বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

বঙ্গবন্ধু হত্যার শোক আজ শক্তির প্রেরণা

বঙ্গবন্ধু হত্যার শোক আজ শক্তির প্রেরণা
ড. এম মেসবাহউদ্দিন সরকার

কোনো কোনো মৃত্যু মানুষ, সমাজ এবং জাতিকে চরমভাবে বিপর্যস্ত করে। সেরকমই একটি জঘন্য ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে এবং নিকটাত্মীয়রা শাহাদাতবরণ করেন এইদিনে। এ নৃশংস ঘটনা কেবল বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেও বিরল। জগতে অন্যান্য হত্যাকাণ্ডে নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করা হয়নি, টার্গেট করা হয়নি অবলা ও অন্তঃসত্ত্বা নারীকে। এই শোক এবং ক্ষতি কোনোদিনও পূরণ হওয়ার নয়।

তবুও এই শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে, আর সেই পথেই হাঁটছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিনের ২৪ ঘণ্টা দেশের কল্যাণে কাজ করে সকল শোক ও বেদনাকে ভুলে থাকতে চেষ্টা করছেন তিনি। প্রতিনিয়ত মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে সকল বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন ঈর্ষণীয় সাফল্যে। আর এটাই হচ্ছে শোককে শক্তিতে পরিণত করার প্রাণপণ চেষ্টা।

শক্তির এই উৎস শুরু হয় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন দিয়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা দিয়ে বাংলাকে নিয়ে গেছেন বিশ্ব পরিমণ্ডলে। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্মেলনে বাংলা ভাষার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংগ্রামের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অবশেষে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি এবং ২০০০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এভাবে বাংলা ভাষা বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠা লাভ করে, বাঙালি জাতি অগণিত ভাই হারানোর শোক থেকে হয় শক্তিমান। এরপর ৬৯-এর গণআন্দোলন, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সব কিছুতেই ছিল দল-মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের শোকের বিনিময়ে শক্তির মহড়া। বাঙালি জাতি পৌঁছে যায় তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। আজ সমুদ্র সীমানায় বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব, জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশী সৈনিকের সাফল্য, বাইডেন প্রশাসনে বাঙালি মেধার পদচারণা, রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে মাদার অব হিউম্যানিটি উপাধি লাভ, বিদেশে দক্ষ শ্রমিকের পাঠানো রেমিটেন্স ইত্যাদি দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ ও অর্থনীতির ভাণ্ডার মজবুত হচ্ছে, জাতি হচ্ছে শক্তিশালী।

অনেক সীমাবদ্ধতা এবং প্রতিকূল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও অনলাইনে লেখাপড়া, এসাইনমেন্ট, চূড়ান্ত পরীক্ষা চলছে দেশব্যাপী। শিক্ষা ও গবেষণায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে। বিশ্বের ২ শতাংশ বিজ্ঞানীদের তালিকায় বাংলাদেশী বিজ্ঞানীদের নামও আছে। পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের নাম আজ বিশ্বে শীর্ষে অবস্থান করছে। ৯০ শতাংশ নারী শ্রমিকের কল্যাণে অর্জন হচ্ছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। এছাড়াও নারীর ক্ষমতায়ন, নারী ও শিশুশিক্ষায় অগ্রগতি, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানো ইত্যাদি সাফল্য আমাদের শক্তিকে আরও বেগবান করছে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগের মাধ্যমে করোনার ভ্যাকসিন আনা এবং ডাক্তার, পুলিশ, সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গ্রামের জনগণসহ সকলকে ভ্যাকসিন দেওয়ার উদ্যোগ, ভবিষ্যতে নিজেদের সক্ষমতায় দেশেই ভ্যাকসিন তৈরির মহাপরিকল্পনা ইত্যাদি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সুসম্পর্ক এবং নিজেদের শক্তি ও সামর্থ্যকেই বোঝায়। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক এবং বহুবিধ কর্মকাণ্ডের অপ্রতিরোধ্য ও ঈর্ষণীয় সাফল্যের রূপরেখা আন্তর্জাতিক মহল মডেল হিসেবে গ্রহণ করছে। সারাবিশ্বে আজ টাইগারদের (ক্রিকেট) পদচারণায় লাল-সবুজের পতাকা উদীয়মান। দেশে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নারী ফুটবল ও ক্রিকেট দলের অব্যাহত সাফল্য বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এসবই আমাদের আত্মমর্যাদা, সক্ষমতা ও উন্নয়নের দিকনির্দেশনা।

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, সুদৃশ্য মেট্রোরেল, কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু টানেল, বিশ্বমানের নান্দনিক বিমানবন্দর, দেশব্যাপী রেল নেটওয়ার্ক, প্রযুক্তি ও ফ্রিল্যান্সিংয়ে বাঙালিদের অবস্থান আজ বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে, যা আমাদের হাজারও দক্ষ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের অক্লান্ত পরিশ্রম, দুঃখণ্ডকষ্ট ও শোকের সিঁড়ি বেয়ে সাফল্যের পথ দেখাচ্ছে। জাতি হচ্ছে আত্মপরিচয়ে বলীয়ান ও শক্তিমান। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, মৎস্য ও কৃষিকাজে সফলতা, শহর-গ্রাম নির্বিশেষে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা দৈনন্দিন কাজকর্মকে আরও গতিময় করে তুলছে, জাতিকে করে তুলছে আত্মবিশ্বাসী।

ভূমিহীনদের জমি দান, গৃহহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্প, বয়স্কভাতা, আজীবন পেনশন স্কিম, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা এবং শহরের বস্তিবাসীর জন্য স্বল্পমূল্যে আধুনিক ফ্ল্যাট হস্তান্তরসহ আরও নানা জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম সবই হচ্ছে শোকের অন্তরালে সুখ, শান্তি এবং শক্তির বহির্প্রকাশ। শত শত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি, জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে হাজার হাজার শিক্ষক, পুলিশ, ডাক্তার, নার্স নিয়োগ, বড় বড় শহরসহ প্রতিটি উপজেলায় আন্তর্জাতিকমানের মডেল মসজিদ নির্মাণের সাহসিক পদক্ষেপের ফলে দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলছে দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সামাজিক কার্যক্রম। সর্বস্তরের মানুষ ভোগ করছে পরম সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য। ফলে দৈনন্দিক কাজে আসছে গতি, মনে সঞ্চার হচ্ছে সমৃদ্ধি, সকল লাঞ্ছনা-বঞ্চনা, শোষণ ও শোকের পরিবর্তে সঞ্চিত হচ্ছে সাহস ও শক্তি।

জঙ্গি দমনে বাংলাদেশের সফলতা, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সহাবস্থান, সবার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য ও বাসস্থান, গ্রামই হবে শহর, অন্যায়ে জিরো টলারেন্স ইত্যাদি বার্তা এবং সকল লাঞ্ছনা, বঞ্চনা, শোক, দুঃখ ও বেদনাকে পেছনে ফেলে দেশ যখন এগিয়ে চলছে ঠিক তখনই শোক থেকে শক্তিতে রূপান্তরের এই অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে চাচ্ছে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল। বিভিন্ন পদ ও পদবির অন্তরালে অবৈধ সম্পদের পাহাড়, ভূমি দখল, মানব পাচার, ত্রাণ বিতরণের নামে ফটোসেশন, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও দলীয় নেতার পাশে ছবি উঠিয়ে এবং তাদের নাম ভাঙিয়ে ঘুষ ও তদবির বাণিজ্যে লিপ্ত হচ্ছে তারা। নামে-বেনামে প্রকল্প দেখিয়ে লাখো-কোটি টাকা ব্যাংক লোন নিয়ে বিদেশে পাচার করছে।

সেখানে সেকেন্ড হোম তৈরি করে স্থায়ী হচ্ছে, দেশেও একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিক। সরকারি গাড়ি একটি নিজে, একটি সন্তান, আরেকটি স্ত্রী ও কাজের বুয়া ব্যবহার করে। অথচ সব খরচ নেয় সরকারের তহবিল থেকে। অনেকে আবার ক্লাব-ক্যাসিনোর নামে অবৈধ ব্যবসা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে বাধা এসব দুষ্টচক্রকে দমন করার কঠিন শপথ নিতে হবে, এগিয়ে যেতে হবে স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি মহাউন্নয়নে।

ইয়াবা ও মাদকের নেশায় জড়িয়ে পড়ছে একশ্রেণির তরুণ, যুবক, কিশোর। কারা এসবের সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করতে হবে। চিহ্নিত করতে হবে খাদ্যে ভেজাল, গুদামজাত ও অযথা মূল্য বৃদ্ধিকারী অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে। আর হালের এই ডিজিটাল যুগে প্রযুক্তির অপব্যবহারে বিপথগামী হচ্ছে কিছু তরুণ সমাজ, নষ্ট করছে সমাজের ভাবমূর্তি। ফেসবুক ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে দেশের বিরুদ্ধে, আন্তর্জাতিক মহলে। তাই দেশবিরোধী সকল অপশক্তিকে প্রতিহত করে প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণ ও দক্ষ নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

মুক্ত বাজার অর্থনীতি, অবাধ তথ্যপ্রবাহ, সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, অভ্যন্তরীণ সম্পদের উন্নয়ন, রেমিটেন্সের সাফল্য, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, সকল ধর্মের মানুষের সহাবস্থান, নারীর ক্ষমতায়ন, কূটনৈতিক সুসম্পর্ক ইত্যাদি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এখন অত্যন্ত মজবুত। অর্জিত এই সাফল্য ধরে রাখতে হবেন কোনো অন্যায় ও অপরাধের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু কোনোদিনও আপোস করেননি, বঙ্গবন্ধুকন্যাও করছেন না। বঙ্গবন্ধুর জন্যই আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে দেশ আজ উন্নত মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে পরিণত হয়েছে। চলুন সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে এবং দল-মত-জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাই ঐক্যবদ্ধভাবে। সকল হারানোর শোককে পরিণত করি শক্তির প্রেরণা হিসেবে।

ড. এম মেসবাহউদ্দিন সরকার : অধ্যাপক, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, আইআইটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়