প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২৫, ২২:৪২
সবাই মিজানের মতো হোক'
গরিবের বুফে চালু করা মিজানের পাশে সাবেক এমপি লায়ন হারুন

কয়েকদিন পূর্বে ঢাকাস্থ চাঁদপুর সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি রাশেদ শাহরিয়ার পলাশ তাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘গরিবের বুফে চালু করে ভাইরাল মিজান’ শীর্ষক একটি লেখা লিখেছিলেন। তাঁর লেখা অনুসারে 'চাঁদপুরের সন্তান ঢাকার আগারগাঁও তালতলায় গরিবের বুফে চালু করে ভাইরাল মিজান নামে এক ব্যক্তি। গরুর মাংস দিয়ে আনলিমিটেড ভাত-তরকারি খাওয়া যায় মাত্র ১০০ টাকায়। ৮০ টাকায় মুরগী এবং ৬০ টাকায় ডিম দিয়ে খাওয়া যায়। সাথে সবজি, ডাল এবং ভাত আনলিমিটেড। মজার বিষয় হলো টাকা তিনি নিজে হাতে নেন না। গ্রাহকই পাশে রাখা পটে বিল পরিশোধ করে যান। মিজান মূলত মানুষের হৃদয় কেড়েছেন তার উদারতা দিয়ে’।
|আরো খবর
এই তথ্যটি মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। ইউটিউবার ছুটে যান তার কাছে। অন্যদিকে সস্তায় খাবারে অন্য ব্যবসায়ীদের কুনজর, দোকানি না খেয়াল রাখায় কিছু ধূর্ত লোক ইচ্ছেমতো মাংস সাবাড় করা এবং সরকারি জায়গায় এই দোকান দেয়ায় ত্রিমুখী সংকটে পড়েন মিজান।
একদিন পর রাশেদ শায়রিয়ার পলাশ লেখেন, ‘বিপাকে পড়েছে আগারগাঁও তালতলায় ফুটপাতে বুফে চালু করা সেই মিজান। আশপাশের ফুটপাত ব্যবসায়ীরা তার প্রধান প্রতিপক্ষ। কারণ, এতো কম টাকায় কেউ খাবার বিক্রি করে না। ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশ প্রশাসন তাকে উঠিয়ে দিতে চায় বলে অভিযোগ করেছে সে। এছাড়া ইউটিউবার-সাংবাদিক সবার যন্ত্রণায় রিজিক হারানোর পথে মিজান’।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কম মূল্যে বিক্রির কারণে কিছু মানুষ সুলভে খাওয়ার সুযোগ পেলেও সুযোগ সন্ধানীরা এই সুযোগ লুফে নিয়ে মিজানের সর্বনাশ ডেকে আনে। তার লোকসান করতে শুরু করে। অন্যদিকে সরকারি সংস্থার লোকজন তার দোকান উঠিয়ে দেয়। যদিও সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে মিজান আবারো দাঁড়িয়েছে। ব্যবসা করছে।
রাশেদ শায়রিয়ার পলাশ আবারো লেখেন, ‘মঙ্গলবার (১২ আগস্ট ২০২৫) সকালে যখন মিজানের সাথে আমার কথা হয়, তখন আমি জানতে চেয়েছিলাম ওর কী লাগবে? ও জানিয়েছিল একটা পাতিল লাগবে। তাৎক্ষণিক পাতিলের আবদার পূরণ করে দেন আগারগাঁও বণিক সমিতির পরিচালক শাহাদাত ভাই।
বুধবার (১৩ আগস্ট ২০২৫) তাকে দেখতে এসেছেন ফরিদগঞ্জ উপজেলার সাবেক এমপি লায়ন হারুন সাহেব। তিনি তাঁকে প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা দেন এবং পাশে থাকার ঘোষণা দেন।
আপনারা জানেন গরিবের বুফে চালু করে ভাইরাল হওয়ার পর মিজানের দোকানটি ভেঙ্গে দেয়া হয়। এরপর নানান তৎপরতার পর আবার চালু হয়। আমি আগেই তার পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছি। আগারগাঁও বণিক সমিতি এগিয়ে এসেছে। পাশে আছে প্রভাত সমাজ কল্যাণ সংস্থা। আজকে একজন সাবেক এমপি আসার পর মিজানের অনুভূতি- 'এরপর আমার দোকান ভেঙ্গে দিলেও আর কোনো আফসোস নেই।'জীবনে যা পাওয়ার তিনি পেয়েছেন। লায়ন হারুন সাহেব তার পাশে থাকবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
ভালো মানুষ এবং সততার পরীক্ষায় মিজান উত্তীর্ণ। আজকে যখন লায়ন হারুন সাহেব বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন তার ঘর লাগবে কিনা, তার সরল উত্তর, আমার হাত-পা আছে। কর্ম করতে পারলে ঘর কোনও সমস্যা নয়। তিনি ঘরের জন্যে টাকা নেননি।
সবাই মিজানের মত হোক। এটাই আমাদের চাওয়া’।জানা গেছে, মিজান এই ব্যবসার আগে ভ্যানে তরকারির ব্যবসা করতেন। অন্যরা যে পণ্য বিক্রি করতো ১০০ টাকায়, মিজান সে পণ্য বিক্রি করতো ৭০ টাকায়। তার হিসাব ছিলো কেজিতে লাভ করবে সর্বোচ্চ ৫ টাকা। তার ব্যবসায়িক সরলতাকে পছন্দ হয়নি প্রতিযোগী ব্যবসায়ীদের। আবার কিছু মানুষ তরকারি কিনে টাকা না দিয়ে চলে যেতো। 'আমার কাছে টাকা নেই' এই কথা বললে সে বিনা পয়সায় মানুষকে সবজি দিয়ে দিতো। ফলে নানান কারসাজির কারণে তার সেই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়।
প্রায় ১০ মাস আগে ৪ লাখ টাকা ঋণ করে ঢাকায় এসে ফুটপাতে এই খাবার হোটেল চালু করে সে। এতো সস্তায় খাইয়েও ৩ লাখ টাকা ইতোমধ্যে পরিশোধ করতে পেরেছে। গরুর মাংস দিয়ে আনলিমিটেড ভাত-তরকারি খাওয়া যায় মাত্র ১০০ টাকায়। ৮০ টাকায় মুরগী এবং ৬০ টাকায় ডিম দিয়ে খাওয়া যায়। সাথে সবজি, ডাল এবং ভাত আনলিমিটেড। মজার বিষয় হলো টাকা তিনি নিজে হাতে নেন না। গ্রাহকই পাশে রাখা পটে বিল পরিশোধ করে যান। মিজান মূলত মানুষের হৃদয় কেড়েছেন তার উদারতা দিয়ে।
আমাদের সমাজে যারা বড়ো বড়ো ব্যবসায়ী রয়েছেন, তাদের অনেকেরই বেশি লাভের প্রবণতা রয়েছে। এক্ষেত্রে দরিদ্র মিজান যেই উদারতার স্বাক্ষর রাখলেন, তা দৃষ্টান্ত মূলক।
একইসাথে চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লায়নস ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল সাবেক গর্ভনর বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ব্যাংকিং ও রাজস্ব বিষয়ক সম্পাদক লায়ন মো: হারুনুর রশিদও ওই মিজানের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে জনপ্রতিনিধিত্বশীল আচরণের মাধ্যমে মানবতার আরেক দৃষ্টান্ত দেখালেন। জয় হোক মানবতার।