শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২১, ০০:০০

হেলাফেলার লকডাউনে চলবে না
অনলাইন ডেস্ক

রাজধানীর কোল ঘেঁষা রূপগঞ্জের এক আধুনিক যুবক এ কী বলছেন! ‘করোনা আছে বিশ্বাসই করি না’ আমার গ্রামের ভাতিজার মুখে এমন কথা শুনেতো আমি রীতিমত হতবাক! আসলে গ্রামের অনেক মানুষই এমন কথা বলে। তাই শহর থেকে কোভিডে আক্রান্ত এখন গ্রামের মানুষ বেশি। দেশজুড়ে ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ভেরিয়েন্ট। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীদের অর্ধেকেরও বেশি গ্রামের মানুষ। হাসপাতালে আগত অধিকাংশ রোগীর অবস্থাই নাজুক। করোনার তীব্রতা অনেক বেশি হলেই হাসপাতালে আসছেন এসব রোগী। সারাদেশে আক্রান্তের হার প্রায় ৩০ শতাংশ। কোনো কোনো জেলায় তা ১০০ শতাংশও পাওয়া গেছে, যা কিনা রীতিমত ভয়ংকর!

দেশে কোভিড রোগীর চাপ বাড়ায় হাসপাতালগুলোর করোনা ইউনিটে অক্সিজেন ও আইসিইউর জন্যে হাহাকার চলছে। করোনা ওয়ার্ডে মারা যাচ্ছে রোগী। রোগীর স্বজনদের আর্তনাদ আর আহাজারি হাসপাতালের পরিবেশ ভারী করে তুলেছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ কমাতে না পারলে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে পড়বে। নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে। কারণ যে হারে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে সেই হারে কোভিড চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ অবস্থায়ও মানুষ সচেতন হচ্ছে না। মৃত্যুর সংখ্যা টানা কয়েকদিন ধরেই একশ’র ওপরে থাকছে। দুইশ’ ছুঁই ছুঁই। কোভিড শুরুর পর থেকে গত ১৫ মাসে এমনটি দেখা যায়নি। বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে কঠিন ও ভয়ঙ্কর সময় পার করছে দেশ। একসঙ্গে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের হার আগে কখনোই এত বেশি দেখা যায়নি। ঢাকার বাইরের জেলা শহরগুলোতেও করোনা ভাইরাস এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। এমনকি কিছুকাল আগে গ্রামাঞ্চলেও এত করোনা রোগী শনাক্ত হননি।

এমন পরিস্থিতিতে সরকার কঠোর লাকডাউন দিতে বাধ্য হয়েছে। লকডাউনের জন্যে সরকারকে দুষছেন অনেকেই। কেউ কেউ বলছেন গরিবের পেটে নাকি লাথি মারা হচ্ছে। লকডাউনেতো সরকারেরই বেশি ক্ষতি। অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয় দেশ। সব কিছু স্থবির হয়ে পড়ে। তা ছাড়া দেশের জনগণের ক্ষতিতো সরকারেরই ক্ষতি। এটা সত্য যে, লকডাউনের ভেতর দিন এনে দিন খাওয়া শ্রমজীবী মানুষেরই কষ্ট বেশি। তাদের খাদ্য সংকটও দূর করা দরকার। মহামারীর এই সঙ্কটকালে একজন মানুষও যেন অভুক্ত না থাকে, একজন অসুস্থ মানুষও যেন চিকিৎসা না পেয়ে মারা না যায়। সেজন্য অবশ্যই সরকারকে সজাগ থাকতে হবে। মানুষ যেন মনুষ্যত্ববোধের কল্যাণধারা থেকে বঞ্চিত না হয় সেটা সরকার যেমন ভাববে তা দেশের বিত্তবানদেরও ভাবনায় থাকা দরকার। এ দুঃসময় কিন্তু থাকবে না। আঁধার কেটে যাবেই, তখন যেন আমরা উঁচু গলায় বলতে পারি, আমরা মহামারী অতিক্রম করেছি পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধে, চিরায়ত মানবিকতায়, মানবসম্মত মনুষ্যত্ববোধে। যাদের যেমন সামর্থ্য আছে তারা তেমনি ভাবে অসহায় মানুষ এবং স্বজনদের পাশে থাকতে হবে। একটা উদাহরণ এখানে আমাকে টানতে হচ্ছে। সেদিন জরুরি প্রয়োজনে বাসা থেকে রিকশায় মতিঝিল যাচ্ছিলাম। রিকশা চালকের বয়স একটু বেশিই। ৬০-এর কম নয়। হঠাৎ দেখি রিকশা পাশে দাঁড় করালেন। রাস্তায় শুয়ে থাকা এক অসুস্থ বৃদ্ধকে তিনি পকেট থেকে ১০ টাকা বের করে দিলেন। আসলে অনেকের কাছ থেকেই আমাদের অনেক কিছু শিখতে হয়। সেদিন তার কাছেও কিছু শিখলাম। আমরা এই রিকশাওয়ালা ভাইয়ের মতো যার যার মতো করে এমন দুঃসময়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞা করতে পারি।

বর্তমান নভেল করোনার যে ভেরিয়েন্ট ছড়াচ্ছে তাতে কঠোর লকডাউনে যাওয়া ছাড়া সরকারের কোনো গতি ছিলো না। মানুষের জীবন বাঁচাতে চাই সর্বাত্মক প্রতিরোধ। আর সেজন্যে লকডাউনের শতভাগ সফলতা নিশ্চিত করতে হবে। এতে প্রশাসনের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি প্রতিটি নাগরিকেরও করণীয় রয়েছে। কঠোর লকডাউনের পরও জনগণ কিন্তু সচেতন নয়। অনেকে মাস্ক ব্যবহার করেন না। তাই অসচেতনতায় কোভিড শহর ছেড়ে গ্রামগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা মনে করি লকডাউনের ব্যাপারে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। নইলে যে হারে করোনা ভাইরাস ছড়াচ্ছে তাতে হাসপাতালগুলোতে আর চিকিৎসার জায়গা থাকবে না। ভারতের চেয়ে ভয়াবহ হতে পারে বাংলাদেশের পরিস্থিতি। জনগণ যত সমালোচনাই করুক লকডাউনে শিথিলতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমাদের দেশেই কেবল ঢিলেঢালা লকডাউন পলিত হয়। এদেশে হুঙ্কার বেশি; কাজ কম। বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই নতুন করে লকডাউন চলছে। আমাদের দেশে রাস্তা-ঘাটে খাবারের দোকান বসে। ভারতের কিছু অঞ্চল ছাড়া সারা বিশে^ এমনটা আর কোথাও নেই। খাবারের হোটেলে ভিড় হচ্ছে বেশি। লকডাউনে খাবারের দোকান থেকে খাবার আনার নিয়ম আছে, তাই এই সুযোগে হোটেলে খাবার আনতে গিয়ে জটলা করছে। চায়ের আড্ডায় মানুষ যাচ্ছে। খাবারের দোকান (হোটেল) খোলা রাখা সরকারের সমীচীন হচ্ছে না। কাঁচাবাজার, মুদি দোকান, ঔষধ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খোলা রেখে কঠোর লকডাউনে সরকার না গেলে আরও অনেক বেশি ক্ষতি হবে। জরুরি কাজে কিছু পরিবহন ও নিয়ম মেনে সীমিত রিকশা চলতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে শিল্পকারখানা, গার্মেন্টস বন্ধ রাখা উচিত। অন্তত তা ১৫ দিন। তাতে হয়তো অনেক বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে না। ১৫ দিন কঠোর লকডাউনে গেলে কোভিড পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। আর সরকারকে তা-ই করা উচিত।

দেশে কঠোর লকডাউন চলছে এটা বলা যাবে না। লকডাউন চলছে অনেকটাই ঢিলেঢালা। এই লকডাউনে কিছুটা কাজ হয়েছে, পুরোটা নয়। দেশের মানুষ বড় বেশি দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিচ্ছে। বাজারে, রাস্তায়, চা-পানের দোকানে অড্ডা জমছে। মিটিং মিছিলও হচ্ছে কোথাও কোথাও। বিয়ে-শাদী, এমনকি শুটিংয়ের খবরও ছেপেছে আমাদের পত্রিকাগুলো। কী অদ্ভুত দেশে আমরা বাস করি, লকডাউন কেমন হচ্ছে এটি দেখার জন্যে রাস্তায় দলে দলে মানুষ বেরিয়ে আসে। এখনও ভয়ঙ্কর করোনা ভাইরাস বিষয়ে মানুষ যেন হেলাফেলা করে চলছে। আসলে এভাবে হবে না, কঠোর লকডাউনে গিয়ে আইন অমান্যকারীদের কাছ থেকে অধিক অর্থদ- আদায় করতে হবে। প্রয়োজনে সে অর্থ করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ব্যয় করা যেতে পারে। সাজা বাড়লে জনগণ সচেতন হবে। পাশের দেশ ভারতের মানুষও হেলাফেলা করে সর্বনাশ করেছে। সেখানে ৪ লাখেরও বেশি লোক করোনায় মারা গেছে। আক্রান্ত হয়েছে সাড়ে তিন কোটি মানুষ। ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সরকার কঠোর হয়েছে। অসচেতন মানুষকে অর্থদ-সহ গণহারে পিটুনি দিয়ে আতঙ্ক তৈরি করেছে। আমাদের দেশেও তা করা উচিত। মনে রাখতে হবে, মানুষের জীবন রক্ষার জন্যে কঠোর হওয়া ছাড়া বিকল্প নাই। সে সঙ্গে নিষ্ঠুরও হতে হবে। জীবিকার একটা বিষয় আছে এটা আমরা বুঝি, এটাও সত্য মানুষের জীবন আগে। জীবন না বাঁচলে জীবিকা দিয়ে কী হবে? নিয়ম মাফিক ১৫ দিন কিংবা তার কিছু বেশি সময় দেশ কঠোর লকডাউনে গেলে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে সারাদেশ তার আওতায় আনতে হবে। আগত ঈদকে ঘিরে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপার সরকারকে এখনই নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

তবে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। এভাবে চলতে থাকলে সরকারের হাতে আর নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। লকডাউনকে উপেক্ষা করে দায়িত্বহীন হয়ে ঘরের বাইরে গেলে এবং যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করলে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি সঙ্কটাপন্ন হয়ে উঠতে পারে। সেজন্যেই লকডাউনের বড় ধরনের সফলতা অত্যাবশ্যক। যৌক্তিক কারণ ছাড়া ঘর থেকে মানুষ বের হচ্ছে। পুলিশের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে যে, প্রধান প্রধান সড়কগুলোর চেয়ে অলিগলিতে মানুষের চলাচল ছিল বেশি। গলিতে আড্ডাও দিতে দেখা গেছে অনেককে। এটিই আশঙ্কাজনক ও হতাশার। কোভিড-১৯ আছে এটা তারা বিশ^াসই করে না। তাই নিয়ম মানে না। মাস্ক পরে না। যত্রতত্র নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়ায়। নতুন করে কোভিড যেখানে সারা বিশ^কে কাঁপিয়ে দিচ্ছে, মানুষ মরে সাফ হয়ে যাচ্ছে, সেটা তাদের চিন্তাতেই নেই। নিয়ম না মানার কারণে আমাদের যা হবার তা-ই হচ্ছে। প্রতিদিন মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, অক্সিজেন, ভেন্টিলেশন, আইসিইও পাচ্ছে না। বহু মানুষ চিকিৎসা না পেয়েও মরছে।

লকডাউনের ব্যাপারে মানুষ সরকারকে দুষছে। লকডাউনে গেলে সরকারের কি লাভ? লকডাউনে দেশের অর্থনীতির চরম ক্ষতি হয়। লকডাউন চলতে থাকলে যে ক্ষতি হবে সে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে কিন তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। তবুও মানুষের জীবনের কথা ভেবে সরকারকে লকডাউনের কথা ভাবতেই হয়। আসলে লকডাউনেও দেশটা লক নেই, দেশের অজ্ঞ মানুষ লকডাউন না মেনে যত্রতত্র মাস্কবিহীন চলাফেরা করছে। এ পরিস্থিতিতে লকডাউন যে কারণে দেয়া হয়েছে তার সফলতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। লকডাউনের পরও যদি কোভিড আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে তাহলে হয়তো সরকার আরও দীর্র্ঘ লকডাউনে যেতে পারে। তাতে দেশ এবং মানুষরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বেশি ক্ষতি হবে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলোর। তাই সবার উচিত সরকারের নির্দেশনা মানা এবং সকল স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা। সরকার কিন্তু বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনেই চলছে। এ নিয়ম আমাদের মানা উচিত।

তবে সরকারেরও কিছু ভুল আছে। তাতে খেসারতও দিতে হচ্ছে। আরও আগে থেকেই কঠোর লকডাউনে যাওয়া দরকার ছিলো। নিদেন পক্ষে কঠোর নিষেধাজ্ঞায় দেশ চললে করোনা এভাবে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তো না। সবইকে মাস্ক পরতে বাধ্য করা দরকার ছিলো। এদেশের মানুষ আসলে নিয়ম মানতে চায় না। তাদের নিয়ম মানতে বাধ্য করতে হয়। জরিমানা করে প্রয়োজনে পিটিয়ে নিয়ম মানতে বাধ্য করা দরকার ছিলো, যা কিনা অনেক দেশ করছে। এক পুলিশ বাহিনী দিয়ে আইন মানানো যাবে না। পুলিশে লোক স্বল্পতা রয়েছে। তা ছাড়া পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার বাইরেও অন্য কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। এ ক্ষেত্রে যৌথ বাহিনী নামানো প্রয়োজন। অবশ্য মাঠে সেনাবাহিনী আছে, তাদের আরও দায়িত্ব দিতে হবে। তাদের কঠোর হতে নির্দেশ দিতে হবে।

আসলে আমরা সতর্ক নই বললেই চলে। লকডাউনেও হাট-বাজার পুরোদমেই চলছে। গার্মেন্টস্, কলকারখানা নিয়মনীতি না মেনেই জমজমাট। রাস্তাঘাট, মসজিদে, বাজারে মানুষ। জনসমাগম সবখানেই হচ্ছে। মানুষের হুঁশ নেই। টাটকা তরিতরকারী, মাছ, মাংস কিনতে মানুষ বাজারে ছুটছে। চায়ের দোকানের আড্ডাও বেশ জমছে। লোক জড়ো করে দান-খয়রাত, ফটোসেশন কোনোটাই বন্ধ নেই। অন্ধ মানুষ, বন্ধ বিবেক। পত্র-পত্রিকায় দেখছি, কর্মহীন মানুষ কোথাও কোথাও খোলা মঠে জুয়ার আড্ডায়ও মেতেছে। মানুষ যেন আগের চেয়ে বেশ সচল। এদেশে কি আইন-কানুন মানে কেউ? আইনকানুন মানাতে হয়। যারা মানাবার দায়িত্বে থাকেন তাদের অনেকে ঘরে আরাম-আয়েশ করেন। কোভিডে জীবনের ঝুঁকি নিতে চাননা। যাক না সব গোল্লায়, তাতে তাদের কি। এই অবস্থা।

জবাবদিহিতাতো নেই এদেশে। সরকার যখন লকডাউন কিংবা কোনো জরুরি অবস্থার কথা ভাববেন তখন সরকারের আরেকটা বিষয় ভাবনায় থাকা জরুরি। সেটি হচ্ছে আইন মানতে বাধ্য করার মতো লোক রাস্তায় নামানো। পাঠক মনে আছে, নিশ্চয় ম্যাজিস্ট্রেট রোকন-উদ্দৌলার কথা। তিনি আমার খুব কাছের মানুষ। পারিবারিক সম্পর্কও রয়েছে তাঁর সাথে। তাঁর কথা এ কারণে এ লেখায় টানলাম, এমন সৎ মানুষ সরকারে অনেক আছেন। সরকারে যারা আছেন তারা সবাই অসৎ নন। বেছে বেছে এলাকাভিত্তিক জেলা কিংবা উপজেলা ভিত্তিক এসব সৎ মানুষকে মনিটরিংয়ের দায়িত্বে রাখা গেলে ফলাফলটা যে ভালো হবে সেটা নিশ্চিত।

আসলে আমাদের ভাবনাটা কম। সবার কথাই ভাবতে হবে। লকডাউনতো মানুষের জীবন রক্ষা করার জন্যই। তাই মানুষের সার্বিক ভাবনাটা সরকারকে ভাবতেই হবে। বিশেষ করে দিন আনে দিন খাওয়া মানুসের কথা। এ সময় তাদেরই বেশি কষ্ট হয়। যারা রাজনীতি করেন তাদের বলছি। রাজনীতির খাতায় নাম লেখাতে পারলেতো এদেশে কামাই-রোজগার বেশ ভালোই হয়। তবে সব রাজনৈতিক নেতার ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। গুণী, সৎ, জনদরদী নেতাও আছে অনেক। যারা এপথে-ওপথে কামাই রোজগার করেন তাদের বলছি। দয়া করে জনগণের কথা ভাবুন একটু। লকডাউনে গরিবের অনেক কষ্ট হবে। না খেয়ে থাকবে অনেকে। তাদের সীমাহীন ধনভাণ্ডার থেকে কিছু দান-খয়রাত করবেন প্লিজ। যেভাবে কোভিডে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে আর মানুষ মারা যাবার ঘটনা ঘটছে তাতে সরকারের লকডাউন না দেয়া ছাড়া উপায় ছিলো না। লকডাউনে সরকার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই দেশের স্বার্থে সরকারকে সহায়তা করুন। যার যতটুকু সঙ্গতি আছে সে অনুসারে পাশে থাকুন।

মসজিদ উপাসনালয়গুলোতেও আমরা ভিড় করছি। অসাবধানতা অবলম্বন করছি। ইসলাম ধর্মে কিন্তু এসব রোগ-বালাইয়ের ব্যাপারে স্পষ্টই আমাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আল-কোরআনে মহামারী হলে যে যার স্থানে থাকার কথা বলা আছে। অন্য ধর্মেও রোগের ক্ষেত্রে সতর্ক করা আছে। প্রয়োজন না হলে ক’দিন নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, অন্যের জন্য ঘর থেকে বাইরে না যাওয়াই ভালো। প্রয়োজন থাকলে কী আর করা! মনে রাখবেন, এ সমস্যা কিন্তু অনেক দিন ধরে থাকবে না। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করবেনই। কিছুদিন যারা সতর্ক থাকতে পারবেন, সবকিছু ঠিকঠক মেনে চলবেন তারা হয়তো এ বিপদ থেকে অনেকটা মুক্ত থাকতে পারবেন। তবে আমরা বেশিই অসাবধান মনে হয়। কোনো কিছুকেই গুরুত্ব দিতে চাই না কখনো। কোনো কিছু মানতে চাই না। এ অবস্থায় কি আমাদের রক্ষা হবে?

করোনায় করুণা করছে না কাউকে। সবচেয়ে ধনী দেশগুলো করোনায় কুপোকাত। উন্নত প্রযুক্তি, গবেষণা, করোনার ভ্যাকসিন, কোনোটাই কাজে আসছে না। মানুষ মরছে প্রতিদিন। আমাদের আরও প্রস্তুত থাকতে হবে। আমরা কতটা প্রস্তুত? আর কতটা সতর্ক? সতর্কতা খুবই কম। মানুষ কথা শুনতেই চায় না। সরকারের নিয়মের তোয়াক্কা করে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে না। তাতে অনেক ভয়ঙ্কর রূপে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে। তাকে সামাল দেয়া কঠিনই হবে। এখনই তা হচ্ছে। সতর্কতার অভাবে করোনাভাইরাসে সারাদেশে অনেক মানুষ এমনকি বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অনেক ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে। দিনদিন বাড়ছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা। অরক্ষিত অবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এ অবস্থায় হয়তো সামনে সুসংবাদ নেই। ভয়াবহ দিন আসছে। আক্রান্ত এবং মৃত্যুর মিছিলে অসংখ্য মানুষ যুক্ত হচ্ছে। এ সময় চিকিৎসকদেরই সবচেয়ে দরকার। চিকিৎসকরা যাতে সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত না হয়ে পড়েন সে ব্যাপারে সরকার সংশ্লিষ্টদের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। এ সময় তাদের নিরাপদ রাখা খুব জরুরি। তাই আগে চিকিৎসকদের বাঁচান। চিকিৎসক বেঁচে থাকলে রোগীদের বাঁচানো যাবে। দেশে চিকিৎসক সঙ্কট রয়েছে। গত দেড় বছরে ইন্টার্নি চিকিৎসকের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মেডিকেল কলেজগুলো সচল রাখা দরকার। নিয়ম মেনে তাদের পরীক্ষা নেয়া হলে এর ঘাটতি হয়তো হতো না। এ বিষয়টিও সরকারকে ভাবতে হবে। যেভাবেই বলি, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় আমাদের যুদ্ধে নামতে হবে। পরিস্থিতি সামাল দিতে নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করতে হবে। ঘুরতে না যাওয়ার, বেশি মানুষ এক জায়গায় না হওয়ার, চায়ের দোকানে না যাওয়ার, বেশি বেশি বাজার না করা, আড্ডাবাজি না করার চেষ্টা চালাতে হবে। করোনা নামক শত্রু এদেশে ঢুকে পড়েছে। হালে ভয়ঙ্কর ডেল্টা ভেরিয়েন্ট দেশে ঢুকে পড়েছে। সবাই সতর্কতার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে না পড়লে আমরা হয়তো এ যুদ্ধে হেরে যাব। আসুন, সবাই সতর্ক হই। যে কোনো মহামারীতে সতর্কতার বিকল্প নেই। মনে রাখবেন, ভাইরাস থেকে রক্ষার একটাই পথ-সতর্কতা।

লেখক : মীর আব্দুল আলীম, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সমাজ গবেষক। [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়