প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০১:০২
বাংলাদেশের ক্রিকেট ও তামিম ভাই
আমাদের চাঁদপুরের গৌরব ও অহংকার!

৩৮ বছর আগের কথা স্মরণ করেই শুরু করি। গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী (ধলা মিয়া) আমিরাবাদ গোলাম কিবরিয়া হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা স্বপ্নপুরুষ তখন জীবিত ও পারিবারিক জৌলুস আর আভিজাত্য তঁার আপাদমস্তক। জমিদারি বলতে যা বোঝায় তার কোনোটিই যেন কমতি নেই। শুনেছি একসময় চৌধুরী বাড়ির সামনে দিয়ে জুতা পায়ে কিংবা ছাতা তুলে হঁাটতেও সাধারণের কলিজা কেঁপে উঠতো। না এটা ভয়ে নয়, সম্মানে ও জমিদারির প্রতি সাধারণ মানুষের আদবটা এমনই ছিলো। আমার শিক্ষানুরাগী আব্বাজান তখন জীবিত। একদিন ধলা মিয়া আমার আব্বার কাছে জানতে চাইলেন আমি কী করি। আব্বা বললেন, আমি (সাত্তার) নারায়ণগঞ্জ তুলারাম কলেজে বিএ পড়ছি। ধলা মিয়া বললেন, তোমার ছেলেটাকে একদিন বাসায় নিয়ে এসো। আব্বা আমাকে ধলা মিয়ার শ্যামলীর রিং রোডের বাসায় নিয়ে যান। আমরা দোতলায় গেস্ট রুমে বসেছিলাম, উনি আসলেন। অনেকক্ষণ আমার সাথে কথা বললেন এবং আমাকে উনার শ্যামলী শিপিং কোম্পানির একাউন্টিং/ সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করতে বললেন। শুধু তাই নয়, পড়ালেখা যেন বন্ধ না করি সে ব্যাপারেও বলে দিলেন। ধলা মিয়ার কথামতো চাকুরিও করেছি, সাথে পড়ালেখা চালিয়ে গেছি এবং এখনো পড়ালেখা করেই যাচ্ছি। পড়ালেখার শেষ বলে কিছু নেই। এতোকিছু বলার কারণ হলো, আমি যার কথা লিখতে যাচ্ছি, তিনি হলেন ধলা মিয়ার সুযোগ্য ছোট ছেলে গোলাম সাইদ হাসান চৌধুরী (তামিম)।
|আরো খবর
যাহোক, চাকুরির কারণে ধলা মিয়ার শ্যামলীর বাসায় এবং শ্যামলী গার্মেন্টসে আসা-যাওয়া হতো। আর সেই সুবাদে তামিম ভাইয়ের সাথে দেখা হতো এবং হাই হ্যালো হতো।
স্কুলের পুনর্মিলনীতে সেই ৩৮ বছর আগের দেখা তামিম ভাইকে মনে হলো ঠিক সেই রকমই আছেন। আমি বসার জন্যে সামনে এগুতেই দেখি তামিম ভাই বসা। আমি সালাম দিয়ে সামনে এগুতেই তিনি ‘সাত্তার’ বলে উঠে গিয়ে হ্যান্ডশেক করলেন। ‘তোমাদের পুনর্মিলনীর এতো বড় আয়োজন দেখে ছুটি শেষ হবার পরেও থেকে গেলাম। তোমার কথা প্রতিদিন এনামের কাছে শুনি। তুমি নাকি স্মরণিকাটা সম্পাদনা করেছ। কোথায় আমার স্মরণিকা?’ কথাগুলো একদমেই বলে গেলেন তামিম ভাই। আমি স্মরণিকাটা হাতে দিতেই পাতাগুলো উল্টে কিছু লেখা দেখলেন। বললেন, কভার পেইজ ও প্রচ্ছদটা অনেক সুন্দর হয়েছে। পরক্ষণে আমার প্রকাশিত ২টি বই দেই। হাতে নিয়েই বললেন, ওয়াও! তুমি লেখালেখি করো? অনেক কথা বলার পর তামিম ভাই বললেন কববঢ় ওহ ঞড়ঁপয. গোলাম সাঈদ হাসান চৌধুরী (তামিম)। বর্তমানে আবাহনী ক্রিকেট দলের সেক্রেটারি, তিনি জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় ছিলেন, তঁার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি কোনো রকম পারিতোষিক ছাড়া আবাহনী ও জাতীয় দলে খেলেছেন, তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরপর ১০ বছরের জন্যে নির্বাচিত পরিচালক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ম্যানেজার ছিলেন, তিনি সিসিডিএম (পৎরপশবঃ পড়সসরঃঃবব ড়ভ উযধশধ সবঃৎড়ঢ়ড়ষরঃধহ)-এর চেয়ারম্যান ছিলেন। এক কথায় বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের এক জীবন্ত কিংবদন্তী আমাদের তামিম ভাই।
আজকাল টাকা দিয়ে বা গরু জবাই করে মেজবানি করে বংশ কিনে নেয়। আবার বেশ্যার পোলাও পরিচয় দেয় চৌধুরী বংশের! তাই বলে কি ইতিহাস পাল্টানো যাবে? কখনো না।
তামিম ভাই আপনি একজন ভালো মনের মানুষ। ভালো মনের মানুষ না হলে আমার মতো সামান্য একজন সাত্তারের সাথে এতো ভালো ব্যবহার করতেন না। আপনি সত্যি একজন সাদা মনের মানুষ। বিধাতা আপনার সহায় হোক। আপনার প্রতি শুধু আমার নয়, সারা বাংলাদেশের মানুষ শ্রদ্ধাশীল চিত্তে কৃতজ্ঞ।
ড. আব্দুস সাত্তার : লেখক ও সাংবাদিক, ওয়াশিংটন ডিসি।