প্রকাশ : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
মিডিয়ার কল্যাণে মানবিকতা
গণমাধ্যম বা মিডিয়ার কল্যাণে কতো বড় মানবিকতা সম্পন্ন হতে পারে তার অনেক বড় প্রমাণ আমরা দেখতে পেলাম গত বৃহস্পতিবার। ওইদিন সকালে বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হলো যে, মতলব উত্তরের ছেঙ্গারচর পৌরসভার বারআনি গ্রামের তামান্না বেগম অতি সম্প্রতি সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে একটি সন্তান প্রসব করেন। বাড়ির নিকটবর্তী ছেঙ্গারচর বাজারস্থ পালস্ এইড জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তার অপারেশন সম্পন্ন হয়। ২৬ জানুয়ারি তিনি যখন হাসপাতালের ২৬ হাজার টাকার বিল পরিশোধে অসামর্থ্য প্রকাশ করেন, তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সুকৌশলে শিশুটিকে এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে বিক্রি করে নিজেদের পাওনা আদায় করেন। এমতাবস্থায় তামান্না বেগমের উচ্চবাচ্য বা প্রতিবাদ করার কোনো উপায় ছিলো না, যেহেতু তার দিনমজুর স্বামী শিশুটি জন্ম নেয়ার আগেই সিজারিয়ান অপারেশনের টাকা জোগাড় করতে না পেরে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। সন্তান বিক্রির পর বাড়ি ফিরে তামান্না বেগমের বুকে হাহাকার তৈরি হয়, যা পরে আহাজারিতে পরিণত হয়। ঘটনাটি গণমাধ্যম কর্মী তথা সাংবাদিকদের নজরে আসলে গত ৩ ফেব্রুয়ারি সেটি অনলাইন মিডিয়ায় সংবাদ আকারে চলে আসে, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়ে যায়। টনক নড়ে স্থানীয় প্রশাসনের। তারা শিশুটি উদ্ধারে মাঠে নেমে পড়ে এবং হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে।
|আরো খবর
বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে রাত অবধি মতলব উত্তরের ইউএনও’র তত্ত্বাবধানে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হেদায়েত উল্যাহ ও স্থানীয় থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালায়। স্থানীয় জনগণও স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা করে। অবশেষে বিক্রি হওয়া শিশুটিকে ষাটনল ইউনিয়নের জনৈকা শিমলা আক্তারের নিকট থেকে উদ্ধার করে তার গর্ভধারিণী মা তামান্না বেগমের কোলে তুলে দেয়া হয়। এ সময় উভয় পক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে সরল বিশ^াসে উক্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। এ সময় উভয় পক্ষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মুচলেকা প্রদানের মাধ্যমে শিশুটিকে গর্ভধারিণী মায়ের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। হস্তান্তরকালে ইউএনও শরিফুল হাসান শিশুটির মায়ের হাতে ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে পাঁচ হাজার টাকা প্রদান করেন। শনিবার শিশুটির জন্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শোবার চৌকি, ২টি কম্বল, চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনি ইত্যাদি সম্বলিত খাবার প্যাকেট পৌঁছে দেয়া হয়। ভবিষ্যতেও উপজেলা প্রশাসন সম্ভাব্য সহযোগিতা প্রদানের প্রয়োজনে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে বলে জানায়।
একই দিন শনিবার পুলিশ নারী কল্যাণে সমিতি (পুনাক) চাঁদপুর-এর সভাপতি ডাঃ আফসানা শর্মী (পুলিশ সুপারের পতœী) কেন্দ্রীয় পুনাক সভাপতি জীশান মির্জার নির্দেশে শিশু সামগ্রী, শীতবস্ত্র ও নগদ অর্থ নিয়ে শিশুটির বাড়িতে হাজির হন। তিনি ভবিষ্যতেও শিশুটির পাশে থাকবেন বলে জানিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, শিশুটির নিরুদ্দেশ (পলাতক) বাবাকে খুঁজে বের করে একটি কাজের ব্যবস্থা করে দিতে থানা পুলিশকে ইতোমধ্যে বলা হয়েছে বলে তিনি জানান।
আমাদের সমাজে কম-বেশি বিক্ষুব্ধ হয়েই কিছু মানুষ সাংবাদিকদেরকে সাম্বাদিক বা সাংঘাতিক বলে এবং নানা গালাগাল দেয়। আবার সন্তুষ্ট হয়ে প্রশংসায় ভাসিয়ে আকাশে তুলতেও ভুল করে না। আসলে অতিরিক্ত কোনোটাই ভালো নয়। সাংবাদিক বা গণমাধ্যম কর্মীরা জনকল্যাণকে গুরুত্ব দিয়েই প্রধানত তাদের কাজ করে থাকেন। সেমতে বিরূপ পরিস্থিতিতে সন্তান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হওয়া একজন মায়ের হাহাকার ও আহাজারিকে মিডিয়ায় তুলে ধরার ক্ষেত্রে মতলব উত্তর উপজেলার সাংবাদিকরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন। বস্তুত মিডিয়ার কল্যাণে অবশেষে শিশুটি উদ্ধার হয় এবং এর ফলে শিশুটিকে ঘিরে একের পর এক সম্পন্ন হচ্ছে মানবিকতা। হয়তো এমন মানবিকতা আরো হতে থাকবে। আমরা মতলব উত্তরের সাংবাদিকদের মতো সংবেদনশীল হয়ে দেশের সর্বত্র কর্মরত সাংবাদিকদের এমন সংবাদ পরিবেশনে মনোযোগী হবার অনুরোধ জানাচ্ছি।