শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২১, ১২:১৩

বই পড়া ভূত

সোহানুর রহমান অনন্ত
বই পড়া ভূত

গতকাল রাতেই বইটা এখানে রেখেছিলো কিন্তু সকালে খুঁজে পাচ্ছে না বিল্টু। ওদিকে মা তাড়া দিচ্ছে স্কুলের দেরি হয়ে যাচ্ছে। এদিক ওদিক খুঁজে দৌড়ে বের হয়ে যায়। স্কুল থেকে ফিরে তবেই খুঁজবে, এখন সময় নেই। মা রোজ বিল্টুকে স্কুল পর্যন্ত দিয়ে যায়। যদিও বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব মাত্র পনেরো মিনিটের; তাই বিল্টু একাই যেতে পারে। কিন্তু সমস্যা হলো মনিকাদের কুকুরটা। কারণে অকারণে কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করে উঠে আর তখনি বিল্টুর ভয় লাগে। তাই মাকে ছাড়া স্কুলে আসতে চায় না। স্কুল যেতে যেতে ভাবলো সায়েমকে এই বিষয়ে বলবে। বিল্টুকে চিন্তা করতে দেখে মা বলল, কি হয়েছে তোমার? কই কিছু না তো, কৌশলে বিষয়টা এড়িয়ে যায় বিল্টু। স্কুলের গেইট পর্যন্ত এসে মা আবার চলে যায়। বলবে বলবে ভেবে সায়েমকে আর কথাটা বলা হয় না। অংক টিচারের ধমক খেয়ে সব ভুলে যায়। বিল্টু অংকে এমনিতেই কাচা। ক্লাস শেষ হতেই স্কুলের বাইরে এসে দাঁড়ালো। মা এখনো আসেনি। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে নিজেই রওনা হলো বাড়ির দিকে। সামনে মানুষের জটলা দেখে এগিয়ে গেলো। এক লোককে কুকুরে কামড়েছে। কী ভয়ানক ব্যাপার, মনিকাদের কুকুরটা সত্যি অনেক পাঁজি। বাসায় আসতেই দেখে মা সবে মাত্র বেরুচ্ছে। বিল্টুকে দেখে বলল, রান্নার কাজে আজ একটু দেরি হয়ে গেছে বাবা, তুমি রাগ করোনি তো? বিল্টু মাথা ঝাকিয়ে না বললো, তারপর নিজের রুমে চলে গেলো।

একি আরেকটা বই খুঁজে পাচ্ছে না। মাকে বলবে নাকি একবার? নাহ্ নিজেই দেখবে বইগুলো কোথায় যায়। রাতে ঘুমানোর ভান করে শুয়ে রইলো বিল্টু, আড়চোখে দেখছে কিন্তু কোথায় কী, কেউ তো নেই। একসময় চোখ লেগে এলো, হঠাৎ একটা শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে গেলো। বিল্টু দেখলো কী যেনো একটা জানালা দিয়ে বের হয়ে গেলো। চোর চোর...বলে বিল্টু জানলার কাছে গিযে দাঁড়ালো কিন্তু কিছুই নেই ওপাশে। এইদিকটায় ছোট একটা জঙ্গল। বিল্টু ভাবলো চোর বেটায় নিশ্চয় জঙ্গলে থাকে। ব্যাপারটা দেখতে হবে ভালো করে। খুব সকালে উঠে বিল্টু জঙ্গলে ঢুকলো। এদিক-ওদিক খুঁজলো, নেই কিছু। হতাশ হয়ে যখন ফিরতে যাবে ঠিক তখনি চোখ পড়লো ছোট্ট তেঁতুল গাছটার দিকে। একি সর্বনাশ, বইগুলো গাছের ডালের উপর, একটি দুটি নয়, ছয়-সাতটা বই। কিন্তু বইগুলো এতো উপরে যে, বিল্টুর পক্ষে পেড়ে আনা সম্ভব নয়। তাই বাসায় চলে এলো। যেভাবেই হোক চোরটাকে ধরতে হবে। আজ আকাশে চাঁদ আছে, জানালা দিয়ে চাঁদের আলো এসে পড়েছে। বিল্টু আজ জেগে থাকবে, দেখবে কে আসে। মাঝ রাতের দিকে জানালা দিয়ে বাতাসের মতো একটা ছায়া এসে ঘরে ঢুকলো। মুহূর্তেই সেটা কালো কুচকুচে বাচ্চার আকৃতি নিলো। যেই নাকি বিল্টুর একটা বই ধরতে যাবে, অমনি বিল্টু পেছন থেকে গিয়ে ঝাপটে ধরলো। কিন্তু একি! কিছুই তো হাতে লাগেনি। ওদিকে ছায়া মূর্তিটাও ভয় পেয়ে কাঁপতে লাগলো। বিল্টু এবার সাহস নিয়ে বললো, কে তুমি?। আমি বাচ্চা ভূত। ভূতিহু। আমার বই চুরি করো কেনো? আমার বই পড়তে ভালো লাগে। তাই, বই পড়তে আমারও ভালো লাগে, আচ্ছা তোমার আর কি ভালো লাগে? জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে, আর মগডালে ঘুমাতে। তুমি বুঝি মগডালে ঘুমাও। হু। তোমার নাম কী?। কেটুল ভূত। কী নাম রে বাবা, তোমরা মানুষের মতো নাম রাখতে পারো না। না। কেনো? কারণ আমরা মানুষ না তাই। আচ্ছা তুমি কি আমার বন্ধু হবে? হু, হতে পারি, তবে আমাকে বই পড়তে দিতে হবে। দেবো, আমার অনেক বই আছে। সেই রাতে কেটুল ভূতের সাথে বিল্টুর বন্ধুত্ব হলো। এরপর থেকে কেটুল ভূত রোজ আসে বিল্টুর কাছে। অংক শেখায়, ইংরেজি শেখায়, বেটুল ভূত সব জানে। এ কথা বিল্টু কাউকে বলে না, সে বছর স্কুলে পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি নাম্বার পেলো বিল্টু। বাবা-মা তো অবাক, এমন রেজাল্ট বিল্টু আগে করেনি কখনো। এখন আর বিল্টুর মনিকাদের বাড়ির সামনে দিয়ে আসতেও ভয় করে না। একা একা স্কুলে যায়, কুকুরটা বিল্টুকে দেখলেই ভয়ে পালায়। হাসি পায় বিল্টুর। আগে ওর সাথে সায়েম ছাড়া আর কেউ বসতে চাইতো না, এখন ক্লাসের সব ছেলে মেয়ে ওর সাথে বন্ধুত্ব করতে চায়। রাত যতো গভীর হয় বল্টু আর কেটুল ভূতের বই পড়া জমে উঠে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়