মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০

চাঁদপুরে এই প্রথম ‘ব্লাক সোলজার ফ্লাই’ চাষ হচ্ছে
নূরুল ইসলাম ফরহাদ ॥

পোল্ট্রি ও মৎস্য খামারে খাদ্য হিসেবে নতুন সংযোজন হয়েছে ‘ব্লাক সোলজার ফ্লাই’। এটি এক ধরনের পোকা। বাড়ি আফ্রিকা হলেও বাংলাদেশের খামারে খামারে চাষ হচ্ছে ‘ব্লাক সোলজার ফ্লাই’। আধুনিক খাদ্য হিসেবে দিন দিন এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলায় সর্বপ্রথম এ পোকার চাষ শুরু করেছেন প্রবাস ফেরত শফিকুর রহমান।

প্যারোট পোকা হাঁস-মুরগি ও মাছের প্রাকৃতিক খাবার। প্রাকৃতিক হলেও এই পোকা এখন চাষ হচ্ছে খামারে। অল্প খরচে এ পোকা উৎপাদন করে হাঁস-মুরগি ও মাছের খাবারের চাহিদা মেটানো সম্ভব। দেশে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এই পোকা উৎপাদনের ফলে খামারিদের বেশি দামে বাজার থেকে ফিড কিনতে হবে না। তারা নিজেরাই পোকা উৎপাদন করতে পারবেন।

‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ থেকে প্যারোট পোকা উৎপাদনে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। ‘ব্লাক সোলজার ফ্লাই’ উদ্যোক্তা শফিকুর রহমান চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ থেকে প্যারোট পোকা উৎপাদন আমেরিকার সংস্কৃতি। বাংলাদেশে এক ইঞ্জিনিয়ার এ পোকার চাষ শুরু করেন। আমি কুমিল্লা থেকে এই পোকার বীজ আনি। বর্তমানে শফিকুর রহমান পরীক্ষামূলকভাবে স্বল্প পরিসরে উৎপাদন করছেন এ পোকা। তবে তিনি আশাবাদী দিন দিন এর পরিধি বাড়বে। এতে একদিকে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে অন্যদিকে হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য চাহিদা পূরণ হবে। এখান থেকে প্রস্তুত হবে বিপুল পরিমাণে উৎকৃষ্টমানের জৈব সারও।

ময়লা-আবর্জনা, তরকারির অবশিষ্টাংশ, মুরগির বিষ্ঠা ও খৈলের সংমিশ্রণে দুর্গন্ধযুক্ত খাদ্যে তৈরি হয় ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’। প্রত্যেক ফ্লাই ৯০০ থেকে ১ হাজার পিউপা দিয়ে মারা যায়। এসব পিউপা একটি পাত্রে নিয়ে দুর্গন্ধযুক্ত খাবারে রাখা হয়। ১৪-১৬ দিনের মধ্যে এসব পিউপা থেকে জন্ম নেয় প্যারোট পোকা। ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ থেকে প্যারোট পোকা উৎপন্ন করতে দরকার মশারি নেট, কয়েকটি পাতিল ও কয়েকটি কাঠের টুকরো। একজন খামারি বড় পরিসরে এই পোকা চাষ করলে প্রতিদিন ১০০ থেকে ৫০০ কেজি পর্যন্ত পোকা উৎপন্ন করে লাভবান হওয়া সম্ভব।

ফরিদগঞ্জ সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ গাব্দেরগাঁও গ্রামে এ খামার গড়ে তুলেছে শফিকুর রহমান। ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর মাত্র দুই কেজি লার্ভা দিয়ে খামারের কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। লার্ভা থেকে পিউপা হয়ে সেগুলা এখন মাছিতে রূপান্তর হয়ে এখন ডিম দিচ্ছে। দুই কেজি লার্ভার দাম ছিলো ৬ হাজার টাকা। ৩০ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে মৎস্য চাষ এবং ‘ব্লাক সোলজার ফ্লাই’তে স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

ফরিদগঞ্জ প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে উপজেলায় লেয়ার মুরগীর খামার রয়েছে ২১টি, ব্রয়লার মুরগীর খামার ১৮৪টি, সোনালি মুরগির খামার ৫৪টি ও হাঁসের খামার রয়েছে ৫৫টি।

মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় সরকারি পুকুর রয়েছে ৪৫টি, বেসরকারি পুকুর ১০,৪৭০টি, প্লাবন ভূমি ২৫টি, বরোপিট ২৯টি ও বাণিজ্যিক মৎস্য খামার ১৬টি। এছাড়া এখানে ধান ক্ষেতেও মাছ চাষ হচ্ছে। সব মিলিয়ে এখানে বাৎসরিক মৎস্য উৎপাদন হয়েছে (২০২০) ৬৯১৭.৯৫ মেট্রিক টন। এ বিপুল পরিমাণ মাছের খাদ্যের জোগান দিতে মৎস্যচাষীদের অধিক মূল্যে ফিডের উপর নির্ভর থাকতে হয়।

প্রাণিজ আমিষের উৎস্য ‘ব্লাক সোলজার ফ্লাই’-এর বহুমুখি উপকারিতার কারণে খামারিরা একে ‘বাদামি সোনা’ বা ‘ব্রাউন গোল্ড’। বিশ^ব্যাপী দ্রুত অর্থনৈতিকভাবে জায়গা করে নেয়া ওই মাছি ও লার্ভা নিয়ে দারুণ সম্ভাবনা দেখছেন খামারিরা। বাজারের ফিডে ৩০ পার্সেন্ট প্রোটিনের কথা থাকলেও বাস্তবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে অনেকেরই। বরং এ খাদ্যে চামড়ার বর্জ্য ব্যবহারের বিতর্ক তো রয়েছেই। কিন্তু ‘ব্লাক সোলজার ফ্লাই’-এ ৪৩ থেকে ৫৫ ভাগ আমিষ থাকে।

উপজেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তাদের ‘ব্লাক সোলজার ফ্লাই’-এর বিষয়ে ধারণা নেই। এই প্রতিনিধির মাধ্যমেই তিনি বিষয়টি প্রথম জানলেন। তবে খামারটি সহসাই পরিদর্শন করবেন বলে জানান তিনি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ মামুনুর রহমানেরও একই বক্তব্য। বিষয়টি যদি পজিটিভ হয় তাহলে খামারীদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন এ কর্মকর্তা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়