মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

রোদে পোড়া পালিশ
অনলাইন ডেস্ক

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

থানায় বসে আছে নিপু। অপেক্ষা করতে করতে রাত প্রায় ৯টা। মানুষের ভিড় কমতে শুরু করেছে। নিশ্চয় এখন নিপুকে ওসির রুমে ডাকা হবে। মাঝে মাঝেই এসে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান নিপুর সাথে দেখা করে যান। নিপু অপেক্ষা করে। কোনো চিন্তা বা শঙ্কা তাকে স্পর্শ করতে পারে না।

নিপু ভাবে, পুলিশ কি আসলেই নুপুর হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারবে? রাতে তো আমার সাথেই বেরিয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু এ বিষয়টি আমি নুপুর অলকা ছাড়া আর কেউ জানে না। আমি যদি কোনো ভাবেই এ কথা পুলিশকে বলি তবে পুলিশ আমাকে নাজেহাল করবে নিশ্চিত। মনে মনে ভীতু হয় নিপু। যদিও মনোবল হারায় না। আসলে কোনো ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও সাক্ষ্য ছাড়া প্রমাণ করা অসম্ভব। সন্দেহ শুধু মানুষকে হয়রানিই করে না। নিঃস্বও করতে পারে। শেষ পর্যন্ত বিচারের চুড়ান্ত পর্যায়ে ইতিবাচক ফল আসে না। তবে যা কিছুই হোক মেয়ে মানুষের প্রতি কখনো আমার আগ্রহ ছিলো না। এখনতো মোটেই নিঃশেষ হয়ে গেছে। জীবনে আর কখনো মেয়ে মানুষের কাছে যাবো না। কখন কী হয় তাতো বলাও যায় না। এসব ভাবতে ভাবতে মামলার আইও এসে ডাক দেয় নিপুকে।

- আসুন। স্যার ডাকছে।

- জ্বি।

প্রণাম জানিয়ে ওসির রুমে প্রবেশ করে নিপু। সাথে মামলার আইও। ওসি সাহেব কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে। নিপু দাঁড়িয়ে। আইও নিপুকে অনেকক্ষণ পরে বসতে বলে। রুমে তিনজন ছাড়া আর কেউ নেই। ওসি রং চায়ের কথা বলে একজন কনস্টেবলকে। ততোক্ষণ আবার অপেক্ষা। কারণ ওসি ভিন্ন চিন্তায় বিভোর। আমি এলাকায় আসার পর ঘটনা যেনো বাড়তে শুরু করেছে। ওদিকে এমপি মহোদয়ের বিভিন্ন প্রোগ্রামে থাকতে হচ্ছে। প্রটোকল দিতে হচ্ছে। উপজেলার আইনশৃঙ্খলা যে কিভাবে ঠিক রাখবো বুঝতে পারছি না। এখানে খেলা নিয়ে মারামারি। ওখানে কিশোরদের উৎপাত। কোথাও ইভটিজিং। মাদকতো কমন বিষয়। কনেস্টেবল এসে তিন কাপ চা দিয়ে যায়। তারপর ভেতর থেকে দরজা আটকে দেয় আইও। ওসি একহাতে চায়ের কাপ আরেক হাতে একটা বেনসন সিগারেট নেয়। সিগারেটে আগুন দিয়ে ধোঁয়া বাতাসে ভাসিয়ে মেহেদী হাসানকে বলে, মামলার কী অবস্থা?

- স্যার, ও নিপু। তাদের বাড়িতেই বেড়াতে এসেছে নুপুর। নুপুর তার বড় বোনের ননদ। রাতে একই ঘরে ছিলো তারা। ওই ঘরে যুবক বলতে সে-ই ছিলো। আর তার একমাত্র বোন আছে। বড় ভাই বিদেশে থাকে। আমার কাছে মনে হচ্ছে তাকে জিজ্ঞাবাদ করলে কিছু তথ্য বেরিয়ে আসবে। এজন্যে আপনার কথা মতো তাকে হাজির করেছি।

- আরেকটা ছেলে কী নাম যেন?

- শুভ।

- ও আসেনি?

- না স্যার।

- কেন?

- স্যার ও আইইএলটিএস কোর্স করতে গতকাল ঢাকায় চলে গেছে। তার মাকে জিজ্ঞাস করেছি, তিনি বলেছেন থানার কথা ভুলে গেছেন। তারপরে আপনার সাথে কথা না বলেই আগামী দুই দিনের মধ্যে তাকে থানা হাজির হতে বলেছি।

- আচ্ছা। এই ছেলে তোর নাম নিপু?

- জি স্যার।

- আচ্ছা বলোতো সেদিন কি হয়েছিলো? তুমিতো সবগুলো বিষয় জানতে। আমরা সব খবর নিয়ে ফেলেছি।

নিপু হতভম্ব হয়। কিন্তু মানসিকভাবে দুর্বল হয় না।

- স্যার যদি সব খবর নিয়ে নেন। তবে আমাকে জিজ্ঞাস করছেন কেন? অথবা আমার কাছে কী জানতে চান?

ওসি ধমক দিয়ে বলে, তোমাকে পাল্টা প্রশ্ন করতে বলেছি? কী ঘটেছিলো সব খুলে বল।

- আমি স্যার কিছু জানি না। আমরা রাতে বাবা-মা বোনসহ একসাথে খাওয়া দাওয়া করি। তারপর সবাই সবার মতো ঘুমিয়ে যাই। সকালে শুনি এমন ঘটনা।

- মেয়েটার সাথে শুভকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে কে?

- আমি স্যার। ও মেয়েদের সাথে মিশতে ভালোবাসে। আমার আবার ওসবে কোনো আগ্রহ নেই। যদিও নুপুরকে আমার ভালো লেগেছে। খুব ভালো লেগেছে। কিন্তু সম্পর্ক আমার কাছে ভালো লাগে না। তাই শুভকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। সে আবার ওসব পছন্দ করে।

- শুভর সাথে সম্পর্ক কতোদূর পর্যন্ত গড়ায়?

- আমাদের বাড়িতে নুপুর যতোদিন ছিলো শুভ আসতো ওরা কথা বলতো। আমার ওসব নিয়ে আগ্রহ নেই। কী কথা হতো কখনো জানতে চাইনি।

- আচ্ছা? তোমার কাছে কি মনে হয় শুভ এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকতে পারে?

আকস্মিক এমন প্রশ্ন চমকে উঠে নিপু। মানে কি? এভাবেতো ভাবিনি। এ সুযোগেতো পুরো দায়টা শুভর উপর চাপিয়ে দেয়া যায়। কিন্তু পুলিশতো আমার কথার উপর ভিত্তি করেই তাকে ফাঁসাবে না। নিশ্চয়ই আরো প্রমাণ চাইবে। তাছাড়া আর কোনো কিছু যোগ করা যায় কিনা ভাবনার বিষয়।

- স্যার। শুভর সাথে জড়িত থাকার কারণ দেখি না। তবে...

- তবে কী?

আপনারা ভালো করে অনুসন্ধান করুন। আমিও তার সাথে মিশে দেখি কিছু পাওয়া যায় কি না? কৌশলে উত্তর দেয় নিপু।

- তবে তুমি যে এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত তার প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। তুমি কী ভেবেছ? আমরা এমনি এমনি বসে আছি? নিজেকে এতো চালাক ভাবো কেন?

নিপু চিন্তায় পড়ে যায়। তবে কৌশলে কিছু বুঝতে না দিয়ে বলে, এটা কেমন কথা? আমাকে আবার ফাঁসাতে চান কেন? তাছাড়া আমি নুপুরকে মারতে যাবো কেন? বরং নুপুরের সাথে শুভর সম্পর্ক হয়ে উঠছিলো। সম্পর্ক কতোটুকু গড়ালো সে তথ্য হয়তো আমার কাছে নেই। তবে আমি সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতে পারবো।

- আচ্ছা তুমি কাউকে ভালোবাস?

- না। তবে...

- তবে কী?

আমার কাকাতো বোন শোলকা আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু আমাদের হিন্দু ধর্ম শাস্ত্র মতে তা নিষিদ্ধ। কিন্তু তাকে কোনো ভাবেই আমি বোঝাতে পারি না। সে আমার জন্যে বাহানা করে। আমি পাত্তা দেই না। এটা হয় না।

- আচ্ছা। তুমি যে নুপুরকে হত্যা করনি। তার কোনো প্রমাণ তোমার কাছে আছে?

- আমার কাছে কি প্রমাণ থাকবে? তবে রাত ঠিক ১২টার দিকে নুপুরকে আমি ঘরে সজাগ দেখেছি। পাঁয়চারি করতে দেখেছি।

এ কথা বলেই নিপু বিগড়ে যায়। ভাবে এটা বলতে গেলাম কেন? অবশ্য পুলিশও একটা ক্লু ধরতে সক্ষম হয়। তাইতো পুলিশ নিপুকে নতুন ভাবে জেরা শুরু করে। ওসিতো করছেই ফাঁকে ফাঁকে তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রশ্নের পর প্রশ্ন ছুঁড়ে মারে।

এবার ওসি বলে, আমরা যতোদূর জানি তুমিও নুপুরকে পছন্দ করতে। ভালোবাসতে।

- না স্যার মোটেই না।

- তাহলে নুপুর যেদিন আসলো পরদিন সকালে শুভকে তার বাড়ি থেকে ডেকে আনলে কেন? তোমার পছন্দের বিষয়টি জানাতেই নিশ্চয়?

- ও সুন্দরী মেয়ে পেলেই সম্পর্ক করতে চায়। আমি তাকে সে সুযোগ করে দিতে চেয়েছি।

- কিন্তু তোমার ভালো না লাগলে তো শুভকে ডেকে আনতে না।

- ভালোতো লাগতেই পারে। তাই বলে কি তাকে হত্যা করবো? হত্যা তুমি একা করনি। তোমার সাথে আর কে কে ছিলো বল?

পুলিশের এমন আজগুবি প্রশ্নে নিপু থতমত খেয়ে যায়। পুলিশ ইচ্ছে করলেই যে কোনো ঘটনার প্রকৃত রহস্য উন্মোচন করতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে নিরিবিলি সময় দিতে হয়। গবেষণা বা ধ্যান করতে হয়। এবার ওসি ধমক দিয়ে বলে, তোমাকে আমরা ছাড়বো না। তুমি এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। নিপু মাথা নত করে রাখে।

তদন্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলে, আচ্ছা নিপু তোমাকে শোলকা পছন্দ করে। কিন্তু তুমি করো না। ঠিক?

- হ্যাঁ।

- শোলকা নিশ্চয় জানে তুমি নুপুরকে পছন্দ করো। তাই নয়?

- জানে আমি তাকে পছন্দ করি। কিন্তু তার সাথে তো আমার কোনো সম্পর্ক হয়নি। বা সম্পর্ক নেই।

- প্রশ্নতো সেখানেই। সম্পর্ক হয়নি বলেই তুমি তাকে চোখে চোখে রেখেছ। তাই নয় কি?

- তা ঠিক। তবে আমি মন থেকে চাইনি নুপুর শুভর সাথে সম্পর্ক রাখুক। বা সম্পর্ক গড়ে উঠুক। প্রথমে আমি যখন শুভকে নিয়ে আসি। পরে আমার কাছে মনে হলো নুপুরকে আমিই প্রপোজ করতে পারি। কেন অযথা শুভকে ডেকে আনলাম। প্রথমে শুভকে নিয়ে এলেও পরে মনে হয়েছে আমি ভুল করেছি। অবশ্য বিষয়টিকে শোলকা ভালো চোখেই দেখেছে। কারণ নুপুর শুভর সাথে সম্পর্কে জড়ালে তার সামনে আর কাঁটা থাকলো না। আমি তার হয়েই থাকবো। কিন্তু আমি তো ধর্মীয় শাস্ত্র বিশ্বাস করি। কাকাতো বোনকে আমি বিয়ে করতে পারবো না। আমাদের সমাজ মেনে নেবে না। অথচ সে আমাকে নিয়মিতই ভালো লাগা, মন্দ লাগা শেয়ার করতে চায়। (চলবে)

[পরের পর্ব আগামী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়