প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪৮
হাজীগঞ্জ বাজারের দোকান কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ছুটি প্রসঙ্গে

মাসে ৪ দিন নয়, মাসে ২ দিন বন্ধ চান হাজীগঞ্জ বাজারের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীরা। শ্রম মন্ত্রণালয়ের সাথে মতবিনিময় সভাতে এ নিয়ে ক্ষুব্ধভাব প্রকাশ করেছেন তারা। মঙ্গলবার (২২ জুলাই ২০২৫) হাজীগঞ্জ বাজারস্থ একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা অধিদপ্তর কুমিল্লা জোনের উপ-মহাপরিদর্শক সৈয়দ নাজমুল রাশেদকে এমনটাই জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। জেলার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক উপজেলায় এমন নিয়ম চাপিয়ে দিলে ব্যবসায়ীরা তা মানবেন না বলে সভাতে জানানো হয়। সভায় সৈয়দ নাজমুল রাশেদ বলেন, লেবার আইন-২০১৬ অনুযায়ী সাপ্তাহিক দেড় দিন বন্ধ রাখার বিধান রয়েছে। এর মধ্যে শুক্রবার অর্ধ-দিবস ও শনিবার পূর্ণ দিবস। কিন্তু এ আইনটি হাজীগঞ্জে আংশিকভাবে পালিত হলেও পূর্ণাঙ্গভাবে পালিত হচ্ছে না। বিষয়টি আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। তাই অন্তত পূর্ণাঙ্গভাবে অন্তত সাপ্তাহিকভাবে একদিন বন্ধ রাখতে হবে হাজীগঞ্জ বাজারের সকল কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে। ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আসফাকুল আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় ব্যবসায়ীরা বলেন, হাজীগঞ্জে কল-কারখানা নেই। এখানে সবাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং বাজারের ৯৫ ভাগ ব্যবসায়ী ভাড়াটিয়া। তারা ব্যাংক ঋণে ব্যবসা করে থাকেন। প্রতি মাসে কিস্তি, দোকান ভাড়া, স্টাফ খরচ, ট্রেড লাইসেন্স ও সরকারি বিভিন্ন ফি সহ অন্যান্য ব্যয় পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছেন। তার ওপর মাসে দুদিন দোকানঘর বন্ধ রাখতে হচ্ছে। মাসে ৪ দিন নয়, ২ দিন বন্ধ রাখার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, এখন যদি মাসে চারদিন দোকান বন্ধ রাখা হয়, তাহলে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। একই সাথে হাজীগঞ্জ বাজার থেকে ক্রেতা হারানোর আশঙ্কাও রয়েছে। তাই, ব্যবসায়ীদের আর্থ-সামাজিক দিক বিবেচনা করে সাপ্তাহিক বন্ধ চার দিনের পরিবর্তে দুদিন রাখার বিষয়টি কার্যকর করার আহ্বান জানান।
|আরো খবর
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, চাঁদপুর জেলা কেনো, বাংলাদেশের মধ্যে হাজীগঞ্জ বাজার হচ্ছে এমন একটি প্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র, যেটি কমপক্ষে ১৮ ঘণ্টা জনাকীর্ণ থাকে। ঐতিহাসিক বড় মসজিদের বরকতে, চতুর্মুখী যোগাযোগের সুবাদে ও ট্রানজিট পয়েন্ট হওয়ার কারণে হাজীগঞ্জ বাজারে জনসমাগম ২৪ ঘণ্টাই দেখা যায়। যে কারণে এখানে কিছু খাবার হোটেল সহ কিছু দোকানপাট ২৪ ঘণ্টাই খোলা রাখতে হয়। বিশ্বে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান আছে, যেখানটায় দিন ও রাতের ব্যস্ততার পার্থক্য নির্ণয় করা যায় না। হাজীগঞ্জ বাজার তেমনটি না হলেও এ বাজারে সপ্তাহের সাতদিনের কোন্ দিনটি ছুটির দিন সেটি আন্দাজ করা যায় না। এর কারণ হচ্ছে, সপ্তাহের প্রতিটি দিনেই প্রায় সমান জনসমাগম হয়ে থাকে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার দুদিন ছুটি এবং দেশের প্রায় সকল বাজারে শুক্রবার ছুটি কার্যকর থাকলেও হাজীগঞ্জ বাজার এক্ষেত্রে এটির প্রতিষ্ঠা বা জন্মলগ্ন থেকেই ব্যতিক্রম। কারণ হচ্ছে, এ বাজারটি গড়ে উঠেছে ঐতিহাসিক হাজীগঞ্জ বড় মসজিদকে কেন্দ্র করেই, যে মসজিদে প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের এতো বড়ো জামাত হয়, যেমনটি চাঁদপুর জেলার অন্য কোনো মসজিদে তো নয়ই, বাংলাদেশের স্বল্পসংখ্যক মসজিদেই হয়ে থাকে। সে কারণে হাজীগঞ্জ বাজারের দোকান সহ সকল ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীদের সাপ্তাহিক দেড়দিন ছুটি প্রচলিত শ্রম আইনে কার্যকর করা অনেকটা অসাধ্য। এই অসাধ্য সাধনের বিষয়টি শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যে অনেক চ্যালেঞ্জিং। এখানকার ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে এ ছুটি কীভাবে কার্যকর করা যায়, সেটি সরকারের সর্বোচ্চ মহলের সাথে আলোচনা করেই সাব্যস্ত করতে হবে। ট্রেন, লঞ্চ ও স্টিমার সহ নানা গণপরিবহন, হাসপাতাল, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ বিভাগ, গ্যাস ও পানি সরবরাহে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান, ইন্টারনেট, সংবাদপত্রসহ নানা গণমাধ্যম ও জরুরি সেবার আরো কিছু প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেভাবে সাপ্তাহিক ছুটি ভোগ করে, সেভাবে কিংবা অন্য কোনো বিশেষ প্রক্রিয়ায় হাজীগঞ্জ বাজারের দোকানসহ সকল ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সাপ্তাহিক কোনো বন্ধের আওতায় না ফেলে এখানে কর্মরত কর্মচারীরা কীভাবে সাপ্তাহিক দেড়দিন ছুটি পালাক্রমে ভোগ করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারে সে ব্যাপারে সরকারের নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে, গতানুগতিক বা প্রচলিত কোনো উদ্যোগে নয়। সোজা কথা, হাজীগঞ্জ বাজার সপ্তাহের কোনোদিন বন্ধ রেখে নয়, বরং বাস্তবতার নিরিখে ক্রেতা ধরে রাখা ও ক্রেতার প্রয়োজন মিটাবার তাগিদে সপ্তাহের সাতদিনই খোলা রেখে পালাক্রমে জরুরি সেবার প্রতিষ্ঠানের আদলে কর্মচারীদের দেড়দিন ছুটি কার্যকরের বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে, এর বিকল্প অন্য কিছু আছে বলে আমরা দেখছি না। কাজেই বাস্তবতার আলোকে জোর করে আইন চাপিয়ে দেয়া নয়, ব্যবসায়ীদের সাথে সমঝোতার আলোকে শ্রম আইন প্রয়োগের বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে।