প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস-হোয়াইট ফাঙ্গাস কী
ফাঙ্গাস হলো ছত্রাক, যারা পরজীবী। মানবদেহের জন্যে সাধারণত ছত্রাক মারাত্মক ক্ষতিকর নয়। কিন্তু যাদের দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল যেমন : ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি, যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগী, এইডস্ আক্রান্ত ব্যক্তি, কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তি এদের ক্ষেত্রে ছত্রাকের আক্রমণ মারাত্মক হয়ে দাঁড়ায়। আবার যারা ব্রড স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করছেন তাদের ক্ষেত্রে সুযোগসন্ধানী ইনফেকশন হিসেবে ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটে।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের আক্রমণ হচ্ছে মিউকরমাইকোসিস। যা একপ্রকার বিরল সংক্রমণ। এই ফাঙ্গাস মাটি, উদ্ভিদ, সার, পঁচনশীল ফল ও সবজিতে পাওয়া যায়। এটা সর্বব্যাপী এবং বাতাসেও পাওয়া যায়। সুস্থ ব্যক্তির নাকে ও মিউকাস ঝিল্লীতে মিউকরমাইকোসিস হয়ে থাকে।
হোয়াইট ফাঙ্গাস মূলত অ্যাস্পারজিলোসিস, যাতে জিহ্বা সাদাটে হয়ে যায়। এটি দেহের প্রায় প্রতিটি অঙ্গে আক্রমণ করে। যেমন : অন্ননালী, লিভার, ত্বক, পেট, ব্রেইন, কিডনী, যৌনাঙ্গ প্রভৃতিতে সংক্রমণ ঘটায়। জিহ্বা বা যৌনাঙ্গ থেকেও হোয়াইট ফাঙ্গাসের সংক্রমণ শুরু হয়।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সাধারণত দেহের সাইনাসসমূহ, ব্রেইন ও ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং অনিয়ন্ত্রিত ডসয়াবেটিস, ক্যান্সার রোগী এবং যক্ষ্মা ও এইডস্ রোগী যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের মারাত্মক আক্রমণ করে। কোভিডাক্রান্ত রোগীদের অতিরিক্ত জীবনরক্ষাকারী স্টেরয়েড ব্যবহারের কারণে রক্তশর্করার মান বেড়ে যায় এবং ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমিত হয়। এতে মৃত্যুহার শতকরা পঞ্চাশ ভাগ বৃদ্ধি পায়।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের লক্ষণ
এটি ব্যক্তির সাইনাস ও ফুসফুসে আক্রমণ করে। এর ফলে মুখের একদিক ফুলে যেতে পারে। তীব্র মাথা ব্যথা, নাক ও মুখের উপরের অংশে কালো ক্ষত, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়া এই ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ। চোয়াল ও মুখের পেশি দুর্বল হয়ে যায়। এর ফলে পরবর্তীকালে খাবার খেতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার সহজে মুখ খোলাও যায় না। শুধু তাই নয়, এই ফাঙ্গাসের কারণে দাঁত দুর্বল হয়ে তা পড়ে যেতে পারে। নাক হতে কালচে রক্ত বা তরল বের হতে পারে। তবে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে স্টেরয়েডের ব্যবহার এবং বারংবার রক্তে শর্করার পরিমাণ চেক করতে পারলে এই ফাঙ্গাস প্রতিরোধ করা যায়। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ছোঁয়াচে নয়।
হোয়াইট ফাঙ্গাসের কারণ ও আক্রমণের লক্ষণ
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের মতো হোয়াইট ফাঙ্গাসের সংক্রমণও দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি দেখা দেয়। আবার ডায়াবেটিস, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরাও ঝুঁকির মুখে রয়েছেন। শুধু তাই নয়, যারা দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েড ব্যবহার করেছেন বা আইসিইউতে ছিলেন, তাদের ক্ষেত্রেও এই রোগের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি।
হোয়াইট ফাঙ্গাসের লক্ষণ
এই বিরল ছত্রাক সংক্রমণের লক্ষণ সার্স-কোভিড-২ সংক্রমণের মতোই। এটি ফুসফুসেও আক্রমণ করতে পারে। সিটিস্ক্যানের মাধ্যমে একে চিহ্নিত করা যায়। তবে কাশি, জ্বর, ডায়রিয়া, ফুসফুসে কালো ছোপ, অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়া এই রোগের লক্ষণ।
ব্ল্যাক ও হোয়াইট ফাঙ্গাসের পাশাপাশি ইয়েলো ফাঙ্গাস নামে মারাত্মক আরো এক সংক্রমণের উদ্ভব হয়েছে।
ইয়েলো ফাঙ্গাসের কারণ
অন্য সংক্রমণের মতো এটিও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণেই হয়ে থাকে।
এমনকি স্টেরয়েডের অত্যধিক ব্যবহার ও অতি শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাক্টিরিয়াল মেডিকেশনও এই সংক্রমণের কারণ। যে সমস্ত রোগীদের কো-মর্বিডিটি রয়েছে। যেমন : ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ইত্যাদি বা যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত দুর্বল, তাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
ইয়েলো ফাঙ্গাসের লক্ষণ
এই ফাঙ্গাসের সংক্রমণে শরীরের অভ্যন্তরে পুঁজ নির্গত হয় যা হলুদাভ। ক্ষত সারতে সময় লাগে। অঙ্গ বিকল হয়ে যায়। এমনকি কোনও কোনও ক্ষেত্রে অ্যাকিউট নেক্রোসিস পর্যন্ত হতে পারে।
সংক্রমণের প্রথম পর্যায়ে রোগীরা আলস্য, ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন। এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গে সংক্রমিত হয় বলে অঙ্গগুলো প্রভাবিত হয় এবং ব্যক্তি তার সমস্ত শক্তি হারাতে শুরু করে। আবার খিদে না পাওয়া, পুষ্ট ঘাটতিও এর অন্যতম লক্ষণ।
এর ফলে অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন কমতে শুরু করে, মেটাবলিজমও দুর্বল হয়ে পড়ে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ফাঙ্গাস চোখেও আক্রমণ হানে। লাল বা বসে যাওয়া চোখ ইয়েলো ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ হতে পারে।