বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য রক্ষার গুরুত্ব
অনলাইন ডেস্ক

(১ম পর্ব)

স্বাস্থ্য দয়াময় আল্লাহ তা’আলার দেয়া একটি বিশেষ এবং অনেক বড় নিয়ামত। এ নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা প্রতিটি মানুষের অপরিহার্য কর্তব্য। সুপ্রসিদ্ধ হাদিস গ্রন্থ নাসায়ী শরীফে বর্ণিত আছে ‘নিশ্চয় মানুষকে স্বাস্থ্য ও শারীরিক সুস্থতার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোনো নিয়ামত দান করা হয় নাই।’

স্বাস্থ্য ও সুস্থতা সম্পর্কে প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আবু দারদা (রাঃ)-এর অভিমত-‘যদি আমার স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং আমি সুস্থ থাকি তবে আমি শোকর আদায় করি। এ অবস্থাটি আমার নিকট, সেই অবস্থার চেয়ে অধিক পছন্দনীয় যে আমি অসুস্থতার দ্বারা পরীক্ষায় পতিত হই এবং ধৈর্য্য ধারণ করি।’

স্বাস্থ্য ও সুস্থতা সম্পর্কে জ্ঞানী ব্যক্তিদের স্মরণীয় বাণী :

* শারীরিক সুস্থতার চেয়ে মূল্যবান কোনো সম্পদ নাই এবং অল্পে তুষ্টির চেয়ে মূল্যবান কোনো তৃপ্তি নাই : হযরত লোকমান আঃ।

* প্রকৃত ঐশ^র্য হচ্ছে সুস্বাস্থ্য : সক্রেটিস।

* সুস্থ মানুষ কখনো পরমুখাপেক্ষী হয় না। কারণ তার মধ্যে জীবনের সকল সমস্যা সমাধানের স্বাভাবিক শক্তি থাকে। ফলে শক্তি, সাহস, ভদ্রতা ও উদ্যম তাকে সমর্থন যোগায় : জালিলুস।

* রোগের প্রাথমিক অবস্থাকে অবহেলা করবে না কারণ সেটা হচ্ছে স্ফুলিঙ্গ, সেই স্ফুলিঙ্গ আগুনের লীলায় পরিণত হতে পারে : আশতারি।

* স্বাস্থ্য যদি ভালো না থাকে তবে জ্ঞান কোনো কাজে আসে না, শক্তির প্রভাব থাকে না এবং অর্থ-সম্পদ নিরর্থক : গ্রীক দার্শনিক।

* এমন জিনিস খাবে না যা দাঁত তোমার চিবাতে সক্ষম হয় না। তোমার দাঁত চিবাতে না পারলে তোমার পাকস্থলি সে খাবার পিষতে পারবে না : হাজ্জায বিন ইউসুফের ব্যক্তিগত চিকিৎসক।

চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে সম্পর্ক

(একটি দুর্লভ রুশ গবেষণা) রাশিয়ার একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বছরের পর বছর মানবদেহ নিয়ে গবেষণা করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, চিকিৎসকের নিয়ত যদি ভালো থাকে তাহলে চিকিৎসার সময় তার দেহ থেকে এক অপার্থিব রশ্মি বিচ্ছুরিত হয়। এ রশ্মি রোগীর সুস্থতার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। চিকিৎসকের নিয়ত যদি ভালো না হয় তবে তার দেহ থেকে নেগেটিভ রশ্মি বিচ্ছুরণ ঘটে ফলে রোগীর সুস্থতায় বিলম্ব ঘটে।

রোগ দর্শন : মানুষের মধ্যে দু রকম অনুভূতি রয়েছে। একটি সুখ ও আনন্দের অপরটি হচ্ছে দুঃখ ও কষ্টের। এ দু রকম অনুভূতির ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া আছে। আনন্দের সময় দেহে সজিবতা আনায়ন করে। এতে দেহ ও মন সুস্থ থাকে। দুঃখ-কষ্ট মনে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এ অস্থিরতার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে। কখনো কখনো সেই অসুস্থতায় মৃত্যুও ঘটে। আমাদের চরিত্রের ভালো গুণগুলো সুখ ও আনন্দের কারণ হয় এবং খারাপ দোষগুলো দুঃখ, কষ্ট ও রোগের কারণ হয়। যেমন পলাশ সুমনের (ছদ্মনাম) কোনো ক্ষতি করেছে। সুমন প্রতিশোধ নিতে চায়, কিন্তু প্রতিশোধ নেয়ার কোনো সুযোগ পাচ্ছে না। তার মনে সবসময় এ চিন্তা কীভাবে পলাশকে শিক্ষা দেয়া যায়, তার ক্ষতি করা যায়। এ রকম দুশ্চিন্তায় সুমনের রাতে ঘুম হয় না। পক্ষান্তরে পলাশ এর কিছুই জানে না, সে নিশ্চিন্তে খায়, ঘুমায়, ঘুরে বেড়ায়। এদিকে অতিরিক্ত টেনশনের কারণে সুমনের হজম শক্তিতে গোলযোগ দেখা দিয়েছে। এ থেকে কোষ্ঠকাঠিন্য, অশর্^ এমনকি অন্ত্রে ক্যান্সারও হতে পারে। তাছাড়া আরো অন্যান্য রোগের উপসর্গও দেখা দিতে পারে।

আগেকার দিনের লোকেরা বলতেন ক্রোধ, হিংসা ও বিদ্বেষের আগুন অনেক মানুষকে অকালে বৃদ্ধে পরিণত করে। যেমন বেশি ভয় পেলে মুখ শুকিয়ে যায়, চেহারা বিবর্ণ হয়ে যায়। সে সময় কথা বলতে পারে না। আবার ক্রোধের সময় মুখে ফেনা উঠে যায়। এ দু রকম প্রতিক্রিয়াই পাকস্থলীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ প্রতিক্রিয়াগুলো চুল কালো রাখার উপাদানের উপর প্রভাব বিস্তার করে। প্রায়ই দেখা যায় অনেক যুবকেরই চুল পেকে সাদা হয়ে গেছে।

অতিরিক্ত ভয় হার্টকে দুর্বল করে দেয়। লোভ-লালসা মানুষকে ঘুনপোকার মতো কুড়ে কুড়ে খেয়ে ফেলে। অহঙ্কারকে আপনার মনে জায়গা দিয়ে দেখুন এটি কীভাবে দেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে প্রভাবিত করে। একইভাবে কাম, ক্রোধ, ঘৃণা, বিদ্বেষ, গালি ইত্যাদি প্রতিটি রিপু আমাদের দেহ ও মনের অসুস্থতার মূল কারণ। এসব রিপুগুলোকে নিয়ন্ত্রণে না এনে আপনি সুস্থতার কথা চিন্তাও করতে পারবেন না।

আমাদের মুখ থেকে যে সকল শব্দ উচ্চারিত হয়, সেগুলো মূলত আমাদের অন্তরের অবস্থা নির্দেশ করে এবং চরিত্রের দোষ গুণের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। প্রতিটি শব্দের একটি তরঙ্গ আকার আছে এবং একটি অবয়ব আছে। এদের প্রভাব আমাদের দেহ ও মনের উপর পড়ে।

মানব চরিত্রের কতিপয় খারাপ দোষ

গালি : গালি হচ্ছে একটি শব্দ বা একাধিক শব্দের সমষ্টি। এটি কোনো তলোয়ার বা তোপ নয়। কিন্তু এ শব্দ উচ্চরণ হওয়ার সাথে সাথে যার প্রতি উচ্চারিত হয় তার দেহে ও মনে আগুণ ধরিয়ে দেয়। এ আগুন কোথা থেকে আসে? এ আগুন সে বুক থেকে আসে যে মুখ থেকে বের হয়। যাকে গালি দেয়া হয় তার উপরই যদি এ প্রতিক্রিয়া হয় তবে যে গালি দেয় তার দেহ ও মনে কিরূপ প্রতিক্রিয়া করতে পারে? মনোবিজ্ঞান বিশারদ লিসাদ বিটার বলেন, আপনাকে আমি বলবো কখনো গালি দিবেন না। কারণ গালি আপনার চেহারা বিকৃত করে দিবে।

ঘৃণা : ইউরোপীয় একজন বিশিষ্ট নেতা লিখেছেন, প্রতিটি শব্দ ইথারে একটি বিশেষ অবয়ব ধারণ করে। যেমন ‘ঘৃণা’ শব্দ এতোটাই ভয়ানক প্রতিচ্ছবি ধারণ করে যে, আমি একবার তা দেখে পরে আর সে শব্দ ব্যবহার করার সাহস হয়নি।

চিকিৎসকদের একটি বোর্ড এ তথ্য প্রকাশ করেছে যে, যখনই কেউ অন্যকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখবে অথবা ঘৃণা ব্যাপক ভাষায় কথা বলবে সঙ্গে সঙ্গে তার দেহে একটি হরমোন তৈরি হবে। এ হরমোনে হিস্টামিনের পরিমাণ বেশি থাকে। এটি যেসব অঙ্গের ক্ষতির কারণ হয়-

ক. চোখের দৃষ্টিতে দুর্বলতা দেখা দিবে

খ. দেহ দুর্বল হয়ে যাবে এবং মনে অস্থিরতা দেখা দিবে।

গ. হৃদরোগ বৃদ্ধি পাবে এবং

ঘ. কিডনীতে সমস্যা দেখা দিবে। বিশেষজ্ঞগণ গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন, মস্তিষ্কের উপর এর প্রভাব কতটুকু পড়ে। (নিউইয়র্ক টাইমস্)

দুশ্চিন্তা : অ্যামেরিকার ক্লার্ক বোর্ড অব সাইকোলজির এক গবেষাণা থেকে জানা যায় যে, মানুষের দেহের মধ্যে এমন একটি সিস্টেম রয়েছে যা মানুষের চিন্তার সঙ্গে যুক্ত। চিন্তার যখন পরিবর্তন হবে তখন মানুষের মন-মেজাজ বদলে যাবে। চিন্তা যদি ভালো হয় তবে দেহের সিস্টেম সবসময় ভালো থাকবে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুস্থ থাকবে। চিন্তা যদি গলদ হয় তবে দেহের সিস্টেমে গলদ দেখা দিবে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রোগাক্রান্ত হয়ে যাবে। (সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস্)

আধুনিক চিকিৎসকগণের মতে, শতকরা ৮০ জন মানুষের মাথা ব্যথা, রক্তস্বল্পতা, হাই-প্রেশার এবং পাকস্থলীর অসুখের মূল কারণ হচ্ছে দুশ্চিন্তা। এদের অধিকাংশই হার্টের রোগে আক্রান্ত হয়।

দেহের শক্তির চেয়ে মনের শক্তি অনেক বেশি। এ কথা প্রমাণিত হওয়ার পর অ্যামেরিকাতে ‘বডি এন্ড মাইন্ড’ ক্লিনিকসমূহ গড়ে উঠেছে। এ ক্লিনিকের চিকিৎসকগণ দাবি করেন তারা মাথাব্যথা থেকে শুরু করে ক্যান্সারের চিকিৎসা করতে সক্ষম। এসব ক্লিনিকের শ্লোগান হচ্ছে ‘সুস্থ চিন্তা আপনাকে সুস্থ করতে পারে’।

ক্রোধ : ক্রোধের সময় মানুষ আর মানুষ থাকে না। এক পেয়ালা মদ মানুষের ততো ক্ষতি করতে পারে না যতো ক্ষতি করে ক্রোধ। ক্রোধের সময় মানুষ শয়তানে পরিণত হয়ে যায়। ক্রোধের সময় মায়ের দুধ বিকৃত হয়ে যায়। এমনকি কখনো কখনো বিষে পরিণত হয়। সেই দুধ শিশুকে পান করানো হলে শিশু রোগাক্রান্ত হয়ে যায়। মায়ের দুধের যে উপাদান শিশুর দাঁত উঠতে সহায়তা করে, এ বিষাক্ত দুধে সেই সহায়তা পাওয়া যায় না। ফলে শিশুর দাঁত উঠতে বিলম্বিত হয় এবং সেই দাঁত দুর্বল থাকে।

আমাদের জীবনী শক্তি দেহের মধ্যে জৈব বিদ্যুৎ প্রবাহ থেকে উৎপন্ন হয়। এ প্রবাহ মস্তিষ্কে ভেন্টিকলের মধ্য দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার সময় উৎপন্ন হয়। ক্রোধের সময় দেহের উত্তেজনা বেড়ে যায় ফলে দেহে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় এবং মস্তিষ্কে রক্তের প্রয়োজন হয়। মস্তিষ্কে এ অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহিত করতে হার্টকে অধিক কাজ করতে হয় এবং হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আবার এ উত্তেজনার সময় মস্তিষ্কের তরল ও নিউরোন কোষগুলো বিষে পরিণত হয় এবং মস্তিষ্কের কোষগুলো ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। ফলে ব্রেন স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

আবার দেহের উত্তেজনা বেড়ে গেলে এড্রিনাল গ্রন্থির নির্দেশে অগ্ন্যাশয় গ্রন্থি হঠাৎ স্বক্রিয় হয় এবং ইনসুলিন উৎপাদনের মাত্রা কমিয়ে দেয়। একসময় এ গ্রন্থিটি অত্যন্ত ধীরগতিসম্পন্ন হয় এবং ইনসুলিন উৎপাদনের মাত্রা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম হয়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। এই অবস্থায় ডায়েবেটিসে আক্রান্ত হওয়া সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

বিদ্বেষ : কোনো মানুষের মনে বিদ্বেষ জায়গা করে নিলে তার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায়। যুক্তি ভুলে যায় এবং সুবিচার থেকে দূরে সরে যায়। বিদ্বেষের মত শত্রুকে মনে জায়গা দেয়া হলে মস্তিষ্কের উপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে। ফলে স্মৃতিশক্তি এবং সৃজনশীল চিন্তা লোপ পায়। ক্রোধ, ঘৃণা, বিদ্বেষ ইত্যাদি রিপুগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণে অনেক মানুষ হার্টের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যায়।

দুশ্চিন্তা : দুশ্চিন্তার সময় মানবদেহে নানা প্রকার এড্রিনালিন, নন এড্রিনালিন ও কার্টিসোল ইত্যাদি রাসায়নিক উপাদান তৈরি হয়। এ উপাদানগুলো মানবদেহকে ঝরঝরে করে দেয়। এর সাথে যদি মানসিক চাপ, টেনশন, ডিপ্রেশন যুক্ত হয় তবে এসব কিছু যুক্ত হয়ে মানুষকে শেষ করে দেয়।

ভয় : ভয় একটি অন্তরের রোগ। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে ভয় মানুষের হার্টকে দুর্বল করে দেয়। একবার প্লেগের সাথে এক হাজী সাহেবের দেখা হয়েছিলো। তিনি প্লেগকে জিজ্ঞাসা করলেন আপনি কোথায় যাচ্ছেন? প্লেগ উত্তর করলো বাগদাদে যাচ্ছি। সেখানে পাঁচ হাজার লোকের প্রাণ নিতে হবে। কিন্তু সেবার বাগদাদে পঞ্চাশ হাজার লোক মারা গেছে। কিছুদিন পর প্লেগের সাথে হাজী সাহেবের আবার দেখা হলো, হাজী বললেন, ব্যাপার কি? আপনি বলেছিলেন পাঁচ হাজার লোকের প্রাণ নিবেন। আমিতো শুনেছি বাগদাদে পঞ্চাশ হাজার লোক মারা গেছে। প্লেগ উত্তর দিলো, আপনি ঠিকই শুনেছেন, তবে আমি পাঁচ হাজার লোকেরই প্রাণ নিয়েছি। বাকি পঁয়তাল্লিশ হাজার ভয়ে মারা গেছে। এখানে ভয়ের উদাহরণ হিসেবে যে কাহিনি বর্ণনা করা হলো এটি সত্য-মিথ্যা যাই হোক না কেনো বর্তমানে বাস্তব চিত্র এ রকমই।

ক্রোধ, ঘৃণা, বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা এবং প্রতিশোধের প্রবণতার কারণে অনেক সময় অপমানিত হতে হয় এবং দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হয়। এসব রিপু নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এদের আক্রমণে অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জখম হয়ে যায় তারপর তাদের চিকিৎসা দুঃসাধ্য হয়ে উঠে।

কীভাবে পরিবর্তন আনবেন

মানব চরিত্রের এসব দোষ শারীরিক, মানসিক ও অর্র্থনৈতিক ক্ষতির কারণ। এগুলোর কারণে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় এবং আখিরাতে শাস্তি ভোগের কারণ হয়। এসব দোষ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্যে নিম্নের ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে।

দৃঢ় সংকল্প : প্রথমে আমার মধ্যে কি কি দোষ আছে তা শনাক্ত করতে হবে। এরপর নিজের সাথে কথা বলার অভ্যাস রপ্ত করতে হবে। এসব দোষের কারণে কীভাবে আমার সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং শরীরের অঙ্গগুলোর কি কি ক্ষতি হচ্ছে এ কথা মনকে বুঝাতে হবে। এবার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করতে হবে। আমি আর এসব দোষ বহন করতে পারবো না। আমাকে সুস্থ ও সবল থাকতে হবে এবং সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতেই হবে। কোনো কাজে কেউ দৃঢ় সংকল্প করলে আল্লাহ তা’আলা তাকে সে কাজে সাহায্য করেন।

আত্মবিশ্বাস : মানুষের মনের শক্তি অসীম। মনের শক্তি নির্ভর করে তার চিন্তা-ধারার উপর এবং চিন্তাধারা অনুযায়ী তার জীবন পরিচালিত হয়। এজন্যে নিজের আত্মবিশ^াসকে দৃঢ় করতে হবে। আমিও পারবো। আত্মবিশ্বাসী মানুষের প্রশংসা না করে পারি না। এদেরকে ঠাট্টা-বিদ্রুপের মাধ্যমে দমিয়ে রাখা যায় না। দারিদ্র্যতা এদেরকে হতোদ্যম করতে পারে না। দুর্ভাগ্য এদেরকে লক্ষ্যচ্যুত করতে পারে না। দুঃখ-কষ্ট এদেরকে তাদের পথ থেকে দূরে সরাতে পারে না। সাহসিকতাসম্পন্ন দৃঢ় সংকল্পের অধিকারী মানুষ যুদ্ধ ক্ষেত্রে হামলা করার আগেই অর্ধেক যুদ্ধ জয় করে ফেলে।

এক মহিলা হতাশা, দুশ্চিন্তা ক্লান্তিতে বিব্রত ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছিলো। জীবন ধারণ তার কাছে বিষের মতো মনে হতো। কিন্তু মনের গভীরে সুপ্ত থাকা আত্মবিশ্বাসকে সে জাগ্রত করলো, মনের অন্ধকার, নোংরা চিন্তা, দুর্বলতা ও অবসন্নতাকে সে দূরে নিক্ষেপ করলো। মন্দ চিন্তা যখনই তার মনে আসতো সাথে সাথে ভালো চিন্তার অস্ত্র দ্বারা সেই চিন্তাকে প্রতিহত করতো। ফলে তার মন অনাবিল অপার্থিব আনন্দ ও শান্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো। তার মানসিক শক্তি শারীরিক শক্তির তুলনায় বেশি থাকায় তার জীবন সফলতার ফুলে ফলে ভরে গিয়েছিলো।

আপনার আত্মবিশ্বাস অন্যদেরকে প্রভাবিত করবে।

আত্মসংযম : আত্মসংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণই চারিত্রিক সৌন্দর্যের মূলমন্ত্র। যে ব্যক্তি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সক্ষম সে অন্যদের উপরও প্রভাব বিস্তার করতে পারে। আত্মসংযম না থাকলে অর্থ-সম্পদ, দুর্লভ গুণাবলি ও উচ্চশিক্ষা ব্যর্থ হয়ে যায়। এরা শুধু নিজের জন্যেই বিপজ্জনক নয় বরং সঙ্গীদের জন্যেও বিপজ্জনক ও ভয়ঙ্কর। (চলবে)

অধ্যাপক কে. এম. মেছবাহ্ উদ্দিন : বিভাগীয় প্রধান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারি ডিগ্রি কলেজ, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।

[পরের পর্ব আগামী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে]

* চিকিৎসাঙ্গন বিভাগে লেখা পাঠানোর

ই-মেইল : [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়