রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

এক একটা মানুষ নিয়েই এক একটা জাতি
অনলাইন ডেস্ক

শিরোনামের কথাটা নেয়া হয়েছে বিখ্যাত লেখক ডাঃ লুৎফর রহমানের ‘উন্নত জীবন’ গ্রন্থের ‘জাতির উত্থান’ নামক প্রবন্ধ থেকে। লেখক সুনিপুণভাবে দেখিয়েছেন যে, যখন একটা জাতিকে আমরা উন্নত জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইবো আমাদেরকে জাতির প্রত্যেকটা মানুষকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে। আজকে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা সমৃদ্ধির পথে। রপ্তানি খাতে বেশ সুনাম। দেশে নোবেল বিজয়ী ব্যক্তি রয়েছেন। ব্র্যাকের মতো প্রতিষ্ঠান সারা বিশ্বে বাংলাদেশের গর্ব। সাকিব-তামিমেরা যখন ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আমার সোনার বাংলা গেয়ে উঠে তখন বাংলাদেশি হিসেবে বুকটা গর্বে ফুলে উঠে। নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু বানিয়ে বিশ্ব ব্যাংককে জবাব দেয়ারও হিম্মত রাখি। আমাদের শিক্ষার হার বেড়েছে, বাল্যবিবাহ কমেছে, শিশু মৃত্যুর হার কমেছে, স্থায়ী উন্নয়নের সব শর্তপূরণ হয়ে গেছে ইত্যাদি। এমন আরো অনেক উদাহরণ রয়েছে যেগুলো বাংলাদেশের উন্নয়নের নিদর্শন। কিন্তু আমি যখন হৃষিকেষ রোড থেকে লক্ষ্মীবাজার ও বাহাদুর শাহ পার্ক হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস পর্যন্ত যাই ততোক্ষণে বাংলাদেশের এতো এতো উন্নয়নমূলক নিদর্শন থাকা সত্ত্বেও আমি নিরাশ হই। যখন দেখি লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আমরা বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে পারলেও নিজ দেশের একটা উল্লেখ্য যোগ্য পরিমাণ মানুষ রেললাইন, লঞ্চঘাট, রাস্তায় ঘুমায়। যার উদাহরণ লক্ষ্মীবাজার, বাহাদুর শাহ পার্ক, সদরঘাট। যখন নিজের ছোট ভাইয়ের সমবয়সী ক্ষুধার্ত জীর্ণশীর্ণ চেহারাগুলো দেখতে পাই তখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশের পরিসংখ্যানটা আমার কাছে শুধু পরিসংখ্যানই মনে হয়। ক্ষুধার্ত হয়ে যখন খাবারের জন্য একটা মলিন আধা ছেঁড়া প্যান্ট পরিহিত নাবালক কোনো ভদ্রলোকের কাছে খাবার চায়, তখন বিরক্ত হয়ে ঠাস করে চড়-লাথি মাড়তে কিংবা ধাক্কা দিলে আমাদের উন্নয়নের কিছু যায় আসে না। পরিসংখ্যান ব্যুরো বাংলাদেশের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে ৪ লাখ পথশিশু আছে। যেখানে ইউনিসেফের তথ্য মতে সংখ্যাটা ১০ লাখ। একটু চিন্তা করেন, একটা দেশের ১০ লাখের বেশি মানুষের তথা শুধু শিশুদের থাকার জায়গা নেই। তারউপর পুষ্টি, শিক্ষা, স্যানেটেশনের বঞ্চনা তো রয়েছেই। রয়েছে মাদকাসক্তির সমস্যাও। ২০ জানুয়ারি ২০১৯, দৈনিক যুগান্তরের একটি নিবন্ধের তথ্য মতে, পথশিশুদের প্রায় ৮৫ শতাংশ মাদকাসক্ত। এখন প্রশ্ন হলো একটা জাতির প্রত্যেকটা মানুষ যদি জাতির অংশ হয় তাহলে এই ১০ লাখ মানুষ যারা শুধুমাত্র শিশু তারা কি জাতির অংশ নয়? আমি দুঃখ পাওয়ার সাথে সাথে খুব অবাক হই, বাহাদুর শাহ পার্কে প্রতিনিয়তই প্রকাশ্যে পথশিশুরা নেশায় লিপ্ত। অথচ সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই। পথশিশুরা একে অন্যকে গালাগালি করে, নোংরা, মাঝে মাঝে খাবারের জন্য পথচারীর হাত ধরে টানাটানি করে, মাদকাসক্ত এগুলো স্বাভাবিক! যখন কারো পেটে খাবার থাকে না, রাতে ঘুমানোর একটু জায়গা থাকে না, তার কাছে আপনার ভদ্রতার আর নীতিকথা মূল্যহীন। আপনার আমার ভদ্রতা-সভ্যতার যে নির্ধারকগুলো রয়েছে সেগুলো তারা জানেই না।

এদেশ তাদেরও। তারাও জাতির অংশ। যতদিন পর্যন্ত আপনি তাদের মত মানুষদের উন্নয়ন করতে না পারেন, ততদিন পর্যন্ত আপনার জাতি পেছনেই থেকে যাবে। একটা দেহের প্রত্যেকটা অংশেরই যেমন গুরুত্ব রয়েছে, দেশের প্রত্যেকটা স্তরের মানুষের গুরুত্ব রয়েছে। রাষ্ট্রের উচিত জাতির এই মানুষগুলোর জন্য স্থায়ী ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যাতে তারা সমাজের বোঝা নয় সম্পদে পরিণত হয়। জাতির উন্নয়নে তাদেরও অংশীদার করতে হবে। নাগরিক হিসেবে আমাদেরও সচেতন হতে হবে। দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। নিজ নিজ জায়গা থেকে পথশিশুদের উন্নয়নের চেষ্টা করতে হবে। জাতির অংশ হিসেবে এটা আমাদের দায়িত্ব।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়