কুমিল্লার ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা ॥ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ভিসি

শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ ব্যাপক বিক্ষোভে ফেটে পড়ার আশঙ্কায় কুমিল্লার ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে চরম উত্তেজনা ও সঙ্কটের সম্মুখীন। অস্থিরতা শুরু হয়েছিল যখন ছাত্ররা অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে তাদের শিক্ষা চালিয়ে যাওয়ার জন্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল। ইতোমধ্যেই দুর্নীতি সহ নানা বিতর্কের কারণে প্রতিষ্ঠানে উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

ট্রাস্টি বোর্ডের (বিওটি) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুদকে তিনটি গুরুতর মামলা বিচারাধীন থাকায় ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় একাধিক আইনি লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছে। এই আইনি চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, প্রতিষ্ঠানটি স্থিতিশীল রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেলের প্রভাবের কারণে, ভিসি তার একজন শক্তিশালী সমর্থক বলে মনে করা হয়।

বর্তমান ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) সুরজিত সর্ববিদ্যাকে নিয়োগে সব নিয়মণ্ডনীতি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে বিওটি চেয়ারম্যান ও ব্রিটেনে প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ এহসানুল হকের বিরুদ্ধে। সর্ববিদ্যা কোষাধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেন, যিনি অসংখ্য দুর্নীতির অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের পাশ কাটিয়ে প্রায় এক দশক ধরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছেন। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং কর্তৃত্ববাদের কারণে অনেক শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারী প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করেন। ছাত্র, অভিভাবক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা তার শাসনের অধীনে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে।

২০২২ সালে, কোতোয়ালি সদর দক্ষিণ থানায় দায়ের করা একটি চলমান মামলা থাকা সত্ত্বেও, সর্ববিদ্যাকে যথেষ্ট অর্থের বিনিময়ে সরকারিভাবে স্বীকৃত ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এই নিয়োগকে দুর্নীতির এক জঘন্য উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সর্ববিদ্যার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল আত্মসাৎ, অবৈধ উপায়ে পদোন্নতি অর্জন এবং তার যোগ্যতা জাল করার অভিযোগ আনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং অফিসার শিহাবুদ্দিন আহমেদ ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডের সহায়ক হিসেবে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ভিসির কর্মকাণ্ডের ফলে অনেক সৎ, যোগ্য এবং মেধাবী শিক্ষক ও কর্মচারীর প্রস্থান হয়েছে। যার মধ্যে একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল হক, যিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। দুর্নীতির প্রতিবাদে তিনিও প্রতিষ্ঠান ছাড়ার পথে । বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর স্পষ্ট নির্দেশ সত্ত্বেও একজন কর্মকর্তা তার বকেয়া বেতন পাননি।

চলমান সঙ্কটে শিক্ষার্থীরা ক্রমশ হতাশাগ্রস্ত হচ্ছে, যা শিক্ষকতা ও প্রশাসন উভয়কেই মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। তারা এখন ভিসি সর্ববিদ্যার অপসারণের দাবি করছেন, যাকে তারা সাবেক রাজনৈতিক শাসকদের সাথে যুক্ত একজন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি হিসেবে দেখেন। উপরন্তু, তারা বিওটি পুনর্গঠন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্যে সমস্ত অনিয়ম ও দুর্নীতির স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

কোনোরূপ বিশৃঙ্খলা ও সংঘাত ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি প্রয়োজন। কেউ কেউ এমনও পরামর্শ দিয়েছেন যে, শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং পরিস্থিতির অবনতি রোধ করতে স্থানীয় সেনা কমান্ডকে সতর্ক করা উচিত।