মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৩ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

একজিমার কারণ ও প্রতিকার
হাকীম মিজানুর রহমান

একজিমা হচ্ছে এক প্রকার চর্ম রোগ, যা আমাদের দেশে খুজলি, বিখাউজ, কাউর ঘা ইত্যাদি স্থানীয় নামে চেনে। তবে আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রে এটিকে সচরাচর এটপিক ডার্মাটাইটিস হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। এর কারণ হচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে একজিমার অন্যতম উৎস বংশগত বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। এই রোগে ত্বকের বিশেষ কোনো কোনো স্থানে প্রদাহ সৃষ্টি হয়।

শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় একজিমা আরও বাড়তে থাকে। এতে প্রচুর চুলকানি থাকে, আর নখ দিয়ে চুলকালে নখ থেকে নানা প্রকার জীবাণু সংক্রমিত হয়ে অবস্থা আরও খারাপ হয়।

একজিমা ত্বককে লালচে করে তোলে। ত্বকে জ্বালা করে এবং চুলকানি হয়। বাচ্চাদের ত্বকে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়, তবে যে কোনো বয়সেই এটা হতে পারে। একবার একজিমা হলে তা সহজে সারতে চায় না। দীর্ঘদিন ভোগায় এই রোগ।

শরীরের বিভিন্ন জায়গাতেই হতে পারে এই চর্মরোগ। এর সঙ্গে হাঁপানি, জ্বরও হতে পারে।

এখনও পর্যন্ত একজিমা ঠেকানোর কোনো উপায় খুঁজে বের করতে পারেননি চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। তবে এই রোগ হলে চিকিৎসা করা হয়। চিকিৎসার ফলে চুলকানি ও ত্বক লাল হয়ে যাওয়া ঠেকানো যায়।

একজিমা এড়ানোর জন্যে শক্ত জাতীয় সাবান ব্যবহার না করাই ভালো। নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্রিম বা অয়েনমেন্ট ব্যবহার করতে হবে। ত্বক সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। গরম পানিতে স্নান করাই ভালো। ১০-১৫ মিনিটের বেশি গোসল করা উচিত নয়।

একজিমার লক্ষণসমূহ

* ত্বক শুকনো হয়ে যাওয়া।

* জ্বালা করা বা চুলকানি হওয়া।

* বিশেষ করে রাতে বেশি চুলকানি হতে পারে।

* বেশি চুলকোলে ছোট ছোট গুটি হয়।

একজিমা হলে হাত, পায়ের পাতা, গোড়ালি, কব্জি, গলা, বুক, চোখের পাতা, কনুই ও হাঁটু, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মুখ ও মাথায় লাল বা বাদামি ছোপ পড়ে। চামড়া পুরু হয়ে যায়, জায়গায় জায়গায় ফেটে যায়।

সাধারণত পাঁচ বছর বয়স থেকে একজিমা শুরু হয়। বয়ঃসন্ধি বা তার পরেও হতে পারে এই রোগ। কারও কারও ক্ষেত্রে দেখা যায়, মাঝে মধ্যে একজিমা সেরে যায়, কিন্তু আবার কিছুদিন পরে ফিরে আসে।

বাচ্চাদের যদি শরীরের বিভিন্ন অংশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে এবং জ্বর থাকে, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

একজিমা রোগীদের ত্বককে আর্দ্র রাখতে হবে। গোসলে বেশি গরম পানি ব্যবহার করবেন না, বেশি বেশি সাবান বা শ্যাম্পুও নয়। গোসলের পর অতিরিক্ত ঘষাঘষি করে না শুকিয়ে তোয়ালে বা নরম কাপড় দিয়ে পানি সরিয়ে নিন ও আর্দ্র অবস্থাতেই ময়েশ্চারাইজিং লোশন বা তেল মেখে নিন। পুরু ময়েশ্চার যা দীর্ঘক্ষণ আর্দ্রতা ধরে রাখে, সেটাই ভালো। যেসব ক্রিম বা লোশনে বাড়তি সুগন্ধি বা রাসায়নিক উপাদান নেই, সেগুলোই বেছে নিন।

চুলকানি কমানোর জন্য অ্যান্টি-হিস্টামিন খেতে পারেন। এরপরও যাদের ভীষণ চুলকানি হয়, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কিছু স্টেরয়েড মলম ব্যবহার করতে পারেন। ময়েশ্চারাইজিং লোশন ও এই স্টেরয়েড ক্রিম একই জায়গায় একই সঙ্গে ব্যবহার করা যাবে না।

সমস্যা আরও বেশি প্রকট হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইমিউন মডুলেটর ওষুধ ব্যবহার করা যায়।

অনেকের জিনগত কারণেও একজিমা হতে পারে। ত্বকে যদি ব্যাকটেরিয়া থাকে, কোনও কারণে অ্যালার্জি হয়, তাহলেও হতে পারে এই রোগ। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে খাবারে অ্যালার্জির কারণেও হতে পারে একজিমা।

একজিমা হতে ভালো থাকার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো স্বাস্থ্য সচেতনতা, যেমন যেসব পরিবেশে বা খাবারের কারণে চুলকানি হয় তা পরিহার করা, ধূলোবালি, রোদ, সিগারেটের ধোঁয়া এড়িয়ে চলা, সুঁতি কাপড় পরিধান করা।

সাবান, স্যাভলন বা ডেটল পরিহার করা বা কম ব্যবহার করা বা কম ক্ষারীয় সাবান ব্যবহার করা বা সাবানের পরিবর্তে শরীরে শ্যাম্পু ব্যবহার করা, খুব অল্প সময়ে গোসল করা, ৫ থেকে ১০ মিনিটের বেশি সময় ধরে গোসল না করা, গোসলে ঠাণ্ডা পানির পরিবর্তে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা, সবসময় শরীরে লোশন, তেল বা ভ্যাজলিনের মতো পেট্রোলিয়াম ব্যবহার করে দেহের আর্দ্রতা বজায় রাখা।

একজিমা হলে আক্রান্ত জায়গাটুকু শুধু পরিষ্কার ফুটানো ঠাণ্ডা পানি কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শমতো লোশন দিয়ে ধোয়া ভালো। নিমপাতার পানি বা ডেটল পানি দিয়ে কখনোই পরিষ্কার করা উচিত নয়।

নিমপাতা বা অন্য গাছগাছড়া, অ্যান্টিসেপটিক, সাবান ইত্যাদি লাগালে একজিমা আরো বেড়ে যেতে পারে। খুব কম ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে। ওষুধ বা নিমযুক্ত সাবান পরিহার করে চলা ভালো। আর বেশি মাত্রায় ক্ষারীয় সাবান, সরিষার তেল, কাদামাটি, গাছপালা, চন্দন, নোংরা পানি, আনাজপত্র- বিশেষত পেঁপে, রসুন, পেঁয়াজ ইত্যাদির সংস্পর্শে আসা একজিমা রোগীর উচিত নয়।

আবার বরিক এসিডের মলমও একজিমার ওষুধ নয়। এতে অনেক রোগীর ত্বকে অ্যালার্জি সৃষ্টি হয়, যাতে একজিমা আরো বেড়ে যেতে পারে। মোট কথা, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো মলমই লাগানো উচিত নয়। একজিমা রোগীর সমুদ্রে গোসল না করাই ভালো। কেননা নোনা পানি এবং বালুর প্রভাবে একজিমা অনেক সময় বেড়ে যায়।

ত্বকে অতিরিক্ত সমস্যা হলে, চুলকানির জেরে ঘুম বা প্রাত্যহিক কাজকর্ম নষ্ট হলে, দীর্ঘদিন ধরে উপসর্গ থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

হাকীম মিজানুর রহমান : বিএসএস, ডিইউএমএস।

চেম্বার : ইবনে সিনা হেলথ কেয়ার

হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর। মোবাইল ফোন : ০১৭৬২২৪০৬৫০

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়