প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
উপজেলা পর্যায়ে সিভিল সার্জনের নিয়মিত পরিদর্শন দরকার
সীমিত সম্পদ, অবকাঠামোগত সমস্যা ও জনবল সঙ্কটের কারণে আমাদের দেশে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যতোটুকু সক্ষমতা প্রদর্শন করার কথা, কোথাও কোথাও তারচে’ অনেক বেশি করে, আবার কোথাও কোথাও সমস্যা-সঙ্কটকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে যতোটুকু সক্ষমতা আছে তারচে’ অনেক কম প্রদর্শন করে। এমনটি করার পেছনে কারো কাছে জবাবদিহিতা না করার সুযোগটিও প্রশ্রয় হিসেবে কাজ করে।
|আরো খবর
আমাদের দেশে স্বাস্থ্য মন্ত্রী, সচিব থেকে শুরু করে অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ হাসপাতালগুলো আকস্মিক পরিদর্শনের ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী বলে মনে হয় না, বরং আনুষ্ঠানিক পরিদর্শনেই বেশি আগ্রহী। ঢাক ঢোল পিটিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি ও মহড়া শেষে যে পরিদর্শন সম্পন্ন হয়, তাতে কাউকে কাউকে মিথ্যাচার, সাফাই গাওয়া ও অভিনয় করতেও দেখা যায়। আমাদের জাতীয় সংসদ সদস্যগণও নিজ সংসদীয় এলাকায় হাসপাতালগুলো আনুষ্ঠানিক পরিদর্শন ছাড়া আকস্মিক পরিদর্শন খুব একটা করেন না। যার ফলে হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকসহ অন্য কর্মকর্তাণ্ডকর্মচারীরা অনিয়ম করেও পার পেয়ে যান।
প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আছে, ইউনিয়ন পর্যায়ে যে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে, কমিউনিটি ক্লিনিক আছে, এগুলোতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরিদর্শন নগণ্য। ফলে এসব স্বাস্থ্যসেবার প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই স্বাধীনভাবে চলে। এগুলোতে এমপি তো দূরের কথা, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা পা ফেলতে চান না। যাদের ভোটে তারা জনপ্রতিনিধি হয়েছেন, তাদের স্বাস্থ্য সেবার হাল-হকিকত জানতেও তারা কেনো যেনো আগ্রহী নন। তারা পরিদর্শনের সব দায়িত্ব জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান হিসেবে সিভিল সার্জন, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান হিসেবে উপ-পরিচালক এবং উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান হিসেবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার ওপর ছেড়ে দিয়ে স্বস্তি বোধ করেন। কিন্তু কথা হলো, এসব কর্মকর্তা কি নিয়মিত পরিদর্শন করেন?
দেশের কোন্ জেলা-উপজেলায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা হাসপাতালগুলো কতোটা পরিদর্শন করেন, সেটার সঠিক বিবরণ এ সম্পাদকীয় নিবন্ধে তুলে ধরা সম্ভব নয়। তবে চাঁদপুর জেলার চিত্র তুলে ধরা সম্ভব। এ জেলার সিভিল সার্জন হিসেবে ডাঃ রবীন্দ্রনাথ রায় উপজেলা পর্যায়ে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক নিয়মিত পরিদর্শনে যতোটা সক্রিয় ছিলেন, গ্রাম পর্যায়ে মেডিকেল ক্যাম্প করে হতদরিদ্র মানুষের কাছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের স্বাস্থ্যসেবা যেভাবে পৌঁছে দিয়েছিলেন, পরবর্তীতে এ পর্যন্ত অন্য কোনো সিভিল সার্জনকে তেমন কর্মতৎপরতা প্রদর্শন করতে দেখা যায়নি। এমন পরিদর্শনের তাগিদ দিয়ে আমরা এ সম্পাদকীয় নিবন্ধে বার বার লিখেছি। কিন্তু সিভিল সার্জন মহোদয়গণ জেলা সদরকেন্দ্রিক ব্যস্ততার কারণে এবং করোনার কারণে উপজেলা পর্যায়ে নিয়মিত পরিদর্শনের বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করেন। বর্তমানে যিনি সিভিল সার্জন হিসেবে কর্মরত, তাঁর সাথে জেলা সদরে কর্মরত সাংবাদিকদের প্রথম সাক্ষাতেও আমরা উপজেলা পর্যায়ে পরিদর্শনের তাগিদটি দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি তো আর সাংবাদিকদের তাগিদ বা অনুরোধ শুনতে বাধ্য নন। সেজন্যে চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়ন কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছছে না।
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুরবস্থায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত’ শিরোনামে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তাতে পাঠকমাত্রকেই ব্যথিত হতে হয়েছে। হাইমচরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ কাজে ধীরগতির কারণে ভোগান্তিতে শিশুসহ সাধারণ রোগীরা। নেই কোনো প্রকার ডিজিটাল চিকিৎসা সেবার সরঞ্জাম। পর্যাপ্ত বেড না থাকায় রোগীদের চিকিৎসা নিতে হয় ফ্লোরে। একদিকে ডায়রিয়ার প্রকোপ অন্যদিকে হাসপাতালের ময়লার গন্ধে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে সুস্থ হতে এসে অসুস্থই হয়ে যেতে হয় অনেকের। পরিবেশের কোনো তদারকি নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। এখানে অন্যান্য পরিস্থিতি যে কতোটা খারাপ সেটা সিভিল সার্জন আকস্মিক পরিদর্শনে গিয়ে সরেজমিনে না দেখলে অনুধাবন করা সম্ভব নয় বলে আমাদের বিশ্বাস। আমাদের এ বিশ্বাসের অনুকূলে তাঁকে কাজ করার সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি। বলা দরকার, সমস্যা-সঙ্কট মোকাবেলায় যিনি অসম্ভব দক্ষতার পরিচয় দেন, তিনি হন ‘ক্রাইসিস লিডার’। আমরা আমাদের দেশের স্বাস্থ্য খাতে এক্ষণে এমন ‘ক্রাইসিস লিডার’ প্রত্যাশা করছি।