প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩১
নারায়ণগঞ্জে বর্বরতা: ছিনতাইয়ের অভিযোগে যুবককে গাছে ঝুলিয়ে গণপিটুনি
গণপিটুনির আতঙ্ক

১২ মার্চ বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া এলাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছিনতাইকারী সন্দেহে এক যুবককে গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
ঘটনার বিবরণ:
ভিডিওতে দেখা যায়, এক যুবকের দুই হাত বেঁধে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। উত্তেজিত জনতা তাকে লাঠি ও রড দিয়ে মারধর করছে। উপস্থিত অনেকেই এই ঘটনার ভিডিও মোবাইলে ধারণ করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই যুবকসহ আরও কয়েকজন নগরীতে চুরি ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে যুক্ত।
প্রত্যক্ষদর্শী শহীদ মিনারের পাশের চায়ের দোকানি আজাদ মিয়া জানান, "ছিনতাইকারী বলে এক ছেলেকে মারতে মারতে শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয়। পরে তাকে গাছে বেঁধেও মারধর করা হয়। লাঠি, রড দিয়ে পেটানো হয়। বেশ কিছুক্ষণ মারধরের পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।"
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিক্রিয়া:
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাসির আহমদ বলেন, "ঘটনার পরে খবর পেয়েছি। ভুক্তভোগী যুবক ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত কারো খোঁজ পাওয়া যায়নি। আমরা প্রতিনিয়ত চুরি, ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে কাজ করছি। কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করতে হবে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে যিনি আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন, তিনিও আইন ভঙ্গকারী হিসেবে চিহ্নিত হবেন।"
সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট:
গণপিটুনির ঘটনা দেশে উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে গণপিটুনিতে ১১৯ জন নিহত হয়েছেন।
৯ মার্চ ঢাকায় পৃথক চারটি ঘটনায় চোর ও ছিনতাইকারী সন্দেহে আটজনকে গণপিটুনি দেওয়া হয়।
বিশেষজ্ঞ মতামত:
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে শাস্তি দেওয়া আইনত অপরাধ। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে নিরপরাধ ব্যক্তিরাও ক্ষতির শিকার হতে পারেন। তাই সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করাই সঠিক পন্থা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জনসচেতনতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে জনতার সমন্বয় জরুরি। সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গণপিটুনি বা গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতন না করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এতে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং নিরপরাধ ব্যক্তিরা হয়রানি থেকে রক্ষা পাবেন।
ডিসিকে/এমজেডএইচ