প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
বিদ্যালয়টি নামেই শুধু সরকারি
সরকারি শব্দটি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হলেই যে সব কিছু হয়ে যায়, সেটি কিন্তু নয়। তবে অনেক কিছু হয়। যেমন-শিক্ষার্থীরা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কম খরচে পড়তে পারে, শিক্ষকরা সরকারি স্কেলে সকল আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পায়, বদলি হয়ে অন্যত্র যেতে পারে, জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের খবরদারিমুক্ত থাকে ইত্যাদি ইত্যাদি।
|আরো খবর
আশির দশকের মাঝামাঝি সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরী হাইমচরে এনে হাইমচরের একটি বালক ও একটি বালিকা বিদ্যালয়কে এবং সাবেক এমপি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ডাঃ শহীদুল ইসলাম কচুয়ায় এনে কচুয়ার একটি বালক ও বালিকা বিদ্যালয়কে বেসরকারি থেকে সরকারি করতে সক্ষম হয়েছেন। এ চারটি সরকারি বিদ্যালয়ের মধ্যে কচুয়া পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ছাড়া বাকি ৩টি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে মানসম্মত কোনো শিক্ষা নেই বললেই চলে। শিক্ষক সঙ্কটে এ বিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত ক্লাস হয় না এবং সেজন্যে জেএসসি, এসএসসিতে লাগাতার ফলাফল বিপর্যয় ঘটছে।
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে উপরোক্ত তিনটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্যতম কচুয়া শহীদ স্মৃতি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নিয়ে শীর্ষ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। শিরোনাম হয়েছে ‘প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই শিক্ষক সঙ্কটে কচুয়ার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি ॥ সচেতন অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের এ বিদ্যালয়ে ভর্তি করান না’। এ সংবাদে লিখা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১ জুলাই স্থাপিত বিদ্যালয়টিকে ১৯৮৫ সালের ১ জুন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারি করেন। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক আমিনুল হক ১৯৯২ সালে এডিইও পদে প্রমোশন পেয়ে চলে যাওয়ার পর থেকে কখনো ৪ জন, আবার কখনো দুই কিংবা তিনজন শিক্ষক দ্বারা বিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়ে আসছে। প্যাটার্ন অনুসারে একত্রে ৯ জন শিক্ষকের মুখ কখনো দেখার সৌভাগ্য হয়নি শিক্ষার্থীদের। ১৯৮১ সালের আগস্ট মাস থেকে প্রধান শিক্ষকসহ ৪ জন শিক্ষক দ্বারা বিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়ে আসছিলো ২০১৯ সাল পর্যন্ত। ২০২০ সালে পরিচালিত হয় ৩ জন শিক্ষক দ্বারা। ২০২১ সালের ৫ জুলাই প্রধান শিক্ষক নূরজাহান বেগম অবসরে চলে যাওয়ার পর থেকে পরিচালিত হচ্ছে মাত্র ২ জন শিক্ষক দিয়ে। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ দুটি শূন্য রয়েছে। এছাড়া তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর পদ এবং চতুর্থ শ্রেণীর ৪ জন কর্মচারীর মধ্যে ২টি পদ শূন্য রয়েছে। ইংরেজি পড়ানোর মতো কোনো শিক্ষক নেই এ বিদ্যালয়ে।
এটা অবাক হবার মতো বিষয় যে, পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করা কচুয়া শহীদ স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি সরকারি হবার পর তিন যুগ সময় অতিক্রম করলেও এবং কচুয়া উপজেলা পরিষদের লাগোয়া অবস্থানে থাকলেও শিক্ষকের ভয়াবহ সঙ্কট কাটাতে পারেনি। সেজন্যে বিদ্যালয়টি নিজের নামে সরকারি শব্দ যুক্ত করেই তৃপ্ত হয়ে আছে। আর মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানে আছে পিছিয়ে এবং ফলাফল বিপর্যয়ের ফলে আছে যেনো বিধ্বস্ত অবস্থায় । এ অবস্থা থেকে বিদ্যালয়টিকে উদ্ধার না করলে সরকারি নামের লাগাতার অপমান হবে বলে আমরা মনে করি।
শিক্ষা অধিদপ্তর কুমিল্লা অঞ্চলের উপ-পরিচালক রোকসানা ফৌরদৌসী মজুমদার জানান, ‘অন্যত্র থেকে বদলিকৃত চারজন শিক্ষক শীঘ্রই এ বিদ্যালয়ে যোগদান করলে শিক্ষক সঙ্কট দূর হবে।’ আমরাও আশা করি তা-ই। তদবির করে বদলিকৃত শিক্ষকরা যাতে অন্য বিদ্যালয়ে চলে না যায়, সে ব্যাপারে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সচেতনতা প্রত্যাশা করছি।