প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৫, ০৮:০৩
ওদের নেই অনুভূতি, নেই আত্মচিৎকার!

আপনি আমি প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে শতশত গাছকাটি, ফুল ছিঁড়ি, পাতা ছিঁড়ি। কখনো কি ভেবে দেখেছেন, যে গাছ ব্যথা পেয়েছে!কান্না করেছে কি না! কখনো কি শুনতে পেয়েছেন তাদের আর্তনাদ?
শুনেননি। শুনতে পাবেনও না। কারণ গাছ ব্যথা অনুভব করে না। তাদের স্নায়ুতন্ত্র বলে কিছু নেই। পেশী বা কঙ্কালতন্ত্র বলেও কিছু নেই। তাই এরা কঁাদে না, চিৎকার দেয় না। এদের যা আছে তা শুধুই পরিবহনতন্ত্র। তবে তা অরাজকতায় আর স্বৈরাচারে ভরপুর নয়, সেখানে প্রতিটা কলাকোষ নিজের নিজের দায়িত্ব পালন করে এবং গাছের রাজ্যকে বঁাচিয়ে রাখে। গাছের দুই পরিবহনের মাধ্যম হলো জাইলেম আর ফ্লোয়েম। জাইলেম করে জল বহন আর ফ্লোয়েম ফুড। যা কি না পাতার মধ্যে তৈরি খাবার, সেটা সালোকসংশ্লেষণ হয়ে তৈরি হয়। জাইলেমের ভিতর শেকড় দিয়ে শোষিত জলসমেত দ্রবীভূত খনিজের নদী বয়ে চলে আপন বেগে পাগলপারা, আর ফ্লোয়েমের মধ্যে দিয়ে সুগার আর অ্যামাইনো অ্যাসিড পরিবহন।
যন্ত্রণা থাকবে যদি মন থাকে। কিন্তু গাছের কি আর তা আছে? নেই, তাই গাছকে কেটে ফেললেও ওরা আবার নির্লজ্জের মতন বেড়ে ওঠে, আমাদেরকে অক্সিজেন দিয়ে সাহায্য করে। সাথে ফল দেয়, ফুল দেয়, ছায়া দেয়, দেয় হাওয়া আর মাটিকে ধরে রেখে ভূমিক্ষয় রোধ করে, কাঠ দেয় আরও কত্ত কী। গাছ ব্যথা অনুভব করে না কারণ গাছের ব্রেন বা স্পাইনাল কর্ড নেই, তাদের ভিতর দিয়ে ব্যথা নামক পারসেপশনটা যায় না, ওই জলটল, একটুখানি সুগার বয়েই ওরা খুশি। তবে গাছ কিন্তু নানারকম উত্তেজনায় সাড়া দেয়, সেটাকে বলবো বায়োকেমিক্যাল উত্তেজনা। অর্থাৎ উত্তেজকের প্রভাবে তা সাড়া দেয় এবং গতিপথ বা নড়াচড়ার পরিবর্তন করে একটা সাড়া দেয়। যেমন কেমিক্যাল (ঈযবসরপধষং), আলো (চযড়ঃড়), তাপ (ঞযবৎসড়) এগুলো গাছকে পরিবেশের অবস্থা অনুযায়ী সাপোর্ট অথবা ডিসটার্ব করে, ফলে গাছের মধ্যে টুকটাক খুচখাচ নড়াচড়ার পরিবর্তন দেখা দেয়। নিউরোলজিক্যাল স্টিমুলি তখনই থাকে যখন কোনো দেহে নার্ভাস সিস্টেম থাকে।
বায়োকেমিক্যাল স্টিমুলিগুলোকে নিয়ে ভাগ করলে আবার তিনরকম সাড়া পাবেনÑট্রপিক (ঞৎড়ঢ়রপ), ট্যাকটিক (ঞধপঃরপ) এবং ন্যাস্টিক (ঘধংঃরপ) কিন্তু এর ভাগগুলো বলতে গেলে প্রচুর বলতে হবে। আবার একটা অন্ধকার ঘরে একটা গাছ রেখে সামান্য জানালা ফঁাক করে আলো আসতে দিলে গাছ ওই আলোর দিকে বেঁকে যায়। একে বলে ফটোট্রপিক মুভমেন্ট। প্রক্রিয়াটাকে বলে ফটোট্রপিজম।
এদিকে কোনো রাসায়নিক এর দিকে যদি গাছের কোনো অংশ যায় তাহলে তা কেমোট্রপিক মুভমেন্ট। সেটা উত্তেজকের দিকেও যেতে পারে তাকে বলবো পজিটিভ কোমোট্রপিক আবার উত্তেজকের উল্টোদিকেও যেতে পারে তাকে বলবো নেগেটিভ কেমোট্রপিক। সাড়া না দেবার ক্ষমতা থাকলে কি গাছ এগুলো করতে পারতো? এখানেই ওই সূক্ষ্ম পার্থক্যটা আছে, বায়োকেমিক্যাল আর নিউরোলজিক্যাল। তবে গাছ কাটলে আমার বুকে ব্যথা লাগে। কেন জানেন? কারণ আমি আপনি এই জগৎ সংসার সবাই বেঁচে আছি ওই গাছের অকৃত্রিম ভালোবাসায়। গাছ যদি কার্বন ডাই অক্সাইড না শুষে নিতো, তব এত দিনে পৃথিবী কালো ধেঁায়ায় আর কার্বনে ঢেকে যেতো। গাছের মূলকে কখনো উপরের দিকে উঠতে দেখবেন না (নোনামাটির চহবঁসধঃড়ঢ়যড়ৎবং বা শ্বাসমূল ছাড়া) কারণ মূল পজিটিভ জিওট্রপিক চলন দেখায়। অর্থাৎ মাধ্যাকর্ষণের দিকেই যায়। আবার লজ্জাবতী পাতা দেখবেন হাত দিলেই গুটিয়ে যায় একে বলে সিসমোন্যাস্টি , পাতার কোষে ঞঁৎমড়ৎ ঢ়ৎবংংঁৎব বলে একরকম চাপের ডিসটার্বেন্স হয় কেউ ছুঁলে বা নিদেনপক্ষে বৃষ্টির ফেঁাটা পড়লেও। এগুলো সবই গাছের সাড়া দেবার পদ্ধতি। এখানে ফঁাকি চলে না। গাছ সব বোঝে, বেচারাদের মুখ নেই বলে বলতে পারে না, আর নার্ভাস সিস্টেম নেই বলে চেঁচাতে পারে না।
আমরা ওদের নির্বিচারে হত্যা করব না, অঙ্কুরে পিসিয়ে দিব না। ওরা আমাদের বন্ধু। আমাদের ৬১ প্রাকৃতিক শিক্ষক। আমাদের শিখায় যে মানুষ ঢিল ছোরলে কিভাবে প্রতিদানস্বরূপ ফল দিতে হয়। কিভাবে ভালো বাসতে হয়। ৫ জুন ছিলো পরিবেশ দিবস। আসুন শপথ করি, এই সৃজনে অন্তত দশটি করে বৃক্ষরোপণ করবো। গাছের প্রতি যত্নবান হব, যেভাবে যত্নকরি আমাদের মমতাময়ী মা আর ফুলকুঁড়ি শিশুদের।