প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪২
রাজনীতিতে এমন সংস্কৃতি!

‘হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তিতে বিএনপির নেতৃত্বের আসন জনতার কাতারে’ শিরোনামে হাজীগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামরুজ্জামান টুটুল গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে লিখেছেন ব্যতিক্রম প্রতিবেদন। তিনি তাঁর প্রতিবেদনে লিখেন, হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তির বিএনপিকে জনগণের কাতারে আনতে কঠিন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে, যোগ্যতা অনুযায়ী নেতৃত্ব তৈরি করতে, ছবি তোলার রাজনীতি বন্ধ করাসহ সাধারণ জনগণের কাছে পূর্ণ ভালোবাসা পেতে অলিখিত সংস্কৃতি চালু করতে যাচ্ছে চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসনে বিএনপির একক কর্ণধার, ২০০৮ ও ২০১৮ সালে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী লায়ন ইঞ্জি. মমিনুল হক। গত শনিবার (১৯ এপ্রিল ২০২৫) বিকেলে হাজীগঞ্জের রামচন্দ্রপুর ভূঁইয়া একাডেমী মাঠে এক অনুষ্ঠানে যার প্রত্যক্ষ প্রমাণ দেখেছে হাজার হাজার নেতা-কর্মী। উক্ত অনুষ্ঠানে পুরো মঞ্চে কোনো নেতার জন্যে চেয়ার রাখা হয়নি। যিনি বক্তব্য দিয়েছেন তিনি মঞ্চের এক পাশে স্থাপিত ডায়াসে বক্তব্য দিয়েছেন, তার বক্তব্য শেষে আরেক জন ডায়াসে বক্তব্য দিয়েছেন। ফলে নেতার বহর মঞ্চে উঠে গাদাগাদি করার সুযোগ পায়নি, সেলফি তোলার সুযোগ দেয়া হয়নি। মঞ্চের চেয়ারে বসে থাকবে নেতা এমন সংস্কৃতি বন্ধ করা হচ্ছে। এতে করে দু- একজন নেতা-কর্মীর বিরাগভাজন হলেও সাধারণ ভোটারদের কাছে বিএনপির আস্থা আরো বাড়বে বলে মনে করেন দায়িত্বশীল নেতারা।
হাজীগঞ্জের একাধিক বিএনপির সমাবেশ ঘুরে ও দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের নেতা চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসনে বিএনপির সমন্বয়ক লায়ন ইঞ্জি. মমিনুল হক বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে ব্যতিক্রম কিছু সংস্কৃতি চালু করেছেন, যা কিনা অলিখিত। তবে এটি অনেকটা রাজনীতির জন্যে রোল মডেল বলে মনে করেছেন সুধীজনেরা। হাজীগঞ্জের রামচন্দ্রপুর ভূইয়া একডেমী মাঠে ভিন্ন এক সংস্কৃতি দেখেছেন হাজার হাজার নেতা-কর্মী। প্রধান অতিথিসহ অন্য অতিথিগণ সবাই দর্শকের কাতারে বসেছেন। ডায়াস থেকে সঞ্চালক যার নাম ঘোষণা করেছেন তিনিই মঞ্চের পাশে স্থাপিত ডায়াসে গিয়ে বক্তব্য শেষ করে ফের দর্শকের কাতারে এসে বসেছেন।
সকল অনুষ্ঠানে সাধারণ কর্মীরা বা সুবিধাবাদী কিংবা সুসময়ের অনেক নেতা-কর্মী তাদের মূল নেতার সাথে ছবি তুলে তা দিয়ে সাধারণ জনগণের কাছে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজেকে জাহির করে, সেটি বন্ধ করতে ছবি তোলার ক্ষেত্রে কঠোরতা চালু করা হয়েছে। হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তির বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতার সূত্র ধরে জানা যায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিকে ঢেলে সাজানো শুরু করেছেন লায়ন ইঞ্জি. মমিনুল হক। এমন সব কঠিন নিয়মনীতি চালু করলে কিছু নেতা-কর্মী যদি দলের প্রতি বিরাগভাজন হন, তাতেও টলবেন না ইঞ্জি. মমিনুল হক। দলের একাধিক সূত্রে জানা যায়, আমাদের নেতার (ইঞ্জি. মমিনুল হক) স্পষ্ট কথা, অন্তত হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তিতে দলের নাম ভাঙ্গিয়ে, দলের বিধি ভঙ্গ করে, দলের বদনাম করে কোনো একটি নেতা বা কর্মী দ্বারা যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ন্যূনতম সমস্যা হয়, তাহলে ঐ নেতা বা কর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থাসহ তাকে আইনের হাতে তুলে দেয়া হবে। আমাদের নেতা-কর্মীরা সকল সামাজিক দায়বোধ থেকে সামাজিক কাজ করবে। তারা চাঁদাবাজি, সালিস (দরবার), দখল বাণিজ্য, চাঁদাবাজিতে জড়িত হতেই পারবে না। এ বিষয়ে ইঞ্জি. মমিনুল হক বলেন, রাজনীতির জন্যে বা আমাদের দলের জন্যে অশুভ সংকেত এমন কিছু আমাদের নেতা-কর্মীরা করবে না। আমরা শুদ্ধ রাজনীতি করবো। প্রয়োজন বোধে আমরা আমাদের লোকদের ওপর আরো কঠোর হবো, মানে অন্যায়কে ছাড় দেবো না। অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিটি কর্মী হবে জনবান্ধব ও সেবক, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতীক এবং বিজয়ী হওয়া নিয়ে কতোটুকু আশাবাদী এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, আমাদের আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করতে সমাজে দলকে সুসংহত রাখতে আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাবো। কাজ করা ব্যক্তি কখনো ঠকে না, আমি সে যুক্তিতে আশাবাদী। বিগত ১৬ বছর নেতা-কর্মীরা অত্যাচার সহ্য করেছেন। কেউ আইন হাতে তুলে নেবেন না, যারা দোষী তাদের বিচার রাষ্ট্র করবে। জনগণের সাথে আওয়ামী লীগের মতো আচরণ করা যাবে না। মানুষ বৈষম্যহীন সুখী সমৃদ্ধশীল বাংলাদেশ দেখতে চায়। ভয়ভীতিহীনভাবে মানুষ তার অধিকার ভোগ করবে।
কামরুজ্জামান টুটুলের এই প্রতিবেদনটি চাঁদপুর কণ্ঠে যারা পড়েছেন ও পড়বেন, তারা অবশ্যই থমকে দাঁড়িয়েছেন কিংবা থমকে দাঁড়াবেন। কেননা রাজনীতিতে এমন সংস্কৃতি শুধু বাংলাদেশে নয়, অনেক দেশেই বিরল। বলা যায়, অসম্ভব। এই বিরল ও অসম্ভবকে যদি বিএনপি নেতা ইঞ্জি. মমিনুল হক টেকসই করতে পারেন, তাহলে তিনি রাজনীতিতে দুষ্প্রাপ্য তথা বিরল প্রজাতির জীব হিসেবে আখ্যায়িত হলে বিস্মিত হবার মতো কিছু থাকবে না। সহজ কথা যেমন যায় না বলা সহজে, তেমনি মঞ্চশূন্য রেখে দর্শক বা জনতার কাতারে নেতাদের বসার কাজটিও করা যায় না সহজে। ভবিষ্যৎই বলে দেবে ইঞ্জি. মমিন রাজনীতিতে এমন সংস্কৃতি চালু করে সফল না বিফল। তবে সাধারণ্যে এমন সংস্কৃতির গ্রহণযোগ্যতা অবশ্যই ইতিবাচক হিসেবে প্রতিপন্ন হবে বলে আমরা বিশ্বাস রাখি।