শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৪, ০০:০০

চ্যালেঞ্জটা সবসময় নিজের সাথে ছিলো

আলআমিন হোসাইন
চ্যালেঞ্জটা সবসময় নিজের সাথে ছিলো

অষ্টম শ্রেণিতে যখন পড়ি তখন থেকেই আমি টুকটাক পত্রিকাণ্ডম্যাগাজিন পড়তাম। আমি যেখানে প্রাইভেট পড়তাম সেখানে চাঁদপুর কণ্ঠ রাখা হতো। আমি আর আমার বন্ধু রাছেল মিলে ‘শব্দখেলা’ মিলাতাম। শব্দখেলা মিলানো নিয়ে পত্রিকা কাড়াকাড়ি করতাম। পাঠক ফোরামে গল্প পড়তাম। চাঁদপুর কণ্ঠের প্রিন্টার্স লাইন এবং যাদের লেখা-সংবাদ ছাপা হতো, তা পড়তাম। ফলে অনেকের নাম আমার জানা ছিলো। তার মধ্যে অন্যতম কাজী শাহাদাত স্যারের ভ্রমণ কাহিনি। আর বার্তা সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্লাহ ভাইয়ের অনুসন্ধানী সংবাদ বিশেষভাবে ভালো লাগতো। সেখান থেকেই পত্রিকার প্রতি ভালো লাগা জন্মায়। স্বপ্ন দেখতাম আমিও পত্রিকায় কাজ করবো। সাংবাদিক হবো। আজ আমি চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করছি। যাঁদের নাম একসময় পত্রিকায় পড়তাম, তাঁদেরকে সহকর্মী হিসেবে পেয়েছি।

৯ বছর চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করছি। শুরুটা হয়েছে ২০১৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর থেকে। চাঁদপুর কণ্ঠ কার্যালয় তখন চাঁদপুর শহরের কবি নজরুল সড়কস্থ রেড ক্রিসেন্ট ভবনে ছিলো। সেদিন সন্ধ্যায় কম্পিউটার কম্পোজ করা দরখাস্ত নিয়ে তৃতীয় তলাস্থ বার্তা সম্পাদকের কক্ষে ঢুকি। বার্তা সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্লাহ ভাইয়ের হাতে দরখাস্তটি দিই। আমাকে দরখাস্তটি করতে উৎসাহ দিয়েছিলেন চাঁদপুর শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের কম্পিউটার প্রশিক্ষক জিএম এমরান হোসেন স্যার। তিনি আমাকে কম্পিউটারের বেসিক কাজগুলো শিখিয়েছেন। বলে রাখা দরকার, দৈনিক চাঁদপুর দিগন্তের তৎকালীন নির্বাহী সম্পাদক মুহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করতে আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। আমি তাঁর কাছে ঋণী।

আগেই বলেছি, চাঁদপুর কণ্ঠের জন্যে দরখাস্তটি আমি আহসান ভাইয়ের হাতে দিই, তিনিই আমাকে প্রথমে কাজ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণ দেন। একই সাথে আমাকে নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে সুপারিশ করেন। আজকে আমি পত্রিকায় কাজ করে যতোটুকু শিখেছি তার শুরুটা করে দিয়েছেন এএইচএম আহসান উল্লাহ ভাই। তিনিই সর্বপ্রথম সাংবাদিকতার খুঁটিনাটি অনেক বিষয় হাতেকলমে আমাকে শিখিয়েছেন। একবার ‘কারেকশন কপি’কে ‘কালেকশন কপি’ বলায় আহসান ভাইয়ের ধমক খেয়েছি, যা আজও মনে আছে!

চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করে স্নেহ ও সান্নিধ্য পেয়েছি প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত স্যারের। আমি কাজের ক্ষেত্রে যেখানেই ঠেকেছি, প্রথমেই স্যারের শরণাপন্ন হয়েছি। আমি মনে করি, কাজী শাহাদাত স্যার আমাকে কাজের স্বাধীনতা দিয়েছেন বলেই পত্রিকার মতো চ্যালেঞ্জিং জায়গায় সাহস নিয়ে কাজ করতে পারছি।

চাঁদপুর কণ্ঠে আমার কাজের শুরুটা ছিলো রোমাঞ্চকর। ‘হেরার আলো’ (পবিত্র আল-কোরআনের আয়াত) কম্পোজের মাধ্যমে আমার কাজ শুরু। তারপর আল-হাদিস, বাণী চিরন্তন, এইদিনে, নামাজের সময়সূচি এবং সবশেষে সেই ‘শব্দখেলা’ কম্পোজ করি। যেই ‘শব্দখেলা’ মিলালে একসময় মনে হতো রাজ্য জয় করে ফেলেছি! প্রথম দিনে এতোটুকু কাজ করে প্রফুল্ল মনে বাসায় চলে আসি। পরদিন থেকে নিয়মিত অফিসে যেতাম, কাজ শিখতাম। আমার ভাবনায়ও ছিলো না চাঁদপুর কণ্ঠে আমার চাকরি স্থায়ী হবে। চাকরি নিশ্চিত হয় ১ জানুয়ারি ২০১৬ সালে।

কবি সুনির্মল বসুর ‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র’ এ ভাষ্যই যেনো আমার অবলম্বন। প্রতিনিয়তই শিখছি। একটি সংবাদ কীভাবে করে সেটা বোঝার চেষ্টা করতাম। কীভাবে একটি সংবাদ সম্পাদনা সে ব্যাপারে আমার আগ্রহ সবসময় তুঙ্গে থাকে। আমার লেখা কিংবা সম্পাদিত সংবাদটি কীভাবে চূড়ান্ত হয়ে ছাপা হলো তা অনুসরণ করি। এভাবেই শিখছি। মূলত চ্যালেঞ্জটা সবসময় আমার নিজের সাথে ছিলো। প্রতিবন্ধকতা ছিলো, কিন্তু দমে যাইনি। একটি ভুল থেকে শিক্ষা পেলে দ্বিতীয়বার সে ভুল যাতে না হয় চেষ্টাই করেছি। ফলে সফলতা ও সম্মান দুটোই পেয়েছি। প্রতিবেশী, বন্ধু, সহপাঠী, শিক্ষক--সকলেই ভালোবাসা দিয়েছেন আমার কাজের জন্যে। অনেকেই আমাকে চেনেন ‘চাঁদপুর কণ্ঠের আলআমিন’ নামে।

২০২০ সালের ৮ মার্চ নারী দিবসে ‘নারীকণ্ঠে’র একটি বিশেষ সংখ্যা সম্পাদনা করি। ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে পাক্ষিক ‘চিকিৎসাঙ্গন’-এর বিভাগীয় সম্পাদকের দায়িত্ব পাই। চেষ্টা করেছি, চাঁদপুরের চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ স্বাস্থ্য-বিষয়ক চিকিৎসকদের সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরতে। পাঠকদের সাড়াও পেয়েছি বিপুল। এ অনুভূতি সত্যিই দারুণ।

চাঁদপুর কণ্ঠে আমার কর্মজীবনে প্রত্যেকটি সহকর্মীর স্নেহ-ভালোবাসা আমার পরম প্রাপ্তি। প্রত্যেকের কাছ থেকেই প্রতিনিয়তই কিছু না কিছু আমি শিখছি। মুহাম্মদ ফরিদ হাসান ভাইয়ের সান্নিধ্যে বিভাগীয় পাতা সম্পাদনা শিখেছি। সিস্টেম ডেভেলপার উজ্জ্বল হোসাইন ভাই সবসময়ই কম্পিউটারের কাজগুলো কীভাবে সুন্দরভাবে দ্রুত করা যায় সে বিষয়ের পরামর্শক। মোস্তফা কামাল সুজন ভাই ফটোশপের খুঁটিনাটি কাজগুলো শিখিয়েছেন। কাজী আজিজুল হাকিম নাহিন আমার বন্ধু, সহকর্মী ও সহযোগী। আমার যে কোনো সাফল্যে নাহিনকে খুশি এবং ব্যর্থতায় সমব্যথী হতে দেখেছি। সাবেক সহকর্মী রিয়াজ উদ্দিন, সোহাগ পাটওয়ারী, মোঃ মমিন খান ও কনক রাশেদের কাছ থেকে কম্পিউটারের অনেক কাজ শিখেছি। এছাড়া নির্বাহী সম্পাদক মির্জা জাকির ভাই, চীফ রিপোর্টার বিমল চৌধুরী দাদা, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার মিজানুর রহমান ভাই, গোলাম মোস্তফা ভাই, মোঃ আব্দুর রহমান গাজী, চীফ ফটোগ্রাফার চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম ভাই, বাদল মজুমদার দাদা ও সোহাঈদ জিয়া ভাইয়ের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। মাঠ পর্যায়ে সংবাদ সংগ্রহ করার কৌশল তাদের থেকে শিখি। সংস্কৃতি অঙ্গনের সাবেক দুই বিভাগীয় সম্পাদক কবির হোসেন মিজি ও রাসেল হাসান এবং পেস্টার মোঃ জাহাঙ্গীর কাকা ও আব্দুল মালেক ভাই ছিলেন অমায়িক। সাবেক যুগ্ম সম্পাদক, বর্তমানে দৈনিক মেঘনাবার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক গিয়াসউদ্দিন মিলন ভাই ও সহকারী সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন ভাইয়ের সাথে আমার তেমন সখ্যতা গড়ে উঠেনি। সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার ও ম্যানেজার সেলিম রেজা ভাইয়ের সাথে সখ্যতা বেশ। তাঁর কাছে যাই টাকার জন্যে। তার কাছ থেকে পত্রিকার ইঞ্চি-কলাম আর বিজ্ঞাপন রেট জানতে যাই। কিন্তু মাথায় ঢুকে না কিছুই। অফিস সহায়ক তাপস দাদা প্রাণচঞ্চল মানুষ। প্রতিদিন সন্ধ্যায় ধোঁয়া উঠা রঙচা খাইয়ে তিনি আমাদের চাঙ্গা রাখেন।

চাঁদপুর কণ্ঠের ৩০ বছরপূর্তি হচ্ছে। পত্রিকাটির সাথে কাজ করতে পেরে আনন্দিত।

আলআমিন হোসাইন : বিভাগীয় সম্পাদক, চিকিৎসাঙ্গন, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ। সম্পাদিত গ্রন্থ : যোগাযোগ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়