রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৪ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

স্বাধীনতা দিবসে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ দাতার হাতে পরিণত হয়েছে

-------------শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ দাতার হাতে পরিণত হয়েছে
বিমল চৌধুরী ॥

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ২৬ মার্চ রোববার চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা মিলনায়তনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদানসহ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং দেশের উন্নয়ন শীর্ষক এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। বক্তব্যের প্রারম্ভে তিনি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি গভীর শ্রদ্ধার সাথে আরো স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহিদদের, যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা। তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সমর্থক এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ সর্বস্তরের জনগণকে, যারা অধিকার আদায়ের মুক্তি সংগ্রামে বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছিলেন। তিনি স্বাধীনতার ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির উপর অতর্কিত হামলা চালায়। বর্বরোচিত হামলার প্রেক্ষিতে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন দূরদর্শি সম্পন্ন আদর্শবাদী নেতা। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হলেও এই স্বাধীনতা বাঙালি জাতির স্বাধীনতা নয়। পাকিস্তান স্বাধীনতা পেলেও স্বাধীনতার স্বাদ পাবে না বাঙালি জাতি। এদের উপর চলবে শাসন, শোষণ। তারা বঞ্চিত হবে ন্যায়সঙ্গত অধিকার থেকে। তাই বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিজেকে উৎসর্গ করলেন। তাঁর আন্দোলন-সংগ্রামে কখনো কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায়নি। তিনি তাঁর প্রজ্ঞা, মেধা, আর বাস্তবতার আলোকে বাঙালি জাতির স্বপ্নপূরণে এগিয়ে গেছেন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। বাঙালি জাতিকে তিনি ধীরে ধীরে সংঘবদ্ধ করেছেন, একত্রিত করেছেন পাকিস্তানি শাসন শোষণের বিরুদ্ধে, ঐক্যবদ্ধ করেছেন স্বাধীনতার জন্যে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন বাঙালির স্বাধীনতার জন্যে একটি সশস্ত্র সংগ্রামের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের বিশাল জনসমাবেশে তাঁর ভাষণে সেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সেই দিনের সেই ঐতিহাসিক ভাষণে দীর্ঘ ২৩ বছরের পাকিস্তানি শাসন, শোষণ থেকে বাঙালির মুক্তির লক্ষ্যে তিনি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রদান করেন। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাক সামরিক জান্তা শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার হওয়ার পূর্বেই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তিনি ৭ মার্চের রেসকোর্স ময়দানেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে পারতেন কিন্তু তা তিনি দেননি। কারণ, তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হতে চাননি, বিশ্বজনমত থেকে বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে ভিন্নভাবে প্রবাহিত হোক তা তিনি চাননি। কেনো বাঙালি জাতির স্বাধীনতার প্রয়োজন রয়েছে তার সকল কিছুই তিনি ৭ মার্চের ভাষণে বলে গিয়েছেন। ২৬ মার্চে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পরই আপনারা (বীর মুক্তিযোদ্ধারা) জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে দেশকে স্বাধীন করার জন্যে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, সেদিন কোনো পিছুটান আপনাদেরকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি, সেদিন দেশমাতৃকার টানে আপনারা ঘর ছেড়েছিলেন। আপনাদের দেশ মাতৃকার টানেই আমরা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ পেয়েছি। আগামী দিনগুলোতেও আপনাদেরকে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনেও আপনাদেরকে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্বাচন। এই নির্বাচনে আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে আমরা কি পাকিস্তানি দুঃশাসনের দিকে ফিরে যাবো, নাকি যে দলটি দেশের স্বাধীনতা দিয়েছে, উন্নয়ন দিয়েছে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য সম্মান দিয়েছে সেই দল অর্থাৎ আওয়ামী লীগের পাশে থাকবো।

তিনি নৌকা মার্কাকে পুনরায় নির্বাচিত করার আহ্বান জানিয়ে আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। দারিদ্র বিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভাবণীয় সাফল্য অর্জন করছে। আজ দেশে কেউ না খেয়ে থাকে না। আজ আমরা খাদ্য স্বয়ংসম্পন্ন, প্রয়োজনে আমরা বিদেশে খাদ্য সহায়তা প্রদান করতে পারছি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ দাতার হাতে পরিণত হয়েছে। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছি। আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হবে সেই লক্ষ্যে কাজ করছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে রুখে দিতে বিএনপি-জামায়াত দোসররা ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা জাতিগত সংখ্যালঘুসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘরে হামলাসহ একের পর এক বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। তাদের এই ভয়াবহ কর্মকাণ্ডকে রুখে দেয়ার লক্ষ্যে দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তিকে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে হবে। জাতির পিতার দেখানো পথেই দেশ এগিয়ে যাবে, তাঁর স্বপ্ন পূরণের মধ্য দিয়েই আমরা সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবো আজকের এদিনে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

চাঁদপুর জেলা প্রশাসন আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ, বিপিএম (বার), চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচিত ইউনিট কমান্ডার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ ওয়াদুদ, চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাস, পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্যাহ ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার শাহাদাত হোসেন সাবু পাটওয়ারী।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রাশেদা আক্তার। আরডিসি রেশমা আক্তারের পরিচালনায় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাহাদাৎ হোসেন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার (ওয়ারেন্ট অফিসার) বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ হাফিজ খান প্রমুখ।

এদিন ২২২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নগদ অর্থসহ ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানকে ঘিরে মুক্তিযোদ্ধাসহ তাঁদের পরিবার-পরিজন ও সুধীজনদের ব্যাপক উপস্থিতিতে জেলা শিল্পকলা অডিটোরিয়ামে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্য পরিলক্ষিত হয়। শিক্ষামন্ত্রী ও জেলা প্রশাসক মুক্তিযোদ্ধাদের বসার জায়গায় গিয়ে তাঁদের ফুলেল শুভেচ্ছায় অভিনন্দন জানান।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়