প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
বীর নিবাস নির্মাণে গতিশীলতা চাই
মুজিব শতবর্ষ এবং একই সাথে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের উপহার হিসেবে ঘর করে দেবার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে বিবেচিত। এই ঘরের নাম দেয়া হয়েছে ‘বীর নিবাস’, যে নামেই যেনো মন ভরে যায়। যাঁরা পরাধীনতার শৃঙ্খল উপড়ে ফেলতে মরণপণ যুদ্ধ করতে গিয়ে বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন এবং স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছেন, তাঁদের বাসস্থানের নাম ‘বীর নিবাস’ ছাড়া আর অন্য কী হতে পারে! সেজন্যে নামকরণের সার্থকতা প্রশ্নাতীত বলে গণ্য।
|আরো খবর
কিন্তু দেশের অনেক স্থানেই এই ঘরগুলো যথাসময়ে নির্মাণের সার্থকতা দেখাতে পারেনি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জে কর্তৃপক্ষীয় এমন ব্যর্থতা নিয়ে মঙ্গলবার চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় ব্যানার হেডিংয়ে ছাপা হয়েছে একটি সংবাদ। এ সংবাদটির হেডিং হয়েছে 'ফরিদগঞ্জে ৯৭জন মুক্তিযোদ্ধার স্বপ্নের বীর নিবাস নির্মাণে ধীরগতি।। অন্যের ঘর কিংবা ছাপরা ঘরে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন অসহায় মুক্তিযোদ্ধাগণ'। এ সংবাদে প্রতিবেদক এমকে মানিক পাঠান লিখেছেন, ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৫ ইউনিয়নে স্থানীয় এমপি মুহম্মদ শফিকুর রহমানের প্রেরিত তালিকা মতে দরপত্র সম্পাদন করে ৯৭ জন অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার জন্যে বীর নিবাস নির্মাণে ১৬ জন ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। ঠিকাদাররা কাজ শুরু করেন গেলো অক্টোবরে। প্রতিটি বীর নিবাস নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। কিন্তু ঠিকাদারগণ যথাসময়ে বিল না পাওয়ার অজুহাতে কোথাও কাজ বন্ধ রেখেছেন, আবার কোথাও ধীর গতিতে চালাচ্ছেন। যে কারণে বীর নিবাস প্রাপ্য মুক্তিযোদ্ধা ও ঠিকাদারের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। আর যথাসময়ে বিল না পাওয়ায় ঠিকাদারের মধ্যে বিরাজ করছে অস্থিরতা।
বীর নিবাস নির্মাণের প্রয়োজনে ৯৭ জন মুক্তিযোদ্ধার অধিকাংশই পূর্বের টিনের ঘরগুলো ভেঙ্গে ঠিকাদারকে জায়গা বুঝিয়ে দিয়েছেন। আর তাঁরা সপরিবারে থাকছেন রান্না ঘরে, অন্যের ঘরে কিংবা পাশে নির্মাণ করা ছাপরা ঘরে। ঠিকাদার যথাসময়ে বিল পেলে ও যথানিয়মে কাজ করলে এক/দেড় মাসের মধ্যে যে ঘর নির্মাণ হবার কথা, সে ঘরের একটিও গত তিনমাসেরও অধিক সময়ে নির্মিত না হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা আছেন চাপা কষ্টে। তাঁরা বীর নিবাসের কাজ শীত মৌসুমে চলার কারণে বিকল্প বাসস্থানে শীতের কষ্ট নিবারণ করতে পারলেও আসন্ন গরমের সময় কীভাবে গরমের কষ্ট নিবারণ করবেন, সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এদিকে কিছু ঠিকাদারের নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে বীর নির্মাণের অপপ্রয়াসে প্রতিবাদ মুখর হয়ে স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। আবার কোনো কোনো ঠিকাদার বীর নিবাসের কাজে লস হবে বলে ভালো কাজের আশ্বাসে সুকৌশলে কিছু মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। যেসব মুক্তিযোদ্ধা অসহায়ত্ব ও নীরবতা প্রদর্শন করছেন, তাদের বীর নিবাসের কাজ হয় বন্ধ রয়েছে কিংবা নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীতে ধীর গতিতে চলছে।
ফরিদগঞ্জে ৯৭ জন মুক্তিযোদ্ধার জন্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারস্বরূপ বীর নিবাস নির্মাণের শ্লথ গতিতে সচেতন ব্যক্তিমাত্রই উদ্বেগ প্রকাশ না করে পারে না। জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়ার দাবি রাখে। দেশের উপজেলাগুলোতে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন যে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় রয়েছে, তার অধিকাংশই দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। ফরিদগঞ্জের এমন কার্যালয়ের আওতাতেই চলছে বীর নিবাস নির্মাণ কাজ। এই কার্যালয়ের কোনোরূপ উদাসীনতা, গাফলতি, তদারকির অভাব কিংবা ছোট-বড় অনিয়মের কারণে বীর নিবাস নির্মাণ নিয়ে জটিলতা তৈরি হলো কি না সেটা খুঁজে বের করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া অতীব জরুরি বলে আমরা মনে করি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ও উপহার সংক্রান্ত যে কোনো প্রকল্প অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য বলেই আমরা জানি। আর সেটা যদি কোনো কারণে অগ্রাধিকারের পরিবর্তে অন্য কিছু পায়, তাহলে সেটা যে কতোটা বিব্রতকর ও হতাশাব্যঞ্জক হতে পারে সেটা আন্দাজ করতে গেলেও কষ্ট হয়।