শুক্রবার, ০৬ জুন, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরপরই তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ইঞ্জিনে আগুন

প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৫, ১০:১৩

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও আল আমিন লিখছেন, বই প্রকাশ করেছেন!

অনলাইন ডেস্ক
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও আল আমিন লিখছেন, বই প্রকাশ করেছেন!

প্রফেসর কবি খুরশেদুল ইসলাম। তিনি ছিলেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রধান এবং সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর-এর প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক। পরবর্তীতে তিনি চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ও চৌমুহনী এসএ কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। সর্বশেষ নড়িয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ পদে দায়িত্বপালন শেষে সরকারি চাকুরি থেকে অবসরে যান। নোয়াখালীর চৌমুহনীতে থাকাকালীন তিনি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে দৃষ্টিশক্তি ক্রমশ হারাতে থাকেন। দেশে-বিদেশের চিকিৎসাতেও তিনি আর সুস্থ হলেন না, দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেন। দৃষ্টিহীন অবস্থায় অবসর সময় কাটাচ্ছিলেন তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের নিজ বাসভবনে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধিত্ব সত্ত্বেও তাঁর লেখালেখি বন্ধ ছিলো না। এক্ষেত্রে তাঁর কাছে প্রেরণা হিসেবে ছিলেন গ্রীসের প্রাচীন কবি, ‘ইলিয়াড অ্যান্ড ওডিসি’ মহাকাব্যের রচয়িতা হোমার এবং ইংরেজ কবি, ‘প্যারাডাইস লস্ট’ মহাকাব্যের রচয়িতা জন মিল্টন। তিনি বলতেন, হোমার ও মিল্টন অন্ধ হয়েও সাহিত্য সাধনা থেকে সরে যান নি। আমিও সরবো না। তিনি মুখে বলতেন, আর লিখতেন বেতনভুক্ত এক যুবক। তাঁর সেই লেখা নিয়েও প্রকাশিত হয়েছে বই। চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে খুঁজে পাওয়া গেলো এক অন্ধ যুবক, যে কিনা তাঁর সাহিত্য ভাবনা ফুটিয়ে তুলছেন অন্যের সহযোগিতায় এবং প্রকাশ করেছেন বইও। তাঁকে নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠের শাহরাস্তি ব্যুরো ইনচার্জ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মো. মঈনুল ইসলাম কাজল লিখেছেন একটি প্রতিবেদন।

‘দৃষ্টিশক্তি হারিয়েও আল আমিন প্রকাশ করেছে ‘ভালোবাসার শেষকৃত্য’ শিরোনামে গতকালকের চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে কাজল লিখেছেন, শাহরাস্তি উপজেলার সূচীপাড়া উত্তর ইউনিয়নের শোরসাক গ্রামের ভূঁইয়া বাড়ির দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আল আমিন। তাঁর স্বপ্ন ছিলো লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হয়ে সমাজের অবহেলিত মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করবেন। সব কিছুই ঠিকঠাক ছিলো। ২০১৬ সালে দশম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় তাঁর ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে। ঢাকায় তাঁর অপারেশন করার পর জীবন ফিরে ফেলেও দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায় আল আমিনের। সেই থেকেই লেখাপড়ার পথ বন্ধ হয়ে গেলেও কিন্তু তাঁর ইচ্ছাশক্তি থেমে থাকেনি। মনের চোখ দিয়ে কল্পনা করতে থাকেন, সেই সাথে স্বপ্ন দেখতে লাগলেন একদিন তাঁর লেখা বই পাঠকের হাতে পৌঁছবে। খুব কাছের বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা নিয়ে বই লেখা শুরু করেন। মনের ভেতর গেঁথে থাকা শব্দগুলো আল আমিন মুখ দিয়ে উচ্চারণ করলেই সাথে সাথে তাঁর পরিবারের সদস্য ও বন্ধু বান্ধব খাতায় লিপিবদ্ধ করে নিতো। দু-একটি পাণ্ডুলিপি সমাপ্ত হওয়ার পর আল আমিন সেটি প্রকাশের জন্যে ছুটাছুটি করতে লাগলেন। একদিন হাজীগঞ্জ বাজারের বই দোকানদার আজাদ হোসেনের শরণাপন্ন হন। আজাদ হোসেন তাঁর কথা শুনে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেন। আজাদ হোসেন হাজীগঞ্জ উপজেলার কাকৈরতলা এলাকার তিতাস প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী বাবুল হোসেনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন আল আমিনকে। বাবুল তাঁর প্রকাশনী থেকে ‘ভালোবাসার শেষকৃত্য’ বইটি প্রকাশ করেন। আল আমিন তাঁর প্রকাশিত বইটি হাতে পেয়ে দৃষ্টিশক্তি হারানোর কষ্ট ভুলে যেতে শুরু করলেন। একে একে আরো ক’টি পাণ্ডুলিপি প্রকাশের জন্যে ইতোমধ্যেই প্রস্তুত করে রেখেছেন । আল আমিন অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন, বই প্রকাশের জন্যে তিনি একটু একটু করে টাকা জমাতে শুরু করেন। একটি মাটির ব্যাংকে দশ-বিশ টাকা করে জমিয়ে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে প্রথম বইটি বের করেন তিনি। তাঁর সহপাঠী এক বন্ধুকে উৎসর্গ করেন বইটি। তাঁর সকল কাজে বড়ো ভাই ব্যবসায়ী মোরশেদ আলম সহযোগিতা করে আসছেন। আল আমিনের স্বপ্ন, সুযোগ পেলে দৃষ্টি, শ্রবণ, শারীরিক প্রতিবন্ধী, এতিম ও বিধবা নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নিজেকে নিয়োজিত করা।

শাহরাস্তির দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আল আমিন দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন অনেক লেখকের জন্যে তাগিদ সৃষ্টিকারী একজন লেখকই বটে। কারণ, আমাদের সমাজে অনেকে কম-বেশি ভালো লিখলেও বই প্রকাশ করেন না কিংবা বই প্রকাশের প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করেন না। ফলে অনেক সাহিত্যকীর্তি হারিয়ে যায়। আল আমিন যুব বয়সে আছেন, তিনি দীর্ঘদিন বেঁচে থাকলে অন্ধ মহাকবি হোমার ও জন মিল্টনের মতো হয়তো হবেন না, তবে অনেক দৃষ্টিসম্পন্ন বড়ো লেখকের মতো যে হবেন না সেটা কে বলতে পারে?

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়