প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৭
২৭ বছরেও ডাম্পিং স্টেশন হয়নি : খোদ পরিচ্ছন্নকর্মীরাই ময়লা ফেলছে রাস্তার পাশে
ভাগাড়ের সাথে বসবাস কচুয়া পৌরবাসীর!

কচুয়া-হাজীগঞ্জ -গৌরিপুর বাইপাস সড়কের কোর্ট বিল্ডিং সংলগ্ন রাস্তার পূর্ব পাশে যত্রতত্র ময়লা ফেলে তৈরি করা হয়েছে ময়লার ভাগাড়। প্রতিদিন বিশ্বরোড বাইপাস এলাকার ব্যবসায়ী, পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মী, আশপাশের ডায়াগনস্টিক
সেন্টারের বর্জ্যসহ বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা রাস্তার পাশে ফেলা হচ্ছে। বছরের পর বছর এভাবেই চলছে। দুর্গন্ধে পুরো এলাকায় এক অসহনীয় অবস্থা বিরাজ করছে। জন্ম নিচ্ছে মশা-মাছি। ছড়াচ্ছে বিভিন্ন প্রকার রোগ-জীবাণু। ময়লার দুর্গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে দূষিত হচ্ছে আশপাশের পরিবেশ। সড়কের পাশ দিয়ে পথচারী ও যানবাহনের যাত্রীরা ময়লার দুর্গন্ধে নাক চেপে যেতে হচ্ছে। এসব যেনো দেখার কেউ নেই।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে স্থাপিত কচুয়া পৌরসভায় বর্তমানে
৬জন পরিচ্ছন্নকর্মী, ১জন সুপারভাইজার ও ময়লা অপসারণের জন্যে ২৪টি ভ্যান রয়েছে। এদিকে শহরের ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্যে পৌরসভার নির্দিষ্ট কোনো ডাম্পিং স্টেশন নেই। প্রতিদিন সকালে ভ্যানে করে ময়লা আবর্জনা সড়কের পাশে
ও খালে ফেলা হচ্ছে।
সরজমিনে গেলে দেখা যায়, বাইপাস সড়কের কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় উত্তর পাশে রয়েছে কয়েক শ' দোকান, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ডায়াগনস্টিক
সেন্টার ও হাসপাতাল সহ বসতবাড়ি। তাছাড়া এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে
হাজার হাজার মানুষ। জনবসতি ও গুরুত্বপূর্ণ এমন একটি সড়কের পাশেই ময়লা আর্বজনা ফেলে স্তূপ করে রাখছে আশপাশের দোকান, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীদের বহন করে আনা ময়লা। ভোগান্তির এখানেই শেষ নয়। ময়লার স্তূপে আগুন দিয়ে পোড়ানোর সময় ধোঁয়ার গন্ধে যেমনি পরিবেশ দূষণ হয়, তেমনি স্থানীয় মানুষের যেনো দম বন্ধ হয়ে আসে।
ময়লা-আর্বজনার দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষণে এলাকার লোকজন দিন দিন
অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ময়লা নির্দিষ্ট স্থানে ডাম্পিং না করায় দুর্গন্ধে নাজেহাল বাইপাস সড়কের আশপাশের এলাকার মানুষ। এসব বর্জ্য অপসারণে দৃশ্যত কোনো ভূমিকা নেই পৌর কর্তৃপক্ষের। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পৌর বাসিন্দারা।
কোর্ট বিল্ডিং সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা আজিজুল জানান, আমার বাড়ির সামনের রাস্তার পাশে বছরের পর বছর ময়লা আবর্জনা ফেলে স্তূপ করে ফেলে রাখা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত এই স্তূপের ওপর ময়লা ফেলে যাচ্ছে পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মী, হোটেল, বিভিন্ন দোকান, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক
সেন্টারের লোকজন। এ ব্যাপারে পৌর কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানোর পরও কর্তৃপক্ষ ময়লা অবর্জনা এখান থেকে সরানো ও এখানে বর্জ্য না ফেলার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা.জাহিদ হোসাইন বলেন, ময়লার দুর্গন্ধ থেকে বাতাসের মাধ্যমে শ্বাসনালীর বিভিন্ন ধরনের
প্রদাহ হয়ে থাকে। বর্জ্য পদার্থ থেকে অনেক জটিল রোগ হতে পারে। বর্জ্য যদি সঠিকভাবে অপসারিত না হয় তাহলে পানির মাধ্যমে দূষিত হয়ে কলেরা,
ডায়রিয়া, টাইফয়েডসহ নানা ধরনের জটিল রোগ হতে পরে।
কচুয়া পৌরসভার সচিব মো. ফখরুল ইসলাম জানান, পৌরসভার ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্যে নির্দিষ্ট কোনো ডাম্পিং স্টেশন নেই। ডাম্পিংয়ের ব্যবস্থা করতে জমি খোঁজা হচ্ছে। সড়কের পাশে ময়লা আর্বজনা ফেলার ব্যাপারে আমি অবগত নই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা মুহাম্মদ হেলাল চৌধুরী বলেন, পৌরসভার ময়লা যত্রতত্র রাস্তার পাশে ফেলার কোনো সুযোগ নেই। শীঘ্রই ময়লা অপসারণ ও ভবিষ্যতে রাস্তার পাশে আর যেনো ময়লা না ফেলা হয় সে ব্যাপারে
কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, ডিসি স্যারের নির্দেশনায় ডাম্পিংয়ের জায়গা ক্রয় করার জন্যে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি এবং ইতোমধ্যে কয়েটি জায়গা দেখা হয়েছে। অতি শীঘ্রই ডাম্পিং স্টেশন করতে পারবো। তাহলে এই সমস্যাটি সমাধান হয়ে যাবে।
এলাকাবাসীর দাবি, পৌর প্রশাসক এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন।