বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

বিজয়ের ফুল আজও পাপড়ি মেলেনি

পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
বিজয়ের ফুল আজও পাপড়ি মেলেনি

‘সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ছাড়া রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন। তাই মাটি ও মানুষকে কেন্দ্র করে গণমানুষের সুখ, শান্তি ও স্বপ্ন এবং আশা-আকাঙ্ক্ষাকে অবলম্বন করে গড়ে উঠবে বাংলার নিজস্ব সাহিত্য-সংস্কৃতি’। [বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান]

রক্ত দিয়ে ভূ-খণ্ডের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে এমন জাতি পৃথিবীতে বিরল। শুধু যে ভূ-খণ্ডের স্বাধীনতা রক্তস্নাত হয়ে এসেছে তা নয়, মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতেও সেদিন রক্তস্নানে মেতে উঠেছিলো পূর্ব বাংলা। ভাষার মান রক্ষা করে বাঙালি বায়ান্নের একুশে ফেব্রুয়ারি কার্যত বাঁচিয়েছিলো নিজের সংস্কৃতিকে। কিন্তু সংস্কৃতির প্রতি আগ্রাসন যে আরও ভয়াবহভাবে এগিয়ে আসছিলো তা বোঝা গেলো রবীন্দ্রনাথ নিষিদ্ধ হওয়ার পরে। সঙ্গত কারণেই এ মাটির সোঁদা গন্ধ গায়ে মেখে বেড়ে ওঠা শেখ মুজিবের কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথ বাজতে থাকে অবিরল। কারাবন্দী মুজিবের প্রাণে যেমন অনুরণিত হয় রবীন্দ্রনাথ-নজরুল, তেমনি কারামুক্ত মুজিবকেও পথ দেখায় রবীন্দ্রনাথ-নজরুল। শৈশবে গুরুসদয় দত্ত যেমন শাশ্বত বাঙালি হওয়ার মন্ত্র শিখিয়ে দিয়েছিলেন, তেমনি রবীন্দ্রনাথ-নজরুলও আদ্যোপান্ত বাঙালিয়ানার মন্ত্রে মুজিবকে উদ্দীপ্ত করে চলছিলেন। ফলে শতভাগ বাঙালিয়ানাকে ধারণ করে মুজিব রচনা করতে পেরেছিলেন সাতই মার্চের মহাকাব্যটি। দীর্ঘ নয়মাসের মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামকে তাঁতিয়ে তুলেছিলো আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই যা মূলত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক চেতনার বহ্নিশিখা। জয় বাংলা যেমন আমাদের শব্দব্রহ্ম তেমনি মুক্তির গান আমাদের অনির্বাণ দ্রোহ। রণাঙ্গনের রক্তদান পূর্ণতা পেয়েছিলো সাংস্কৃতিক গণজাগরণের মাধ্যমে। নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ারে যেমন বেজে উঠেছিলো বাঙালির জন্মক্রন্দন, তেমনি প্রতিবেশী ভারতেও বাংলাদেশের ভ্রূণ যেনো বেড়ে উঠছিলো স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গণসঙ্গীতে।

কিন্তু ভূ-খণ্ডের স্বাধীনতা অর্জিত হওয়ার অব্যবহিত পরেই আমরা ভুলে গেলাম সাংস্কৃতিক মুক্তির কথা। আমাদের মধ্যে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা পশ্চিম পাকিস্তানের দোসরেরা বিজয়ের প্রথম দিন থেকেই তক্কে তক্কে থাকলো কীভাবে অর্জিত স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করে দেয়া যায়। বিজয়ের ঠিক পূর্বাহ্নেই তারা যেমন আমাদের সেরা সন্তানদের মেরে ফেলে বাঙালিকে করতে চেয়েছে অথর্ব, তেমনি বিজয়ের পরেও তাদের সেই ঘৃণ্য প্রচেষ্টা থেমে থাকেনি। শুধু শিল্পী-সাহিত্যিক-শিক্ষাবিদের প্রাণ হরণ করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, বরং দেশে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি করে তারা প্রমাণ করতে চেয়েছে নতুন রাষ্ট্রের অসারতা। বিজয়ের ফুলকে ফোটানোর চেষ্টা করার আগেই তাকে অঙ্কুরে বিনাশের চক্রান্ত চলতে থাকে বিশ্বজুড়ে। অনুকূল-প্রতিকূল প্রয়াসের যোগ-বিয়োগে বিজয়ী বাঙালি বিজয়ের স্বরূপ অনুধাবন করতে পারেনি দীর্ঘ সময়৷ যে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পকে জয় করে পূর্ব পাকিস্তানকে বানানো হয়েছিলো বাংলাদেশ, আজ সেই বাংলাদেশের হৃদয় অনভিপ্রেতভাবে রক্তাক্ত। আমাদের সংস্কৃতি আজও মুক্ত হতে পারেনি সাম্প্রদায়িকতার শেকল থেকে। জয় বাংলার সংস্কৃতিকে জিন্দাবাদের সংস্কৃতিতে রূপান্তরের অপপ্রয়াস যেমন আমাদেরকে এগিয়ে যেতে বাধা দিয়েছে তেমনি অতি আধুনিকতার নামে বাঙালি সংস্কৃতিকে বিসর্জন দেওয়ার আত্মঘাতও আমাদের রক্তাক্ত করে তুলেছে। শেকড়-লগ্নতাকে সাম্প্রদায়িকতার মোড়ক লাগিয়ে পাশ্চাত্য ও মরুভূমির সংস্কৃতির প্রতি বৃহত্তর অংশের আগ্রাসনের ফলে আমরা একীভূত হওয়ার পরিবর্তে অহেতুক বিভেদের কূপমণ্ডুকতায় জড়িয়ে পড়েছি।

আমাদের মুক্তবুদ্ধিকে বিশ্বাসবাদিতার আচ্ছাদনে বার বার অবিকশিত রাখার অপপ্রয়াস চলেছে এবং চালানো হচ্ছে। পহেলা বৈশাখকে বাঙালির না করে সনাতনী সম্প্রদায়ের তকমা লাগানোর যে বিভ্রান্তি তা আমাদের বর্ষপঞ্জিকেও দ্বিখণ্ডিত করে ফেলেছে। এ যেনো মধ্যযুগে বাংলাকে হিন্দুয়ানি ভাষারূপে কলঙ্ক লাগানোর মতোই অপপ্রয়াস। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যেমন বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনকে ভারতীয় হিন্দুদের নাশকতা বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলো তেমনি নিজভূমে বাঙালি সংস্কৃতিকেও আজ পরবাসী করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূলে বার বার আঘাত হেনেছে স্বৈরাচারীরা। তাদের গদিকে শক্ত করে ধরে রাখার বাহন হিসেবে সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার করে তারা বাঙালিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। একমুখি শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তে বহুধারার শিক্ষা ব্যবস্থা সত্যিকার অর্থেই আমাদের প্রজন্মকে বিকল ও বিকারগ্রস্ত করে রেখেছে। আমরা শিক্ষার্থী তৈরি করতে পারিনি বরং পরীক্ষার্থী তৈরি করে সাংস্কৃতিক চর্চাকে শিক্ষার পরিপন্থী হিসেবে প্রমাণ করেছি। আজও আমাদের শিক্ষার্থীরা শুদ্ধ সুরে জাতীয় সংগীত গাইতে শেখেনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেখানে সমস্বরে জাতীয় সংগীত গাইবার কথা, সেখানে সংগীতই নিষিদ্ধ হয়ে গেছে কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেবল এক সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ফলে সম্প্রীতি তৈরি হওয়া দূরের কথা বরং অসহিষ্ণুতা ও বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও আজকাল শিক্ষার উৎকর্ষ সাধনের পরিবর্তে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার জন্যে আন্দোলনকে উস্কে দেওয়া হচ্ছে। যেখানে রাজনীতির উদ্দেশ্যই হলো জনকল্যাণ, সেখানে রাজনীতিকেই করা হলো সাম্প্রদায়িকতার সূতিকাগার। অথচ দ্বিজাতিতত্ত্বের মানবতা বিরোধী সিদ্ধান্তকে আজও আমরা টেনে নিতে গিয়ে প্রতিনিয়ত রক্তাক্ত হচ্ছি। সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলগুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধূলিসাৎ করে দিয়ে ধর্মরাজ্য কায়েম করার স্বপ্নে বিভোর। তাদের বিপরীতে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ গঠন করে আমরা বুঝিয়ে দিয়েছি অসাম্প্রদায়িক চেতনা থেকে আমাদের পদস্খলন। পবিত্র সংবিধানকে কলঙ্কিত করে আমরা রাষ্ট্রধর্ম নামে এক উদ্ভট পদবাচ্য জুড়ে দিয়েছি। অথচ একই সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে জায়গা দিয়ে বৈপরীত্যের চরম প্রকাশ ঘটানো হয়েছে।

মুক্তির গানে একটি ফুলকে বাঁচানোর জন্যে যুদ্ধ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। অথচ সেই অঙ্গীকার ভূলুণ্ঠিত হয়েছে নারীকে অন্দরে আটকে রাখার মাধ্যমে। এখনও বাংলাদেশে এমন গ্রাম আছে যেখানে নারীরা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের রায় দিতে পারে না। বিশ্ব যেখানে মহাকাশে নারী বিজ্ঞানী পাঠাচ্ছে আমরা সেখানে নারীর পোশাকের দৈর্ঘ্য মেপে মেপে হয়রান হয়ে যাচ্ছি। এখনও কর্মজীবী নারীদের সমাজে খারাপ চোখে দেখার প্রবণতা দেখা যায়। বঙ্কিম চন্দ্র যেমন নারীর জন্যে ঘর হৈতে আঙিনা বিদেশ বলে উল্লেখ করেছেন সেরকমই নারীকে পরাধীন করে রাখা হয়েছে নানা উছিলায়। কথায় কথায় নারীর ওপর শারীরিক নির্যাতন ও যৌন হয়রানি আজ পোশাকের অজুহাতে জায়েজ করার প্রয়াস দেখা যায়। বিজয়ের তিপ্পান্ন বছরে এসে আমরা আজও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে নির্মাণ করতে পারিনি। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা বুক ফুলিয়ে চলে আর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মানবেতর জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হয়।

বঙ্গবন্ধু নিজে সাংস্কৃতিক মুক্তিহীন বিজয়কে অস্থায়ী ও সাময়িক বলে যে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তা আজও সমানভাবেই প্রাসঙ্গিক। কোনো জাতিকে টেকসইভাবে সমৃদ্ধ করতে হলে আমাদের মুক্তচিন্তাকে প্রাধান্য দিতে হবে। মুক্তচিন্তার প্রসারে সাংস্কৃতিক জাগরণ দরকার। কিন্তু রুচির দুর্ভিক্ষে ভুগতে থাকা এ জাতিকে সঠিক দিশায় ফিরিয়ে আনা আজ খুবই কঠিন। বঙ্গবন্ধু ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের ধারণা সংবিধানে নিশ্চিত করলেও সাংস্কৃতিক পরিচর্যার বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় আমাদের আজও লড়াই করতে হচ্ছে সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্যে। তাঁর সাতই মার্চের ভাষণে যে মুক্তির সংগ্রামের কথা বলা হয়েছে তাতে আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির বিষয়টি হাতের নাগালে এলেও আজও সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্যে প্রগতি বিরোধী শক্তির সাথে লড়তে হচ্ছে বারংবার। যে সাংস্কৃতিক মুক্তির কথা আমরা বলছি তা কেবল নৃত্য-গীত-বাদ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের সেই সংস্কৃতির এক বিরাট অংশজুড়ে আছে রাজনৈতিক শিষ্টতা ও সদাচার। জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং দোষারোপের সংস্কৃতি আমাদের উন্নয়নের ধারাকে তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে বানরের ওঠাকেই মনে করিয়ে দেয়। অন্যরা যেখানে নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কারো হস্তক্ষেপ বরদাশ্ত করে না, সেখানে আমরাই বরং নিজেরা তথাকথিত বিশ্ব মোড়লদের কাছে নালিশ জানাই নিজেদের দেউলিয়াত্বের পরিচয় দিয়ে।

বাঙালির মত আত্মঘাতী জাতি পৃথিবীতে আর দুটি নেই বলেই নিজেদের অর্থ আমরা বিদেশে পাচার করে গড়ে তুলি বেগম পাড়া। হুন্ডিতে টাকা পাঠিয়ে রাষ্ট্রকে বঞ্চিত করি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে। রাষ্ট্রের প্রতি নিজেদের কর্তব্য পালন না করেই আমরা নিজের অধিকার সংরক্ষণে সোচ্চার হই। রাষ্ট্রকে ফাঁকি দেওয়ার জন্যে দালাল-ফড়িয়াদের যে পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয় শুধু তাই-ই যদি রাষ্ট্র পেতো তবে পদ্মাসেতু আরও কয়েকটা বানানো যেতো নিজেদের অর্থে। আমরা দুর্নীতির সংস্কৃতি হতে মুক্ত হতে পারিনি বলেই লাভের গুড় খায় পিঁপড়ায়, বেড়ায় স্বয়ং খেত খেয়ে ফেলে। গরীবের হক মেরে খাওয়ার সংস্কৃতিতে আমরা এখনও বিশ্বে প্রথম দিকে। অথচ আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে বঙ্গবন্ধু বরগুনায় এক ভাষণে বলেছেন, "এখনো কিছুসংখ্যক লোক, এত রক্ত যাওয়ার পরেও যে সম্পদ আমি ভিক্ষা করে আনি, বাংলার গরিবকে দিয়ে পাঠাই, তার থেকে কিছু অংশ চুরি করে খায়। এদের জিহ্বা যে কত বড়, সে কথা কল্পনা করতে আমি শিহরিয়া উঠি।" বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণই আমাদেরকে জানিয়ে দেয় আমাদের দুর্নীতির সংস্কৃতির শেকড় কতো গভীরে প্রোথিত।

প্রতিবছর বিজয় আসে, আসে বিজয়ের স্মৃতি। কিন্তু সাংস্কৃতিক মুক্তি আর আমাদের আসে না। আমরা বার বার অঙ্গীকার করেও দুর্নীতিতে অগ্রগামী থাকি। অসততার সংস্কৃতি আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। বৈষম্যের সংস্কৃতি আমাদের মজ্জাগত। কাউকে ঠকিয়ে আমরাই বড়লোক হতে পারার গর্বে বিশ্বজয় করি। এজন্যেই বাঙালির মুখে মুখে ফিরে, ‘সাত-পাঁচ চইদ্দ, দুইটাকা নইদ্দ’। অর্থাৎ সাতে আর পাঁচে যোগ করলে হয় বারো টাকা। দোকানী হিসাব বুঝায় চৌদ্দ টাকার। ঠিক আছে দুটাকা আর দিও না বলে যে প্রতারণা বাঙালি করে তা সত্যিই বিরল। এমনকি আজকাল ধর্মের দোহাই দিয়ে ঘুষকেও জায়েজ করার প্রচলন হয়ে গেছে। ঘুষ গ্রহীতা ঘুষ দাতাকে বলতে শুনি, ভাই কী দিবেন দেন, আমার প্রার্থনার সময় হয়ে এলো। এভাবেই বাঙালি সুস্থ সংস্কৃতি হতে দূরে রেখে নিজে অপসংস্কৃতির সাগরে মারে ডুব। এতো মন্দের সমুদ্রে আমরা নিমজ্জিত হয়ে গেছি, আমাদের বিজয়ের ফুল তাই আজও ফোটেনি পাপড়ি মেলে। অথচ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পার হওয়া এক জাতি আজ বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিলো। শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক মুক্তি সুদূর পরাহত বলেই আজও এক বিজয়ী জাতির ললাটে জোটেনি বিজয় ফুলের জয়টিকা। বিজয় আজও আমাদের কাছে দিবসেই সীমাবদ্ধ হয়ে আছে, সম্মানে-সমৃদ্ধিতে ধরা দেয়নি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়