মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

প্রবাসে যাওয়ার ২৭ দিন পর লাশ হয়ে ফিরলো ফরিদগঞ্জের মিলন
প্রবীর চক্রবতী ॥

কলেজে নিয়মিত ক্লাস করার সাথে বন্ধুদের সাথে দুরন্ত আড্ডা দিতো সে। ছিল ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় উপস্থিতি। প্রিয় ছিল কলেজ ক্যাম্পাস। এসএসসি পাস করে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল সে। তারপরও পরিবারের প্রয়োজনে জীবিকা নির্বাহের তাগিদে মাত্র ২২ বছর বয়সেই পাড়ি জমান প্রবাসে। কিন্তু হাসিমুখে প্রবাসে গেলেও যাওয়ার ২৭ দিনের মাথায় লাশ হয়ে ফিরলো ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার মিরপুর গ্রামের নাছির উদ্দিন মিলন তালুকদার (প্রিন্স)। ১৬ আগস্ট বুধবার বিকেল ৩টার দিকে তার লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স বাড়িতে পৌঁছলে মা-বাবাসহ নিকট স্বজনদের আজাহারিতে ভারী হয়ে উঠে পরিবেশ।

নাছির উদ্দিন মিলন তালুকদারের পিতা শাহাদাত তালুকদার জানান, তার দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে মিলন সকলের বড়। চলতি বছরের ২০ জুলাই সে সৌদি আরবের মক্কায় কর্মের সন্ধানে যায়। সেখানে তার চাচা শামছুদ্দিনই তাকে ভিসার ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু গত ১ আগস্ট সে ব্রেন স্ট্রোক করে এবং ৩ আগস্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

তিনি জানান, বিদেশে যাওয়ার পর তার চাকুরি হলেও আকামা মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত পায় নি। ছেলে আমার প্রথম সন্তান। সে ছিল উত্তরাধিকারী। এভাবে অকালে ছেলেকে হারাবো চিন্তাও করতে পারি নাই।

মিলনের মা লাকি আক্তার জানান, ঘটনার আগেরদিন মিলন তার সাথে ফোনে কথা বলেছে। নেটওয়ার্কের কারণে ঠিকমতো কথা বলতে পারিনি। পরদিন জানতে পারি সে বাথরুমে পড়ে গিয়ে ব্রেইন স্ট্রোক করে। পরে দুইদিন হাসপাতালে থাকার পর মৃত্যুবরণ করে। কাগজপত্র পাঠাতে বলেছি, সেগুলো আসলে চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানতে পারবো আসলে তার মৃত্যু কীভাবে হয়েছে।

মিলনের চাচাতো ভাই হাবিবুর রহমান জানান, মিলন সর্বদাই বাড়ির পরিবেশ গরম রাখতো। ফ্রি ফায়ার গেমস খেলার প্রতি ঝোঁক ছিল। সে বাড়িতে যতক্ষণ থাকতো এই গেমস নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। ১৯ জুলাই বাড়ি থেকে চলে যায়, ২০ জুলাই বিমানযোগে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে গমন করে। কে জানতো বিদেশে যাওয়ার মাত্র ১১ দিনের মাথায় ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে এবং পরপারে পাড়ি জমায়। ছাত্রলীগের রাজনীতি করতো মিলন। তাই কলেজ ক্যাম্পাস ছিল তর রাজনীতির অন্যতম প্রিয় স্থান। জীবিকার জন্যে সবকিছু ছেড়ে প্রবাসে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরতে হলো তাকে।

সে আরো জানায়, মঙ্গলবার রাতের ফ্লাইটে ঢাকায় লাশবাহী কফিন আসে। প্রায় তিনটার দিকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স গাড়ি পৌঁছে যায়।

সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, মাত্র এক মাস আগেই যে বাড়িটি মিলনের আনন্দ উল্লাসে মাতোয়ারা থাকতো, আজ সেখানে সুনশান নিরবতা। বাড়ির পাশেই বাড়ির মুরুব্বী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি লোকমান তালুকদার সামিয়ানা টানিয়ে বাড়ির ছেলের কবর তৈরির কাজ তদারিক করছেন।

এদিকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স মিরপুর তালুকদার বাড়িতে পৌঁছার পর হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতরাণা ঘটে। ভাই-বোন মাসহ আত্মীয়-স্বজনদের আহাজারিতে পুরো বাড়িতে শোকের মাতম চলে। সদ্য কিশোর পেরোনো যদিও পাসপোর্ট করতে গিয়ে বয়স বাড়ানো হয়েছে, একাদশ শ্রেণির ছাত্র মিলনের এমন মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারছে না। ফ্রিজিং অবস্থায় কফিনের ঢাকনা বেশিক্ষণ খোলা রাখা যাবে না, তাই কফিনের উপর হাত বুলিয়ে বুকে শান্তনা পাচ্ছে বাড়ির ছোট থেকে বড় সকল শ্রেণির লোকজন। একদিকে পুরুষদের দাফনের ব্যবস্থা, অন্যদিকে নারীদের মধ্যে মা-বোনসহ অন্যদের শান্তনা দেয়ার চেষ্টা। আবার শিশু কিশোররা ঘিরে রয়েছে ভিতরে নির্জীব মিলনের কফিনটি। এর মধ্যে কয়েকজনকে দেখা গেছে অঘোরে চোখের জল ফেলতে। হয়ত সে বন্ধু বা সহপাঠী বা নিকট স্বজন খেলার সাথী।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়