প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
গত ২০ অক্টোবর বুধবার মির্জা জাকির চাঁদপুর কণ্ঠে একটি সংবাদ পরিবেশন করেছেন। প্রথম পৃষ্ঠায় অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে ‘বাড়ছে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি : চাঁদপুরে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের দুই-তৃতীয়াংশ বছরের পর বছর একই কর্মস্থলে’। এ সংবাদটি পাঠ করে পাঠক সমাজ কম-বেশি বিস্মিত হয়েছেন। জেলার প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ নিয়ে নেতিবাচক ধারণা জন্মেছে, যেটা নিঃসন্দেহে স্বাভাবিক। সরকারি কর্মকর্তাদের একই কর্মস্থলে তিন বছরের অধিক সময় থাকার নিয়ম না থাকলেও তদবিরের জোরে কিংবা প্রভাবশালী কারো না কারো পছন্দের কারণে গুডবুকে থাকার সুবিধায় চাঁদপুর জেলায় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের অনেকেই চার থেকে ৮ বছর কিংবা ততোধিক সময় ধরে অবস্থান করছেন।
উক্ত সংবাদে প্রকাশ, চাঁদপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাজমা বেগম অদৃশ্য ক্ষমতাবলে প্রায় আট বছর একই কর্মস্থলে রয়েছেন। তার অধীনস্থ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসাররা মাঝে মাঝে বদলি হলেও তিনি বদলি হচ্ছেন না। ফরিদগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসারের চলতি দায়িত্বে চার বছরের বেশি সময় ধরে আছেন সহকারী শিক্ষা অফিসার মনিরউজ্জামান। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের অনেকেই ঘুরে-ফিরে একই উপজেলায় দীর্ঘদিন অবস্থান করে কতিপয় শিক্ষক নেতার সাথে গড়ে তুলেছেন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এজন্যে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে নানা কারণে নিরীহ শিক্ষকদের ওপর খগড়হস্ত হলেও শিক্ষক নেতাদের বিদ্যালয়ে গিয়ে তাদের দেরিতে আসা, এমনকি অনুপস্থিতির জন্যেও কোনো কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ করে না।
মূলত বদলি বাণিজ্য করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্যেই শিক্ষা অফিসারদের কেউ কেউ একই কর্মস্থলে অবস্থান করেন দীর্ঘদিন। এদের সাথে মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে সংশ্লিষ্ট থাকেন কতিপয় শিক্ষক নেতা। যে সকল নেতা সিনিয়র হওয়ার কারণে তারা এবং অন্য কিছু সিনিয়র শিক্ষক যুগের পর যুগ একই কর্মস্থলে শিক্ষকতা করছেন, যারা ক্লাস ও কর্মস্থলে ফাঁকির মতো কর্মকা- চালিয়ে যান হরহামেশাই। শূন্যপদের বিপরীতে নিয়মিত বদলিতে সিনিয়র প্রার্থীর পদায়নের নিয়ম থাকলেও তা কেবল কাগজে-কলমে থাকছে। বদলিতে কোন্ শিক্ষক কত টাকা বেশি দিতে পারেন বা পারবেন, তা-ই দেখে শিক্ষা অফিস।
কেবল শিক্ষকদের বদলি বাণিজ্য নয়, স্কুলপ্রতি বরাদ্দকৃত ক্ষুদ্র মেরামত, স্লিপ বরাদ্দ, ভবন নির্মাণসহ বরাদ্দের সবখাতেই পার্সেন্টিজ নেয়ার অভিযোগ আছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে। এমনকি কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামতের টাকা প্রয়োজন না হলেও পার্সেন্টিজের শর্তে টাকা বরাদ্দ করে কোনো কোনো শিক্ষা অফিস। সংবাদটিতে আরো কিছু অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শাহাবউদ্দিন বলেছেন, ইতোমধ্যে এ জেলার কিছু শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বেচ্ছায় বদলির আবেদন করেছেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সে আবেদনে সাড়া দেয়নি। আবার এটাও ঠিক, কেউ কেউ নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকতে চাচ্ছেন। আশার কথা এই যে, বদলি শুরু হয়ে গেছে।
চাঁদপুরের আটটি উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের অধিকাংশেরই একই কর্মস্থলে বদলিবিহীন অস্বাভাবিকভাবে দীর্ঘদিন অবস্থানের বিষয়টি সত্যিই প্রশ্নবোধক। করোনার অজুহাতে বদলি হননি অনেকেই। করোনার পূর্বে অর্থাৎ ২০১৯ সালে যাদের বদলি হওয়াটা যুক্তিসংগত ছিলো, সেটা হলো না কেন? নিশ্চয়ই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রভাবিত হয়ে সেটি করেনি। এটিও বড় অনিয়ম। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এ অনিয়ম রুখবে কে?