প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
সোহানার মায়ের শরীরটা সকাল থেকে কেমন জানি গরম গরম লাগছে। প্রতিদিনের মতোই তিনি ফজরের নামাজ পড়ে কোরআন নিয়ে বসলেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে শরীরের তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পেলো, সাথে পুরানো সেই শ্বাসকষ্ট কিছুটা বেড়ে গেলো। পরিবারের লোকজন বিষয়টি বুঝতে পেরে কেমন জানি দূরে দূরে থাকছে। কিছুই বুঝতে পারছেন না তিনি। এর আগেও তো সোহানার মায়ের বহুবার জ্বর, সর্দি, কাশি হয়েছে। গতবারও তো সোহানার মায়ের ম্যালেরিয়া হয়েছিল। সোহানার বাবা নিজে হাসপাতালে থেকে সেবা-যত্ন করেছে। একই বেডে ঘুমিয়েছে। এবার পরিবারের ব্যবহার কেমন জানি এলোমেলো মনে হচ্ছে। বাড়ি জুড়ে হৈ চৈ নেই, কারো মুখে হাসি নেই, ডাক্তার ডাকার খবর নেই, পাড়া-পড়শির আনাগোনা নেই। ইতিমধ্যেই খবর ছড়িয়েছে পৃথিবীকে এক মহামারী আক্রমণ করেছে। প্রতিদিনই মৃত্যুর হার বাড়ছে। পৃথিবীতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বাবা শুনেছে, এই রোগ নাকি একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়ে।
পরিবারের সবাই মাকে আলাদা করার জন্যে আলাপ করছে। মা সবই শুনছেন এবং ভাবছেন, এই কি তাহলে মমতা? কিছুক্ষণ পর বাবা মাকে দূর থেকে ইশারা দিয়ে বললেন, মা যেন পাশের আলাদা ঘরে চলে যায়। মাও তাই করলেন। বাবা বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। সোহানার মায়ের আগের থেকে শ্বাসকষ্ট ছিল এবং একা ঘরে থাকতে ভয় পেতেন। ভয়ে তার হাত-পা কাঁপছিল, শ্বাসকষ্টও বেড়ে গেল। প্রচণ্ড পানির পিপাসা পেলো, তিনি পানি পানি বলে চিৎকার করলেন। কিন্তু অজানা সেই ভয়ে কেউই পানি নিয়ে আসলো না। রাত গড়িয়ে সকাল হলো। ওই ঘর থেকে কেমন জানি কোনো শব্দ আসছে না। কাজের বুয়া সকালে নাস্তা নিয়ে গেলো। কিন্তু ততক্ষণে মেঝেতে পড়ে আছে সোহানার মায়ের নিথর দেহ। হৈ চৈ পড়ে গেলো। ডাক্তারকে ডাকা হয়েছে, মুখের লালা নিয়ে টেস্ট করা হলো। পরদিন নেগেটিভ ফলাফল আসলো। সোহানার মা জিতে গেলেন। কিন্তু অজানা এক মহামারী করোনার কাছে হেরে গেলো মানবতা। পরিবার পরিচয় দিলো নির্মমতার।