প্রকাশ : ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:১৪
শৈশবের ডাকে ফিরেছি আবার: বন্ধুদের সঙ্গে একদিনের স্মৃতিময় পুনর্মিলন

“বন্ধুতা হলো সেই সোনালী বন্ধন, যা সময়ের ধুলোয় ম্লান হয় না, বরং পুরনো স্মৃতি খুঁড়ে এনে দেয় নতুন আনন্দ।”
|আরো খবর
অনেকদিন পর—হ্যাঁ, সত্যিই অনেক দিন পর, আমরা স্কুল জীবনের বন্ধুরা আবার একসাথে হলাম। জীবনের ব্যস্ততা, পেশাগত নানা টানাপোড়েন, সংসার আর সমাজের দায়িত্বের বেড়াজাল পেরিয়ে যেন ফিরে গেলাম সেই সোনালী দিনে—যখন আমরা ছিলাম কেবল বন্ধু, কেবল হাসির মানুষ।
ফারিসা রিসোর্টে বন্ধুত্বের হইচই
বন্ধু শেখ ফরিদ আহমদ মানিকের আতিথেয়তায়, তার নিজের গড়া ‘ফারিসা রিসোর্ট’-এ আমাদের মিলনমেলা যেন একটুকরো স্বর্গ। শহরের কোলাহল ছাপিয়ে প্রকৃতির কোলে এমন শান্ত পরিবেশে প্রিয় মুখগুলোকে একত্রে দেখে মন ভরে গেল। একে একে সবাই হাজির—কেউ কানাডা থেকে থেকে, কেউ ঢাকায় বসবাসরত, কেউবা এখনো চাঁদপুরেই আছেন।
টেবিলে সাজানো ছিল হরেক রকম খাবার, কিন্তু সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল আমাদের গল্পগুলো। পুরনো স্কুলের দিন, কে কী করে ধরা খেয়েছিল—সব উঠে এল একে একে। হাসতে হাসতে চোখ ভিজে উঠল বারবার।
ডাকাতিয়া ও মেঘনার বুকে এক টুকরো স্বপ্নযাত্রা
এরপর আমরা নামলাম নদীপথে—চাঁদপুরের গর্ব ডাকাতিয়া আর মেঘনার বুক চিরে চলল আমাদের নৌভ্রমণ। বাতাসে ছিল নদীর ঘ্রাণ, জলে ছিল সূর্যের আলোছায়া খেলা। আমাদের গল্প, গান আর সেলফির মুহূর্তগুলো জলের ঢেউয়ের সঙ্গে সঙ্গত করছিল।
বসেই কেউ গাইছিল, “সেই যে আমার ছোট্টবেলা, ফিরে পেতে মন চায়…” আরেকজন তাল দিচ্ছিল। কেবল আমরাই নই, নদীর বুকেও যেন সেই সুর ভেসে বেড়াচ্ছিল।
আবার ফিরে দেখা—স্কুল মাঠের বিকেল
সন্ধ্যার পরে গন্তব্য ছিল আমাদের প্রাণের স্কুল, হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। সেই মাঠ, সেই লেইক, —সব যেন চেনা অথচ নতুন লাগছিল। সেদিন সন্ধ্যায় আমরা শুধু আড্ডা দিইনি, ফিরে গিয়েছিলাম ৪৫-৫০ বছর পেছনে। যেখানে প্রথম পরিচয়, প্রথম শাসন, প্রথম বন্ধুত্বের গল্প শুরু হয়েছিল।
স্কুল মাঠে আমরা গোল হয়ে বসেছিলাম। কেউ গল্প বলছিল, কেউ পুরনো শিক্ষকের কথা তুলে আনছিল, কেউ আবার স্মৃতিচারণ করছিল আমাদের স্কুল বার্ষিকীর দিনগুলোর।
বন্ধুত্ব, স্মৃতি আর নতুন করে বেঁধে নেওয়া
এই একদিনের মিলন যেন আমাদের নতুন প্রাণ দিল। কারো মাথায় চুল নেই আগের মতো, কেউ একটু মোটা হয়ে গেছে, কারো চেহারায় সময়ের রেখা স্পষ্ট—তবুও ভেতরের মানুষটা ঠিক আগের মতোই আছে।
এই বন্ধুত্ব, এই স্মৃতি আমাদের আবার এক করে দিল। শুধু এক দিনের জন্য নয়, আমরা ঠিক করলাম—এমন মিলন আরও হবে। প্রতি বছর, নিয়ম করে, বন্ধুদের হৃদয়ে আবার সুর বাজবে।
“সময় অনেক কিছু বদলায়, কিন্তু বন্ধুদের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো রয়ে যায় অমলিন। সেই মুহূর্তগুলোই জীবনকে আবার নতুন করে বাঁচতে শেখায়।”
প্রতিবেদক : অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন।
ডিসিকে/ এমজেডএইচ