মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫  |   ৩২ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৩৬

মাদক কোন্ পর্যায়ে গেলে প্রতিবাদ করলেই বাড়িঘরে হামলা হয়!

অনলাইন ডেস্ক
মাদক কোন্ পর্যায়ে গেলে প্রতিবাদ করলেই বাড়িঘরে হামলা হয়!

‘ফরিদগঞ্জে মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলায় বাড়ি ঘরে হামলার অভিযোগ’ শিরোনামে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে যে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে, তাতে লিখা হয়েছে, মাদকের করাল গ্রাসে ছেয়ে যাওয়া ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নে মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলায় একটি বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। রোববার (২৪ আগস্ট ২০২৫) দুপুরে ওই ইউনিয়নের মান্দারতলী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত হনুফা বেগম নামে এক নারী এক ইউপি সদস্যকে প্রধান অভিযুক্ত করে ফরিদগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ ও ঘটনাস্থলে গেলে ভুক্তভোগী হনুফা বেগম জানান, রোববার (২৪ আগস্ট ২০২৫) দুপুরে হঠাৎ করেই একদল লোক তাদের বাড়িতে এসে হামলা ও ভাংচুর করে। এ সময় তারা বাড়ির জানালা ও দরজা ভাংচুর করে। তাদের বাধা দিতে গেলে আমি, আমার মেয়ে নুরুন্নাহার বেগম ও তার স্বামী আরিফ শেখ আহত হই। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো জামাতা আরিফ শেখের বড়ো ধরনের ক্ষতি করা। আরিফ শেখ জানান, এ ইউনিয়নে মাদকে সয়লাব হয়ে গেছে। কিছুদিন পূর্বে আমরা আমিরা বাজারে মাদকের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছি। আমি নিজেও মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার। রোববার (২৪ আগস্ট ২০২৫) সকালে স্থানীয় এক অটোবাইক চালক (পূর্বে থেকে সে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত)কে সন্দেহ হলে তাকে জিজ্ঞাসা করি। কিন্তু সে আমার কথার জবাব না দিয়ে গাড়ি নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে তাকে ধরে তার মুঠোফোন চেক করে মাদক বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে তার গাড়ির মালিককে সতর্ক করি। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুপুরে আমার শ্বশুরের ঘরে তারা দল বেঁধে হামলা ও ভাংচুর করে এবং আমাদেরকেও মারধর করে। স্থানীয় ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফজলুল হক জানান, পাশের ওয়ার্ডের একজন ইউপি সদস্য আমার ওয়ার্ডে এসে এ ঘটনা করেছে। এটি শুনে অবাক হয়েছি। কোনো ঘটনা হলে আমাকে জানাতে পারতো, আমিসহ সমাধান করতাম। তবে প্রকৃত ঘটনার তদন্তপূর্বক ব্যবস্থাগ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। এদিকে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মো. মোহন পাটওয়ারী মানিক বলেন, তারা কেনো আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে আমি কিছুই জানি না। তাদের বাড়িতে হামলার ঘটনার সময় আমি ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ছিলাম না। যদি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্যি হয়, আইন আমাকে যে সাজা দিবে আমি মেনে নেবো। এ ব্যাপারে হনুফা বেগম বাদী হয়ে ইউপি সদস্য মো. মোহন পাটওয়ারী মানিককে বিবাদী করে ফরিদগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। ফরিদগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা লক্ষ্মীপুর জেলার সীমান্তের পাশে অবস্থিত বলে এবং জালের মতো বিস্তৃত অভ্যন্তরীণ সড়ক নেটওয়ার্কের কারণে, সর্বোপরি অনেক বড়ো উপজেলা হবার পরও থানার বাইরে ফাঁড়ি না থাকার কারণে মাদক ব্যবসায় ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানে পুলিশ বা অন্য কোনো বাহিনীর তাড়া খেয়ে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীরা সন্নিহিত হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর সদর ও হাইমচর এবং লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ ও রায়পুরে পালিয়ে যাওয়া সহজ। সে কারণে ফরিদগঞ্জ মাদকে সয়লাব হয়ে আছে বহু আগে থেকেই। এখানে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেয়ে সহায়তা করার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের সংখ্যাগত আধিক্য উদ্বেগ জনকভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখানকার মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীরা যেন ক্রমশ কলম্বিয়ার মতো শক্তিশালী হয়ে যাচ্ছে। মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে ফরিদগঞ্জের একজন প্রতিবাদকারী শ্বশুর বাড়িতে যেভাবে একজন জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ হামলার শিকার হয়েছেন, সেটা খুবই উদ্বেগজনক। পুলিশ এই হামলায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কতো দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা নেয়, সেটাই কেবল এই উদ্বেগকে হ্রাস করতে পারে। উপরোল্লিখিত ঘটনার পূর্বদিন ফরিদগঞ্জ থানার পুলিশ মাদক ও চুরিসহ ৬টি মামলায় অভিযুক্ত ও এক বছরের সাজাপ্রাপ্ত এক আসামিকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছে। দুজন পুলিশ কর্মকর্তা হয়েছেন আহত। কাজেই পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ধরে নিতে হবে যে, ফরিদগঞ্জে মাদক পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে নেই। এখানকার মাদকসহ সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় থানার বাইরেও আরো দুটি ফাঁড়ি স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। কিংবা বড়ো উপজেলা ও অনেক বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত বলে ফরিদগঞ্জে দুটি পূর্ণাঙ্গ থানার কার্যক্রম চালুর আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে। সেমতে পুলিশ হেড কোয়ার্টার সহ সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়