প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
উপরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট-এমন প্রবাদ থাকলেও বাইরে সদরঘাট ভেতর ফিটফাট রয়েছে হাইমচর উপজেলার আলগী দুর্গাপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি। নরমাল ডেলিভারি ও গর্ভবতী নারীদের আপন ঠিকানা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। বাইরে থেকে দেখলে দেখা যায় পুরানো জরাজীর্ণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সেবার দিক থেকে ভেতরটা একবারেই অন্যরকম। গ্রামাঞ্চলে বিনাখরচে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান নিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়া সাধারণ মানুষের জন্যে অনেক বড় পাওয়া। দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ পরিবারের কষ্ট লাঘবে কাজ করে যাচ্ছে এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। যা প্রশংসার দাবিদার বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা সদর আলগী বাজার থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে গ-ামারা এলাকায় জরাজীর্ণ আলগী দুর্গাপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি অবস্থিত। প্রসূতি সেবাদানে এ কেন্দ্রটি অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। হাইমচর উপজেলাসহ ফরিদগঞ্জ, রায়পুর ও আশেপাশের গর্ভবতী ও প্রসূতিদের কাছে নিরাপদ সন্তান প্রসবের আস্থা হয়ে উঠেছে এ কেন্দ্রটি। যার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে পার্শ্ববর্তী এলাকায়ও।
গত মাসে ৩৭ জন নরমাল ডেলিভারি মাধ্যমে এক বছরে প্রায় ৪৫০ জন প্রসূতি নিরাপদে সন্তান প্রসব করেছেন। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে চাঁদপুর রেফার করা রোগীও এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নরমাল ডেলিভারি এবং সিজারের পরামর্শ দেয়া রোগীরও নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সুনাম রয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে এ কেন্দ্র থেকে ২ জন গর্ভবতী নারীকে অন্যত্র রেফার করা হয়। ১৫৪ জন গর্ভবতী নারীকে গর্ভকালীন সেবা দেয়া হয়। সন্তান প্রসবের পর গত মাসে ৮২ জন মাকে সেবা প্রদান করা হয়েছে এ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে। এ ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কার্যক্রমের জন্যে গত ১৮ জানুয়ারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এসএসিএমও বিনু রাণী প্রসূতি সেবাদান ও নিরাপদ প্রসবের জন্য জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্বের সম্মাননা লাভ করেন।
চরপোড়ামুখী গ্রামের মাজেদা বেগম জানান, তার ভাশুরের মেয়েকে নিয়ে চাঁদপুরে একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসক তাকে সিজার করতে হবে বলে জানান। তার ভাশুরের মেয়ে সিজার হতে না চাওয়ায় তাকে এ ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। বিনু রাণীর মাধ্যমে বিনা অপারেশনে ৪ কেজি ওজনের একটি কন্যা সন্তান জন্মলাভ করে।
তিনি বলেন, প্রসবের পরবর্তী সেবাও তারা এ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে নেন। তার ভাশুরের মেয়ে ও সন্তান এখন সুস্থ রয়েছেন।
পশ্চিমচর কৃষ্ণপুর গ্রামের লাকী বেগম জানান, আমার বোন আমার বাড়িতে বেড়াতে এলে তার প্রসব বেদনা হয়। প্রথমে তাকে হাইমচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে তারা চাঁদপুর নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। লোকমুখে আলগী দক্ষিণ ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংবাদ জেনে সেখানে নিয়ে যাই। সেখানে আমার বোনের নরমাল ডেলিভারিতে একটি কন্যা সন্তান হয়। তিনি বলেন, নিরাপদে বোনের সন্তান প্রসব হয়েছে, অন্যদিকে খরচ কম হয়েছে। সত্যিকার অর্থে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির সেবা অনেক ভালো।
আলগী দক্ষিণ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এসএসিএমও বিনু রাণী বলেন, এখনকার স্থানীয় লোকজন ও আমার সহকর্মীদের সহযোগিতায় এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসূতি নারীদের নরমাল ডেলিভারি করে আসছি। এ পর্যন্ত আমাদের নরমাল ডেলিভারি করতে গিয়ে তেমন কোনো জটিল সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। আমি প্রসূতি মায়েদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশেই বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। প্রসূতি মায়েদের সেবা দেয়ার জন্য আমি ২৪ ঘণ্টাই সজাগ থাকি।
তিনি বলেন, আমরা এ কেন্দ্রে কোনো মাসে ৪০ জন, কোনো মাসে ৩৭ জন, আবার কোনো মাসে ৩৫ জন গর্ভবতী মায়ের নরমাল ডেলিভারি করে থাকি। এজন্যেই আমাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে গত ১৮ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।