শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

চাঁদপুরের সাবেক খেলোয়াড়দের দাবি

জেলা ক্রীড়া সংস্থায় নতুন দায়িত্বসহ নিয়মিত খেলার আয়োজন চাই

চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম ॥
জেলা ক্রীড়া সংস্থায় নতুন দায়িত্বসহ নিয়মিত খেলার আয়োজন চাই

চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী জেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটিতে নতুন দায়িত্বসহ স্টেডিয়ামে নিয়মিত খেলা আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন সাবেক খেলোয়াড়গণ। দেশে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়ে বর্তমানে দেশ পরিচালনা করছেন। সাবেক সরকারের বেশ ক'টি বছর একটি সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি ছিলো চাঁদপুরের উদীয়মান খেলোয়াড়সহ পুরো জেলা ক্রীড়া সংস্থা। গত ১০ বছর ধরে একই পদে দায়িত্বে থেকে অনেক ক্লাবের ভালো মানের দায়িত্বশীলকে তারা জেলা ক্রীড়া সংস্থায় অন্তর্ভুক্ত করতে দেননি। ওই সিন্ডিকেটের বাইরে যারাই কথা বলতেন, ওই ক্লাবকে সহযোগিতা তো দূরের কথা, কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হতো না। এমন কথাই ক্ষোভের সাথে প্রকাশ করেন জেলার সাবেক বেশ ক'জন খেলোয়াড়।

চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা পরিচালনার জন্যে প্রতি ৪ বছর পরপর নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়ে থাকতো নির্বাচনের মাধ্যমে। কিন্তু সাবেক খেলোয়াড়রাসহ অনেক ক্রীড়া সংগঠক এ প্রতিবেদককে জানান, গত কয়েকটি আমলে নির্ধারিত একটি দিনে সিন্ডিকেট সদস্যরা তাদের মনের মতো কমিটি সাজিয়ে যখনই যে কর্মকর্তা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতির দায়িত্বে থাকতেন, তারা সংঘবদ্ধ হয়ে সেই কমিটিকে তাঁর কাছ থেকে অনুমোদন করিয়ে নিতেন। সর্বশেষ জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ভোটের মাধ্যমে। ওই সময়ে ভোটারসহ অনেক ক্রীড়া সংগঠকই বলতে থাকেন, শুধুমাত্র স্থানীয় পত্রিকায় জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচন ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে লেখালেখির কারণেই তৎকালীন জেলা প্রশাসক ভোটের তারিখ নির্ধারণ করেন। এমনকি ওই সময় অনেক ভোটারই প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচনে, কিন্তু তাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে বসিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীদেরকে নির্বাচিত করেন।

গত ক'দিন আগে (৫ আগস্ট) দুর্বৃত্তরা কোনো কিছু না বুঝেই জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনিয়মের অনেক ফাইল পুড়ে দিয়েছেন বলে সাবেক খেলোয়াড়রা মনে করেন।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার ওই সিন্ডিকেট গ্রুপটি এতোটাই শাক্তিশালী যে, অনেক খেলোয়াড় অসহায় অবস্থায় পড়ে থাকলেও তারা ওই সময়ের সরকার দলীয় লোক না হওয়ার কারণে তাদের আবেদনপত্রটিও জমা নেননি। জেলা সদরে অনেক স্বাবলম্বী ব্যক্তি এবং জনপ্রতিনিধিদের সন্তানসহ অনেকেই বিভিন্নভাবে দলীয় পরিচয়ে সহযোগিতা পেয়ে গেছেন। গত কয়েক বছরের কমিটি বিভিন্ন ক্লাবের সাথে এমন আচরণ করেছে বলে এখন জানা যায়। অনেক ক্লাবের খেলোয়াড়দের দাবি এই যে, জেলা ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তি এবং কমিটির অনেকেই পুরো স্টেডিয়ামের ভেতর একটি ক্লাবকেই অনুমতি দিয়েছিলন অনুশীলন করার জন্যে। এমনকি ওই ক্লাবের কয়েকজনকে দ্বারা অনেক সময় জেলা ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী খেলোয়াড় সিলেক্ট করে দল গঠন করতেন। তাদের পছন্দের বাইরে ভালো কোনো খেলোয়াড়কে তারা মূল স্কোয়াডে ঠিকমতো নিতেন না। জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিভিন্ন কাজের বিষয়ও তারা নিয়ন্ত্রণ করতেন। স্টেডিয়ামের খেলোয়াড় ও ক্লাবের জার্সিসহ সকল কিছুই তাদের পছন্দ অনুযায়ী করতে হতো। ঠিকমতো মাঠে ছিলেন না, খেলোয়াড়রা ঠিকমতো চিনেন না কিন্তু সরকার দলীয় লোকের এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার বড় বড় পদবী দাবিকারীদের কাছের লোক হওয়ায় তারাই তাদের ক্লাবের খেলোয়াড়দেরকে নিয়ে বিভিন্নস্থানে আসা-যাওয়া করতেন।

বিভিন্ন ইভেন্টের সাবেক খেলোয়াড়রা দাবি করেন, জেলা ক্রীড়া সংস্থার অন্তর্ভুক্ত বর্তমানে ২২টি ক্লাব রয়েছে। এর মধ্যে বেশ ক'টি ক্লাব ঠিকমতো ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে ইনডোর ও আউটডোরের খেলাতে অংশগ্রহণ করতো না নিয়মিত, কিন্তু ওই সমস্ত ক্লাবের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারাই জেলা ক্রীড়া সংস্থায় আলিশানভাবে আসা-যাওয়া করতেন। বিভিন্ন খেলার সময় তাদেরকে সামনের সারিতে বসানোসহ তারা যখনই স্টেডিয়ামে আসতেন তাদের সেবার দায়িত্বের জন্যে স্টেডিয়ামের কয়েকজন কর্মচারীকে সবসময়ই ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার নাম ভাঙ্গিয়ে দু-একটি ক্লাব নিয়মিত রাতের অন্ধকারে তিন কার্ডের (জুয়া) খেলার আয়োজন করতো।

সাবেক খেলোয়াড়রা মনে করেন, বর্তমানে জেলা ক্রীড়া সংস্থার যেই অবস্থা, এই অবস্থাতে যারাই দায়িত্বে ছিলেন ও আছেন, তাদের পরিবর্তে নতুন ক্রীড়া সংগঠক ও খেলোয়াড়দেরকে দায়িত্ব দেয়া হোক। তাহলে জেলা ক্রীড়া সংস্থাতে কিছুটা হলেও দুর্নীতি কমবে। বতর্মান সময়ে নতুন করে দেশ স্বাধীন করা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা যেভাবে বিভিন্ন অফিস-আদালতে যাতে কেউ দুর্নীতি করতে না করে সে ব্যাপারে নজর রাখছেন এবং দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, যদি জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাগজগুলো পোড়ানো না হতো, তাহলে বিগত ১৫ বছরের জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিভিন্ন অপকর্ম জনসম্মুখে তুলে ধরা যেতো এবং তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের দাবি জানাতো পারতো।

চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলার যারা বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল ও ক্রিকেট দলসহ ঢাকার মাঠে বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছেন এমন সাবেক বেশ ক'জন খেলোয়াড় দাবি করেন, আউটার স্টেডিয়াম সংলগ্ন যে বড় রাস্তাটি রয়েছে, যেটিকে এখন আমরা অনেকটা অবৈধ মার্কেটই বলবো, সেই মাকেটটিও জোর করে বানিয়েছেন ক্রীড়া সংস্থার কয়েকজন পদ-পদবীধারী ব্যক্তির কথাতেই। বর্তমানে আউটার স্টেডিয়ামে এনসিসির মাধ্যমে যে প্রকল্পের কাজ হচ্ছে, এই কাজের হিসাব আজ পর্যন্ত জেলা ক্রীড়া সংস্থা পরিচালনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা যায় নি। জানার চেষ্টা করলেও তারা কখনোই কিছু বলেননি। উল্টো দায়িত্বরত ব্যক্তিটিসহ ক্রীড়া সাংবাদিক ও অনেকেই বলতে থাকেন, এটা 'ভাইয়া' সহ জেলার দায়িত্বরত প্রতিনিধি ও পৌরসভার দায়িত্বে যিনি আছেন তিনি বলতে পারবেন।

স্টেডিয়ামের ভেতরে প্যাভিলিয়নের হলরুমে অনেক সময় বিভিন্ন ব্যক্তি মালামালসহ অনেক কিছুই রাখতেন। মাসের পর মাস সেই রুমগুলো বন্ধ করে রাখা হতো। সাবেক ক্রীড়াবিদরা মনে করেন, নতুন যারাই দায়িত্বে আসবেন তারা যদি পুরানোদের কথা না ভেবে স্বচ্ছভাবে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সকল কিছুই পরিচালনা করেন, তাহলে নিয়মিত বিভিন্ন ইভেন্টের খেলাধুলাসহ খেলোয়াড় তৈরি হবে। তাদের দাবি, নতুন নতুন খেলোয়াড় গড়ে তোলার জন্যে নিয়মিত আবাসিক ও অনাবাসিক প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের ব্যবস্থা করতে হবে। আর প্রত্যেকটি কাজেই যেনো জবাবদিহিতা করতে পারে, সেইভাবেই যেন তারা এগিয়ে যেতে পারে, সেই ব্যাপারে সাবেক খেলোয়াড়দের সহযোগিতা সবসময়ই থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়