প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২১, ০০:০০
করোনাকালে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থা। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ দীর্ঘদিন বন্ধ। এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়াও সম্ভব হয়নি। চলতি শিক্ষাবর্ষের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা অনিশ্চিত। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের বিকল্প উপায় খুঁজছে সবাই। অনলাইন কার্যক্রমের ব্যবহার আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। মানুষ এ ভয়াবহ পরিস্থিতিকে কাটিয়ে উঠতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করছে। করোনাকালে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, এমপি বলেছেন, সরকার সারা দেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে ‘ব্লেন্ডেড লার্নিং’ শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা বিবেচনা করছে। এহেন পরিস্থিতিতে, সব বাধাবিপত্তি এবং প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলে সকল প্রকার একাডেমিক ও প্রশাসনিক শিক্ষা কার্যক্রম সফলতার সাথে সম্পন্ন করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দুর্বার গতিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে এগিয়ে চলেছে দেশের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ড্যাফোডিল পরিবার কর্তৃক পরিচালিত ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (এনআইএসটি)।
সকল প্রকার শিক্ষা কার্যক্রমকে সুষ্ঠ ভাবে পরিচালনা করতে এনআইএসটিকে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি সফলতা দিয়েছে তা হলো সম্পূর্ণ অটোমেশন এবং প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ডিজিটালাইজেশনের লক্ষ্যে যে শক্তিশালী টুলসগুলো ব্যবহার করছে, বিশেষ করে নিজস্ব লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (LMS), ব্লেন্ডেড লার্নিং সিস্টেম (BLC) এবং ‘গো এডু’ (Goedu) প্ল্যাটফর্ম। এই সকল সুবিধা একসাথে Integrate করে Smart Edu নামে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। যার মাধ্যমে প্রশাসনিক কার্যক্রমও পরিচালনা ও মনিটরিং করা সম্ভব হচ্ছে। LMS ডিজিটাল টিচিং এবং লার্নিং-এর হাব হিসেবে কাজ করছে।
অনলাইন শিক্ষার একমাত্র উপকরণই কম্পিউটার আর সেই সাথে তার চালিকা শক্তি ইন্টারনেট সংযোগ এবং Smart Edu প্ল্যাটফর্ম। এ দুয়ের সুবন্দোবস্ত থাকলে দূরত্ব কোনো বাধা নয়। যেকোনো স্থানে বসেই লেখাপড়া চালিয়ে নেয়া সম্ভব। বিশেষ করে করোনা মহামারী (কোভিড-১৯) কালে এর গুরুত্ব প্রতিটি শিক্ষার্থী ও অভিভাবক গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছে।
উল্লেখ্য, এক যুগ আগেই ২০০৮ সালে দেশবরেণ্য তথ্য-প্রযুক্তিবিদ, স্বপ্নবাজ ও উদ্যোক্তা উন্নয়নের রূপকার ড্যাফোডিল পরিবারের চেয়ারম্যান ড. মোঃ সবুর খান তাঁর দূরদর্শিতা দিয়ে এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। তাই তথ্য প্রযুক্তিকে শিক্ষার্থীর এবং শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের কাজে লাগানো, লেখাপড়ার পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তিতে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তথ্য প্রযুক্তির ক্রমবিকাশমান ধারার সাথে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে যুগোপযোগী করে তুলতে এবং প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও ওয়ার্কশপ/প্রজেক্ট করানোর মাধ্যমে দক্ষ ও চাকরি উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়। শুধু তাই নয়, প্রথম থেকেই এনআইএসটির সকল শিক্ষাকার্যক্রম এই প্ল্যাটফর্মের আওতায় আনা হয়। পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় লক ডাউনের শুরু থেকেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনলাইন শিক্ষায় পারদর্শিতার প্রমাণ রেখে চলেছে এবং শিক্ষার্থীরাও প্রযুক্তির সাথে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। সকল প্রকার একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনাও শিক্ষকদের জন্য প্রায় শতভাগ সহজতর হয়েছে।
এই Smart Edu প্ল্যাটফর্মের লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের কার্যকরভাবে সংযুক্ত রেখে প্রতিটি শিক্ষার্থীর অগ্রগতি ট্র্যাক করা ও স্বতন্ত্র মূল্যায়ন নিরীক্ষণ এবং তাদের শেখাকে সহজতর করতে অধিকতর সহযোগিতা প্রদান করা। Smart Edu প্ল্যাটফর্ম শক্তিশালী কিন্তু সহজ লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। এটি কোর্স তৈরি, সেগুলো ঠিকমত সাজিয়ে পরিবেশন, ই-লার্নিং-এর সুবিধা সহ যোগাযোগ ও অন্যান্য সকল প্রশাসনিক এবং একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করার ওয়ান স্টপ সমাধান। অবিশ্বাস্যভাবে শক্তিশালী Plugins এবং Plugins-এর একটি বাস্তব উদাহরণ হলো এই প্ল্যাটফর্ম। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহার ও পরিচালনা করা খুব সহজ। প্ল্যাটফর্মটিতে একটি ‘ড্র্যাগ এন্ড ড্রপ’ কোর্স বিল্ডার রয়েছে, যা শিক্ষকদের সহজেই কোর্স তৈরি এবং সেগুলো ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে অনলাইনে প্রকাশ করতে সহায়তা করে। কোর্স উপকরণ, ক্লাসের রেকর্ডিং, যেকোনো একাডেমিক ভিডিও, অডিও, পাওয়ারপয়েন্ট, গুগল ড্রাইভ সংরক্ষিত রিসোর্স, ডেস্কটপ থেকেও যে কোনো ফাইল এখানে সংযুক্ত করবার সুবিধা রয়েছে (লিংক বা আপলোড)। প্ল্যাটফর্মটিতে প্রয়োজনীয় Plugins এবং Integration সহ ২৫টিরও বেশি ইনবিল্ট ফিচার রয়েছে, যা শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের নানানভাবে পড়াশোনার কাজে সংযুক্ত রাখবার জন্যে ব্যবহার করা সম্ভব।
কুইজ, অ্যাসাইনমেন্ট, ফোরাম এবং অনলাইন ওয়ার্কশপগুলো শিক্ষার্থীদের কৌতূহলকে উৎসাহিত করে এবং আরও কোর্সে অংশ নিতে বাধ্য করে। এটি একটি সর্বাধিক উন্নত কুইজ, যাতে শিক্ষকদের নির্ধারিত সময় সীমার সাথে কুইজ বা ছোট প্রশ্ন সেট করার এবং শিক্ষার্থীদের ফলাফল ট্র্যাক করার দক্ষতা সহ যে কোনো ধরণের প্রশ্ন সেট করার সুযোগ রয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষকরা কুইজ বা পরীক্ষার মান এবং সততা বজায় রাখতে পারেন এবং প্ল্যাটফর্মটিতে টার্নইটইন নামে একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নকল বা কপি ট্র্যাকার Integrate করবার ব্যবস্থা আছে, যাতে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের Assignment ঠিকভাবে যাচাই করতে পারে, সেটা সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী নিজের চেষ্টাতে নাকি অন্য কারও লেখা কপি করে সম্পন্ন করেছে, তা বোঝা যায়।
এমন আরো অনেকগুলো ফিচারের সাহায্যে Bloom's Taxonomy অনুসরণ করে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করার জন্যে শিক্ষকরা প্রশ্ন তৈরি করতে সক্ষম হন, যাতে তারা শিক্ষার্থীদের বর্তমান অবস্থান সহজেই শনাক্ত করতে পারেন এবং ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও গাইডলাইন সরবরাহ করতে পারেন। সমস্ত মূল্যায়নের ফলাফলগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি উন্নতমানের স্বনির্ধারিত গ্রেড বইতে সঞ্চিত হয়, যা শিক্ষকদের প্রতিটি কোর্স শিক্ষার্থীরা কীভাবে সম্পাদন করছে তার একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দেয়। শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে যে কোনো সময় তাদের রেকর্ডগুলো দেখতে পারে। যাতে তারা পরবর্তী মূল্যায়নের জন্যে পরিকল্পনা করতে এবং আরও ভালভাবে প্রস্তুত করতে পারে। এক কথায় প্ল্যাটফর্মটি শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক উভয়ের জন্যে স্বচ্ছতা এবং মিথস্ক্রিয়তা বৃদ্ধি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ বিভাগও এই রেকর্ডগুলো ট্র্যাক এবং পরীক্ষা করতে পারে, যা তাদের পরীক্ষার মান, স্বচ্ছতা এবং সততা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।
Smart Edu প্ল্যাটফর্মে একক কোর্সের জন্যে একাধিক প্রশিক্ষককেও অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ রয়েছে। এটা কোর্স কনটেন্ট প্রস্তুতির জন্যে শিক্ষকদেরকে একে অপরের সাথে পারস্পরিক সহযোগিতা করতে এবং কোর্স কনটেন্টের মানের উন্নতি করতে সহায়তা করে। স্ব-স্ব বিভাগগুলোও এ প্ল্যাটফর্মে কোর্স রিপোজিটরিগুলো পৃথকভাবে রাখতে পারে, যাতে নতুন সেমিস্টারের কোর্স অফার দেয়ার আগে শিক্ষকগণ সময় সময় তাদের কোর্সগুলো আপডেট করতে পারেন। বিভাগগুলিও এই রিপোজিটরিগুলো পরীক্ষা করতে পারে এবং শিক্ষকদের উন্নতির স্কোপগুলোতে নির্দেশিকা সরবরাহ করতে পারে।
অধিকন্তু, এই প্ল্যাটফর্মের পৃথক ড্যাশবোর্ড সহ নিজস্ব অন্যান্য মনিটরিং-এর ফিচার রয়েছে : শিক্ষক ড্যাশবোর্ড, শিক্ষার্থী ড্যাশবোর্ড, কোর্স ড্যাশবোর্ড এবং অ্যাডমিন ড্যাশবোর্ড। এর সাহায্যে শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স এবং তাদের কোর্সগুলো একটি একক ড্যাশবোর্ড থেকে যাচাই করতে পারেন এবং কয়েকটি ক্লিকে তাদের কোর্স সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদন পেতে পারেন। একইভাবে, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কোর্স থেকে তাদের বর্তমান পারফরম্যান্স সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি বা ধারণা পেতে পারে, যাতে তারা ভবিষ্যতের জন্যে ভালভাবে প্রস্তুত হতে পারে এবং সংগঠিত হতে পারে বা তাদের শিক্ষকদের সাহায্য নিতে পারে। অ্যাডমিন ড্যাশবোর্ড কর্তৃপক্ষকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালন সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি পেতে এবং প্ল্যাটফর্মের সামগ্রিক কর্মক্ষমতা এবং ক্রিয়াকলাপের প্রতিবেদন দেয়, যাতে তাদের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর সাফল্য নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। রিপোর্টগুলো সক্রিয় শিক্ষক, কোর্স সমাপ্তি, শিক্ষক সম্পৃক্ততা, অস্বাভাবিক গ্রেড, উদ্ভাবনী শিক্ষক, সক্রিয় শিক্ষার্থী, ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষার্থী ইত্যাদির মতো দরকারি ভাগে বিভক্ত। এই প্রতিবেদনগুলো সেমিস্টার অনুসারে বাছাই করা যায়। এছাড়াও এর মাধ্যমে একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের রিপোর্ট পাওয়া সম্ভব।
এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনলাইনে শিক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ইউটিউব, গুগল ড্রাইভের মতো একাধিক উৎস থেকে ভিডিও সহ ক্লাসগুলো সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণীয় এবং ইন্টার্যাক্টিভ করা যায়। শিক্ষার্থীদের জন্যে কোর্স তৈরি করতে, শিক্ষকরা বিভিন্ন ধরণের মাল্টিমিডিয়া ফাইল, চিত্র, পিডিএফ, ডক্স, এক্সেল শীট এবং অন্যান্য কনটেন্ট সহজেই আপলোড করতে পারেন। শিক্ষার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যে ‘সমস্যা আলোচনার ফোরাম’ বিভাগগুলোর সাথে অনায়াসে যোগাযোগ করতে পারে, যেখানে তারা শিক্ষকদের কাছে মন্তব্য করতে এবং প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারে, শিক্ষার্থীরা তাদের কোর্সগুলোতে পর্যালোচনা, রেট ও প্রতিক্রিয়াও জানাতে পারে। শিক্ষকরা এই প্ল্যাটফর্মের মধ্য থেকেই শিক্ষার্থীদের পর্যায়ক্রমিক প্রতিক্রিয়া এবং সমীক্ষাও নিতে পারে।
এই Smart Edu প্ল্যাটফর্ম বর্তমানে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ দলের পরামর্শে ক্লাউড অবকাঠামোর ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের প্রান্তিক অবস্থান বা ইন্টারনেট সংযোগ নির্বিশেষে তাদের শিখতে সক্ষম করে এবং শিক্ষাকে ইন্টারেক্টিভ এবং প্রাণবন্ত করে তোলে।
মহামারীর এই সময়ে এনআইএসটি প্রকৃতপক্ষে দেশে শিক্ষাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। স্মার্টএডু প্ল্যাটফর্ম, ইন্টারনেট এবং কম্পিউটার/ল্যাপটপ করোনা অতিমারিকালেও এনআইএসটির শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করতে পারেনি। তাই হতে পারে অনলাইন শিক্ষায় অনগ্রসরমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। বিস্তারিত : ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ১৯/১, পশ্চিম পান্থপথ, ঢকা। ফোন: ০১৭১৩৪৯৩১৯৬, ওয়েব: www.nist.edu.bd