প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
এমনটি হবে কেন?
উইকিপিডিয়ায় লিখা হয়েছে, বঙ্গাব্দ, বাংলা সন বা বাংলা বর্ষপঞ্জি হলো বঙ্গদেশের একটি ঐতিহ্য মণ্ডিত সৌর পঞ্জিকা ভিত্তিক বর্ষপঞ্জি ও পঞ্জিকা সাল। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে মোট ৩৬৫ দিন কয়েক ঘন্টা সময়ের প্রয়োজন হয়। এই সময়টাই এক সৌর বছর। গ্রেগরীয় সনের মতন বঙ্গাব্দেও আছে ১২ মাস। এগুলো হলো বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশি^ন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্র। বাংলাদেশ এবং পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা অঞ্চলে এই বর্ষপঞ্জি ব্যবহৃত হয়। বঙ্গাব্দ শুরু হয় পহেলা বৈশাখ বা বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে। বঙ্গাব্দ সব সময়ই গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির চেয়ে ৫৯৩ বছর কম। সংশোধিত বাংলা পঞ্জিকা বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৮৭ সালে গৃহীত হয়। কিন্তু ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা রাজ্যে পুরাতন পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
|আরো খবর
বাংলা পঞ্জিকার সংস্কার বা সংশোধন শুরু হয় ১৯৫০-এর দশকে। প্রখ্যাত জোতিঃ পদার্থবিজ্ঞানী ড. মেঘনাদ সাহাকে প্রধান করে ভারত সরকার ভারতবর্ষের দিনপঞ্জিকা সংস্কার করার জন্যে কমিটি গঠন করে। এ কমিটি ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে প্রচলিত প্রাচীন বর্ষপঞ্জিকার আমূল পরিবর্তন করে জোতিঃ পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তিতে প্রস্তাব পেশ করে। এ কমিটির প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়িত না হওয়ায় ভারত সরকার এসপি পান্ডের নেতৃত্বে আশির দশকে আরেকটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটি মেঘনাদ সাহার প্রস্তাব সমূহকে মূল ধরে ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন হিসাবে নির্ধারণ করে প্রস্তাব পেশ করে। বাংলাদেশে ১৯৬৩ সালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে ‘বাংলা পঞ্জিকা সংস্কার’ নামে বাংলা একাডেমি কমিটি গঠন করে। এই কমিটি বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার সুপারিশকে প্রাধান্য দিয়ে কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে। স্বাধীন বাংলাদেশে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কমিটির সংশোধিত বাংলা পঞ্জিকাকে ১৯৮৭ সালে গ্রহণ করে ১৯৮৮-৮৯ অর্থ বছরে সে আলোকে দিনপঞ্জিকা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়। তারপরও সমস্যা দেখা দিলে ১৯৯৫ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক হারুন-অর-রশিদকে প্রধান করে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। তাতেও সংস্কার শেষ হয়নি। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানকে সভাপতি করে তৃতীয় দফা বর্ষপঞ্জি সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে এ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সরকারি বর্ষপঞ্জি তৈরি করা হয়, যা বর্তমানে চালু আছে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ এপ্রিলকে বঙ্গাব্দের পয়লা বৈশাখ হিসেবে ধরে নিয়ে বর্ষবরণের ব্যাপক কর্মসূচি পালিত হয়।
বাংলা পঞ্জিকা এতোবার সংস্কার করার পরও ১৪ এপ্রিলের পরিবর্তে ১৫ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ শুরুর বিষয়টি নির্ধারিত হয়নি। অথচ চাঁদপুর শহরের প্রসিদ্ধ বাণিজ্যকেন্দ্র পুরাণবাজারসহ দেশের কিছু স্থানে ১৫ এপ্রিলে বর্ষ শুরু বা বরণের কর্মসূচি পালন করা হয়। এর পেছনে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু মানুষের গোঁড়ামিই প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে কাজ করে। জানা যায়, তারা তাদের দেবতাকে পূজার সুবিধার্থে সনাতন বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসরণের তাগিদে এ কাজটি করে থাকেন এবং হাল খাতা উদ্যাপন করেন। তাদের দেখাদেখি মুসলমান সম্প্রদায়ের কিছু ব্যবসায়ী ১৫ এপ্রিলে দোয়ানুষ্ঠানের মাধ্যমে হালখাতা উদ্যাপন করেন। এর ফলে এসব স্থানে বাংলা বর্ষবরণ তথা পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন বহমান ঐতিহ্যের আলোকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আর আবর্তিত হচ্ছে না, বরং সাম্প্রদায়িক তথা ধর্মীয় চিন্তা-চেতনাতেই আবর্তিত হচ্ছে। এমনটি হবে কেন? এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে বের করা জরুরি। এক দেশে বাংলা বর্ষবরণের ক্ষেত্রে দু নিয়ম গ্রহণযোগ্য, শোভনীয় ও বাঞ্ছনীয় নয় বলে বিজ্ঞজনের অভিমত।