প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
![বরফের অভাবে চাঁদপুর মাছঘাট ও হাট-বাজারে নষ্ট হচ্ছে চাষের মাছ](/assets/news_photos/2022/10/11/image-24415.jpg)
মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান শুরু হওয়ায় প্রশাসনের নির্দেশে চাঁদপুরের সকল বরফ কল বন্ধ রয়েছে। বরফের অভাবে চাঁদপুর মাছঘাটসহ জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে চাষের ও দেশীয় প্রজাতির মাছ কেনাবেচায় ধস নেমেছে। মাছের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় জনসাধারণের মাঝে বেড়েছে হতাশা। বরফ শূন্যতায় সংরক্ষণ করতে না পারায় অনেক মাছ পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ক্রেতা সাধারণ বাধ্য হচ্ছেন পচামাছ কিনে নিতে। এমন পরিস্থিতি যাচ্ছে গত ক’দিন যাবৎ। চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার নতুন রাস্তা, নতুনবাজার, পালবাজার, বিপণীবাগে বরফ ছাড়াই মাছ বিক্রি হতে দেখা যায়। ঘন্টার পর ঘন্টা পুকুর, ঝিল, খাল-বিল ও জলাশয়ে চাষ করা মাছ এখন একচেটিয়া বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এই জলাশয়ের মাছ সংরক্ষণে কোনো বরফ পাওয়া যাচ্ছে না বলে মৎস্য খামারী, আড়তদার ও মাছ বিক্রেতারা জানিয়েছেন।
ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশের নিরাপদে ডিম ছাড়ার জন্য সরকার ৭ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর ২২ দিন পদ্মা-মেঘনাসহ দেশের অন্যান্য নদী অঞ্চলে সকল প্রকার মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ কারণে ৭ অক্টোবর থেকে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় সকল প্রকার মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। প্রশাসনের নির্দেশে বন্ধ রাখা হয়েছে চাঁদপুরর সবক’টি বরফ কল।
বরফের অভাবে দেশের চাঁদপুর মাছঘাটে শরীয়তপুরসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল, বরগুনা, বাগেরহাট, খুলনা জেলাসমূহ থেকে চিংড়ি, দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ আসছে না। এছাড়া ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট অঞ্চলে হাওরের ও পুকুরের চাষকৃত রুই, কাতল, মৃগেল, পাঙ্গাশ, চিংড়ি, শিং, কই, পাবদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাঁদপুর মাছঘাট, ওয়্যারলেস বাজারে আনছে না মাছ ব্যাবসায়ীরা।
মা ইলিশ রক্ষা অভিযান চলাকালে বিগত বছরগুলোতে চাঁদপুর মাছঘাটে প্রতিদিন ৪/৫শ’ মণ চাষকৃত মাছ কেনাবেচা হতো। এছাড়া ময়মনসিংহ, সিলেট ও রাজশাহী বিভাগের জেলাসমূহ থেকে প্রচুর পরিমাণে চাষের মাছ চাঁদপুর মাছঘাট, ওয়্যারলেস বাজার, হাজীগঞ্জের ধেররার মাছ বাজারে প্রতিদিন শত শত মণ চাষের মাছ বিক্রি হতো। নদীতে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় চাষকৃত দেশীয় প্রজাতির মাছ কিনে জনসাধারণ নিজেদের চাহিদা মিটাতো। সকল বরফ কল বন্ধ রাখায় চাঁদপুর মাছঘাটে এবার অন্যান্য বছরের ন্যায় শরীয়তপুর, ফরিদপুর, বরিশাল, খুলনা, ময়মনসিংহ, সিলেট অঞ্চলের জেলাসমূহ থেকে চিংড়ি, রুই, কাতলা দেশীয় প্রজাতির মাছ আসছে না।
গতকাল সরেজমিন গেলে দেখা যায়, চাঁদপুর মাছঘাটে এখন মাছশূন্য অবস্থা বিরাজ করছে। শত শত আড়তদার, পাইকার, শ্রমিক, কর্মচারী সম্পূর্ণভাবে বেকার হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ শবেবরাত বলেন, এবার ইলিশের মৌসুম চাঁদপুর মাছঘাটে মন্দাভাব গেছে। বরফের অভাবে চাষের ও দেশীয় প্রজাতির মাছ না আসায় মাছঘাটে কেনাবচা একেবারে বন্ধ। বিগত বছরগুলোতে মা ইলিশ রক্ষা অভিযান চলাকালে চাষের ও দেশীয় প্রজাতির মাছের জন্য একটি বরফ কল খোলা রাখা হতো। এবার সকল বরফ কল বন্ধ রাখা হয়েছে। বরফ না থাকায় মাছ ব্যবসায়ীরা চাষের ও দেশীয় প্রজাতির মাছ নিয়ে চাঁদপুর আসছে না। চাষের ও দেশীয় প্রজাতির মাছের জন্য একটি বরফ কল চালু রাখার জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট দাবি করছি।
ওয়্যারলেস বাজারের মাছের আড়তদার হাবিব মেম্বার জানান এখানে অর্ধশত মাছের আড়ত রয়েছে। বরফ না থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে চাষের ও দেশীয় প্রজাতির মাছ আসছে না। চাঁদপুর শহরের বিপণীবাগ মাছ বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফারুক বকাউল জানান, বরফ না থাকায় বেশিরভাগ মাছ ব্যাবসায়ী মাছ আনছে না। শহরের পালবাজারের মাছ ব্যবসায়ী স্বপন বর্মন, আল আমিন হাওলাদার, মাসুদ হোসেন জানান, বরফ সমস্যায় এখানেও অনেক ব্যবসায়ী চাষের ও দেশীয় প্রজাতির মাছ আনছে না। নতুন বাজারের মাছ ব্যবসায়ী হযরত আলী গাজী ও পুরাণবাজারে মাছ ব্যবসায়ী বিল্লাল বলেন, বরফ সমস্যায় এখানকার অনেক মাছ ব্যবসায়ী মাছ কেনাবেচা বন্ধ রেখেছে।
পদ্মা-মেঘনায় মাছ ধরা বন্ধ, এর সাথে চাষের ও দেশীয় প্রজাতির মাছ না আসায় ক্রেতারা বিপাকে পড়েছে। যে অল্প পরিমাণ মাছ তা বেশি দামে বিক্রয় হচ্ছে। চাঁদপুর জেলা সদরসহ ৮ উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে বরফ না থাকায় মাছ বিক্রেতারা বিপাকে পড়েছে। একদিকে নদীতে মাছ ধরা বন্ধ অপরদিকে বরফের অভাবে বিভিন্ন জেলা থেকে চাষের ও দেশীয় প্রজাতির মাছ না আসায় জনসাধারণ চাহিদা মতো মাছ পাচ্ছে না। জেলার হাট-বাজার, মাছবাজারে আসা অল্প পরিমাণের মাছ জনসাধারণ বেশিমূল্যে কিনতে বাধ্য হচ্ছে। যোগান কম ও বেশি মূল্যের কারণে অনেকে মাছ না কিনে খালি হাতে বাড়ি ফিরছে।
জনস্বার্থে চাষের ও দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণে চাঁদপুরে একটি বরফ কল শর্ত সাপেক্ষ খোলা রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল।