প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
আজ ৩ ডিসেম্বর। ১৯৯০ সালের এইদিনে এরশাদরিরোধী আন্দোলনে শাহাদাতবরণ করেন জিয়াউর রহমান রাজু পাটওয়ারী। তিনি ৫ দিন পূর্বে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিলেন চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে। ৩ ডিসেম্বর সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি, যিনি ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চাঁদপুর সরকারি কলেজ শাখার তৎকালীন নেতা।
১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর এরশাদবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ঢাকায় বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ সামছুল আলম মিলন নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে বিক্ষোভের দাবানল জ্বলে উঠে। তারই প্রেক্ষিতে পরদিন ২৮ নভেম্বর সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য পরিষদ চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। ওই মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের দ্বাদশ বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা জিয়াউর রহমান রাজু পাটওয়ারী। মিছিলটি কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে চিত্রলেখা সিনেমা হল মোড়ে আসা মাত্রই কোনো প্রকার উস্কানি বা উত্তেজনা ছাড়াই পুলিশ মিছিলের উপর গুলি চালায়। ওই সময় একটি গুলি মিছিলের সম্মুখভাবে থাকা জিয়াউর রহমান রাজু পাটওয়ারীর নাভীর নিচ দিয়ে শরীরে ঢুকে পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। তখন সময় ছিলো সকাল ১১টা ২০ মিনিট। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আহত রাজুকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে দ্রুত নিয়ে আসা হয়। চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে দিনভর চিকিৎসার পর রাত ১০টায় গুলিবিদ্ধ জিয়াউর রহমান রাজু পাটওয়ারীর জ্ঞান ফিরে আসে।
ওইদিন রাজুর চিকিৎসার জন্যে প্রচুর রক্তের প্রয়োজন দেখা দিলে চাঁদপুরের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা স্বেচ্ছায় রক্ত দেয়ার জন্যে হাসপাতালে ভিড় জমায়। চিকিৎসার ক্ষেত্রে হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক, নার্সদের ছিলো না কোনো অবহেলা। ৪১ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহের পর বেশির ভাগ রক্তই পুশ করা হয়েছিলো জিয়াউর রহমান রাজু পাটওয়ারী শরীরে। দীর্ঘ চেষ্টার পরও রক্তক্ষরণ বন্ধ করা যায়নি। টানা ৫ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ৬ দিনের মাথায় ৩ ডিসেম্বর সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে জিয়াউর রহমান রাজু পাটওয়ারী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
তাৎক্ষণিক এ খবর ছড়িয়ে পড়লে চাঁদপুর শহরে বিক্ষোভের দাবানল সৃষ্টি হয়। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা। চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুল করিম পাটওয়ারী, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আ্যাডভোকেট আব্দুল আউয়াল, মরহুম অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, মরহুম এম. সফিউল্লাহ, অ্যাডভোকেট ফজলুল হক সরকারের হস্তক্ষেপে ওই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। হাজার হাজার শোকার্ত মানুষের শোক মিছিল ও জানাজা শেষে চাঁদপুর সরকারি কলেজ মাঠের পশ্চিম পাশে ও শহীদ মিনারের ডানপাশে শহীদ জিয়াউর রহমান রাজু পাটওয়ারীকে সমাধিস্থ করা হয়। রাজু ছিলেন চাঁদপুর শহরের বহুল পরিচিত আজিম পাটওয়ারী বাড়ির (বর্তমান করিম পাটওয়ারী বাড়ি) মরহুম মোঃ ফজলুর রহমান পাটওয়ারীর জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং চাঁদপুরের সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব, চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আব্দুল করিম পাটওয়ারীর ভ্রাতুষ্পুত্রের ছেলে।
১৯৭৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জিয়াউর রহমান রাজু পাটওয়ারী জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যু পর্যন্ত তার বয়স হয়েছিলো ১৬ বছর ১০ মাস ২ দিন। ১৯৯৩ সালের ১৬ মে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও সে সময়কার বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা চাঁদপুরে সফরে আসলে শহীদ রাজুর বাসায় গিয়ে শহীদ রাজুর মা-বাবা ও ভাই-বোনের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং দীর্ঘ সময় কাটিয়ে তাদেরকে সান্ত¡না দিয়ে যান। ১৯৯৯ সালের ২৮ নভেম্বর ও ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল চাঁদপুরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা সরকারি সফরে এসেও শহীদ জিয়াউর রহমান রাজু পাটওয়ারীর পরিবারের খোঁজখবর নেন।
শহীদ রাজুর ৩১তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে পারিবারিকভাবে এবং শহীদ রাজু স্মৃতি সংসদের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চাঁদপুর জেলা শাখা ও চাঁদপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ১০টায় কালো ব্যাজ ধারণ ও শহীদ রাজুর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ। এছাড়া আব্দুল করিম পাটওয়ারী সড়কস্থ তালতলা পাটওয়ারী বাড়ি জামে মসজিদে শহীদ রাজুর রুহের মাগফেরাত কামনা করে বাদ জুম্মা পরিবারের পক্ষ থেকে দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।