প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
মোটরসাইকেল নিয়েই এখন যতো উৎকণ্ঠা
এইতো বছর পাঁচেক আগেও চাঁদপুর জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের আহত ও নিহত হবার ক্ষেত্রে বেশি দায়ী করা হতো বিভিন্ন সড়কে অবৈধভাবে চলাচলকারী বেপরোয়া গতির ট্রাক্টরকে। চাঁদপুরের সাবেক পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার থেকে শুরু করে পরবর্তী পুলিশ সুপারগণের ট্রাক্টরবিরোধী কমণ্ডবেশি অবস্থানের কারণে সড়ক সমূহে ট্রাক্টর চলাচল পুরোপুরি বন্ধ না হলেও পূর্বের চেয়ে অনেক কমেছে। সেজন্যে ট্রাক্টরে হতাহতের সংখ্যা খুব একটা জানা যায় না বললেই চলে। এখন চাঁদপুর জেলার সড়কসমূহে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে বেপরোয়া গতির অসংখ্য মোটরসাইকেল। এগুলোর অধিকাংশেরই নেই রেজিস্ট্রেশন, আর চালকদের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেলগুলোর চালকদের দশ শতাংশেরও মাথায় হেলমেট দেখা যায় না। চালকের পেছনে আরোহী হিসেবে থাকে যে দুজন, তারাও থাকে হেলমেটবিহীন। এভাবে সড়কে রেজিস্ট্রেশনবিহীন অবৈধ মোটরসাইকেল ও ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন অবৈধ চালকের বেপরোয়া আচরণের কারণে চাঁদপুর জেলার সড়কসমূহে গত দুবছরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে অনেক বেশি। তারপর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সিএনজি অটোরিকশা।
|আরো খবর
গত এক সপ্তাহে চাঁদপুর জেলায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সুশান নামে ছাত্রলীগের তরুণ কর্মীর মৃত্যু ছিলো অনেক আলোচিত। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তো বটেই, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনিও তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সাথে সশরীরে সাক্ষাৎ করে সমবেদনা জানিয়েছেন। এ দুর্ঘটনার কষ্টদায়ক স্মৃতি মন থেকে মুছে না যেতেই গত ২১ এপ্রিল রাতে শাহরাস্তিতে সিএনজি অটোরিকশার সাথে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেল চালক ব্যবসায়ী রুহুল আমিন (৫৫)-এর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এমতাবস্থায় শুধু কম বয়সী কিশোর-করুণ-যুবকই নয়, তাদের চেয়ে বেশি বয়সী মোটরসাইকেল চালককে নিয়েও নিজ পরিবারের অভিভাবক ও অন্য সদস্যদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশ্ন হলো, এমনটি হ্রাসের উপায় কী।
শুধু চাঁদপুর জেলায় নয়, সারাদেশেই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে অনেক, যে সংক্রান্ত পরিসংখ্যান সাধারণ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে দেয়ার মতোই। ‘রোড সেফটি ফাউন্ডেশন’ তাদের গবেষণামূলক এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে যে, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে ৫০ দশমিক ৪৭ শতাংশ, যা আগের বছরে ছিলো ১৫ শতাংশ। ২০২১ সালে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫৩৭১টি। নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ২৮৪ জন এবং আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৪৬৮ জন। এর মধ্যে ২০৭৮ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ২২১৪, যা মোট নিহতের ৩৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। মোট সড়ক দুর্ঘটনার তুলনায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ২২১৪ জন (৩৫.২৩ শতাংশ), বাসযাত্রী ৩৮৯ জন (৬.১৯ শতাংশ), ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-ট্রাক্টর-ট্রলির যাত্রী ৪৫৭ জন (৭.২৭ শতাংশ), মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-জিপের যাত্রী ২৭৬ জন (৪.৩৯ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক, সিএনজি অটোরিকশা, অটোভ্যান, মিক, টেম্পু ও লেগুনা) ৯৩৪ জন (১৪.৮৬ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন, ভটভটি, আলমসাধু, পাখিভ্যান, চান্দের গাড়ি, বোরাক, মাহিন্দ্র ও টমটম) ৩৫৯ জন (৫.৭১ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল, প্যাডেল রিকশা, রিকশাভ্যান ঠেলাগাড়ি আরোহী ১৩২ জন (২.১০ শতাংশ) নিহত হয়েছে।
চলতি ২০২২ সালে শুধুমাত্র চাঁদপুর জেলায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় হতাহতের পরিসংখ্যান এখনও হাতে না আসলেও এ পরিসখংখ্যান যে ভয়াবহ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে সেটা গত ৩ মাস ২১ দিনে সংঘটিত অস্বাভাবিক বেশি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাতেই আন্দাজ করা যায়। এজন্যে এখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার আরেক নামে পরিণত হয়েছে মোটরসাইকেল। চাঁদপুর জেলার দুটি বিখ্যাত পর্যটন স্পট বড় স্টেশন মোলহেড-মিনি কক্সবাজার এবং মোহনপুর সহ অন্যান্য গন্তব্য অভিমুখে যেভাবে বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল চলাচল দেখা যায়, তাতে পথচারীসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচলও বিপন্ন অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেছে। এমতাবস্থায় রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটর সাইকেল ও ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগী ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।