প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৪, ০০:০০
সম্পর্ক যার সাথে ১৮ থেকে ২০ বছরের-
১৯৯৪ সালের প্রথম দিকে ডিগ্রিতে পড়াবস্থায় সবেমাত্র এক মাসের সাংবাদিকতার প্রশিক্ষণ নিলাম। পত্রিকায় লেখালেখি করবো বলে ঢাকায় জাতীয় পত্রিকা দৈনিক আজকের কাগজে সিভি জমা দিলাম। ঠিক সে সময়ে চাঁদপুর জেলা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক চাঁদপুর কণ্ঠের বয়সও কয়েক মাস। সময়টা সঠিক মনে নেই। পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক ও প্রকাশক অ্যাডভোকেট ইকবাল-বিন-বাশার সাহেবের বাসায় একটি সভা হয়েছিল। সেই সভায় আমি যোগ দিয়েছিলাম। তারপর থেকেই এই পত্রিকায় সংবাদ পাঠানো শুরু করি। যতোটুকু মনে পড়ে, সেই সভায় জনাব কাজী শাহাদাত ভাই, মির্জা জাকির ভাই, গিয়াসউদ্দিন মিলন ও গাজী মোঃ শাহাজাহান ভাই ছিলেন। তখনতো সংবাদ পাঠানো হতো পোস্ট অফিসের মাধ্যমে। পত্রিকাও পেতাম পোস্ট অফিসের মাধ্যমে। পত্রিকা যদি বের হতো মঙ্গলবার, পেতাম বুধবার। তাতেই কতো আনন্দ পেতাম। সেই থেকে চাঁদপুর কণ্ঠের সাথে সম্পর্ক ছিলো প্রায় ১৮ থেকে ২০ বছর।
আমার সাংবাদিকতার দীর্ঘ ৩১ বছরে সবকিছুই পেয়েছি এই চাঁদপুর কণ্ঠের প্রাণ পুরুষ জনাব কাজী শাহাদাত ভাইয়ের কাছ থেকে। এই দীর্ঘ দিনের পথচলার বহু স্মৃতি মনের গহীনে জমে আছে। কোথা থেকে যে শুরু করবো তা ভেবে পাচ্ছি না।
চাঁদপুর কণ্ঠ পত্রিকাটি যখন সাপ্তাহিক ছিল আর এখন দৈনিক, সব সময়েই চাঁদপুরবাসীর জন্যে সময়োপযোগী সংবাদ প্রকাশে তাৎক্ষণিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। কোনো বিখ্যাত ব্যক্তি মারা গেলে বা কোনো বড়ো ঘটনা ঘটলে চাঁদপুর কণ্ঠ তাৎক্ষণিকভাবে বুলেটিন বের করেছে। যা অনেকের পক্ষেই সহজ নয়। এই পত্রিকায় একজন কাজী শাহাদাত আছেন বলেই যেটি হয়েছে সহজ। তিনি সব সময় পত্রিকাটিকে নিয়েই আছেন। নতুন নতুন বিষয়ে ফিচার, সাক্ষাৎকার সংযোজন করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়তই। আর সাংবাদিক সৃষ্টির এক মহান কারিগর এই শাহাদাত ভাই। তাঁর হাতের ছোঁয়ায় চাঁদপুর থেকে যে কতো সৃষ্টিশীল সাংবাদিক তৈরি হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নির্দ্বিধায় বলতে পারি আমি তার একজন। সেই ১৯৯৪ সাল থেকে এই চাঁদপুর কণ্ঠে যত সংবাদই পাঠিয়েছি, কোনো সংবাদের কাটাছেঁড়া করেননি কাজী শাহাদাত ভাই, প্রশিক্ষণ নেয়ার কারণে হয়তো।
মাঝখানে বলে নেই আমি কেন সাংবাদিকতায় আসি।
মতলব বাজারের প্রতিষ্ঠিত ও নামকরা ব্যবসায়ী ছিলেন আমার আব্বা। কলেজে লেখাপড়ার সময় এলাকায় যখন চলাফেরা করি, শুধু আব্বাকে চিনে, আমাকে কেউই নাম ধরে ডাকে না। আমার মনে হলো আমাকে সবাই চিনতে হবে। সেই মনোবাসনা থেকেই মূলত সাংবাদিকতা করা। এটাকে পেশা হিসেবে নিবো তা কখনও ভাবিনি। প্রথম প্রথম দেখতাম, আমি যে যে নিউজ পাঠাতাম তা হুবহু ছাপাতেন কাজী শাহাদাত ভাই তার সাপ্তাহিক চাঁদপুর কণ্ঠে। পাশাপাশি ছাপা হতো জাতীয় দৈনিক আজকের কাগজেও। তখন লেখাপড়া (রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম.এস.এস.) করছি, পাশাপাশি সাংবাদিকতা করতাম মনপ্রাণ দিয়ে। শাহাদাত ভাইয়ের নজরদারির কারণে ভিন্ন পথে যেতে পারিনি, হয়তো যেতে দেননি। ভিন্ন পথে না যাওয়ার কারণও ছিলো। তখন বাবার ব্যবসার পাশাপাশি আমিও ব্যবসা করতাম। আজ অনেককে বড়ো বড়ো বিল্ডিংয়ের মালিক হতে দেখি, অন্য অনেক কিছুর মালিক হিসেবে দেখি, তাতে কোনো আফসোস লাগে না। ভালোই লাগে, আমি যা পারিনি তারা হয়তো তাদের কর্মে ও পরিশ্রমে তা করতে পেরেছে।
২০০১ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউটে যখন প্রথম ‘পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন র্জানালিজম’ চালু করলো, আমিই একমাত্র মফস্বল শহর থেকে চাঁদপুর কণ্ঠের হয়ে পড়তে গিয়েছিলাম। সেই কোর্সে পড়ার জন্যে যা যা কাগজপত্র লেগেছিলো সবকিছুই শাহাদাত ভাই তৈরি করে দিয়েছিলেন। তাঁর সহযোগিতাতেই তখন সারাদেশ থেকে ওই কোর্সের জন্যে সাংবাদিক কোটায় যে ২২০ জন ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলো তাদের মধ্য থেকে আমি তৃতীয় হয়ে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আর কোর্সে ছাত্র-ছাত্রী ছিলেন ২০জন। এতে নিয়মিত সাংবাদিক ছিলেন ৮জন।
আমি মতলব থেকে সাপ্তাহিক মতলব কণ্ঠ ও দৈনিক মতলবের আলো সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে বের করি, তার সবকিছুই করতে পেরেছিলাম কাজী শাহাদাত ভাইয়ের অনুপ্রেরণায়।
চাঁদপুর কণ্ঠের ৩০ বছরপূর্তি হতে চললো। আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো সাপ্তহিক থেকে দৈনিকের প্রথম সংখ্যায় লিড নিউজ কভার করার। মতলবে একটি হত্যার ঘটনা ঘটেছিলো সেই সুবাদে।
আমি যতোদিন বেঁচে থাকবো, সাংবাদিকতায় থাকবো, ততোদিন চাঁদপুর কণ্ঠ ও জনাব কাজী শাহাদাত ভাইকে স্মরণ করবো সশ্রদ্ধ চিত্তে।
লেখক : সাবেক সভাপতি, মতলব প্রেসক্লাব; প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক, সাপ্তাহিক মতলব কণ্ঠ ও দৈনিক মতলবের আলো।