হয়।১৯৮১ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের নিউ হোস্টেলের ছাত্রদলের সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। এরপর আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। সেখানে সলিমুল্লাহ হলের সিনিয়র জয়েন্ট কনভেনর হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। এরপর সলিমুল্লাহ হলের কনভেনর জেলে চলে যাওয়ার পর আমি কনভেনরের দায়িত্ব পালন করি। পর্যায়ক্রমে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের রিজভী আহমেদ ও ইলিয়াস আলী কমিটির একজন সদস্য ছিলাম। পরবর্তীতে ফজলুল হক মিলন ও নাজিম উদ্দিন আলমের কমিটিতে আমি একজন সদস্য ছিলাম। এরপর ছাত্রদলের এনি-সোহেল কমিটির আমি সহ- আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলাম। পরবর্তীতে এই কমিটির আমি আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হই। তারপর সোহেল-পিন্টু কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করি। আমি লন্ডন চলে যাওয়ার পর যুক্তরাজ্য ছাত্রদলের সভাপতি নির্বাচিত হই। পরবর্তীতে যুক্তরাজ্য পেশাজীবী দলের কনভেনর হই। এরপর আমি যুক্তরাজ্য বিএনপি'র সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হই। এরপর আমি যুক্তরাজ্য বিএনপির সর্বকনিষ্ঠ সহ-সম্পাদক নির্বাচিত হই। স্বল্প সময়ে যুক্তরাজ্য বিএনপি'র চতুর্থতম সহ-সভাপতি নির্বাচিত হই। এক পর্যায়ে আমাদের নেতা তারেক রহমান আমাকে ইউরোপে সাংগঠনিক কাজ করার অনুমতি দেন । ২০১৬ সালে আমি কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হই। বর্তমানে আমি বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি ।

তিনি বলেন, আমি রাজনীতিতে কখনো সাবেক ছিলাম না। আমার দল আমাকে যখন যে দায়িত্ব দিয়েছে, আমি তা পালন করতে চেষ্টা করেছি। ইনশাআল্লাহ আগামীতে দলের প্রয়োজনে আমাকে যে দায়িত্ব দেয়া হবে, তা পালন করতে চেষ্টা করবো।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়