প্রকাশ : ২৪ মে ২০২২, ০০:০০
শেখ মহিউদ্দিন রাসেল ছোটবেলা থেকেই স্বেচ্ছাসেবী নানা সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত। মূলত লেখালেখির মাধ্যমে তিনি স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন। বর্তমানে তিনি ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ চাঁদপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন ‘চাঁদমুখ’-এর সভাপতি এবং এপ্রেক্স ক্লাব অব চাঁদপুর-এর সাধারণ সম্পাদক ও ডিএনএ’র দায়িত্ব পালন করছেন।
ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ মুজাফ্ফর আলীর সন্তান শেখ মহিউদ্দিন রাসেল চাঁদপুর জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (চ:) হিসেবে কর্মরত। সম্প্রতি তার সাংগঠনিক চর্চা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে কথা ‘সুচিন্তা’ বিভাগের।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কেমন আছেন?
শেখ মহিউদ্দিন রাসেল : আলহামদুলিল্লাহ। ভালো আছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : সাংগঠনিক চর্চায় কীভাবে যুক্ত হলেন?
শেখ মহিউদ্দিন রাসেল : লেখালেখির মাধ্যমে আমি সাংগঠনিক চর্চায় যুক্ত হই। ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ ছিলো। তখন থেকে চাঁদপুর রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন করি। আমি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলাম। পাশাপাশি রোটারী ক্লাবের জুনিয়র সংগঠন ইন্টার্যাক্ট ক্লাব করি। তারপর পিতা ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ মুজাফ্ফর আলী-আংকুরেন্নেছা ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করি। এভাবেই সংগঠনমনা হয়ে পড়ি। পড়ে ক্রমশ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে জড়িয়ে পড়ি। সমাজের জন্যে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে খুবই ভালো লাগে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ সংগঠন সম্পর্কে কিছু বলুন।
শেখ মহিউদ্দিন রাসেল : ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। চিত্রনায়ক ইলিয়াছ কাঞ্চনের স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন চট্টগ্রামে এক সড়ক দুর্ঘটনায় ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর নিহত হওয়ার পর ওই বছরেই ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ নামক সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। সেই যে যাত্রা শুরু তারপর থেকেই সড়ককে নিরাপদ রাখার জন্যে রাজপথে চিত্রনায়ক ইলিয়াছ কাঞ্চন আন্দোলন-সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। বর্তমান সরকার ২২ অক্টোবর দিনটি ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। এখন বাংলাদেশসহ বিশ্বে ২২ অক্টোবর ‘নিরাপদ সড়ক দিবস’ পালিত হয়।
চাঁদপুর কণ্ঠ : ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ সংগঠনে কারা সদস্য হিসেবে যুক্ত আছেন?
শেখ মহিউদ্দিন রাসেল : ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ সংগঠনে সদস্য হিসেবে যুক্ত আছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। বিশেষ করে সড়ক নিয়ে কাজ করে সরকারি প্রতিষ্ঠান সড়ক বিভাগ, বিআরটিএ, বিভিন্ন পরিবহন নেতা, ড্রাইভার, শ্রমিক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, শিক্ষক, ইমাম, সরকারি ও বেসরকারি চাকুরীজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। উপদেষ্টা হিসেবে প্রশাসনের কর্মকর্তা, সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গও রয়েছেন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ সংগঠনটি কী কী বিষয় নিয়ে কাজ করে?
শেখ মহিউদ্দিন রাসেল : ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ বিশেষ করে সড়ক নিরাপদ রাখতে ও দুর্ঘটনারোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্যে কাজ করে। এছাড়া সংগঠনটি জনগণের মধ্যে সড়ক আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, ড্রাইভারদের মধ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী, যানবাহনের যাত্রী তথা সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে সড়ক, ফুটপাতে যাতায়াত, চলাচলসহ সড়ক-সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যসম্বলিত ক্যাম্পিংয়ের মাধ্যমে সচেতন করে তোলে। সদস্যদের স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে যানজটমুক্ত রাখা। মোটকথা, ‘নিরাপদ সড়ক’ সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। ইতিমধ্যে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ চাঁদপুর জেলা কমিটি হাজীগঞ্জ পিটিআই-এর ১শ’ ৫০ জন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষককে ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রীদের সড়ক সম্পর্কে সচেতনতার জন্যে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ড্রাইভারদেরও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের সচেতনতা সম্পর্কিত লিফলেট বিতরণ ও ক্যাম্পিং করা হয়েছে। যানবাহন মালিকদের সাথে সড়ক আইন সম্পর্কিত মতবিনিময় করা হয়েছে। প্রশাসনসহ জেলার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে সেমিনার করা হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন মোড়ে ডিভাইডার স্থাপনসহ যানবাহন ড্রাইভারদের মাঝে বিভিন্ন উপকরণসহ যাত্রীদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করেছে। বিভিন্ন যানবাহনের হেডলাইটে কালো কালি দিয়ে উপরের অংশ ঢেকে দেয়া হয়েছে। সিএনজি অটোরিকশার ডানপাশ বন্ধ রাখার ব্যবস্থাকরণে কাজ করেছে। এছাড়া বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলায় কাজ করে যাচ্ছে। জাতীয় দিবসগুলোও যথাযোগ্যভাবে পালন করছে। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা সংস্কার করাসহ বহুমুখী প্রদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার সংগঠনের উল্লেখযোগ্য কাজ কী?
শেখ মহিউদ্দিন রাসেল : উল্লেখযোগ্য কাজ হচ্ছে, সড়ককে নিরাপদে রাখার জন্যে ড্রাইভার, যাত্রী, জনগণের মাঝে নিরাপদ সড়ক সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।
চাঁদপুর কণ্ঠ : সংগঠনের ভবিষৎ পরিকল্পনা কী?
শেখ মহিউদ্দিন রাসেল : ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে অনেক। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য, নিরাপদ সড়ক গঠনে কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা, সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে ব্যাপকভাবে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা, ড্রাইভারদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ ও তাদের চক্ষু পরীক্ষা করা, সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের জরুরি চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণে নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা, ব্যস্ততম সড়কে ডিভাইডার স্থাপন করা, সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সড়ক নিরাপদ রাখার জন্যে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা, সদস্যদের স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে সড়ক যানজটমুক্ত করা, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক আইন সম্পর্কিত ক্যাম্পেইন করা, নিজ উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা সংস্কারসহ আরো কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা।
চাঁদপুর কণ্ঠ : সংগঠনের সদস্য হতে হলে করণীয় কী?
শেখ মহিউদ্দিন রাসেল : সদস্য হতে হলে সংগঠনের নির্ধারিত ফরম আছে। সদস্য সংগ্রহ মাস ঘোষণা হলে ওই মাসে ফরম পূরণ করে এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিতে হবে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : সংগঠনের কার্যক্রম সম্পর্কে মানুষের ধারণা কী?
শেখ মহিউদ্দিন রাসেল : সংগঠনের কার্যক্রমকে মানুষ খুবই উৎসাহ দিচ্ছে। আমাদের ক্যাম্পিং, মানববন্ধন, র্যালি, পথসভা ইত্যাদিতে সংগঠনের সদস্যের বাইরে জনগণ অত্যন্ত স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। তাদের প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, এ আন্দোলন কার্যক্রমের মাধ্যমে সকলের মধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টি হবে। আর সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে হলে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। তারা ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন আরো জোরদার করার আহ্বান জানান এবং তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : সময় দেয়ার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।
শেখ মহিউদ্দিন রাসেল : আপনাকেও ধন্যবাদ।
* সুচিন্তা বিভাগে লেখা পাঠানোর ই-মেইল : [email protected]