শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৪, ০০:০০

আত্মার সাথে মিশে যাওয়া চাঁদপুর কণ্ঠ

প্রবীর চক্রবর্তী
আত্মার সাথে মিশে যাওয়া চাঁদপুর কণ্ঠ

আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বাবা সর্বদাই পত্রিকা রাখতেন। প্রথমে ইত্তেফাক, এরপর জনকণ্ঠ, পরবর্তীতে প্রথম আলো, এরপর যুগান্তর। এছাড়া স্থানীয় পত্রিকা শুরু থেকেই রাখতেন। অন্তত একটি পত্রিকা রাখা হতো আমাদের প্রতিষ্ঠানে। যখন পত্রিকা পড়তে শিখেছি, তখন থেকেই পর্যায়ক্রমে ইত্তেফাক ও জনকণ্ঠ এই দুটি পত্রিকা পড়েছি। দৈনিক জনকণ্ঠের কিছু মর্মস্পর্শী লেখা আমাকে উদ্দীপ্ত করতো। ওই লেখাগুলো আমাকে গণমাধ্যমের প্রতি দুর্বলতায় আক্রান্ত করে। এছাড়া আমার বাবার অন্যতম প্রিয় বন্ধুদের একজন হাসান আলী (আমরা এখনো তাঁকে বাবার পরের স্থানটিতেই দেখি) কাকার গণমাধ্যমে পদচারণা আমাকে এই জগতে আসার জন্যে উৎসাহিত করে। ১৯৯২ সালে এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হওয়ার পর আমার বাসায় একজন হাউজ টিউটর ছিলেন। তারই উৎসাহে ১৯৯২ সাল থেকে একটু একটু করে লেখালেখিতে জড়িয়ে যাই। ১৯৯৪ সালে চাঁদপুর কণ্ঠ প্রকাশিত হওয়ার পর বার্তা সম্পাদক মির্জা জাকিরের হাতে আবেদন জমা দিয়ে কাজ শুরু করি। সেই যে শুরু করলাম, আজ পর্যন্ত চাঁদপুর কণ্ঠকে ছাড়তে পারিনি। আমার সাথে অনেকেই চাঁদপুর কণ্ঠে ছিলেন, আছেন। অনেকেই এখন সম্পাদক হয়েছেন। কিন্তু কেন জানি চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতি ভালোবাসাটা আজও অটুট রয়েছে।

যেমনটি যুগান্তর পত্রিকার সাথেও। চাঁদপুর কণ্ঠের পাশাপাশি জাতীয় পত্রিকায় কাজ করার ইচ্ছে ছিলো। প্রথম আলো শুরুর পর আমি চেষ্টা করেছি প্রতিনিধি হওয়ার। দন্তস্য রওশন ভাইয়ের ইন্টারভিউতে পাস করে কাজ শুরু করলেও একজন ব্যক্তির কারণে প্রথম আলোতে কাজ করা আর হয়নি। পরবর্তীতে যমুনা গ্রুপ পত্রিকা নিয়ে আসার সংবাদ শুনে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় কাজ করার জন্যে আবেদন করি। প্রায় তিন বছর কাজ করার পর আমি নিয়োগ পাই পত্রিকা থেকে। যদিও বর্তমানে অনেক পত্রিকা থেকে এসব খুব দ্রুত পাওয়া যায়। চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করার সুবাদে গত তিন দশকে চেষ্টা করেছি দলমত নির্বিশেষে সকল কিছুর তথ্যই তুলে ধরার। নামে বেনামে অনেক রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। পাবলিক পরীক্ষার নকল নিয়ে ‘ক্লান্ত পথিক’ ছদ্ম নামে লিখেছিলাম। পরবর্তীতে ওই লেখার ভিত্তিতে তৎকালীন জেলা প্রশাসন সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে নকল মুক্তকরণে সফলতা অর্জন করেছিলো। বর্তমানে নকলের সেই উৎসব না থাকলেও অন্যভাবে অনেক কিছুই চলে, যা হয়তবা প্রকাশ পায় না।

চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করতে গিয়ে পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক ও প্রকাশক অ্যাডভোকেট ইকবাল-বিন-বাশারের কাছে আমার বিষয়ে ধূ¤্রজাল ধারণা সৃষ্টি করা হয়। যদিও পত্রিকার এক প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বিষয়টির অবতারণা করে তিনি নিশ্চিত হন, আমার সম্পর্কে তাঁর ধারণা ভুল ছিলো। বিষয়টি বলতেই হয়। ১৯৯৪ সালে আমার আবেদনের পাশাপাশি আরেক ব্যক্তি আবেদন করেছিলেন। সম্ভবত তিনি ওই সময়ের স্থানীয় এমপিকে দিয়ে তার জন্যে সুপারিশ করিয়েছিলেন। ওই সময়ে কিছুদিন কাজ করার পর অবশ্য ওই ব্যক্তিকে আর কখনোই গণামাধ্যমে দেখা যায়নি। আমাদের সম্পাদক ও প্রকাশক ইকবাল-বিন-বাশার চেয়েছিলেন, কোনো সুপারিশ নয়, যোগ্যতা দিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠে লিখতে হবে এবং কাজ করতে হবে। তিনি ভেবেছিলেন এমপির সুপারিশপ্রাপ্ত ব্যক্তিটি আমিই। যদিও সেটি ছিলো ভুল ধারণা। পত্রিকার প্রাণভোমরা কাজী শাহাদাতের কথা না বললেই নয়।

চাঁদপুর কণ্ঠ সাপ্তাহিক থেকে দৈনিক হওয়ার পর আনুষ্ঠানিক সংখ্যা বের হবে। আমি ফরিদগঞ্জ থেকে কাজ করলেও দৈনিক বিবেচনায় আরো কয়েকজনের প্রয়োজন হবে। এমন চিন্তা থেকে তিনি ব্যুরো ইনচার্জ কাকে করবেন, সেই চিন্তায় ছিলেন। কিন্তু আমি আমার পরিশ্রমের বিনিময়ে তাকে চিন্তামুক্ত করতে পেরেছি। ফলে আনুষ্ঠানিক সংখ্যা প্রকাশের দিন নিজেই আমাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন। শাহাদাত ভাই যখনই কোনো রিপোর্ট করার বিষয়ে বলেছেন, চেষ্টা করেছি তা করার। একবার রাস্তা নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন করার পর বিপদে পড়ে গিয়েছিলেন এক ঠিকাদার। শেষ পর্যন্ত তিনি ওই রাস্তাটি নতুনভাবে মেরামত করতে বাধ্য হন।

পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক নিয়ে দেড় দশক কাজ করছি। কাজ করতে করতে কখন যে বির্তকপ্রেমী হয়ে গেছি, তা বোধ হয় বলতেই পারবো না। তবে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যতিরেকে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আগের মতো তেমন উৎসাহী নয় বিতর্কে। এটা নিয়ে প্রশাসনের ভাববার প্রয়োজন রয়েছে। সময় এসেছে বিতর্কের পাশাপাশি ভিন্ন কিছু নিয়ে ভাববার।

বতর্মানে প্রিন্ট পত্রিকাগুলোর বড় সমস্যা বিজ্ঞাপন এবং বিভিন্ন ইস্যুতে সমাজের প্রতিষ্ঠিত মানুষজনের অংশগ্রহণের অনাগ্রহ। বিভিন্ন দিবসে পত্রিকার জন্যে এক সময় বিজ্ঞাপন চাইলেই পাওয়া যেত, বর্তমানে তা কষ্টসাধ্য। বিজ্ঞাপনদাতারা অনেক পত্রিকার কারণে বিব্রত হন। কেউ ইচ্ছে করে নিজের পছন্দমতো একটি পত্রিকায় নিজের ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন দিলে অন্য পত্রিকাগুলোতে দিতে চাপ প্রয়োগ করা হয়। মূলত এ কারণেই ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপনের বাজার নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া পত্রিকার ছড়াছড়ির কারণেও বিজ্ঞাপন মূল্যে ধস নেমেছে। এগুলো থেকে ফিরে আসতে অন্তত চাঁদপুরের পত্রিকাগুলোকে বিজ্ঞাপন বিষয়ে ঐকমত্যে আসা প্রয়োজন। তাতে সকলেরই লাভ হবে। উদহারণ দিলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে। বেশ ক’বছর পূর্বে আমি একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে দীর্ঘমেয়াদি বড় অংকের বিজ্ঞাপনের চুক্তি করেছিলাম। বিজ্ঞাপনটি পত্রিকায় আসার কিছু দিনের মধ্যে আরো ক’টি পত্রিকায় ছাপা শুরু হয়। বিজ্ঞাপনদাতা তিন মাস পর বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়ে জানান, তার খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানের প্রচারের জন্যে বিজ্ঞাপন দিলেও বিজ্ঞাপন দিতেই হবে এমন চাপে তিনি বিব্রত হন। তাই বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে বাধ্য হন।

চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করতে গিয়ে আমার সহকর্মী হিসেবে যখন যিনি আমার সাথে কাজ করেছেন, তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছি। মনে আছে সিরিয়াল কিলার রসু খাঁর ঘটনার সময়ে তখন নতুন করে আবু হেনা মোস্তফা কামাল ভাই চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ শুরু করেছিলেন। একসাথে রসু খাঁর বিষয় নিয়ে কাজ করলেও আমি নিজে তার নামে নিউজ পাঠাতে উৎসাহিত করেছি। ফলে চাঁদপুর কণ্ঠে রসু খাঁকে নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনগুলো আবু হেনা ভাইয়ের নামেই গিয়েছে। আমি করেছি যুগান্তরে। এম কে মানিক পাঠান ভাই প্রথম আলোর পাশাপাশি আমার সাথে চাঁদপুর কণ্ঠেও কাজ করেছেন। তিনিসহ অনেক নিউজ একসাথে করেছি। পুরো জেলার আলোড়ন সৃষ্টিকারী অনেক সংবাদই আমরা একত্রে করেছি। আবার নিজেদের মধ্যে সংবাদ নিয়ে প্রতিযোগিতাও করেছি।

একটি কথা বলতেই হয়। গত ৩০ বছরে চাঁদপুর কণ্ঠে যত রিপোর্ট করেছি, তার অন্তত ৮০ ভাগ রিপোর্ট করেছি ব্যুরো ইনচার্জ বা স্টাফ রিপোর্টার দিয়ে। নিজের নামে নিউজ সংখ্যা নিতান্তই কম। আমার ব্যক্তিগত অভিমত, সেই সংবাদটিই নাম দিয়ে ছাপা প্রয়োজন, যেটি ছাপা হলে প্রশংসা মিলবে। যদিও ইদানীং নতুন পুরাতন সকলেই নিজের সংবাদটি নিজের নাম দিয়ে ছাপাতেই পছন্দ করেন। অনেক গণামাধ্যমকর্মীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনি সকল সংবাদ নাম দিয়ে করেন কেন? উত্তরে তিনি বললেন, নিজেকে চেনাতে হবে না ? যদিও আমার কাছে উত্তরটি যথাযথ মনে হয়নি। যতটুকু মনে পড়ে, চাঁদপুরের বিশিষ্ট গণমাধ্যমকর্মী মুনীর চৌধুরী ভাইয়ের সাথে চাঁদপুর দর্পণ মাঠে আসার অনেক দিন পর আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল। তিনি ওই সময় আমাকে বলেছিলেন, অনেকদিন তোমার লেখা সংবাদ পড়ে প্রথমে এই সংবাদ কে লিখছে জানার চেষ্টা করেছি, পরে তোমার নাম শুনেছি। আজ অনেকদিন পর তোমার সাথে সাক্ষাৎ হলো। সেই সময়ে তিনি আমার লেখার প্রশংসা করে আমাকে উৎসাহ দিয়েছিলেন। আসলে একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে এটাই প্রাপ্য।

আরেকটি ঘটনা বলতে হয়, ফরিদগঞ্জের একজন, যিনি রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি চাঁদপুরের একটি আড্ডায় পত্রিকার রিপোর্ট নিয়ে কথা বলার সময় চাঁদপুর কণ্ঠের বেশ ক’টি রিপোর্ট নিয়ে কথা বলছিলেন। এক পর্যায়ে ওই রাজনীতিবিদ স্বীকার করেন, পত্রিকার রিপোর্টে কারো নাম না থাকলেও রিপোর্টগুলো আমারই করা বলে তারা ধারণা করেন। পরবর্তীতে তাদের একজনের সাথে আমার দেখা হলে ওই বিষয়ের অবতারণা করেন। চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করতে গিয়ে অদ্যাবধি এই লেখাটি যাবে না--এরকম নজির পাইনি। অনেক রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে লিখেছি। রাজনীতি করছেন এমন অনেক প্রিয়মুখ রয়েছেন, তাদের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে লেখা দিয়েই। হয়তবা সংবাদের কারণে প্রথম প্রথম কিছুটা রাগ থাকলেও পরবর্তীতে তিনি ভুল বুঝতে পেরেছিলেন বলেই সম্পর্কটা এখনও অনেকের সাথে ভালোই রয়েছে। এক সময় ফিচার লেখার ঝোঁক ছিল, কিন্তু বর্তমানে অনুষ্ঠাননির্ভরতা অন্যদের মতো আমাকেও গ্রাস করেছে--এ কথা নির্দ্বিধায় স্বীকার করছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ ১৯৯৪-২০২৪। হাঁটতে হাঁটতে ৩০ বছর পার করেছে। এখনো পত্রিকার পাঠকরা চাঁদপুর থেকে প্রকাশিত পত্রিকার ভিড়ে সকলের আগে চাঁদপুর কণ্ঠকেই বেছে নেয়। কারণ একটাই, পত্রিকাটি শুরু থেকে তার স্বাতন্ত্র্য ধরে রাখতে পেরেছে। আশা করছি, ৩০ বছর পর চাঁদপুর কণ্ঠ নতুন ভাবে পাঠকের অন্তরে স্থান করে নিতে নতুন করে পথচলা শুরু করবে। অনেক সংবাদকর্মীর কাছে চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করার অভিজ্ঞতাটা অন্যরকম। কারো কারো মতে, চাঁদপুর কণ্ঠ কর্তৃপক্ষ সংবাদমূল্য বুঝে, তাই কোন্ সংবাদটি কোথায় থাকবে, সেটি সেখানেই থাকে। আশা করছি আগামী দিনগুলোতে অতীতের ভুল-ভ্রান্তি ঝেড়ে ফেলে চাঁদপুর কণ্ঠ নতুন করে পথচলা শুরু করবে। প্রিন্টের সাথে সাথে ডিজিটাল যাত্রাও ভালোভাবে হবে। একটা কথা বলতেই হবে, চাঁদপুরের গণ্ডি পেরিয়ে সারা দেশে এমনকি প্রবাসেও চাঁদপুর কণ্ঠের একটি বড় পাঠক শ্রেণি রয়েছে। তাই তাদের জন্যেও ভাবতে হবে।

লেখক : সাব এডিটর, অনলাইন ভার্সন ও ব্যুরো ইনচার্জ (ফরিদগঞ্জ), দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়