শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৪, ০০:০০

প্রাপ্তিটা অনেক

পাপ্পু মাহমুদ
প্রাপ্তিটা অনেক

ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি এবং সৃষ্টিশীল কাজের প্রতি ছিল গভীর মনোযোগ। সে আগ্রহ আর শখ থেকেই পত্রিকায় প্রবেশ আমার। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে আমি ২০১৩ সালের জুনে যোগ দেই। তখন মনে হয় আমিই ছিলাম চাঁদপুর কণ্ঠ পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠকে নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনা করার যোগ্যতা আমার নেই। তবুও বলছি, সত্য প্রকাশে সমঝোতায় না এসে দীর্ঘ ৩০ বছর নিয়মিত প্রকাশ করে যে পরিমাণ পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সৃষ্টি হয়েছে চাঁদপুর কণ্ঠের, সত্যি তা অনেক গর্বের এবং আনন্দের। আমি তার নগণ্য অংশীদারিত্ব পেয়ে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। আমার জীবনে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর নেই।

বর্তমানে প্রিন্ট পত্রিকাগুলোকে টিকে থাকতে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হচ্ছে। তবুও পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশ করার পাশাপাশি জেলা জুড়ে স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজ শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতা করে আসছে চাঁদপুর কণ্ঠ, যার দেড় দশক হতে চললো। এই প্রতিযোগিতাটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এর কল্যাণে চাঁদপুর থেকে জাতীয় পর্যায়ের বিতার্কিক সৃষ্টি হয়েছে।

একদিন হাজীগঞ্জে পেপার স্টলে বসে আছি। প্রচণ্ড গরম ছিল, প্রখর রোদে শরীর মোমের মত গলে ঘাম ঝরছে। সময়টা তখন মধ্য দুপুর। ষাটের ঊর্ধ্বে এক ব্যক্তি পেপার স্টলে এসে বিক্রেতার কাছে চাঁদপুর কণ্ঠ চেয়েছেন। বিক্রেতা চাঁদপুর কণ্ঠ শেষ হয়ে গেছে বলে জানিয়ে দেন এবং অন্য পত্রিকা নিতে বলেন। লোকটি হতাশভঙ্গি নিয়ে বলেন, চাঁদপুর কণ্ঠ ছাড়া অন্য পত্রিকায় মন ভরে না এবং চাঁদপুর কণ্ঠের অনেক গুণকীর্তন করলেন। আমার তখনো মনোযোগ সেদিকে শতভাগ ছিল না। কিন্তু যখন তিনি বললেন, শুধু পেপারটির জন্যে বাজারে এসেছিলাম। এ কথা শুনেই আমি কিছুটা বিস্মিত হই। লোকটি চলে যাচ্ছিলেন। আমি লোকটিকে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার কি কোনো নিউজ বা বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে? তিনি বললেন, আমি চাঁদপুর কণ্ঠ নিয়মিত পড়ি। আমি আর কোনো কথা না বলে আমার সাথে থাকা একটা পত্রিকা লোকটিকে দিয়ে দেই। এমন হাজারো গ্রাহক আছে, যারা চাঁদপুর কণ্ঠ খোঁজে। এমন দৃশ্য প্রতিদিনই দেখা যায় পেপার স্টলে বসলে। হাজীগঞ্জ প্রভাতী নিউজ এজেন্সির মালিক চাঁদপুর কণ্ঠকে তার ব্যবসায়িক কৌশলের কারণে একটু আড়ালেই রাখেন। পাঠক সে আড়াল থেকেই প্রতিদিন খোঁজ করে চাঁদপুর কণ্ঠ ক্রয় করেন। পাঠকের এমন আগ্রহ হয়তো কখনো দেখা হতো না, যদি স্টলে চাঁদপুর কণ্ঠ আড়ালে না রাখতেন।

চাঁদপুর কণ্ঠের সাথে থেকে আমি একজন স্পষ্টভাষী সাহসী মানুষের দেখা পেয়েছি। সে মানুষটির সাথে কাজ করা কতোটা সৌভাগ্যের সেটা শুধু আমিই জানি। এমনটি এ জন্যেই বললাম, একজন দক্ষতাপূর্ণ, মেধাবী ও সৎসাহসী মানুষের পরশ পাওয়াটা আমার কেবল যোগ্যতা নয়, ভাগ্যও। আমি সবসময় অনুভব করি সে সাহসী মানুষটির ছায়া আমার ওপর আছে। সে ছায়া চোখে দেখা যায় না, শুধু হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায়। চাঁদপুর কণ্ঠ যে কতোটা পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে থাকে সেটা আমার একটা অভিজ্ঞতা থেকে জেনেছি। প্রায় ৫ বছর আগের কথা। আমার একটা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন পত্রিকায় প্রকাশ না করতে প্রচণ্ড চাপ ছিল। তারপরও আমি প্রতিবেদনটি পত্রিকায় পাঠিয়ে দেই। রাত যত বাড়ছে আমার ওপর চাপ তত বাড়তে থাকে। আমি গভীর রাতে প্রধান সম্পাদককে মোবাইল ফোনে বিষয়টি খুলে বলি। সবকিছু বলার পর আমি যে উত্তর পেয়েছি, সে উত্তরে সাংবাদিকতার প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় অন্য কোনো পেশায় জড়ানোর আগ্রহ চিরতরে হারিয়ে ফেলি। উত্তরটা এখনো আমার কানে বাজে--সাহসিকতা এবং পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে না পারলে সাংবাদিকতা করা যাবে না, কারো হুমকিতে চাঁদপুর কণ্ঠ সত্য প্রকাশে বিরত থাকে না। তুমি সিদ্ধান্ত নাও কী করবে। সে ৩০ সেকেন্ডের উত্তরটা পেয়ে আমৃত্যু সাংবাদিকতায় থাকার অঙ্গীকার করি। সেদিন এমন অর্থপূর্ণ উত্তর না পেলে হয়তো সাংবাদিকতায় থাকতাম, কিন্তু পেশাদারিত্বটা হারিয়ে যেত। সেদিনই অনুধাবন করেছি সাংবাদিকতার দায়িত্ব ও কর্তব্য কতো প্রকাণ্ড। আর সাংবাদিকতা করতে হলে একজন ব্যক্তির সৃষ্টিশীল, সৃজনশীল ও মননশীল কাজের দক্ষতা থাকতে হয়।

আমার অনেক পিছুটান ছিল পারিবারিক কারণে। কিন্তু যে ভালবাসার কথাগুলো আজ প্রকাশ করলাম, এগুলোর জন্যে আমার চাঁদপুর কণ্ঠ ও সাংবাদিকতা ছাড়া হয়নি। অবশেষে সখটাকেই পেশা করে নিলাম। কারণ কিছু না থাকুক অনেক গর্ব তো আছে।

লেখক : পাপ্পু মাহমুদ, নিজস্ব প্রতিনিধি, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়