মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

অভিমান
অনলাইন ডেস্ক

অন্ধকার রাতের মতো দুটি চোখ। সেখানে সুড়ঙ্গ বেয়ে নেমে গেছে বিষন্নতার এক অন্ধগহ্বর। সেই গহ্বরে পৃথিবীর গভীরতম বেদনার লাভা সঞ্চিত হয়ে হয়ে ফুঁসে উঠতে চাইছে। সহিষ্ণুতার বলে বাহিরটা শীতল তুষার প্রলেপের মতো।

নাম তার চন্দ্রা। বুদ্ধিদীপ্ত আঁখি, বিনয় আর প্রজ্ঞার সম্মিলনে সে জগতের কোমলতম সৌন্দর্যের অধিকারি। হাতের কবজি অবধি কমলা রঙের ব্লাউজ আর রোদরঙা শাড়িতে সে দীপ্তিময়ী, দূরদর্শিণী, মায়াবতী ।

তার কাছে হিসেব বড় সহজ, সুখের এবং নির্ভুল। তবু হেরে যাওয়ার ভান করে অন্যকে জিতিয়ে দিতে। যাকে সে ভালবাসে তার জিতে সে সুখানুভব করে। সে ছাড় দেয়, কিন্তু ছেড়ে দেয় না। সে যে ছেড়ে দেয় না তা অপরপক্ষ বুঝতে পারে না হৃদয়ের স্থিরতার অভাব কিংবা অনেককিছুকে জায়গা দিতে হয় বলে।

অন্ধকার চোখের সুড়ঙ্গে বেঁধে নিয়ে চন্দ্রা বলে-আর কিছু জানার আছে? থাকলে বলতে পারেন।

মুক্ত গড়িয়ে পড়ার মত করে চন্দ্রার কথাগুলো ঝুরঝুর করে হৃদয়ের সিঁড়িতে গড়াতে থাকে। সেথা ঝলমলিয়ে ওঠা আলোকছ্বটায় আমার মনের এধারওধার চৌচির হয়ে যায়। নিজেকে লুকাই সতর্কভাবে।

অবসর দেয়ার মতো অবসর আমার খুব একটা জমে ওঠে না। তাই বৃথা সময়কে গেড়ে বসার বিলাসিতায় আমি নেই। চন্দ্রার কেসটা হাতে নেয়াই ছিল বড় একটা ঝুঁকি। আর আমি ঝুঁকি নিতে ভয় পাই না। কিন্তু এবার কেন জানি ভয় হচ্ছে খুব। সেই ভয় অন্যকিছু। আমি ঘেমে উঠছি বারবার আর নিজেকে সাবধান করছি।

চন্দ্রা বলে, কোন আক্ষেপের প্রশ্রয়ে আমি কাতর হইনা বলেই এত অন্ধকার জিইয়ে রাখি। আর মেলে ধরি যা, তার সবটাই আলো। আলোটা এগিয়ে দেই পথ দেখাব বলে; আর অন্ধকারের পূর্ন অধিকার কেবল আমার।

প্রশস্ত নদীর কিনারায় ভোরের সূর্য ওঠা মুহুর্তে যেরকম একপ্রকার শীতল মৃদুমন্দ বাতাস বয়ে যায়, তার কথাগুলো সেরকম বয়ে গেল মনের আঙিনা জুড়ে।

ক্যারিয়ারে প্রসার খ্যাতি জীবিকাভাবনা যা আমাকে সবসময় এগিয়ে নিয়ে যায়, এই কেস এ যেন সেইসব তুচ্ছ। অন্যকিছু আমাকে প্রবলভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। যে করেই হোক এই মামলায় আমাকে জিততেই হবে। কিন্তু অসুবিধা হল চন্দ্রা একবারও বলে না যে, খুনটা আমি বাধ্য হয়ে করেছি। তার সরল অথচ দৃঢ় জবাব- খুন আমিই করেছি এবং একা।

বিস্ময় কাটে না আমার, এরকম একজন মানুষ কিভাবে কাউকে খুন করে!

মনে মনে ভাবছিলাম সেকথা। কখন যে তার চোখে চোখ পড়েছিল খেয়াল করিনি। সে বলল, ভাবছেন আমি কাউকে খুন করলাম কিভাবে?

সামলে নিয়ে বলি, জগতে কতকিছুইতো ঘটে যা মানুষ ভাবেও না কখনো। আমি আপনি এর বাইরে নই। আপনি ভাব্বেন না আমি আপনাকে সাহায্য করতে এসেছি। বরং আপনি আমাকে সহায়তা করুন। আমাকে মামলায় জিতিয়ে দিন।

আমি ?

আপনিই জানেন কিভাবে আমাকে সহায়তা করবেন।

কিন্তু আমাকে বাঁচাবেন না দয়া করে, আমি মুক্তি চাই। চন্দ্রা স্পস্ট জবাব দিল। আমি বললাম, না বাঁচালে মুক্তি মিলবে কেমন করে?

কিছু মুক্তি কেবল নিজের বন্দীত্বের মাঝেই মিলে। কিছু বাঁচা কেবল মরে গিয়েই সম্ভব হয়। নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার মাঝেও থাকে বিকশিত হওয়ার আকাশ। নিরবতার মাঝেও থাকে বড় প্রতিবাদ, আবার একটি মাত্র নিঃশ্বাসের আড়ালেও থাকতে পারে বড় কোন গল্প।

আমি বললাম, চন্দ্রা-আপনাকে ভাল বুঝতে পারে এরকম কেউ আছে? যিনি আপনার কাছের মানুষ? চন্দ্রা বলে, যাকে আমারা কাছের মানুষ ভাবি কখনো কখনো তার কাছেই আমারা সবচেয়ে বেশি দুরের মানুষে পরিণত হই। কাছের মানুষের সংজ্ঞা আমি ভুলে গিয়েছি উকিল সাহেব। আমি কেবল মুক্তি চাই। আর তাই এই চারদেয়ালের মাঝে বন্দি হতে এসেছি।

সাহস করেই বললাম, আমি বুঝতে পারছি আপনি কোন্ মুক্তির কথা বলছেন।

দুই হাতে নিজের কপাল চেপে ধরে চন্দ্রা। বলে, এই একটা জায়গায় আমি দুর্বল হয়ে যাই-মাথার যন্ত্রণা আমাকে কাতর করে ফেলে।

আমি বুঝতে পারি চন্দ্রা আজ আর কথা বলতে চাচ্ছে না। আমি এখন চলে গেলেই বরং সে স্বস্তি পায়। বললাম, ঠিক আছে আজ আমি চলি।

চন্দ্রা মাথা তুলে তাকায় না। না তাকানোটাই সাভাবিক। তবু আমার খিদেতুর মন কেন আশা করে নিরাশ হতে গেল যে, চন্দ্রা একবার তাকাবে, একটু হাসতে চেষ্টা করবে, একটু অশ্রু গড়িয়ে পড়তে চাইলে আড়াল করে বলবে, চোখে আবার কী পড়লো!

কড়া রোদ বিছানো পথে চলতে চলতে মন বলে ওঠে, প্রকৃতির এ নিরব অভিমান। বর্ষাকালেও তপ্ত ঠনঠনে রোদ বিলাচ্ছে। আমরাই প্রকৃতির উপর অত্যাচার করে তাকে রুষ্ট করে তুলেছি। অথচ এইসময় আমাদের বৃষ্টি পাওয়ার কথা ছিল।

আমাকে জানতেই হবে কোন্ সেই অভিমানে আজ তুমিও এত কঠিন চন্দ্রা। আর আমার ভেতরেই বা এ কোন্ এক অভিমান উঁকি দেয়, এই যে তুমি ফিরে তাকালে না বলে!

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়