প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৫, ২২:০৬
মুরাদনগরের চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় জড়িত ৬ জনকে আটক করেছে র্যাব

র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সবসময় বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার, ডাকাত, ছিনতাইকারী, অপহরণ, প্রতারক ও হত্যাকাণ্ডের অপরাধে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া বেশ ক'টি চাঞ্চল্যকর হত্যার সাথে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে র্যাব জনগণের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
|আরো খবর
গোয়েন্দা নজরদারি, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ও প্রাপ্ত গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার (৪ জুলাই) দিবাগত রাতে র্যাব-১১-এর একটি আভিযানিক দল ডিএমপি, ঢাকার রামপুরা থানাধীন বনশ্রী এলাকা হতে এ মামলার এজাহার নামীয় ৩নং আসামী বাচ্চু মিয়া (৫৫), পিতা-মৃত আলী আকবর, ৫নং আসামী রবিউল আওয়াল (৫৫), পিতা- মৃত ছপি মোল্লা, উভয় সাং- কড়ইবাড়ি, থানা-বাঙ্গরা বাজার, জেলা-কুমিল্লাদ্বয়কে এবং এই মামলার সন্দিগ্ধ আসামী আতিকুর রহমান (৪২), পিতা-বাচ্চু মিয়া, মো. বায়েজ মাস্টার (৪৩), পিতা-রবিউল আওয়াল, উভয় সাং- কড়ইবাড়ি, উভয় থানা- বাঙ্গরা বাজার, জেলা- কুমিল্লাদ্বয়কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এছাড়া র্যাব-১১-এর অন্য একটি আভিযানিক দল ৪ জুলাই রাতে কুমিল্লা জেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন হায়দরাবাদ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এজাহার নামীয় ৩৩নং আসামী দুলাল (৪৫), পিতা-মালু মিয়া এবং সন্দিগ্ধ আসামী আকাশ (২৪), পিতা-দুলাল, উভয় সাং-হায়দরাবাদ, থানা- বাঙ্গরা বাজার, জেলা- কুমিল্লা কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এ সময় আসামীদের নিকট হতে ৪টি মোবাইল ও ১টি টর্চ লাইট উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক অনুসন্ধান ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১ জুলাই সকালে গ্রেফতারকৃত এজাহারনামীয় ৫নং আসামী রবিউলের বাড়ি হতে মোবাইল চুরির অভিযোগে বাঙ্গরা বাজার থানাধীন হায়দরাবাদ এলাকার অটোরিক্সা চালক বোরহানকে গ্রেফতারকৃত আসামীরাসহ অন্য আসামীরা বেধড়ক মারধর করতে থাকে এবং প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে। পরবর্তীতে বোরহানের পিতা জসীম সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে তার ছেলের প্রাণভিক্ষা চায়।
উল্লেখ্য, বোরহানের বাড়ি মৃত জোনাকীর (স্বামী-মো. মনির-৩৫, সাং-হায়দরাবাদ) শ্বশুর বাড়ির পাশে অবস্থিত হওয়ায় বোরহানের পিতা জসীম জোনাকীকে আসামীদের নিকট হতে তার ছেলেকে উদ্ধার করার জন্যে অনুরোধ করেন। কিন্তু জোনাকী ও তার পরিবারের সদস্যরা আসামীদের নিকট হতে বোরহানকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে বোরহানের পিতা বাঙ্গরা বাজার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ইতোমধ্যে বোরহানকে পাওয়া যাচ্ছে না মর্মে লোকমুখে খবর প্রকাশিত হলে বোরহানের পিতা ধারণা করে যে, আসামীগণ তার ছেলেকে মেরে লাশ গুম করে ফেলেছে এবং বোরহানের পিতা কর্তৃক থানায় অভিযোগ দায়েরের ঘটনায় আসামীগণ ধারণা করে যে, হত্যার শিকার জোনাকী ও তার পরিবারের সদস্যদের পরামর্শে বোরহানের পিতা থানায় অভিযোগ করেছে। এরই প্রেক্ষিতে ৩ জুলাই সকালে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত আসামীরাসহ অন্য আসামীরা বেআইনীভাবে দলবদ্ধ হয়ে জোনাকীদের বাড়ি ঘেরাও করে অনধিকার প্রবেশপূর্বক তাদের পরিবারের সকল সদস্যকে বাড়ি থেকে বের হতে বলে। এ সময় ভিকটিম রোকসানা আক্তার রুবি (৫৫) বাড়ি থেকে বের হলে গ্রেফতারকৃত আসামীগণসহ অন্য আসামীরা তার মাথায় রামদা দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে, অপর ভিকটিম জোনাকী (২৪) তার মাকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে এলে তাকেও নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। মা ও বোনের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ভিকটিম রাসেল (২৭) তৎক্ষণাৎ মোটরসাইকেলযোগে তার বাড়ির সামনে উপস্থিত হলে গ্রেফতারকৃত আসামীসহ অন্য আসামীরা রাসেলকে মোটরসাইকেলে থাকাবস্থায় নির্মমভাবে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এছাড়া অপর দুই ভিকটিম রিক্তা (৩২) ও রুমা (২৭)কে গুরুতর আহত করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আসামীদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে তারা সকলেই উক্ত হত্যাকাণ্ডের সাথে তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণের নিমিত্তে কুমিল্লা জেলার বাঙ্গরা বাজার থানায় হস্তান্তর করা রয়েছে।