প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৫, ০৮:২২
চাঁদপুরে নব্য বালুখেকো কারা- এ প্রশ্ন আমাদেরও----

ইসলামী যুব আন্দোলনের ৯ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, চঁাদপুরে বর্তমানে বালুখেকো কারা? গতকাল চঁাদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় এ ব্যাপারে চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম যে প্রশ্ন তুলেছেন, তাতে লিখা হয়েছে, ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ চঁাদপুর জেলা শাখার উদ্যোগে সংগঠনের ৯ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (১ আগস্ট ২০২৫) বিকেলে চঁাদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ‘গণহত্যার বিচার ও শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন এবং বৈষম্যহীন ইনসাফভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র গড়া’র দাবিতে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, এক ফ্যাসিস্ট দূর হয়েছে আরেক ফ্যাসিবাদ তৈরি হয়েছে। ৫ তারিখ যখন শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, তখন অনেক রাজনৈতিক দল কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছে। একসময় তো চঁাদপুরে বালুখেকো সেলিম ছিলেন। এখন তো আর সে জীবিত নেই। বর্তমানে চঁাদপুরে যারা বালু কাটছে এই বালুখেকো কারা? এখন কারা রাজনীতির নাম ভাঙ্গিয়ে বালু কাটছে? বালু কাটার জন্যে তো জুলাই আন্দোলন হয়নি। দৃশ্যমান বিচার, সংস্কার ও জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে পিআর ছাড়া নির্বাচন হলে বাংলাদেশে আবার নতুন করে ফ্যাসিজমের জন্ম হবে। আবারো জাতীয় লুটেরাদের হাতে ক্ষমতা চলে যাবে। দেশের টাকা বিদেশে পাচার হবে। নতুন নতুন বেগমপাড়া তৈরির হিড়িক পড়বে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো বিশেষগোষ্ঠীর বৃত্তে আটকা পড়লে জুলাই অভ্যুত্থান ব্যাহত হবে। তিনি আরো বলেন, নির্বাচন দিতে হলে নির্বাচন কমিশনকে আগে পরীক্ষা দিতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে আগে স্থানীয় নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচন সামনে আসতেছে। ইসলামী আন্দোলনের আমীরের সকল সিদ্ধান্ত আমাদের মেনে নিতে হবে। চঁাদপুর-৩ আসনে যেই দলের প্রার্থী হোক তার সাথেই আমরা কাজ করবো।
আমরা ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ চঁাদপুর জেলা শাখার নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি যতো বক্তব্য রেখেছেন, তার সবটার ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাই না। তবে প্রধান অতিথির মতো আমাদেরও প্রশ্ন, এখন তো চঁাদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের বালুখেকো চেয়ারম্যান হিসেবে বহুল পরিচিত ও দেশব্যাপী সমালোচিত সেলিম খান আর বেঁচে নেই। তাহলে বালু কাটছে কারা? ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থানের দিনই সেলিম খান সপুত্র গণপিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছে। তার মাথার ওপর ছায়া প্রদানকারী রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ তার ম্যানেজ করা সকল ব্যক্তি আগের ন্যায় দাপুটে অবস্থানে নেই। কেউ পলাতক, কেউ দেশান্তরিত, কেউ জেলে, আবার অনেকে নিশ্চুপ। তারপরও মেঘনা থেকে প্রকাশ্য-গোপনে বালু কাটার অভিযোগ ও আলামত সবই বিদ্যমান আছে। বালু কাটাটা আগের মতো না চললেও পুরোপুরি বন্ধ হয় নি। কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ নদীতে টহলরত অবস্থায় থাকলেও তাদের চোখকে ফঁাকি দিয়ে কম-বেশি বালুকাটা চলছেই। নদী তীরবর্তী এলাকায় কর্মরত প্রশাসনের কোনো কোনো কর্মকর্তা হুঙ্কার দিলেও সেটি যাতে মনিটরিং, ফলোআপে শাণিত না হয়ে ভেঁাতা হয়ে যায়, সে ব্যাপারে অদৃশ্য নানান কলকাঠি নড়ছেই। এক্ষেত্রে নাটের গুরু কারা সেটা ওপেন সিক্রেট হলেও সবাই জানে। সেই জানা অনুযায়ী বালুকাটাটা কেন প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না সে ব্যাপারে ভাবা প্রয়োজন। অন্যথায় দেয়ালের কানে শোনা তথ্যে গুঞ্জন বন্ধ হবে না, সভা-সমাবেশ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যম সহ নানা ফোরামে মেঘনায় বালু কাটা নিয়ে প্রশ্ন নিরন্তর চলতেই থাকবে। আলোচনা-সমালোচনা-গুজব রটতেই থাকবে। যা রটে তার কিছু না কিছু বটে এমন বাস্তবতায় নেতিবাচক কথা বাতাসে ভাসতেই থাকবে। আমরা যে কোনো মূল্যে মেঘনায় অবৈধ বালু কাটা নিয়ে প্রভাবশালীদের সন্ত্রাস বন্ধ হোক সেটা চাই। বালু কাটা নিয়ে ইতোমধ্যে সংঘটিত হতাহতের ঘটনার বিচার চাই। অতীতে বালু কাটা নিয়ে প্রতিবাদী জনপ্রতিনিধিদের আর কারো মৃত্যু হোক সেটা চাই না, প্রতিবাদী অন্য কেউ বিপাকে ও বিপদে পড়ুক সেটাও চাই না।