প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২১, ০০:০০
‘স্মৃতিময় চাটখিল’ নামের মধ্যেই একটা গভীর আবেগ জড়িয়ে আছে। লেখক আ ই ম গোলাম কিবরিয়া যিনি বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দীর্ঘ চাকুরিজীবন শেষে বর্তমানে অবসরযাপন করছেন। তিনি চাটখিলের একজন সুযোগ্য সন্তান। ১৯৬২ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত তিনি টানা চাটখিলে অবস্থান করেন বসবাস ও পড়ালেখার সুবাদে। কলেজজীবন থেকেই তাঁর চাটখিলের সাথে ছন্দপতন ঘটে। কিন্তু চাটখিলের সাথে তিনি এতোটাই নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন যে, চাটখিলের রাস্তা-ঘাট, বাজার অলিগলি, বাজারের প্রিয় মানুষগুলোর প্রতি ভালোবাসার টান চিরকালই হৃদয়ে লালন ও ধারণ করেছেন।
অবসরজীবনের সময়গুলোতে তিনি রক্তের টান বা দায়িত্ববোধ থেকেই প্রিয় চাটখিলকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন। তিনি মূলত পঞ্চাশ, ষাট ও সত্তর দশকের চাটখিল বাজারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেছেন। লেখাটি কিন্তু তথ্যনির্ভর। লেখক নিজেই বলেছেন ‘আমি চাটখিলের ইতিহাস লিখছি না। আমি নিরপেক্ষভাবে আমার লেখনীতে আমার চোখে দেখা চাটখিল বাজারকে তুলে ধরতে চাচ্ছি’। লেখক অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ওই সময়কার চাটখিলের খেটে খাওয়া মানুষ যেমন-ধোপা, নাপিত, হোটেল ব্যবসা, দর্জি, ব্যবসায়ী, দোকানদার ও মানুষের দৃষ্টিকাড়া কয়েকজন ব্যক্তির বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। এছাড়াও চাটখিলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তন নিয়েও সঠিক তথ্য দেয়ার চেষ্টা করেছেন। এসব বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় প্রাসঙ্গিক হিসেবে অনেকের নাম উঠে এসেছে, যারা একেকজন কিংবদন্তি। বইটি তিনি উৎসর্গ করেছেন চাটখিলের মাটি ও মানুষদেরকে।
কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে তিনি বিষয়গুলো সাজিয়েছেন। পড়তে পড়তে নিজের অজান্তেই বইয়ের গভীরে হারিয়ে গেলাম। আমি নিজেও চাটখিলের সন্তান। যে সময়টাকে নিয়ে তিনি লিখেছেন সে সময়টা যেনো চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। অতি মুন্সীয়ানার সাথে তিনি কলমের মাধ্যমে এসব বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন বর্তমান প্রজন্মের কাছে। পড়ছি আর ভাবছি কীভাবে একটা ছোট্ট অনুন্নত জনপদ ধীরে ধীরে বিকশিত হয়ে বর্তমানে আধুনিক একটি শহরে পরিণত হয়েছে।
চাটখিলের পরিচিতি ও নামকরণ পড়তে গিয়ে দারুণভাবে রোমাঞ্চিত হয়েছি। এভাবেও একটা জনপদের নাম সৃষ্টি হতে পারে? প্রতিটি বিষয়কে তিনি এতো সুন্দর ও সাবলীলভাবে বর্ণনা করেছেন যে, পাঠক পড়তে পড়তে সেই ৫০, ৬০ ও ৭০ দশকের চাটখিল থেকে ঘুরে আসতে পারবেন যেনো সেলুলয়েডের ফিতায় বন্দি কোনো ডকুমেন্টারি ফিল্ম। বর্তমান প্রজন্ম বইটিকে তাদের অনেক বিষয়ের রেফারেন্স বই হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
আমার মনে হয়, এ ধরনের স্মৃতিচারণমূলক তথ্যনির্ভর বই উপজেলা পর্যায়ে, বিশেষ করে চাটখিল উপজেলাকে নিয়ে আর লেখা হয়নি। বাকিটা পাঠকবৃন্দ নিজেরা বইটি পড়ে তাদের মূল্যবান মতামত দিবেন। বইপ্রেমি মানুষদের কাছে এ প্রত্যাশাটা রইলো। বইটি আপনারা নিজেদের সংগ্রহে রাখতে পারেন। হয়তো কোনো একদিন এই বইটি একটি দুর্লভ গ্রন্থে পরিণত হতে পারে, সময়ই সেটা বলবে। যোগাযোগ : ০১৭১৫৪৩০২৬০।