রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৩, ০০:০০

রবীন্দ্রনাথের বংশলতির প্রবাহপথ

রবীন্দ্রনাথের বংশলতির প্রবাহপথ
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া

রবীন্দ্রনাথ এক চির আরাধ্য মনীষা। তাঁর জীবন ও সৃষ্টিকে অধ্যয়ন ও উপলব্ধি করা এক জন্মে দুঃসাধ্য বৈকি। তবু তাঁকে উন্মোচন করতেই হয় জানার অভিপ্রায়ে। রবীন্দ্রনাথকে পরিপূর্ণভাবে জানতে গেলে তাঁর পূর্বসূরি ও বংশপরম্পরাকে অধ্যয়ন করা আবশ্যক। এ নিয়ে জনমানসেও কৌতূহলের অন্ত নেই। বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুশারী হতে অধস্তন পুরুষে ঠাকুর পদবীর অবতারণা এবং পীরালী ব্রাহ্মণের আখ্যান জ্ঞানপিপাসাকে বাড়িয়ে দেয়। তাই ইতিহাস ও সাহিত্যের মেলবন্ধনে রবীন্দ্র-মনীষার বংশোদ্ঘাটন আমাদের কাছে তীর্থ সঙ্গমের মতোই পুণ্যময়। রবীন্দ্রনাথের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন নিজেকে রহস্যের জালে জড়িয়ে আপন পিতার সমাধিকে দেখতে যাননি লন্ডনে, তেমনি রবীন্দ্রনাথও সুযোগ পেয়ে পিতামহের চিরশয়ানের স্থানকে দর্শন না করাটা আমাদের অজ্ঞতার আঁধারকে আরও ঘোরাবৃত করে দেয়। এই ঘোর ও ধোঁয়াশাগুলো মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ। কিছু ঘোর বলবৎ রেখে আর কিছু ঘোর অপসারণের পিপাসার্ত আকাঙ্ক্ষায় রবীন্দ্রনাথের বংশবৃক্ষে চড়ার প্রয়াস আমাদের অবিরাম ব্রত। সেই ব্রত হতেই আলোক সম্পাত করা যাক কুলীন পাঁচ ব্রাহ্মণের জীবনস্রোতে।

খ্রিস্টীয় সাত শতকের প্রথমার্ধে পুষ্যভূতি বংশের রাজা হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালে ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্ম ও সংস্কৃতির ব্যাপক চর্চা ও উৎকর্ষ সাধিত হয়। ফলে বৌদ্ধযুগ পরবর্তী সময়ে আনুমানিক খ্রিস্টীয় অষ্টম হতে দশম শতক পর্যন্ত বাংলার পূর্বাঞ্চলে পূজা-অর্চনার জন্যে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রযোজনীয় সংখ্যক ব্রাহ্মণপণ্ডিতের অভাব দেখা দেয়। এ সময় বাংলায় গৌড়রাজ আদিশূর পুত্রোষ্টি যজ্ঞকর্ম সম্পাদনের জন্যে কান্যকুব্জ থেকে পাঁচজন ব্রাহ্মণ নিয়ে আসেন। এঁরা হলেন ভট্টনারায়ণ, শ্রীহর্ষ, দক্ষ, ছান্দর এবং বেদগর্ভ। মতান্তরে তাঁদের প্রত্যেকের আরো একটা করে নাম ছিল। বর্তমান বিহার রাজ্যের তৎকালীন নাম ছিল কান্যকুব্জ। এর দুটো ভাগ ছিল। কনৌজ এবং কোলাঞ্চ। এখনকার উত্তর প্রদেশেই ছিল তখনকার কোলাঞ্চ। সরযূ নদী পার হয়ে বাংলায় এসেছিলেন বলে এই ব্রাহ্মণদের বলা হতো সরযূপারী ব্রাহ্মণ। এঁদের গোত্র ছিল শাণ্ডিল্য গোত্র। রাজা আদিশূর এই পাঁচ ব্রাহ্মণের বসবাসের জন্য তৎকালীন বাংলায় বাসস্থানের ব্যবস্থা করেন। এরা বাংলায় আসার কারণে কানৌব্জের সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা হারান। ফলে সেখানে ফেরৎ যেতে না পেরে বাংলায় স্থায়ী হয়ে যান। এদের মধ্যে কেউ কেউ পদ্মা পাড়ি দিয়ে উত্তরবঙ্গে চলে যান। এরা বারেন্দ্র গোত্র হিসেবে পরিচিত হন। এরা ইন্দ্রের বরপ্রাপ্ত বলে মনে করা হয়। যারা পদ্মার এপাড়ে রয়ে যান তারা রাঢ়ী গোত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন। রাজা আদিশূরের উত্তরসূরি রাজা ক্ষিতিশূরের আমলে এরা সংখ্যায় বংশবৃদ্ধি পেয়ে ছাপ্পান্ন ঘর ব্রাহ্মণে পরিণত হন। রাজা ক্ষিতিশূর তাদের দারিদ্র্য দূরীকরণে এক একজনকে একটা করে গ্রাম দান করেন। এদেরকে গাঞী ব্রাহ্মণ বা গ্রামীণ ব্রাহ্মণ বলে ডাকা হয়। নিজ নিজ গ্রামের নামে এদের পদবী তৈরি হয়। এই ব্রাহ্মণদের কারও কারও বাসস্থান ছিল রাঢ় বাংলার বীরভূমের বন্দ্যঘটি গ্রামে। এঁদের পেশা পরবর্তীতে অধ্যাপনা হিসেবে চর্চিত হয়। এঁদের বলা হত উপাধ্যায়। তাই বীরভূমের ব্রাহ্মণরা বন্দ্যোপাধ্যায় পদবী দ্বারা পরিচিত হন।

বারেন্দ্রর ক্ষিতিশ/ নারায়ণের ছেলে হলেন দীননাথ। ইনি বর্ধমান জেলার ‘কুশ’ নামের একটা গ্রামের জমিদারি পেয়েছিলেন। সেই থেকে ওনার নাম হয় দীননাথ কুশারী। এই কুশা গ্রামের বর্তমান অবস্থান হলো পূর্ব বর্ধমানের ২ নম্বর ব্লকের হাটগোবিন্দপুর গ্রামপঞ্চায়েতের কুশা গ্রাম।

দীননাথ কুশারীর অষ্টম বা দশম পুরুষ হলেন জগন্নাথ কুশারী। জগন্নাথ কুশারীরা হলেন রাঢ়ী। দীননাথ কুশারীর অষ্টম পুরুষ তারানাথ কুশারী ভৈরব-তীরবর্তী পিঠাভোগ গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। তারানাথ কুশারীর দুই পুত্র রামগোপাল ও রামনাথ। রামগোপালের পুত্র জগন্নাথ কুশারীই ছিলেন ঠাকুর বংশের আদি পুরুষ।

খ্রিস্টীয় পনেরো শতাব্দীর শেষদিকে গৌড়ের সিংহাসন দখল করেন পাঠান-বংশীয় সুলতান নাসির শাহ। সুলতানের খাস লোক মুসলিম আধ্যাত্মিক সাধক খান জাহান আলী সে সময়ে তাঁর ক্ষমতা বাড়াতে লাগলেন পদ্মার দক্ষিণ পাড়ে নতুন জনবসতি গড়ে তুলে। মামুদ তাহির নামের এক নব্য প্রভাবশালী মুসলমান ছিলেন খান জাহান আলীর ডান হাত। তিনি কুলীন ব্রাহ্মণ থেকে মুসলমান হয়েছিলেন এক মুসলিম নারীকে ভালোবেসে। সমাজচ্যুত নিঃসঙ্গ এই নব্য মুসলিম আশ্রয় নিলেন খান জাহানের ছত্রচ্ছায়ায়, মামুদ তাহির পরিচয়ে। হয়ে উঠলেন কুলীন হিন্দু থেকে কট্টর মুসলিম। যশোর জেলার চেঙ্গুটিয়া পরগণায় ছড়ালেন তার দাপট।

তিনি থাকতেন চেঙ্গুটিয়ার পিরল্যা বা পিরালিয়া গ্রামে। ফলে গ্রামের লোকজন অচিরেই তাঁকে ডাকতে শুরু করল ‘পির আলী’ নামে। এই ‘পির আলী’ থেকেই পরবর্তীতে ‘পীরালী’ শব্দের উৎপত্তি হয়। খুলনার স্বার্থবাদী মতলববাজ গুড়-বংশীয় জমিদার দক্ষিণানাথ রায় চৌধুরী হাত মেলালেন তিনি পির আলী ওরফে মামুদ তাহিরের সঙ্গে। যশোর জুড়ে চলল পির আলী আর দক্ষিণানাথের যৌথ কর্মযজ্ঞ। দক্ষিণানাথ চৌধুরীর প্রভাব-প্রতিপত্তির জোরে একটি জায়গার নামই হয়ে গেল দক্ষিণডিহি। চেঙ্গুটিয়া পরগণার ভৈরব নদের তীর ঘেঁষে এ জনপদ। এখানেই দক্ষিণানাথ গড়ে তুললেন বিখ্যাত মা কালীর মন্দির।

জমিদার দক্ষিণানাথ রায় চৌধুরীর ছিলো চার ছেলে আর এক মেয়ে। বড়োজন কামদেব ও মেঝজন জয়দেব লেখাপড়ায় বেশ ভাল। তাঁরা পির আলীর বিশেষ প্রিয়পাত্র ছিলেন। ছোটো দুভাই রতিদেব ও শুকদেব দক্ষিণ ডিহি গ্রামের জমিদারির তত্ত্বাবধান করতেন।

কোনো এক রোজার মাসে বিকেলবেলা পির আলীকে ইফতারের ফল উপহার দিলেন এক পারিষদ। সেখান থেকে একটি সুপুষ্ট রসালো লেবু হাতে নিয়ে ঘ্রাণ শুঁকে পির আলী বললেন, কী সুন্দর গন্ধ! কামদেব-জয়দেব এতে আশ্চর্য হয়ে বললেন, এ কী করলেন! ঘ্রাণে যে অর্ধভোজন। আজানের আগেই যে রোজা ভেঙে ফেললেন! ধর্মান্তরিত মামুদ তাহির এ কথা জানতেন যে, ঘ্রাণেন অর্ধভোজনং। তাই এ কথা সহ্য করতে না পেরে তিনি রোজা ভেঙে ফেলেন এবং তক্কে তক্কে থাকেন কীভাবে এর প্রতিশোধ নেয়া যায়। এরই ফলস্বরূপ কামদেব ও জয়দেবকে একদিন গরু-মাংস রান্নাকালীন ডাক পাঠালেন মামুদ তাহির। তারা সেখানে গিয়ে গরুর মাংসের ঘ্রাণ পেয়ে নাকে কাপড় দিয়ে পালিয়ে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু মামুদ তাহিরের লোকজন তাদের ধরে ফেলে ও জোর করে গরুর মাংস তাদের মুখে পুরে দেয়।

ফলে মুসলমান না হয়ে আর তাদের উপায় রইল না। কামদেব হয়ে গেলেন কামালুউদ্দিন খাঁ চৌধুরী আর জয়দেব হলেন জামালুদ্দিন খাঁ চৌধুরী। তাদের ছোট দুইভাই রতিদেব-শুকদেব তখনও থাকতেন কামদেব-জয়দেবের বাড়িতে। দাদারা মুসলমান হয়ে যাওয়ায় হিন্দু সমাজ একঘরে করল তাদেরকে। এরাই পরবর্তীতে পীরালী ব্রাহ্মণ হিসেবে পরিচিত হলো। সমাজ পরিত্যক্ত হওয়ার কারণে জমিদার রতিদেব ও শুকদেব তাদের বোন রত্নাম্বরীকে খুব কষ্টে বিয়ে দেন মঙ্গল রায় চৌধুরী নামে এক সম্ভ্রান্ত বংশীয়ের সাথে। কিন্তু এরপর শুকদেব রায় চৌধুরী তার মেয়ে সুন্দরীর বিয়ে দেয়ার জন্যে পাত্র খুঁজে পান না। একদিন সন্ধ্যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে খুলনার পিঠাভোগ গ্রামের জমিদার বংশীয় পুরুষ জগন্নাথ কুশারী ভৈরব নদীর কেয়াতলার ঘাটে দক্ষিণানাথ রায় চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণাকালীর ঘাটে এক দুর্যোগের রাতে বজরা ভিড়াতে বাধ্য হন, শুকদেব রায় চৌধুরীর বাড়িতে আশ্রয় নেন। শুকদেব জগন্নাথের পরিচয় পেয়ে এবং তার সম্ভ্রান্ত বেশভূষা দেখে তাকে পটিয়ে মেয়ে সুন্দরীর সাথে বিয়ে দেন। ফলে বৈবাহিক দোষে জগন্নাথও পীরালী ব্রাহ্মণের তকমা পেয়ে যায় এবং পিঠাভোগে না গিয়ে দক্ষিণ ডিহিতে শ্বশুরের ছত্রছায়ায় বাস করে। এই জগন্নাথ কুশারীই হলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষ। এই জগন্নাথ কুশারীর ছিল পাঁচ পুত্র। দ্বিতীয় পুত্র পুরুষোত্তমণ্ডএর বংশ থেকেই ঠাকুর বংশের ধারা শুরু হয়। অপর পুত্রদের ধারা বিলুপ্ত হয়। পুরুষোত্তমের প্রপৌত্র রামানন্দের পুত্র ‘পঞ্চানন’ ও রামানন্দের ভাই ‘শুকদেবে’র মাধ্যমেই কলকাতায় ঠাকুর গোষ্ঠীর সর্বপ্রথম বসবাস শুরু হয়। পারিবারিক সমস্যার জেরে পঞ্চানন ও শুকদেব কলকাতা নামক গ্রামের দক্ষিণে গোবিন্দপুরে আদি গঙ্গার তীরে বসতি স্থাপন করেন। সেখানে মাছ ব্যবসায়ী, জেলে, মালো, কৈবর্ত জাতির বাস। ইংরেজদের জাহাজ গোবিন্দপুরের গঙ্গায় এসে নোঙর করলে পঞ্চানন কুশারী মালপত্র জাহাজে ওঠানো-নামানোর কাজে স্থানীয় ব্রাত্য শ্রেণির লোকদের সাহায্য নিতেন। তারা ব্রাহ্মণ ভদ্রলোক পঞ্চাননকে নাম ধরে না ডেকে সমীহ ও শ্রদ্ধায় ‘ঠাকুর মশাই’ বলে ডাকতেন। জাহাজের নাবিকরাও তাকে ‘পঞ্চানন ঠাকুর’ বলে ডাকা শুরু করে। ইংরেজরা তাদের নথিপত্রে ‘কুশারী’ নামটি পাল্টে ঠাকুর লেখা শুরু করে, যা ইংরেজিতে টেগোর হয়ে যায় উচ্চারণে। এই পঞ্চানন ঠাকুর থেকেই কলকাতার পাথুরিয়াঘাটা, জোড়াসাঁকো, কয়লাঘাটার ঠাকুর গোষ্ঠির উদ্ভব হয় এবং শুকদেব থেকে চোরাবাগানের ঠাকুরগোষ্ঠীর বিকাশ ঘটে।

পঞ্চানন ঠাকুরের পুত্রের নাম জয়রাম ঠাকুর। তিনি ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমিন। তিনি এ পেশার মধ্য দিয়ে বিপুল অঙ্কের অর্থ আয় করেন। জয়রামের চার ছেলে আনন্দীরাম, নীলমণি, দর্পনারায়ণ ও গোবিন্দরাম। ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে জয়রাম মৃত্যু বরণ করেন। তার প্রথম ছেলে আনন্দীরামও অকালে মারা গেলে পরিবারের প্রধান হন ছেলে নীলমণি ঠাকুর। জয়রাম ঠাকুরের চার পুত্রের মধ্যে নীলমণি ঠাকুর ও দর্পনারায়ণ ঠাকুর যথাক্রমে জোড়াসাঁকো ও পাথুরিয়া ঘাটা ঠাকুর পরিবারের আদিপুরুষ।

১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দের দিকে নীলমণি ঠাকুর ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির উড়িষ্যার রাজস্ব বিভাগে চাকরিতে যোগদান করেন। ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দের একটি ঘটনা। পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার উত্তরাংশের একটি রাস্তার নাম চিৎপুর সড়ক। পাথুরিয়াঘাটা থেকে একটু দূরে চিৎপুরের পশ্চিম প্রান্ত। দক্ষিণ-পুবে কিছু দূরেই একটি ছোট নালার ওপর একজোড়া কাঠের সাঁকো। এই সাঁকো যুগলের কারণে এ এলাকার নাম হয়ে যায় পরবর্তীকালে জোড়াসাঁকো। কাঠের সাঁকোর ওপারে টলমল পুকুর। দক্ষিণে মেছুয়াবাজারের বসতি। ওই পুকুরেই গ্রীষ্মের কোনো এক দুপুরে স্নানে নামলেন বৈষ্ণব শেঠ। স্নান করতে করতে তিনি তাকালেন পুকুরের অপর পাড়ের দিকে। চোখে পড়লো এক দীর্ঘাঙ্গ ব্রাহ্মণ গাছের ছায়ায় গৃহদেবতা লক্ষ্মীজনার্দনকে ভোগ দিচ্ছেন সপরিবারে। বৈষ্ণব শেঠ ইতিমধ্যেই ব্রাহ্মণের নামণ্ডপরিচয় অবগত হয়েছেন। ব্রাহ্মণ যুবকের নাম নীলমণি। বৈষ্ণব শেঠ নীলমণিকে বললেন, সামনেই শান্তিরাম সিংহের বাগান। তার পাশে তাঁরও একটু জমি আছে। সেই জমির একটি অংশ তিনি নীলমণিকে দান করতে চান। কিন্তু নীলমণি অব্রাহ্মণের দান গ্রহণ করতে ইচ্ছুক নন। তাই বৈষ্ণব শেঠ তখন ওই জমি লক্ষ্মীজনার্দন ঠাকুরের নামে দান করে দেন। সেই জমিতে একটি চালাঘর নির্মাণ করে বসবাস শুরু করলেন নীলমণি ঠাকুর। বরাবর ঠিক রবীন্দ্রনাথের জন্মের সাতাত্তর বছর আগে। সেই হতে পত্তন হলো জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির। তাঁর ভাই দর্পনারায়ণ বাড়ি করেন পাথুরিয়া ঘাটায়।

নীলমণির পাঁচ ছেলে--রামতনু, রামরত্ন, রামলোচন, রামমণি ও রাম বল্লভ। তারা জোড়াসাঁকোর পৈতৃক ভিটায় একান্নভুক্তভাবে বসবাস করতেন। ১৭৯১ সালে নীলমণি মৃত্যুবরণ করেন। রামতনু ও রামরত্নের অল্প বয়সে মৃত্যু হলে তৃতীয় ছেলে রামলোচন পরিবারের কর্তা হন। রামলোচন ও চতুর্থভাই রামমণি দুই ভাই একই পরিবারে সহোদরা দুই বোনকে বিয়ে করেন। রামলোচনের স্ত্রীর নাম অলকা দেবী আর রামমণির স্ত্রীর নাম মেনকা দেবী। রামলোচন অপুত্রক ছিলেন, তার একটামাত্র কন্যা শিবসুন্দরী। রামমণির দুই কন্যা জাহ্নবী ও রাসবিলাসি, দুই পুত্র রাধানাথ এবং দ্বারকানাথ। দ্বারকানাথ ১৭৯৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। নিতান্তই শিশু দ্বারকানাথ একদিন খেলছিলেন বাড়ির উঠোনে। এক সন্ন্যাসী ভিক্ষান্ন সংগ্রহে আসলে তার নজর পড়ে শিশু দ্বারকানাথের উপর। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে এই শিশুই একদিন বংশের মান-মর্যাদা-সম্পদ বৃদ্ধির কারণ হবে, তার থেকেই শুরু হবে বংশের নতুন ইতিহাস। সন্ন্যাসীর এ ভবিষ্যদ্বাণী শুনে অলকাসুন্দরী দেবী স্বামী রামলোচনকে উৎসাহিত করেন দেবর রামমণির এ ছেলেটিকে দত্তক নিতে। দত্তক নেওয়ার একবছরের মাথায় দ্বারকানাথের মা মেনকা দেবী মারা যান।

রামলোচন বিত্তবান, সঙ্গীতজ্ঞ ও সংস্কৃতি-অনুরাগী মানুষ ছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন দ্বারকানাথের পক্ষে ইংরেজি শেখাটি একান্ত জরুরি। তাই তাকে ভর্তি করালেন শেরবোর্ন সাহেবের স্কুলে। সেই সঙ্গে মৌলবির কাছে আরবি ও ফার্সি ভাষায় পাঠ নিতে পাঠালেন দ্বারকানাথকে।

রামলোচন ১৮০৭ সালের ১২ ডিসেম্বর মারা যান। তার মৃত্যুর সময় দ্বারকানাথের বয়স ছিল তের বছর। রামলোচন তার যাবতীয় বিষয়সম্পত্তি দ্বারকানাথের নামে উইল করে তা তত্ত্বাবধানের ভার অলকাদেবী ও দ্বারকানাথের জ্যেষ্ঠভ্রাতা রাধানাথ ঠাকুরের উপর অর্পণ করে যান। পরবর্তী সময়ে দ্বারকানাথ বৈষয়িক বিষয়ে রামলোচনের যোগ্য উত্তরসূরি হয়েছিলেন। তিনি আঠারো বছর বয়েসে দ্বারকানাথ ওড়িশা ও বিরাহিমপুরের জমিদারি ও কলকাতার ভূসম্পত্তির অধিকারী হন। তাঁর সময়েই ঠাকুর বাড়ির খ্যাতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। ব্রিটিশরা তাঁকে ‘প্রিন্স’ পদবী উপহার দেয়। দ্বারকানাথ ঠাকুরের ছিল ৬ সন্তান। জন্মের অল্পকিছুকাল পরেই তার প্রথম কন্যাসন্তানের মৃত্যু হয়। পুত্ররা ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, নরেন্দ্রনাথ ঠাকুর, গিরীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ভূপেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নগেন্দ্রনাথ ঠাকুর। নরেন্দ্রনাথ ও ভূপেন্দ্রনাথ ঠাকুর অকালে মারা যান। দেবেন্দ্র নাথ ঠাকুর ছিলেন সমাজ সংস্কারক ও শিক্ষাব্রতী। তিনি ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন। ব্রাহ্মধর্মানুসারীরা ঋষিতুল্য এ ব্যক্তিকে ‘মহর্ষি’ উপাধি দেয়। দেবেন্দ্রনাথের ছিল ছয় মেয়ে নয় ছেলে। সবচেয়ে ছোটজন বুধেন্দ্রনাথ ঠাকুর অকালে মৃত্যুবরণ করায় রবীন্দ্রনাথ হয়ে যান দেবেন্দ্রনাথ ও সারদা সুন্দরী দেবী দম্পতির শেষ সন্তান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন খুলনার পিঠাভোগ গ্রামের কুশারী বংশের ১৩তম প্রজন্ম। খুলনার রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের পিঠাভোগ গ্রামের অধিবাসী কুশারীদের আদি বাড়িটি এখন আর নেই। কয়েক বছর আগে প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন ভবনটি ভেঙে ফেলে সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘পিঠাভোগ রবীন্দ্র স্মৃতি সংগ্রহশালা’। এই স্মৃতি সংগ্রহশালার পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বংশধর দুটি পরিবারের তেরজন সদস্য এখনো বসবাস করছেন। এখন সেখানে থাকেন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষ রামগোপাল কুশারীর সতেরতম বংশধর গোপালচন্দ্র কুশারী।

১৮৮৩ সালে বেণীমাধব রায় চৌধুরী ও দাক্ষায়নী দেবীর একমাত্র কন্যা ভবতারিণী দেবী ওরফে ফুলির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিয়ে হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মামা নিরাঞ্জন রায় চৌধুরী ও হিরন্ময় রায় চৌধুরীর সক্রিয়তায় জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে তাঁদের বিয়ে হয়। ঠাকুরবাড়ির প্রথানুযায়ী বিয়ের পর ভবতারিণী দেবীর নাম রাখা হয় মৃণালিনী দেবী। খুলনা শহর থেকে প্রায় ২৮ কিলোমিটার পশ্চিমে ফুলতলা উপজেলার অন্তর্গত দক্ষিণডিহি গ্রামে বেণীমাধব রায় চৌধুরীর আদি বাড়িই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি।

রবীন্দ্রনাথ ও মৃণালিনী দম্পতির পাঁচ সন্তান। তিন মেয়ে ও দুই ছেলে। বড় মেয়ে মাধুরীলতা যার ডাক নাম বেলা। ভোরের পাখি নামে খ্যাত বিহারীলাল চক্রবর্তীর ছেলে শরৎকুমার চক্রবর্তীর সাথে তার বিয়ে হয়। তারা নিঃসন্তান ছিলেন। দ্বিতীয় সন্তান রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ তাকে বিধবা বিবাহ করান। এটিই ঠাকুর পরিবারে প্রথম বিধবা বিবাহ। পুত্রবধূ প্রতিমা দেবীর পিতার নাম শেষেন্দ্রভূষণ চট্টোপাধ্যায়। তিনি গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাগ্নি ছিলেন। তাঁর জন্ম ৫ নভেম্বর ১৮৯৩। রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্যগুলির নৃত্যনির্দেশনা ও পরিকল্পনায় তার ভূমিকা স্মরণীয়। রথী ও প্রতিমা দেবী ছিলেন নিঃসন্তান। গুজরাট থেকে বেড়াতে আসা চতুর্ভুজ দামোদরের কন্যাকে দত্তক নেন তাঁরা। রবীন্দ্রনাথের আদরের সেই মেয়েটির নাম দেন নন্দিনী। কখনো তাকে পুপে, কখনো পুষে ইত্যাদি বিচিত্র নামে ডাকতেন। ১৯৩৯ সালে পুপের সাড়ম্বরে বিয়ে হয় বিখ্যাত শিল্পপতি আজতসিং মোরারজি খাপউ-এর সঙ্গে। রবীন্দ্রনাথ এ বিয়ে উপলক্ষে তিনটি গান লিখেছিলেন। এ বিয়ে অবশ্য সুখের হয়নি, বিচ্ছেদ হয়ে যায়। নন্দিনী পরে বিয়ে করেন গুজরাটি দন্ত চিকিৎসক গিরিধারী লালাকে। নন্দিনী-গিরিধারী একই সঙ্গে পড়তেন শান্তিনিকেতনে। বিয়ের পরেও তাঁরা শান্তিনিকেতনেই থাকতেন। বোঝাপড়ার ঘাটতির কারণে রথীন্দ্রনাথ ও প্রতিমার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। রথীন্দ্রনাথ ছিলেন শান্তিনিকেতন বিশ্ব ভারতীর প্রথম উপাচার্য, যখন আচার্য ছিলেন জওহরলাল নেহেরু। রথীন্দ্রনাথ তার চেয়ে ত্রিশ বছরের ছোট মীরা চট্টোপাধ্যায়ের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। মীরা ছিলেন বিবাহিতা। তার বর নির্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও শান্তি নিকেতনে শিক্ষকতা করতেন। বিশ্বভারতীর উপাচার্যের পদ ছেড়ে দিয়ে তিনি দেরাদুনে 'মিতালী' নামে বাড়ি তৈরি করে তাতে মীরা চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে বসবাস করেন প্রায় দশ বছর। ১৯৬১ সালে তিনি মারা যান। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে সুপ্রিয়া ঠাকুর গিয়ে তার মুখাগ্নি করেন। ১৯৬৯ সালের জানুয়ারিতে মারা যান প্রতিমা দেবী। রথী ও প্রতিমার দত্তক কন্যা নন্দিনী ও ডাঃ গিরিধারী লালের এক পুত্র সুনন্দন লালা যার জন্ম কলকাতায় ১৯৫৩ সালে। সুনন্দন লালা একজন বিজ্ঞানী এবং তার পত্নীর নাম সমিতা। তিনি একজন রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী। তারা ব্যাঙ্গালোরে বাস করতেন। তাদের দুই পুত্র। বড়ো জন নীলাঞ্জন ও তার পত্নীর নাম রঞ্জনা। তারা বর্তমানে আমেরিকার আটলান্টায় বাস করেন। ছোটজন হলো প্রতীক এবং তিনি পেশায় একজন আইনজীবী।

রবীন্দ্রনাথের তৃতীয় সন্তান ছিলো রেণুকা। রেণুকার জন্ম হয় ১৮৯১ সালে এবং বিয়ে হয় ১৯০১ সাল। ১৯০৩ সালে রেণুকা মারা যায়। তার কোনো সন্তানাদি হয়নি। তার স্বামীর নাম ছিলো সত্যেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। কবিগুরু তাকে নিজের টাকায় বিলেত পাঠান চিকিৎসাবিজ্ঞান অধ্যয়ন করতে। বিয়ের সময় রেণুকার বয়স ছিল মাত্র দশ বছর ছয় মাস। বিয়ের পিঁড়িতে রেণুকা বসতে মোটেই চায়নি। তবুও রবীন্দ্রনাথের কারণে অকালে বিয়ে করতে হয়। দাদা রথীন্দ্রনাথই ছিলো অভিমানী রেণুকার অধিকারের স্থান। খুব দুরন্ত ছিল মেয়ে ছিল এই রেণুকা বা রাণী।

রবীন্দ্রনাথের চতুর্থ সন্তান ছিল মীরা যাকে রবীন্দ্রনাথ অতসী নামেও ডাকতেন। মীরার প্রতি রবীন্দ্রনাথের পক্ষপাত ছিলো কিছুটা। নগেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে হয়। ছেলে নীতিন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় কুড়ি বছর বয়সে জার্মানীতে অধ্যয়নকালীন যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মীরার মেয়ে নন্দিতার ডাক নাম ছিলো বুড়ি। তার সাথে বিয়ে হয় কৃষ্ণ কৃপালনীর। তিনি পরবর্তীতে রবীন্দ্র-জীবনীকার হিসেবে সুপরিচিত হন। তারাও নিঃসন্তান ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের দৌহিত্রী নন্দিতা ১৯৬৭ সালে একান্ন বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। রবীন্দ্রনাথের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান ছিলেন শমীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৮৯৬ সালে তার জন্ম। তিনি অতি অল্প বয়সেই কলেরায় আক্রান্ত হয়ে ১৯০৭ সালে মারা যান। তার মৃত্যুতে দুঃখ পেয়ে কবিগুরু লেখেন, ‘আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে...’।

কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার খুলনার ফুলতলা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের পিঠাভোগের কুশারীদেরই উত্তরপুরুষ যাদের আদিপুরুষ পীরালী ব্রাহ্মণ শুকদেব রায় চৌধুরীর জামাতা জগন্নাথ কুশারী। কানৌজ্বের ব্রাহ্মণ ক্ষিতিশের ছেলে শাণ্ডিল্য গোত্রের কুলীন ব্রাহ্মণ ভট্টনারায়ণ হতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পর্যন্ত ঠাকুরবাড়ির তেত্রিশ পুরুষের নাম নিম্নরূপ : ১. ভট্টনারায়ণ, ২. আদিবরাহ , ৩. বৈনতেয়, ৪. সুবুদ্ধি, ৫. বিবুধেশ, ৬. গাঁউ, ৭. গঙ্গাধর, ৮. পশুপতি, ৯. বিঠোক, ১০. ধরণীধর, ১১. তারপতি, ১২.গঙ্গারাম, ১৩. ঊষাপতি, ১৪. সুরেন্দ্র, ১৫. রামরূপ, ১৬.হলায়ুধ, ১৭. ধর, ১৮. কুমার, ১৯. বিষ্ণু, ২০. হাড়ো (হরসুখ), ২১. গোবর্দ্ধন, ২২. মহাদেব, ২৩. জগন্নাথ, ২৪. পুরুষোত্তম (চব্বিশতম), ২৫. বলরাম, ২৬. হরিহর, ২৭. পঞ্চানন, ২৮. জয়রাম, ২৯. নীলমণি, ৩০. রামমণি, ৩১. দ্বারকানাথ, ৩২. দেবেন্দ্রনাথ, ৩৩. রবীন্দ্রনাথ ।

তথ্যঋণ :

১. রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য স্যানাল, চাপর ঘন্ট

২. চিত্রা দেব, ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল

৩. প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়, রবিকথা

৪. পঙ্কজ ঘোষ, রবিঠাকুর, শাব্দিক, রবিবাসরীয়

৫. Nitish Sengupta, History Of Bengali-speaking People

৬. শ্রী অমিতাভ মুখোপাধ্যায়, শতাব্দী জয়ন্তী নির্বাচিত সঙ্কলন, শ্রী হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, উদ্বোধন কাব্যালয়

৭. বিদ্যাসাগর রচনাবলী

৮. শ্রী রজনীকান্ত চক্রবর্তী, গৌড়ের ইতিহাস

৯. শ্রীদুর্গাচরণ সান্ন্যাল, বাংলার সামাজিক ইতিহাস

১০. শ্রীসঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, প্রবন্ধ, শারদীয় বর্তমান (১৪১৩)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়